হিরোইজম থেকে কিশোর গ্যাং, আছে মাদকের প্রভাব!
বরগুনায় রিফাত হত্যাকাণ্ডের পর আলোচনায় আসে নয়ন বন্ডের নেতৃত্বাধীন ০০৭ গ্রুপ। তখন থেকেই মূলত, স্কুল কলেজ পড়ুয়া কিশোর ও যুবকদের বিভিন্ন গ্রুপে ওপর গভীর নজরদারি শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র বলছে, সিনিয়র - জুনিয়র গ্রুপের চেয়ে অনেকটাই ভয়ানক কিশোর গ্যাং। উঠতি বয়সী এই কিশোর গ্রুপ দেশজুড়ে রয়েছে এবং তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণহীন।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনার পর এসব কিশোরদের তৎপরতাকে রুখে দিতে মাঠে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শুধু রাজধানীতেই আটক আছে প্রায় এক হাজার জন। গত ২৪ ঘণ্টায় কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে এমন সন্দেহভাজন ১৫০ জন কিশোরকে আটক করেছে ডিএমপি পুলিশ।
সর্বশেষ বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সাতমসজিদ এলাকায় ছুরিকাঘাতে মহসিন (১৬) নামে এক স্কুলছাত্র স্থানীয় কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যের হাতে খুন হয়।
তথ্য বলছে, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে দল তৈরি করা থেকেই এই গ্রুপের সূচনা হয়। তাছাড়া মহল্লায় আধিপত্য বিস্তার, দল বেধে বেড়ানো, মেয়েদের উত্যক্ত করা, ঝুঁকিপূর্ণ বাইক রাইডিং, অনলাইনে প্রতিপক্ষ তৈরি করা, ছিনতাই, চাঁদাবাজির মতো ঘটনা থেকে শুরু করে খুন পর্যন্ত হচ্ছে এদের হাত ধরে ঘটছে।
আরও পড়ুন:হাতিরঝিল থেকে কিশোর গ্যাংয়ের শতাধিক সদস্য আটক
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, যদি কিশোর গ্যাং'কে নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে একসময় এরাই মূল ধারার সন্ত্রাসীতে পরিণত হবে। দেশে নানা রকম বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। তাই তাদের এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিরোইজম থেকেই কম বয়সী এসব কিশোররা নানা রকম অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। সমাজের চোখে হিরো হতে চায় ওরা, যার ফলে দলবল নিয়ে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করে। আর সেখান থেকেই সাহস সঞ্চয় করে।
রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, এ পর্যন্ত অভিযানে আমি কিশোর গ্রুপের যে ছেলেদের পেয়েছি, তারা অধিকাংশই মাদকাসক্ত। তাদের মধ্যে একটা হিরোইজম ভাব আছে।
তারা ছিনতাই করে, কেউ দলবেধে নেশা করে, ঘুরে বেড়ায়, চাঁদা তোলে, স্থানীয় বড় ভাইদের নাম বলে এলাকায় দাপিয়ে বেড়ায়। এদের অধিকাংশই নবম-দশম শ্রেণিতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী। কাজ না থাকায়, মাদক সেবন করে আর এই সব অপরাধ করে।
আরও পড়ুন:রাজধানীতে আবারও সক্রিয় হচ্ছে কিশোর গ্যাং
কিশোর গ্যাং গ্রুপের ছেলেদের এই অপতৎপরতা সর্ম্পকে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি মইনুর রহমান চৌধুরী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, অল্প বয়সী এসব ছেলেদের বিপথগামী হওয়ার সুযোগ দেওয়া যাবে না। তাদের মধ্যে মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখা গেছে। সেটা থেকে বের করে আনতে হবে। পরিবারের সদস্যদের সচেতন হতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে, তারা কোনভাবেই যেন মিথ্যা না বলে। যদি মিথ্যাকে ছাড়তে পারলে, তাহলে তাদেরকে এ পথ থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। না হলে আইন আইনের মত চলবে।
একই বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, কিশোর গ্রুপদের নিয়ন্ত্রণ করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সজাগ রয়েছে। যদি কোন অল্প বয়সের ছেলে অপরাধ করেই ফেলে, তখন কিন্ত পার পাবার আর সুযোগ থাকবে না। তাই সাবধান, যে বয়সের হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আসতেই হবে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র, যেখানে ৩০০ শিশু-কিশোরদের জন্য বরাদ্দ রাখা ছিল। সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে সেখানে এখন কিশোরদের সংখ্যা প্রায় ৮০০ এর অধিক।
জানতে চাইলে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ এহিয়াতুজ্জামান বার্তাটোয়েন্টিফোরকে বলেন, গত এক মাসে দ্বিগুণ শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে এসেছে। আমরা তাদের উপযুক্ত পরিবেশ দেওয়ার চেষ্টা করছি।