ডেঙ্গুর প্রভাবে আ'লীগের সম্মেলন অনিশ্চিত!

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

আবু হায়াত মাহমুদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-24 05:37:41

আগামী অক্টোবর মাসের শেষে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক ২১তম জাতীয় সম্মেলন। তবে দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ও বিভিন্ন এলাকা বন্যা কবলিত হওয়ায় অক্টোবর মাসে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, 'গত বৃহস্পতিবার লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী। এখন সুবিধামতো সময়ে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে ২১তম সম্মেলনের দিনক্ষণ ঠিক করবেন তিনি। তবে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ। পরিস্থিতির উন্নতি নেই। প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু মোকাবিলায় ব্যস্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতারা। তাছাড়া পুরো আগস্ট মাস জুড়ে রয়েছে শোকের কর্মসূচি। তাই থমকে আছে সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি।'

এ পরিস্থিতিতে অক্টোবরে জাতীয় সম্মেলন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের এক সাংগঠনিক সম্পাদক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'ডেঙ্গু ও বন্যা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বর্তমানে দলের সকল সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বন্ধ। ডেঙ্গু পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে যায়, সেটিও দেখার বিষয়। তবে অক্টোবরে সম্মেলন হচ্ছে না বা করা যাচ্ছে না বলে আমার মনে হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'সম্মেলন অক্টোবর থেকে পিছিয়ে নভেম্বরে নেওয়া হতে পারে। ডিসেম্বরে ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তারিখ ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই দলের জাতীয় সম্মেলন আগামী নভেম্বর হতে পারে। আর তা যদি সম্ভব না হয়, তবে আগামী বছরের জানুয়ারিতে ছাড়া আর সুযোগ নেই।'

যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'এটা সত্য যে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও বন্য মোকাবিলায় আমরা সম্প্রতি খুব ব্যস্ত। তাই দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়ে বর্তমানে কাজ করতে পারছি না।'

তিনি আরও বলেন, 'দেশের সর্ববৃহৎ ও প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে যেকোনো সময়ে একটি সম্মেলনের আয়োজন করা সম্ভব। দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর এ বিষয়ে আলোচনা হবে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দলীয় প্রধান সিদ্ধান্ত নেবেন যে, কাউন্সিল অক্টোবরেই হবে নাকি পেছানো হবে।'

একই কথা জানিয়েছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, 'অক্টোবরে সম্মেলন হবে সেভাবেই দলের সিদ্ধান্ত রয়েছে। এখনো কোনো পরিবর্তন আসেনি। সম্মেলনের সময় পরিবর্তনের কোনো খবর আমার কাছে নেই। এ ব্যাপারে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নেবেন।'

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর পর জাতীয় সম্মেলন হওয়ার বিধান রয়েছে। সেক্ষেত্রে আগামী ২৪ অক্টোবর বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। বিরোধীদের আন্দোলন ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলন বেশ কয়েকবার পেছানো হয়েছিল।

এদিকে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ পালিত হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। তাই এবারের সম্মেলন পেছানোর কোনো সম্ভাবনা ছিল না। কোনোরকম কালক্ষেপণ না করে যথা সময়েই সম্মেলন সম্পন্নের ব্যাপারে বিশেষ তাগিদ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন ও জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতিকে সামনে রেখে গত জুলাই মাসে দেশব্যাপী সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে দলটি। এরই ধারাবাহিকতায় প্রস্তুতিকে জোরদার করতে আটটি টিম গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু আকস্মিকভাবে ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তার ও বন্যা পরিস্থিতির জন্য সবকিছুই থমকে আছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর