ভালুকায় বনের মাটি কেটেই দখল হচ্ছে বনের জমি



সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
সিটের দখলে থাকা বনের বিবদমান জমি, ছবি: বার্তা২৪.কম

সিটের দখলে থাকা বনের বিবদমান জমি, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ভালুকা (ময়মনসিংহ) থেকে ফিরে: দখলে পর্যদুস্ত ভালুকা বনের আরেক অশান্তির নাম মাটি কেটে তুলে নেওয়া। বনের শত শত একর জমির মাটি কেটে পুকুর বানিয়ে ফেলা হয়েছে। শুষ্ক মৌসুম এলেই শুরু হয় মাটি কাটার মহোৎসব।

এই প্রক্রিয়ায় বনের ঝোপঝাড় ও ছোট চারাগাছে ঢাকা জমিই বেশি পছন্দ মাটি খেকোদের। অনেক সময় ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে মাটি কাটা শুরু করে আশপাশের বনের ছোট ছোট টিলাগুলো কেটে সাবাড় করে দেওয়া হয়। আর এই মাটি দিয়েই হয়তো বনের আরেকপ্রান্তে দখল করে নিয়েছে বাউন্ডারি শহীদের নেতৃত্বে রাঘব বোয়ালরা।

সিট (CEAT) টায়ার, ওরিয়ন ও এনভয় গ্রুপের মতো অনেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান কোনো কিছুই করেনি, শুধু বনের জায়গা দখল করে বাউন্ডারি দিয়ে রেখেছে। এই তালিকায় রয়েছে বীকন ও বাদশা গ্রুপসহ আরও অনেকে। শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ায় বন বিভাগের লোকেদের মধ্যে অস্বস্তি বাড়ছে।

অস্বস্তি শব্দটি হয়তো সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। পুলিশ প্রশাসনসহ বন বিভাগের অনেকে একে আয়ের বাড়তি পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তারা এই মাটি কারবারিদের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমে নিজের আখের গুছিয়ে নিচ্ছেন। এতে করে উজাড় হয়ে যাচ্ছে বনের জীব বৈচিত্র্য।

এখানে বলে নেওয়া আবশ্যক যে, এই অঞ্চলে কাকরবালিসহ এঁটেল মাটি শাল বাগানের জন্য খুবই উপযোগি। আর শাল বাগান সৃজন করার প্রয়োজন হয় না যদি আশাপাশে শালের বাগান থাকে। শিমুল বীজের মতো শালও বাতাসে ভেসে দূরে গিয়ে বংশ বিস্তার করতে পারে। আর শেকড় থেকেই নতুন গাছ জন্মায়।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/22/1548127854037.jpg
কোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও বাদশা টেক্সটাইল বিশাল সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘিরে নিয়েছে বনের জায়গা, ছবি: বার্তা২৪.কম

ভালুকা রেঞ্জের এসিএফ তবিবুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, শালের ফল বিশেষ রকম হয়ে থাকে। এগুলো পোক্ত হয়ে ঝরে পড়ার সময় বীচের সঙ্গে ফুলের শুকনো পাপড়ি থাকায় বাতাসে ভাসতে থাকে। আর বাতাসের মাধ্যমে অনেকদূর পর্যরন্ত ছড়িয়ে যায়। আর এটা মাটির স্পর্শে এসে গাছ জন্মায়। অর্থাৎ শালবাগানের কাছাকাছি পরিত্যক্ত জমি থাকলে সেখানে স্বয়ংক্রিভাবে শাল বন তৈরি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি।

এই মাটা কাটার শীর্ষে রয়েছে যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান মনির। প্রত্যেক বছরেই সে মাটিন কারবার করে। আর তার আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে মাটির কারবার। হবিরবাড়ি ইউনিয়ন যুবলীগের এই নেতার ভয়ে বন বিভাগের লোকজন তটস্থ। তার হাতে অনেক বনের কর্মী অপদস্ত হয়েছে।

যে কারণে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই প্রক্রিয়ায় অনেকে ভয়ে মুখ খুলতে সাহস দেখাননি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাতের আঁধারে ভেকু লাগিয়ে মাটি কাটা হয়। বিশাল বিস্তৃত অঞ্চল এবং গহীন বন হওয়ায় অনেক সময় খোঁজ পেতে পেতে কাজই শেষ হয়ে যায়।

আবার খোঁজ পেলেও রাতে সেখানে যেতে সাহস দেখায় না নিরস্ত্র বন কর্মীরা। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশকে ফোন করলে অনেক সময় লোকবল সংকটের কথা বলে সময় ক্ষেপন করে তারা। ভালুকা রেঞ্জের গহীণে গেলে মাটি কেটে নেওয়ার এমন অসংখ্য চিহ্ন দেখা গেছে। আবার ভেকু ও মাটির ট্রাক আটকের মামলাও চলমান রয়েছে অনেকের নামে।

মাটির শীর্ষ কারবারি হচ্ছে মনির। আরও অর্ধশতাধিক মাটির কারবারি রয়েছে। এর মধ্যে আলম (টুপি আলম) নুরুদ্দিন, আব্দুল মুন্সি, নুর হোসেন, মজিবর রহমান, আক্কাস আলী, মফিজ উদ্দিন, কবীর হোসেন, পান কামাল , শফি ও নুরুল হক অন্যতম। এদের অনেকের বিরুদ্ধেই মামলা চলমান। কিন্তু তারপরও তারা দমবার পাত্র নয়। বছর বছর ধরে একই কর্ম করে যাচ্ছেন নির্বিঘ্নে।

ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মনিরের বিরুদ্ধে জমি দখল ও মাটি কাটার অপরাধে ২৯টি মামলা দায়ের করেছে বন বিভাগ। তারপরও তার মধ্যে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি বলে মনে করছে বন বিভাগ।

যুবলীগ নেতা মুনিরুজ্জামান মনির বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি মাটির ব্যবসা করি এ কথা ঠিক। কিন্তু বনের কোনো জমি থেকে মাটি নেইনি। আমি ব্যক্তি মালিকানার জমির মাটি কিনে ভেকু দিয়ে কেটেছি। আমি একটু ‘উইট্টা’ (উন্নতি করছি) যাচ্ছি তাই মানুষের নজর পড়েছে। তারাই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

বন বিভাগের লোকজন মনে করে, দেশ থেকে মাদক নিমূর্লে যেভাবে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে; বনের জমি রক্ষায় তেমন উদ্যোগ প্রয়োজন। না হলে মল্লিকবাড়ি বিটের মতো পুরো ভালুকা রেঞ্জ হারিয়ে যেতে পারে।

সরকার সুফল প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর লক্ষ্য হলো- শালকে আবার ফিরিয়ে আনা। এ জন্য বিশাল বাজেট করা হয়েছে। কিন্তু এভাবে শালের শেকড় যদি খুড়ে তুলে ফেলা হয় তাহলে সফল হওয়া কঠিন। সুফল প্রকল্পের সুফল পেতে হলে বনের মাটি কাটা বন্ধ করা খুবই জরুরি বলে মনে করে পরিবেশবিদরা। কারণ শাল শেকড় থেকে জন্ম নেয়, এর শেকড় অনেকদূর পর্যেন্ত বিস্তৃত।

ময়মনসিংহ বন বিভাগের ভালুকা রেঞ্জের মল্লিকবাড়ি বন বিটের ১ হাজার ৫৯৯ একর জমি পুরোটাই জবরদখল হয়ে গেছে। হবিরবাড়ি বিটের প্রায় ৭ হাজার ১০ একর জমির মধ্যে ৪ হাজার ১৪৪ একর জমি, কাদিগড় বিটের ৪ হাজার ৬৮৬ একর জমির মধ্যে ৩ হাজার ৬০ একর জমি অবৈধ দখলদারদের কবলে চলে গেছে। এই বিটের পাড়াগাঁও মৌজায় বন বিভাগের জমি ছিলো ১ হাজার ৬৪৬ একর ৭২ শতক। এক শতকও আর বন বিভাগের দখলে নেই। প্রতিনিয়ত নানা ছুঁতোয় দখল করে নিচ্ছে প্রভাবশালীরা।

আরও পড়ুন:

** বন বিভাগের আতঙ্ক কে এই মনির!

*
* ১৫৯৯ একর জমির মালিক মল্লিকবাড়ি বন বিট নিজেই ভূমিহীন

** বনের জমি দখলের খেলার নাম ‘ডিমার্কেশন’

** কে এই বাউন্ডারি শহীদ

   

দুপুরের মধ্যে ঝড়ের আভাস, ৬ জেলায় সতর্কসংকেত



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামসহ দেশের ৬ জেলার ওপর দিয়ে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টির আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অফিস।

শুক্রবার (৩ মে) দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেওয়া এক পূর্বাভাসে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলার ওপর দিয়ে পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ সময় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

তাই এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

;

সাবেক এমপি বদির বিরুদ্ধে ফাঁকা গুলি ছোড়ার অভিযোগ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কক্সবাজার
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী ও টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলম জমায়েতের সামনে গিয়ে সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদির ফাঁকা গুলি ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (০২ মে) রাতে টেকনাফের হোয়াইক্ষং পশ্চিম মহেশখালীয়া পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নুরুল আলম চেয়ারম্যান বলেন, আমার আজ কম্বোনিয়া পাড়া, হোয়াইক্ষ্যং পশ্চিম মহেশখালীয়া পাড়ায় মুরুব্বি ও মেম্বারদের সঙ্গে একটি আলোচনা সভা ছিল। সেখানে হঠাৎ সাবেক এমপি বদি ও জাফর চেয়ারম্যানসহ ২০-৩০ জন লোক আমাদের পাশে এসে ২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে।

আব্দুর রহমান বদি নিজেই তার পিস্তল দিয়ে গুলি করেছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলম। তিনি বলেন, আমি এখন বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ করতে যাচ্ছি।

এই বিষয়ে জানতে সাবেক এমপি বদির মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তবে যার সঙ্গে থেকে আব্দুর রহমান বদি গুলি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে সেই প্রার্থী জাফর আলমের সাথে কথা হয় মোবাইল ফোনে। তিনি জানান, বদি ভাই আমার সাথে ছিলো। এ ধরণের কিছু হয়নি। তার (নুরুল আলম) ভাই নুরুল বশর জাতীয় নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর থেকে বদি ভাইয়ের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছেন। এটিও এমন একটি কুৎসা বলে জানান জাফর আলম।

;

আটোয়ারীতে নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, পঞ্চগড়
নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ

  • Font increase
  • Font Decrease

আসন্ন ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের প্রচারণাকে কেন্দ্র করে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে পাল্টা-পাল্টি হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (১ মে) জেলার আটোয়ারী উপজেলার ধামোর হাটে এ ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জানা গেছে, গত শনিবার (২৭ এপ্রিল) সন্ধায় একই বাজারে পাশাপাশি অবস্থিত মোটরসাইকেল মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থী তৌহিদুল ইসলাম ও ঘোড়া মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থী আনিছুর রহমানের নির্বাচনী ক্যাম্পে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মাঝে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এর পর আবারও বৃহস্পতিবার রাতে বিরোধে জড়ান তারা।

মোটরসাইকেল মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে নিজেদের ক্যাম্পে অগ্নি সংযোগ করেছে তারা। এর আগে আমার কর্মী-সমর্থকেরা প্রচারণা মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় তারা তাদের গতিরোধ করে হামলা ও মারধর করে। এর মাঝে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের ক্যাম্পে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। একই সাথে তারা আমাদের ক্যাম্পে এসে হামলা ও মারধর করে।

ঘোড়া মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থী আনিছুর রহমান বলেন, ধামোর ইউনিয়নে প্রায় ৯০ শতাংশ লোক আমার সমর্থক। আমার প্রতিপক্ষ মোটরসাইকেল, তারা বেশ কয়েকদিন ধরে সেখানে ঢুকার চেষ্টা করছে। বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীকে নিয়ে গিয়ে আমাদের ক্যাম্প ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এলাকার মানুষ ও সাধারণ ভোটার তাদের ঘেরাও করে আটক করে রাখে। বিষয়টি জানতে পেরে প্রশাসনকে অবগত করি। প্রশাসন ঘটনাস্থলে গেলে তারা একটি আপোষনামা দিলে সকলেই চলে যায়। আমরা পরিস্থিতি শান্ত রাখতে কোন অভিযোগ দায়ের করিনি।

আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাফিউল মাজলুবিন রহমান বলেন, ঘটনা জানার পরেই ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে পুলিশসহ সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। উভয় পক্ষে এ ঘটনায় কোন মামলা করবে না বলে সহকারী রিটার্টিং অফিসার বরাবর একটি আবেদন দাখিল করে। এসময় সবাইকে সতর্ক করা হয়।

;

কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড লামা, শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বান্দরবা‌ন
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা তীব্র তাপপ্রবাহের পর স্বস্তির বৃষ্টির আগমন আনন্দের সংবাদ হলেও তা মুহূর্তেই ম্লান হয়েছে কালবৈশাখীর ঝড়ে। গতকাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার (০২ মে) হঠাৎ বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়েছে বান্দরবানের লামা উপজেলার পৌরসভা ও বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক বাড়িঘর।

হতাহতের কোন সংবাদ পাওয়া না গেলেও কিছু গবাদিপশুর প্রাণহানি ঘটেছে। রূপসীপাড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড বৈদ্যভিটা এলাকায় বজ্রপাতে এক কৃষকের ৫টি ছাগল এবং পূর্ব শিলেরতুয়া এলাকায় রমজান আলী মেম্বারের খামারে ঘরচাপা পড়ে এটি ছাগল মারা গেছে।

এছাড়া, গাছ পড়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বৈদ্যুতিক খুঁটিতে গাছ পড়ে সঞ্চালন লাইন ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ভেঙে গিয়েছে ৩০টির অধিক বৈদ্যুতিক খুঁটি। সেই সাথে তীব্র ঝড়ের কারণে মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পার্বত্য বান্দরবান জেলার সবচেয়ে জনবহুল শহর লামা।

এই প্রতিবেদনে লেখা পর্যন্ত এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু হয়নি। বিদ্যুৎ সচল হতে আরও দুই-একদিন লাগতে পারে বলে জানিয়েছে পিডিবি লামার আবাসিক প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন।

লামা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সকালে গাছ পড়ে চকরিয়া- লামা- আলিকদম সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার সংবাদ পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গাছ কেটে রাস্তা থেকে সড়িয়ে যোগাযোগ স্বাভাবিক করে।

লামা উপজেলার রূপসী পাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাচিং প্রু মারমা জানান, কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে সড়কে গাছ পড়ে লামা উপজেলার সাথে রূপসীপাাড়া ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেই সাথে মানুষের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষেত খামারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। যাদের বসতবাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে তাদের ইউনিয়ন পরিষদ হতে সহায়তা করা হবে বলে জানান তিনি।

লামা সদর ইউপি চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন বলেন, আমার ইউনিয়নে হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ে দেড়-শতাধিক বাড়িঘর ভেঙে গেছে। গজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বাথোয়াইচিং মার্মা জানান, তার ইউনিয়নে ছোটবড় শতাধিক ঘর আংশিক ভেঙে গেছে।

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ মাহবুবুর রহমান জানান, জেলা পরিষদ ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা করে সহায়তা প্রদান করা হবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা প্রস্তুত করছি। তালিকা লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সুপারিশ নিয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হবে। বরাদ্দ পেলে ক্ষতি বিবেচনা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে কয়েকটি বসতবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা দিলে সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা করা হবে।

;