ইসলামী রাষ্ট্র সব নাগরিকের জানমাল ও সম্মানের নিরাপত্তা দেয়



ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ধর্মীয়, জাতিগত, ভাষাগত সংখ্যালঘুর মানবাধিকারের দাবিতে সোচ্চার বিশ্ব সম্প্রদায় আইনগত ও সামরিক-বেসামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেও বিশ্বব্যাপী নিপীড়িত মানবতার আহাজারি থামাতে পারছে না। বরং ইসলামে সংখ্যালঘুর অধিকার সংরক্ষণের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত থাকার পরেও মুসলিমরাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত। ‘ইসলামে সংখ্যালঘুর অধিকার’ সম্পর্কে ঐতিহাসিক পর্যালোচনা: পর্ব- ৩

পবিত্র কোরআন মানুষকে কোনো সমাজ, রাষ্ট্র, এমনকি মহাবিশ্বের প্রকৃত লক্ষ্যরূপে বিবেচনা করা হয়েছে। সব কিছুই মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যা আছে নভোমণ্ডলে এবং যা আছে ভূমণ্ডলে, তার পক্ষ থেকে সব কিছু তোমাদের আয়ত্ত্বাধীন করে দিয়েছেন।’ –সূরা আল জাসিয়া: ১৩

পবিত্র কোরআনে ‘রাষ্ট্র’ শব্দটি নেই, তবে দেশ এবং তা পরিচালনার ধারণা আছে তাতে। হজরত রাসূলুল্লাহ সালাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই ঘোষণা করেন, ‘আমরা অবশ্যই এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবো, যাতে সুন্দরী তরুণীও অলঙ্কার পরিবেষ্টিত অবস্থায় একাকী ইয়েমেন থেকে বসরা (প্রায় ২০০ মাইল) সফর করতে পারে। কিন্তু আল্লাহকে ছাড়া আর কাউকে ভয় পাবে না সে।’ –সহিহ বোখারি

এর মানে হচ্ছে, কোনো ইসলামী রাষ্ট্রে তার সকল নাগরিকের জীবন, সম্মান ও সম্পদ নিরাপদ থাকবে। এভাবে ইসলাম সূচনাকাল থেকেই সকলের জন্য সর্বান্তকরণে শান্তি, আইনের শাসন, মর্যাদা ও অধিকারের প্রতিশ্রুতি ও নিশ্চয়তা বিধান করে আসছে। হজরত রাসূলুল্লাহ সালাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জীবদ্দশাতেই এ মহান প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে গেছেন। ইসলামী রাষ্ট্রে নেতা নির্বাচন চূড়ান্তভাবে সমাজের উপর নির্ভরশীল। ইসলামের ঐতিহ্যবাহী ধ্যান-ধারণায় এই ধরণের প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র পালিত হয়। ফলে এ রাষ্ট্র জনঅংশগ্রহণমূলক, গণতান্ত্রিক এবং গতিশীল।

হজরত রাসূলুল্লাহ সালাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রেরিত ঐশী বার্তায় মানব রচিত ও নির্মিত সকল মূর্তি, প্রতিরূপ, চেতনা ও আদর্শ ধ্বংস করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করা হয়েছে। সার্বভৌমত্বের কোরআনিক ধারণাও এ কারণেই অন্য সব মানবরচিত মতবাদ, আদর্শ ও ব্যবস্থার চেয়ে ভিন্ন। বাস্তবতা হল, কিছু লোককে কোনো মতবাদ বা আদর্শের নামে অন্যদের উপর কর্তৃত্ব দেওয়া হয়ে থাকে, যার ফলাফল ভয়ঙ্কর এবং পরিণতি স্বৈরতন্ত্র, ব্যক্তিতন্ত্র, দলতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র ইত্যাদি অমানবিকতায় প্রতিফলিত। পবিত্র কোরআন মানবরচিত সার্বভৌমত্বের ধারণাকে অত্যন্ত সঙ্গতভাবেই মানবতার জন্য অত্যন্ত বিপর্যয়কর বিবেচনা করে এবং একে অগ্রহণযোগ্য মনে করে। সার্বভৌমত্ব শুধুমাত্র আল্লাহতায়ালার এবং তা কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের নয়। এ ব্যাখ্যাকে না বুঝার কারণে অনেকে মনে করতে পারেন যে, ধর্মের নামে কিছু ধর্মীয় নেতার হাতে থাকবে সার্বভৌমত্ব। এটা বড় ভুল ও অজ্ঞতা।

মনে রাখা ভালো, সার্বভৌমত্ব নিরঙ্কুশ এবং এটা দেখা যায় না। আমাদেরকে নিদের্শনা দিতে আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে নেমে আসবেন না। তার বাণী অবতীর্ণ হয় তার বার্তাবাহকদের মাধ্যমে। আর এ কারণেই পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, বার্তাবাহককে মান্য করা মানে আল্লাহকে মান্য করা। পালন করার জন্যই ঐশী বিধানগুলো অবতীর্ণ হয়েছে। আর ঐশী নিদের্শের কোনো পরিবর্তনের অধিকার কাউকে, এমনকি, তার বার্তাবাহকদেরও দেওয়া হয়নি। ‘আপনি তাদের পারস্পরিক ব্যাপারে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, সে অনুযায়ী ফয়সালা করার।’ –সূরা আল মায়েদা: ৪৮

ঘোষণায় সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ্যভাবে আরও বলা হয়েছে, ‘একে নিজের পক্ষ থেকে পরিবর্তিত করা আমার কাজ নয়।’ –সূরা ইউনুস: ১৫

ফলে খোদ বার্তাবাহকরাই প্রথমে এবং পরিপূর্ণভাবে ঐশী নিদের্শের প্রতি আনুগত্য করেছেন। এটা এমন এক ব্যবস্থা যাতে কেউ শাসক হবে না, আবার কেউ শাসিতও হবে না। আমাদেরকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, হজরত রাসূলুল্লাহ সালাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো নিজেকে শাসক, রাজা বা সম্রাট হিসাবে অভিহিত করেননি। যদিও লাখ লাখ বর্গমাইল এলাকায় তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তার ওফাতের পর ব্যবস্থাটি খলিফাদের মাধ্যমে কার্যকর ছিল এবং তাদের আনুগত্য করার অর্থ আল্লাহর বিধানের প্রতিই আনুগত্য করা। ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় শাসনের পাশাপাশি বিচার ব্যবস্থাও প্রতিষ্ঠিত কেবলমাত্র ঐশী বিধান অনুযায়ী।

ইসলাম রাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, ব্যক্তিতন্ত্র অনুমোদন করে না। ইসলামের বিধি-বিধানকে ধর্ম বা আচরণ হিসাবে পালন করা হয় এবং পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা বা দ্বীন হিসাবে আল্লাহ প্রবর্তিত ব্যবস্থায় মানব ব্যক্তিত্বকে নিরাপদ, বিস্তৃত ও বিকশিত করার সুযোগ রয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে জান, মাল, সম্মানের পূর্ণ নিরাপত্তা থাকবে এবং আশ্রয়, খাবারসহ সকল মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে। সর্বপরি সমাজে থাকবে ন্যায়বিচার, সাম্য, মর্যাদা, নিরপেক্ষতা ও সকলের সম্মানজনক অধিকার।

অমুসলমান ও সংখ্যালঘুদের প্রতি ইসলাম ও মুসলমান শাসকদের ন্যায়ানুগ, সম্মানজনক, মর্যাদাপূর্ণ ও সমানাচরণের পেছনে সর্বদাই কাজ করেছে সুস্পষ্ট আদর্শিক ও নৈতিক ভিত্তি আর নির্দেশনা। সূচনা থেকে আজ পর্যন্ত ইসলাম সব সময় অনন্য লক্ষ্য হিসাবে সামনে রেখেছে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রচারিত আল্লাহর অর্থাৎ ঐশ্বরিক, একত্ব আর মানুষের সাম্যের শিক্ষা। যতক্ষণ আল্লাহর একত্ব আর রাসূলের (সা.) বাণীর মূল সত্যটি স্বীকৃত ও গৃহীত হচ্ছে, ততক্ষণ ইসলাম মানুষের বিবেকের ও অধিকারের সবচেয়ে বিস্তৃত স্বাধীনতা দান করেছে।

ফলে মুসলমানরা যেখানেই গিয়েছেন, সেখানেই পদদলিত জনসাধারণ আর নির্যাতিত বিরুদ্ধবাদীরাও সাদরে বরণ করেছে। ইসলামকে তারা পেয়েছে তাদের যন্ত্রণাদায়ক দাসত্ব থেকে স্বাধীনতা আর মুক্তির অগ্রদূত হিসাবে। ইসলাম তাদেরকে দিয়েছে আইনের চোখে বাস্তব সমতা আর স্থায়ী নিরাপত্তা, সম্মান, অধিকার ও শান্তি; যা পূর্বের স্বেচ্ছাচারের চেয়ে বিস্তর সুশাসন ও সমানাধিকারের নিশ্চয়তা এনে দিয়েছে অমুসলমান, সংখ্যালঘু ও স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে। বিশ্বের দেশে দেশে ইসলামের আগমন এজন্যই স্বতস্ফূর্ত, কাম্য, জন-কল্যাণধর্মী এবং নিবর্তনের বিরুদ্ধে ন্যায় ও সমতার আলোকবাহী; যা আধুনিক উপনিবেশবাদ, ভোগবাদ, সম্প্রসারণবাদ, সাম্রাজ্যবাদ বা আধিপত্যবাদের সঙ্গে ইসলামের মৌলিক পার্থক্য নিদের্শ করে।

কাদিসিয়ার যুদ্ধে ইসলামের অউপনিবেশবাদী, অসাম্রাজ্যবাদী মনোভাবের বিপরীতে মানব-সাম্যের প্রকৃত রূপটি চিত্রিত্র হয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে কাদিসিয়ার যুদ্ধ বিশাল পারস্য সাম্রাজ্যকে ইসলামের অধীনস্থ করে। কিন্তু এরচেয়ে বড় সত্য হচ্ছে, কাদিসিয়ার যুদ্ধ ছিল পারসিকদের মুক্তির সনদ।

যেমন ইয়ারমুক আর আজনাদাইনের যুদ্ধ ছিল সিরিয়া, গ্রীস আর মিসরের অধিবাসীদের মুক্তির সঙ্কেত। ইহুদিরা, যাদেরকে পারস্যে প্রতিষ্ঠিত অগ্নি-উপাসক যরথুস্ত্রীয়রা মাঝে মাঝে কচু-কাটা করত, আর খ্রিস্টানরা ইহুদিদের দেশে দেশে শিকার করে বেড়াত, সবাই মুক্তির সুবাতাস পেল হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং তার মহত্তম অনুসারীগণ (রা.)-এর শাসনাধীনে, যেখানে ধর্মবিশ্বাসের মূল কথাই ছিল মানুষের ভ্রাতৃত্ব। অমুসলমান ও সংখ্যালঘুদের প্রতিও ভ্রাতৃত্বের এই সম্মানজনক দ্বার খোলা রয়েছে বলেই ইসলাম ও মুসলমানদেরকে পৃথিবীর ইতিহাসে পাওয়া যাচ্ছে মানবতার মুক্তিদাতা হিসাবে।

ফলে ইসলামের অগ্রযাত্রায় যদি কোথাও প্রতিরোধ এসে থাকে, তবে তা করেছে সুবিধাভোগী পুরোহিত ও অভিজাত সম্প্রদায়গুলো। চিরস্থায়ী সত্যের একটি কলেমার সরল স্বীকৃতি সাধারণ মানুষ আর শ্রমিক শ্রেণীকে দাঁড় করায় অধীনতা থেকে বিজয়ীর সারিতে; মুসলিম মুক্তিদাতাদের সম-মর্যদায়। এমন কি, উপজাতি আর গ্রামের সামন্ত দলগুলোর সমস্ত সুবিধা, সম্মান আর প্রতিপত্তি অক্ষুন্ন থাকে।

আরও পড়ুন: পর্ব-২: সংখ্যালঘুর সমানাধিকার ও সম্মানের শিক্ষা দেয় ইসলাম

   

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর, ছবি : সংগৃহীত

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় নির্মিত মসজিদে নূর দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। নান্দনিক সৌন্দর্যের এ মসজিদটি কাছে টানছে দর্শনার্থীদের। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে মুসল্লিরা আসেন এখানে নামাজ আদায় করতে।

শতবর্ষের পুরোনো কোনো মসজিদ না হলেও এর সৌন্দর্যের কথা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। মসজিদটিতে আসা মুসুল্লিদের দাবি, বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগে এমন সুন্দর নান্দনিক মসজিদ আর নেই।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

মসজিদের দায়িত্বে থাকা ইমাম জানান, মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মসজিদের কাঠামো। যা দেশের বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয়েছে।

জানা গেছে, হজে যাওয়ার পর মদিনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মসজিদটি নির্মাণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল হক চিশতী (ওরফে বাবুল চিশতী)। তিন দরজাবিশিষ্ট মসজিদের ছাদের মাঝখানে আছে বড় একটি গম্বুজ। যার ভেতরের অংশেও আছে সুন্দর নকশার সমাহার। আর চারপাশে পিলারের ওপর নির্মিত হয়েছে সাতটি গম্বুজসহ চারটি বড় মিনার। মসজিদটির সৌন্দর্য দেখতে প্রায় প্রতিদিনই দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসেন দর্শনার্থীরা।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

বকশীগঞ্জের শহরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে এই মসজিদটি। পৌরসভার দড়িপাড়ায় ব্যক্তিগত অর্থায়নে তৈরি করা হয়েছে নান্দনিক সৌন্দর্য ভরা মসজিদে নূর। তুরস্কের আদলে তৈরি করা মসজিদটি দ্বিতলবিশিষ্ট ও সম্পূর্ণ কারুকার্যমণ্ডিত। এই মসজিদে দুই হাজার ৫০০ মুসুল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

শেরপুর থেকে শাউন মোল্লা নামের এক দর্শনার্থী পরিবারকে নিয়ে এই মসজিদ দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, আমার অনেক বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশী এই মসজিদ সম্পর্কে বলেছে। আসবো আসবো করে আসা হয় না। এবা সুযোগ বের করে পরিবার নিয়ে এসেছি, নামাজও পরলাম।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

স্থানীয় বাসিন্দা লাভলু মণ্ডল জানান, মাহবুবল হক চিশতী অনেক সময় ধরে এই মসজিদ তৈরি করেছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে মসজিদ তৈরির উপকরণ নিয়ে আসা হয়েছে।

মসজিদের মোয়াজ্জিন মো. মিজানুর রহমান বলেন, এই মসজিদের মূল ক্যাম্পাসের পবিত্রতা রক্ষার জন্য চারপাশে আছে দেয়াল। আঙিনাজুড়ে রয়েছে সারিবদ্ধ ঝাউ গাছ। ফুলের বাগানে ঘেরা এই মসজিদের পাশে বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, মাদরাসাসহ দৃষ্টিনন্দন একটি অজুখানা রয়েছে। অজুখানাটিও দেখতে বেশ সুন্দর, দৃষ্টিনন্দন।

মসজিদের নূরের ইমাম মো. বেলাল হোসেন বলেন, পাঁচ একর জায়গাজুড়ে এই মসজিদে ২০১৮ সালের ১১ মে প্রথম জুমার নামাজের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নামাজ আদায় করা শুরু হয়।

;

গরমে কোরবানির পশু নিয়েও ভাবতে হবে



সাকী মাহবুব, অতিথি লেখক, ইসলাম
পশুর খামার, ছবি : সংগৃহীত

পশুর খামার, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানিতে পশু লাগতে পারে এক কোটি ত্রিশ লাখের মতো। অন্যদিকে এবার চাহিদার অতিরিক্ত পশু রয়েছে ত্রিশ লাখ। কাজেই কোরবানিতে পশুর কোনো অভাব হবে না। অতএব কোরবানির পশু নিয়ে দুর্ভাবনার কোনো কারণ নেই।

কিন্তু চলমান তাপপ্রবাহের প্রভাবে খামারিদের গরু-ছাগলের প্রাণহানি কিংবা ওজন কমে যাওয়ার বিষয়টিকে নিছক গোষ্ঠীবিশেষের বিড়ম্বনারূপে দেখার সুযোগে নেই। যখন খামারিরা আসন্ন কোরবানির জন্য তাদের পশু প্রস্তুত করছেন, তখন এরূপ ক্ষয়ক্ষতির জেরে ভোক্তাসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি আক্রান্ত হতে বাধ্য।

সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, গরুকে বারবার গোসল করিয়ে, টিনের চালে পাটের ভিজা বস্তা বিছিয়ে, স্যালাইন ও গ্লুকোজ খাইয়ে এবং বৈদ্যুতিক পাখা চালিয়েও পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ খামারিরা। এ রকম দুর্দিনে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর শুধু পরামর্শ দিয়ে দায় সারতে পারে না।

রিপোর্টে প্রকাশ, গরমে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িতে দুগ্ধ উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। আসলে সারাদেশের চিত্র এমনই হতাশাজনক। তাপপ্রবাহে পশুর নানাবিধ সমস্যার সঙ্গে দুধের উৎপাদন ব্যাহত হবার মাধ্যমেও খামারিদের সংকটের অবস্থা স্পষ্ট। বিশেষত ঈদুল আজহায় নিজস্ব পশু দিয়ে কোরবানি করার যে সক্ষমতা দেশ অর্জন করেছে, সেখানে তাপপ্রবাহের চোখ রাঙানি লক্ষণীয়। যেহেতু খামারিদের হাতে সময় কম, সেহেতু তাদের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে তাপপ্রবাহসৃষ্ট ক্ষতিরোধ করা সম্ভব।

খবরে আরও বলা হয়েছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে কোরবানির গরু-ছাগল অজ্ঞাত নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও কাঁপুনির লক্ষণ স্পষ্ট হওয়ার পর পশুগুলো ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না করার কারণে দুর্বল হয়ে পড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মারাও যাচ্ছে। অনেক খামারি গরু-ছাগল আক্রান্ত হওয়ায় লোকসানে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এমন বিপদে খামারিদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানো প্রয়োজন। এ সময় যেখানে আক্রান্ত পশুগুলোর চিকিৎসা বিনামূল্যে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, সেখানে উল্টো খামারিরা অভিযোগ করেছেন, আগে গরু অসুস্থ হলে ভেটেরিনারি চিকিৎসক মোটরসাইকেলে খামারে আসতেন। তাকে তখন যত অর্থ দিতে হতো, এখন ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিকের বড় গাড়ি আসার কারণে কয়েক গুণ ফি পরিশোধ করতে হয়। এ চিত্র কেবল হতাশাজনক নয়; বরং নিকৃষ্ট উদাহরণ।

পরিস্থিতির আলোকে আধুনিক খামারিরা পূর্বপ্রস্তুতি নিতে সক্ষম হলেও প্রান্তিক খামারি অধিকাংশই জানেন না, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কী করতে হবে। তাই খামারিদের ক্ষতি পোষানো, আক্রান্ত পশুর চিকিৎসা প্রদানসহ দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়াতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরকেই সবার আগে তৎপর হতে হবে। গবাদি পশু রক্ষা করতে পরিস্থিতির আলোকে পদক্ষেপ নিতে সচেতনতা বৃদ্ধির বার্তা খামারিদের কাছে পৌঁছাতে হবে।

চলমান তাপপ্রবাহে আক্রান্ত পশুর দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ সংকটকালীন বিনামূল্যে চিকিৎসার বিষয় বিবেচনাযোগ্য। খামারিদের সহায়তায় বেসরকারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয়রাও পাশে দাঁড়ালে সংকট দূর হবে এবং কোরবানির সক্ষমতায় কোনো ছেদ পড়বে না। বিষয়টি সবাইকে ভাবতে হবে।

;

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরব যেসব পদক্ষেপ নিল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
পবিত্র মক্কা, ছবি : সংগৃহীত

পবিত্র মক্কা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শুধুমাত্র হজ ভিসায়ই পবিত্র হজপালন করা যাবে, এছাড়া হজযাত্রীদের মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। সেই সঙ্গে নিবন্ধন ও যথাযথ অনুমতি ছাড়া কেউ মক্কায় প্রবেশ করতে পারবে না। সুষ্ঠুভাবে হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে নতুন ব্যবস্থাপনার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ। নতুন এসব বিধান-প্রবিধানের মাধ্যমে পবিত্র স্থানগুলোতে হজযাত্রীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও তাদের নিরাপত্তা সুসংহত করাই কর্তৃপক্ষের মূল উদ্দেশ্য।

শনিবার (৪ মে) সৌদি আরবের জেনারেল ডিরেক্টরেট অফ পাবলিক সিকিউরিটির এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রেজিস্ট্রিবিহীন হজপালন কমাতে মক্কায় প্রবেশ করতে ইচ্ছুক সৌদি নাগরিকদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি গ্রহণ বাধ্যতামূলক। আইনটি শনিবার (৪ মে) থেকেই কার্যকর করা হয়েছে।

বিবৃতিতে জোর দেওয়া হয়েছে, মক্কার প্রবেশপথে থাকা চেকপয়েন্টগুলোতে সৌদি নিরাপত্তা কর্মীরা যথাযথ অনুমতি ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না। শুধুমাত্র হজ ও উমরার ভিসাধারী, আবাসিক বাসিন্দা এবং ওয়ার্ক পারমিটধারীরা মক্কায় প্রবেশ করতে পারেবেন।

উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না
উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না মর্মে আইন পাস করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। দেশটির হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় বলেছে, উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না। বরং হজের জন্য আলাদা ভিসা করতে হবে। এ ছাড়া টুরিস্ট ভিসা, ট্রানজিট ভিসায়ও হজপালন করা যাবে না- মর্মে জানানো হয়েছে।

ইসলামিক ইনফরমেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যাদের উমরার ভিসা রয়েছে, তাদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। উমরার ভিসায় হজযাত্রীরা হজ করতে পারবেন না। তাদের অবশ্যই আলাদাভাবে হজের ভিসা গ্রহণ হবে।

সৌদি আরবে যারা আছেন তাদেরও হজপালনের অনুমতি নিতে হবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি
সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণলয় হজ ২০২৪-এর জন্য স্বাস্থ্যবিধি জারি করেছে। সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হজযাত্রীদের অবশ্যই হজ পারমিট নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য তারা নুসুক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারবে। বৈধ হজযাত্রার জন্য তা অপরিহার্য। একইসঙ্গে হজযাত্রীদের সেহাত অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে। সৌদি বাসিন্দাদের গত পাঁচ বছরের মধ্যে কোভিড-১৯, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন দিতে হবে।

বিধিতে আরও বলা হয়, স্থানীয় হজযাত্রী ছাড়া অন্যদের নেইসেরিয়া মেনিনজিটিডিস ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে। সেজন্য মক্কা পৌঁছানোর কমপক্ষে ১০ দিন আগে ওই ভ্যাকসিনটি গ্রহণ করা উচিত।

সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, প্রত্যেক হজযাত্রীকে নিজ দেশ থেকে একটি স্বাস্থ্য শংসাপত্র আনতে হবে। এর মাধ্যমে হজযাত্রী সংক্রামক রোগ থেকে মুক্ত কিনা, তা যাচাই করা হবে।

সিনিয়র স্কলার কাউন্সিল জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই নতুন ব্যবস্থাপনা হজের আয়োজনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। কর্তৃপক্ষ এর মাধ্যমে হজযাত্রীদের জন্য পরিষেবা উন্নত করবে। সবার জন্য একটি নিরাপদ ও অর্থবহ হজ নিশ্চিত করাই এর লক্ষ্য।

উল্লেখ্য, আগামী ৯ (১১ জিলকদ) থেকে হজযাত্রীদের সৌদি আরব গমন শুরু হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ জুন পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হবে।

;

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঘৃণা ও বৈষম্যের ক্রমবর্ধমান ঘটনার মধ্যে বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের ও মুসলমান বলে মনে করা লোকদের রক্ষা করতে জার্মান সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। জার্মানি মুসলিমবিরোধী অপরাধের কার্যকর নীতিমালা নেই। সরকারের নেই কোনো নজরদারি ও তথ্য। এর ফলে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার পেতে আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইউরোপে বর্ণবাদের ওপর গবেষক আলমাজ টেফেরা বলেছেন, মুসলিমদের ঘৃণা ও বৈষম্য থেকে রক্ষা করতে জার্মান সরকারের ব্যর্থতার কারণ মুসলিমদের ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা।

মুসলমানরা কী কারণে বর্ণবাদ অনুভব করছে যা শুধু কেবল বিশ্বাসভিত্তিক শত্রুতা নয়। জার্মানিতে মুসলিমবিরোধী ঘৃণা, বৈষম্য, বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনা এবং মুসলিমদের ডাটা সম্পর্কে স্পষ্ট বোঝাপোড়া ছাড়া জার্মান কর্তৃপক্ষের যেকোনো প্রচেষ্টা অকার্যকর হবে।

২০২৩ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৯ মাসে মুসলিম ঘৃণামূলক অপরাধের পরিসংখ্যানে ৬৮৬টি ‘ইসলামবিরোধী’ অপরাধ গণনা করা হয়েছে। ২০২২ সালে ১২ মাসে তা ছিল ৬১০টি।

২০২৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে- অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে সঙ্কট সৃষ্টি হলে অক্টোবর থেকে মুসলিম বিরোধী ঘটনা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করেছে জার্মান নাগরিক সমাজের দলগুলো।

জার্মানিতে বাস করা প্রায় ৫৫ লাখ মুসলমানের অনেকেই বলছেন, তারা প্রতিদিন ইসলামবিদ্বেষের মুখোমুখি হন৷ যদিও জার্মানির সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা দেওয়া আছে৷

জার্মানির সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ মুসলিমের মহাসচিব আব্দুস সামাদ আল ইয়াজিদি বলছেন, ইসলামবিদ্বেষ বিষয়টি জার্মান সমাজের মূলধারায় ঢুকে গেছে৷ অর্থাৎ এটি অনেকটা গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে, যা প্রকাশ্যে প্রকাশ করা যায় বলে মনে করেন তিনি৷

তিনি জার্মানিতে মুসলমানদের বিষয় দেখাশোনা করার জন্য একজন কমিশনার নিয়োগ দিতে জার্মানির কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷

;