সংখ্যালঘুর সমানাধিকার ও সম্মানের শিক্ষা দেয় ইসলাম



ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ধর্মীয়, জাতিগত, ভাষাগত সংখ্যালঘুর মানবাধিকারের দাবিতে সোচ্চার বিশ্ব সম্প্রদায় আইনগত ও সামরিক-বেসামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেও বিশ্বব্যাপী নিপীড়িত মানবতার আহাজারি থামাতে পারছে না। বরং ইসলামে সংখ্যালঘুর অধিকার সংরক্ষণের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত থাকার পরেও মুসলিমরাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত। ‘ইসলামে সংখ্যালঘুর অধিকার’ সম্পর্কে ঐতিহাসিক পর্যালোচনা: পর্ব- ২

সামান্যতম সংখ্যালঘু উৎপীড়নের আশঙ্কাকা এড়ানোর জন্য মুসলমানের পক্ষে জিম্মির জমি ক্রয় করা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং এমন ব্যবস্থা করা হয়েছিল যে- ইমাম, খলিফা, সুলতান বা সাধারণ মুসলমান, কেউই জিম্মিকে তার সম্পত্তি থেকে বেদখল করতে পারবে না। আইনের চোখে মুসলমান আর জিম্মি ছিল সম্পূর্ণ সমান।

খলিফা হজরত আলী (রা.) বলেছেন, ‘তাদের রক্ত আর আমাদের রক্ত একই রকম।’ সমস্ত আধুনিক সরকার, এমন কি সবচেয়ে সভ্য সরকারগুলোও সমানাধিকার ও সংখ্যালঘু নীতির রক্ষার্থে ইসলাম ও এর ভিত্তিতে পরিচালিত শাসনকে তাদের আদর্শ করতে পারে। কারণ, তখন অপরাধের শাস্তির ব্যাপারে শাসক ও শাসিতের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হত না। ইসলামের আইন এই যে, কোনো মুসলমান একজন জিম্মিকে হত্যা করলে তার যা শাস্তি, জিম্মি কোনো মুসলমানকে হত্যা করলে তারও সেই একই শাস্তি।

প্রসঙ্গত খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর আমলের একটি ঘটনার উল্লেখ করা যেতে পারে। বকর ইবনে ওয়াইল নামে জনৈক মুসলমান হাইরূত নামে একজন খ্রিস্টানকে হত্যা করে। বিচার শেষে খলিফা আদেশ দেন, ‘হত্যাকারীকে নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের হাতে সমর্পণ করা হোক।’ অপরাধীকে হাইরূতের উত্তরাধিকারী হোনাইনের হাতে সমর্পণ করা হলে বদলা হিসাবে হোনাইন তাকে হত্যা করে।

পরবর্তীতে প্রসিদ্ধ হজরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (রহ.)-এর সময়েও অনুরূপ একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। নবী করিম (সা.), তার সাহাবি (রা.) এবং পরবর্তী উত্তরাধিকারীদের (রহ.) কর্ম ও আচরণের মধ্যে অমুসলমান ও সংখ্যালঘুদের প্রতি সমানাধিকার ও সম্মানজনক বিধানের শিক্ষাই লক্ষ্য করা যায়।

অমুসলমান ও সংখ্যলঘুদের প্রতি সহনশীল ও উদার ব্যবহারের উজ্জ্বল আরেক প্রমাণ হল, অমুসলমান ও সংখ্যলঘু জিম্মিগণ মুসলমানদের অসিয়তনামার নির্বাহক নিযুক্ত হতে পারতেন। তারা মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ কর্তা বা রেক্টর নিযুক্ত হতে পারতেন। আর ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের প্রয়োজন না থাকলে ধর্মস্বত্বে তত্ত্বাবধায়কের পদ পূরণ করতে পারতেন এবং কোনো সুযোগ্য বা গুণবাণ অমুসলমান মারা গেলে মুসলমানরা দলেবলে তার শেষকৃত্যে উপস্থিত থেকে অংশগ্রহণ করতেন। ইসলামের অধীনে প্রতিষ্ঠিত এমন অধিকার, মর্যাদা ও সম্মানের উদার উদাহরণ পৃথিবীর অন্য ধর্ম ও আদর্শের শাসনে শুধু বিরলই নয়; অকল্পনীয়ও বটে।

যদিও ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে সুস্পষ্ট কারণবশতঃ অমুসলমানদেরকে সামরিক নেতৃত্বে দেওয়া হয়নি; তথাপি অন্যান্য উচ্চবেতনযুক্ত ও দায়িত্বপূর্ণ পদে তারা মুসলমানদের সঙ্গে সম-অধিকারের ভিত্তিতে নিয়োগ লাভ করতেন। এই সমতা কেবল নীতিরই ব্যাপার থাকেনি; বাস্তবায়িতও হয়েছিল। কারণ ইসলামের সূচনাকালেই হিজরি প্রথম শতকে দেখতে পাওয়া যায় যে, খ্রিস্টান-ইহুদি-ম্যাজিয়ানরা গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় পদে নিযুক্ত হয়েছেন। প্রাথমিক শাসকগণ প্রজাদের মধ্যে কোনোরূপ ধর্মভিত্তিক পার্থক্য স্বীকার করেননি। আর পরবর্তী শাসকগণও অতি যত্ন সহকারে অগ্রণীদের উদাহরণ অনুসরণ করেছেন।

মোদ্দা কথায়, ইসলামী দেশগুলোতে যদি অমুসলমান-সংখ্যালঘুদের আচরণের সঙ্গে ইউরোপীয় সরকারগুলোর অধীনে অখ্রিস্টানদের প্রতি ব্যবহারের তুলনা করা হয়, তবে সকল বিবেচনায় সমানাধিকার, মানবতা আর মহত্ত্বের পাল্লা ইসলামের দিকেই ঝুঁকবে। আরবের বাইরেও ইসলামী শাসন বা মুসলিম প্রশাসনে অভিন্ন সমানাধিকারের বিবরণ দেখা যায় অমুসলমানদের প্রতি আচরণের ক্ষেত্রে।

দিল্লি¬র মুঘল সম্রাটদের অধীনে অমুসলিম হিন্দুরা সেনাবাহিনীর অধিনায়ক হতেন; প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিযুক্ত হতেন; সম্রাটের মন্ত্রী পরিষদ ও পরামর্শ সভায় সদস্যরূপে অন্তর্ভূক্ত হতেন। সুলতানী আমলের বাংলায় অমুসলমান হিন্দুরা ভাষা-শিল্প-সাহিত্য-ধর্ম প্রসারে রাষ্ট্রীয় পূর্ণ সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে নবজন্ম লাভ করেন। রাষ্ট্রীয় উচ্চপদে তাদের অবাধ বিচরণ বর্তমানকালের তথাকথিক সমানাধিকারের প্রবক্তাদের কাছেও ভাবনাতীত বিষয় বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

আজকে, এই একবিংশ শতাব্দীতেও কেউই জোর গলায় বলতে পারবে না যে, ইউরোপ-আমেরিকার পশ্চিমা আদর্শের অধীনস্থ মিশ্র জাতি ও ধর্ম বিশিষ্ট দেশগুলোতে বিশ্বাস, ধর্ম, বর্ণ, অঞ্চল, সংস্কৃতি ও বংশের ভিত্তিতে কোনো পার্থক্য নেই!

প্রসঙ্গত ইসলামে রাষ্ট্র ব্যবস্থার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে, স্রষ্টা মানুষের মধ্যে যেসব গুণাবলী দেখতে চান সেগুলোর প্রচলন, প্রতিপালন ও বিকাশ এবং তিনি যেগুলোকে ত্রুটিপূর্ণ মনে করেন সেগুলোতে বাধা দেওয়া ও দূর করা। ফলে ইসলামী রাষ্ট্র কোনো রাজনৈতিক প্রশাসনের হাতিয়ারে পরিণত হবে না এবং কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর ইচ্ছাপূরণের মাধ্যম হবে না। ইসলামে রাষ্ট্র কাঠামোয় ব্যক্তি ও রাষ্ট্র সম্মিলিতভাবে ঐশী বিধান অনুযায়ী ধার্মিকতা, নৈতিক উৎকর্ষতা, সৌন্দর্য, সচ্চরিত্রতা, সফলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মৃদ্ধির আদর্শ-স্থানীয় গুণসমূহ অর্জনের প্রয়াস চালাবে এবং একইসঙ্গে সকল ধরনের অন্যায়, অসভ্যতা, দুর্নীতি, ভ্রান্তি, অসহিষ্ণুতা ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই করবে। মানবতা ও মানব কল্যাণের জন্য হঠকারিতামুক্ত টেকসই আর স্থায়ী পরিকল্পনা ও কার্যক্রম ইসলামী ব্যবস্থার প্রধান অবলম্বন।

প্রকৃতিগতভাবে মানুষ স্বাধীনরূপে জন্মগ্রহণ করে এবং নিজের খুশি অনুযায়ী বেপরোয়াভাবে যা কিছু ইচ্ছা করতে চায়। দার্শনিক নিৎসরে মতে- ‘একটি শিশুকে জন্মের পর পরই যদি মানুষের তত্ত্বাবধান ছাড়া জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং সে যদি জীবজন্তুর মাধ্যমে লালিত-পালিত হয়, তাহলে সে তার বাকী জীবন জন্তুর মতোই আচরণ করবে। তাকে দেখতে অন্যান্য মানুষের মতো মনে হলেও সে কখনোই মানবিক আচরণ, গুণাবলী ও মর্যাদাবোধ পাবে না। সে কেবলমাত্র একটি সামাজিক ব্যবস্থায় অন্য মানুষের সঙ্গে মিশেই তার মানবিক সম্ভাবনা ও সুযোগকে বিকশিত ও বাস্তবায়িত করতে পারবে।’

নিৎসের বক্তব্যের সঙ্গে বর্তমান কালের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হলে দেখা যাবে, এখনও চরম শাস্তি বলতে কাউকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন ও নিঃসঙ্গ করা উল্লেখযোগ্য। এটাই ভয়ঙ্কর শাস্তি হিসাবে যথেষ্ট, যদি কাউকে কারারুদ্ধ করা হয়, নিঃসঙ্গভাবে আটকে রাখা হয়, এমনকি বিলাস বহুল অবস্থাতে। নিঃসঙ্গভাবে থাকার আরেকটি প্রতিফলন হচ্ছে কবরের ভীতি।

ইসলাম সম্মিলিত সামাজিক জীবন ও মূল্যবোধে বিশ্বাস করে। যে জীবন ও সমাজে থাকবে সম্প্রীতি, শান্তি ও ন্যায়বিচার। এ সব শর্ত মানুষকে তার শারীরিক অস্তিত্বের ঊর্ধ্বে উঠে চিন্তা করতে এবং পরকালের পরবর্তী জীবন সম্পর্কে প্রস্তুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে হজ, নামাজ, জাকাত, জিহাদ, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ ইত্যাদি ইবাদত বা প্রার্থণা ব্যক্তিগত হলেও চূড়ান্ত বিচারে সুন্দর মানুষের বিকাশের মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রকে সুন্দর করার কাজ হিসাবেই চিহ্নিত এবং সমাজ ও রাষ্ট্রকে সহায়তা করারই নামান্তর। ব্যক্তিবর্গের মন ও মানসিকতা এমন হলে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও সমানাধিকারের দায়িত্ববোধ জাগ্রত ও প্রতিষ্ঠিত হতে বাধ্য। এভাবেই নিজের, অন্য মানুষের ও সমাজের প্রতি কর্তব্যের ভিত্তিতে ইসলাম মানুষের জন্য সার্বজনীন মানবাধিকারের রূপরেখা প্রণয়ন করেছে এবং তা সকল পরিস্থিতিতে অনুসরণ করতে হবে। এ সকল অধিকার ও দায়িত্ববোধ মুসলমান ও অমুসলমান; সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু সকলের জন্যই সমভাবে প্রযোজ্য।

আরও পড়ুন: পর্ব-১: ইসলামে বর্ণবাদ ও বর্ণবৈষম্য বলে কিছু নেই

   

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঘৃণা ও বৈষম্যের ক্রমবর্ধমান ঘটনার মধ্যে বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের ও মুসলমান বলে মনে করা লোকদের রক্ষা করতে জার্মান সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। জার্মানি মুসলিমবিরোধী অপরাধের কার্যকর নীতিমালা নেই। সরকারের নেই কোনো নজরদারি ও তথ্য। এর ফলে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার পেতে আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইউরোপে বর্ণবাদের ওপর গবেষক আলমাজ টেফেরা বলেছেন, মুসলিমদের ঘৃণা ও বৈষম্য থেকে রক্ষা করতে জার্মান সরকারের ব্যর্থতার কারণ মুসলিমদের ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা।

মুসলমানরা কী কারণে বর্ণবাদ অনুভব করছে যা শুধু কেবল বিশ্বাসভিত্তিক শত্রুতা নয়। জার্মানিতে মুসলিমবিরোধী ঘৃণা, বৈষম্য, বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনা এবং মুসলিমদের ডাটা সম্পর্কে স্পষ্ট বোঝাপোড়া ছাড়া জার্মান কর্তৃপক্ষের যেকোনো প্রচেষ্টা অকার্যকর হবে।

২০২৩ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৯ মাসে মুসলিম ঘৃণামূলক অপরাধের পরিসংখ্যানে ৬৮৬টি ‘ইসলামবিরোধী’ অপরাধ গণনা করা হয়েছে। ২০২২ সালে ১২ মাসে তা ছিল ৬১০টি।

২০২৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে- অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে সঙ্কট সৃষ্টি হলে অক্টোবর থেকে মুসলিম বিরোধী ঘটনা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করেছে জার্মান নাগরিক সমাজের দলগুলো।

জার্মানিতে বাস করা প্রায় ৫৫ লাখ মুসলমানের অনেকেই বলছেন, তারা প্রতিদিন ইসলামবিদ্বেষের মুখোমুখি হন৷ যদিও জার্মানির সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা দেওয়া আছে৷

জার্মানির সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ মুসলিমের মহাসচিব আব্দুস সামাদ আল ইয়াজিদি বলছেন, ইসলামবিদ্বেষ বিষয়টি জার্মান সমাজের মূলধারায় ঢুকে গেছে৷ অর্থাৎ এটি অনেকটা গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে, যা প্রকাশ্যে প্রকাশ করা যায় বলে মনে করেন তিনি৷

তিনি জার্মানিতে মুসলমানদের বিষয় দেখাশোনা করার জন্য একজন কমিশনার নিয়োগ দিতে জার্মানির কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷

;

সরকারি কাজে হিজাব পরা ছবির অনুমোদন দিল রাশিয়া



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সরকারি কাজে হিজাব পরা ছবির অনুমোদন দিল রাশিয়া, ছবি : সংগৃহীত

সরকারি কাজে হিজাব পরা ছবির অনুমোদন দিল রাশিয়া, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রাশিয়ার সরকার হিজাব সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতিমালা শিথিল করেছে। ফলে এখন থেকে বিদেশি নাগরিকরা রাশিয়ার নাগরিকত্ব আবেদন, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাসপোর্ট ও বিভিন্ন সরকারি নথিতে হিজাব পরা ছবি ব্যবহার করতে পারবেন। রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় এই সংবাদ নিশ্চিত করেছে।

রাশিয়ার বার্তা সংস্থা আরটি জানিয়েছে, আগামী ৫ মে থেকে এই আইন কার্যকর হবে। এর দশ দিন আগে এই আইনের বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়। বিবৃতিতে জানানো হয়, যেসব মানুষ ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে অপরিচতদের সামনে মাথা খোলা রেখে আসতে পারেন না, তারা শুধুমাত্র মুখমন্ডলের ছবি দিলেই চলবে।

তবে রাশিয়ায় ইতোমধ্যেই স্থানীয় মুসলিম নারীরা ওয়ার্ক পারমিট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট বা অন্যান্য সরকারি নথিতে হিজাব পরিহিত ছবি ব্যবহার করতে পারেন।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বিইসুলতান খামাজেইভ বলেন, এই নতুন আইনের মাধ্যমে বিশ্বাসীরা তাদের ধর্মীয় অনুশাসন সহজেই মানতে পারবেন। সেই সঙ্গে মুখমন্ডলের ছবির মাধ্যমেই মনিটরিং সিস্টেমে তাদের তথ্য রাখতে পারবে সরকার।

ইউরোপের সব দেশের বিবেচনায় রাশিয়ায় সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মুসলমানের বসবাস। দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ। ১৯৯৭ সালে ইহুদি, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মের পাশাপাশি ইসলামকেও রাশিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রায় ১৬ কোটি রুশ নাগরিকের মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। শুধু মস্কোতেই ১০ লাখ মুসলমানের বসবাস। বর্তমানে ‘ইসলাম’ রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম।

বিগত দুই দশক রাশিয়ায় নতুন করে প্রায় আট হাজার মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। রাজধানী মস্কোতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে চারটি বৃহত্তম দৃষ্টিনন্দন মসজিদ কমপ্লেক্স। মস্কো ক্যাথিডাল মসজিদ তো এখন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এতে রয়েছে গ্রন্থাগার, হল রুম, মুসলিম মিউজিয়াম ও প্রদর্শনী গ্যালারি, যাতে ১০ হাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে। এখানে ঈদের নামাজে প্রায় তিন লাখ মানুষের সমাগম ঘটে।

;

অবৈধ হজযাত্রী ঠেকাতে যে উদ্যোগ নিচ্ছে সৌদি আরব



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রীর হাতে নুসুক কার্ডের একটি কপি তুলে দিচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রীর হাতে নুসুক কার্ডের একটি কপি তুলে দিচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বৈধ ও অবৈধ হজযাত্রীদের চিহ্নিত করতে এবার অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব। দেশটির হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৈধ হজযাত্রীদের চিহ্নিত করতে এবারের হজ মৌসুমে প্রত্যেককে আলাদা করে একটি ডিজিটাল কার্ড দেওয়া হবে। মূলত, অনুমোদন ছাড়া হজপালন নিরুৎসাহিত করতেই দেশটির এই উদ্যোগ বলে জানা গেছে।

অত্যাধুনিক এ কার্ড ছাড়া হজের পবিত্র স্থানগুলোতে চলাফেরায় কঠোর নিয়ম করা হচ্ছে। মক্কার হজের ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে প্রবেশকালে কার্ডটি বহন করা বাধ্যতামূলক। হজবিষয়ক জরুরি দুটি অ্যাপ ‘নুসুক’ ও ‘তাওয়াক্কালনা’-এর মধ্যে কার্ডটির ডিজিটাল ভার্সন পাওয়া যাবে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশি হজযাত্রীদের প্রথম দলটি সৌদি আরবে পৌঁছাবে দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে। ঠিক তার আগেই অবৈধ বিদেশি হজযাত্রীদের রুখতে এই উদ্যোগ নিল দেশটি।

সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী তাওফিক আল-রাবিয়া গত ৩০ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় আনুষ্ঠানিকভাবে ‘নুসুক’ কার্ড দেওয়ার প্রকল্প শুরু করেন। এ সময় তিনি ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী ইয়াকুত কালিল কওমাসকে ‘নুসুক’ কার্ডের একটি কপি তুলে দেন।

এ বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে দুই লাখ ৪১ হাজারের বেশি হজযাত্রী হজপালন করবেন। প্রতিবারের মতো এবারও দেশটির হজযাত্রীরা প্রথম হজ কাফেলা হিসেবে সৌদি আরবে প্রবেশ করবেন।

ডিজিটাল এই নুসুক কার্ডে সংশ্লিষ্ট হজযাত্রীর প্রয়োজনীয় সব তথ্য থাকবে এবং হজের জন্য পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে চাইলে এই ডিজিটাল কার্ড অবশ্যই প্রদর্শন করতে হবে। এ ছাড়া হজের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনেও বিভিন্ন জায়গায় এই ডিজিটাল কার্ড দেখাতে হবে।

সংশ্লিষ্ট দেশের হজযাত্রীদের জন্য ভিসা ইস্যুর পর কার্ডটি সংশ্লিষ্ট হজ অফিস বিদেশি হজযাত্রীদের কাছে হস্তান্তর করবেন এবং হজ পারমিট ইস্যুর পর স্থানীয় সৌদি হজযাত্রীরা দেশটির সংশ্লিষ্ট সরকারি কার্যালয় থেকে এই কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।

এর আগে গত মাসে এক বিবৃতিতে হজ করার ক্ষেত্রে অনুমোদনকে বাধ্যতামূলক হিসেবে ঘোষণা করেছে সৌদি আরবের শীর্ষ আলেমদের একটি সংগঠন। ‘সিনিয়র কাউন্সিল অব উলামা’ নামে সংগঠনটি জানিয়েছে, যারা অনুমতি ছাড়া হজ করতে যাবেন তাদেরকে হজ করার সুযোগ দেওয়া হবে না। তা সত্ত্বেও যারা হজ করবেন তারা এরমাধ্যমে পাপ করবেন।

এ ছাড়া সৌদি সরকার দেশটির সব হজ পালনকারীদের জন্য ‘সেহাতি’ অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে কোভিড, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও মেনিনজাইটিসের টিকার রেকর্ড উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক করেছে।

সরকারি আদেশে বলা হয়, ২০২৪ সালে এই সময়ের মধ্যে কোভিড-১৯ ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিনের অন্তত এক ডোজ ও গত ৫ বছরের মধ্যে মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিনের একটি ডোজের রেকর্ড উল্লেখ করতে বলেছে।

আসন্ন হজের প্রস্তুতি হিসেবে আগামী ৬ জুনের (২৯ জিলকদ) মধ্যে উমরা যাত্রীদের সৌদি আরব ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয়ের পূর্বঘোষণা অনুসারে, দেশটি গত ১ মার্চ থেকে হজের ভিসা ইস্যু করা শুরু করে গত ২৯ এপ্রিল (২০ শাওয়াল) এ কার্যক্রম শেষ করেছে।

আগামী ৯ (১১ জিলকদ) থেকে হজযাত্রীদের সৌদি আরব গমন শুরু হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ জুন পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হবে।

;

অপরূপ প্রকৃতির মাঝে দৃষ্টিনন্দন এক মসজিদ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, শ্রীমঙ্গল, ছবি : সংগৃহীত

জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, শ্রীমঙ্গল, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সবুজ বনানী, পাহাড় আর চা বাগানের অপরূপ দৃশ্য মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলকে পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচয় করিয়েছে। পর্যটকদের আনাগোনা থাকে এখানে। শ্রীমঙ্গলে অনেকেই দেখতে আসনে পাহাড়ের মাঝে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ।

শ্রীমঙ্গলের গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে সামনে দিকে গেলেই দেখা মিলবে মসজিদটির। জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদের প্রবেশদ্বার পেরিয়ে প্রথমে খাতায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর পর সুযোগ মিলবে তা পরিদর্শনের।

শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ, নেই কোনো কোলাহল। দূর থেকে দেখা যায়, সবুজের মাঝে সিঁড়ির লাল আর সাদা রঙের মিশ্রণ। শতাধিক সিঁড়ি। এই সিঁড়ি বেয়েই আপনাকে ওপরে ওঠতে হবে। চারদিকে সবুজ পাহাড়ঘেরা নৈসর্গিক পরিবেশ। রয়েছে সারি সারি চা বাগান। গুনে গুনে ১৫০ সিঁড়ি পাড়ি দিয়ে তবেই পৌঁছতে হবে মসজিদে।

জান্নাতুল ফেরদৌস নামে পরিচিত মসজিদটির নাম ‘মসজিদুল আউলিয়া খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.)। ‘মসজিদটি নিয়ে মানুষের আকর্ষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে, এর স্থাপত্যশৈলী আর অবস্থান।

প্রায় ১৯ বিঘা জমির ওপর নির্মিত হয় জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদটি। সমতল থেকে প্রায় ৭০-৮০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত মসজিদটি। চারপাশে রয়েছে, নানা রকমের গাছগাছালি। আছে লেবু ও আনারস বাগান। সবুজের সমারোহ চমৎকার পরিবেশ তৈরি হয়েছে মসজিদ ঘিরে। চারদিকে ঝিঁঝি পোকার ডাক আর নাম না-জানা পাখিদের কিচিরমিচির এক অন্যরকম পরিবেশের তৈরি করেছে।

খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.) ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত এই মসজিদটিতে প্রায় ৮০০ লোক একসঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের সৌন্দর্যবর্ধনে এর চারপাশে লাগানো হয়েছে নানা জাতের ফুলগাছ। এর গঠনশৈলীও চমৎকার। তুর্কি স্থাপত্যের আদলে নির্মিত মসজিদটির ভেতরে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন এক ঝাড়বাতি, যা আনা হয় সুদূর চীন থেকে।

মসজিদের সামনের অংশ

দর্শনীয় এই মসজিদটি নির্মাণ করেন খাজা টিপু সুলতান। টিপু সুলতান ছিলেন খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.)-এর সাহেবজাদা। এই খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.) আবার ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক সুফি-সাধক খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরীর (রহ.) উত্তরসূরি।

মসজিদটির প্রাঙ্গণে আছে দুটি গেস্টহাউস এবং একটি চিকিৎসাকেন্দ্র। এই চিকিৎসাকেন্দ্রে সপ্তাহের ছয় দিন গরিব মানুষদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া এখানে আছে একটা হেলিপ্যাড। গেস্টহাউসটি মূলত ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের পরিবারের সদস্যদের বিশ্রামের জন্য ব্যবহৃত হয়।

মসজিদের পাশেই রাখা হয়েছে কবরস্থানের জায়গা। শ্রীমঙ্গলে আগত পর্যটকরা একবার হলেও এখানে এসে ঘুরে যায়। এ ছাড়া প্রতিবছর ২৪ নভেম্বর এ মসজিদ ঘিরে আয়োজন করা হয় বার্ষিক ওরস মাহফিলের।

এই সিঁড়ি বেয়েই আপনাকে ওপরে ওঠতে হবে

জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদটি দেখতে প্রথমে আপনাকে আসতে হবে শ্রীমঙ্গল শহরে। গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে আসতে হয় এখানে। সিলেট শহর থেকে কিংবা গ্র্যান্ড সুলতানের সামনে থেকে সিএনজি বা ইজিবাইক রিজার্ভ করে যেতে পারেন। শহর থেকে যাওয়া-আসা ভাড়া প্রায় তিন থেকে চারশ টাকা। গ্র্যান্ড সুলতানের সামনে থেকে গেলে ভাড়া কিছু কম পড়বে। অটোরিকশা দিয়েও যেতে পারেন। চারপাশের মনোরম পরিবেশ দেখতে দেখতে পৌঁছতে পারবেন।

;