‘এই সহিংসতা সুপরিকল্পিত, হরতাল দেওয়াই লক্ষ্য’

বিবিধ, রাজনীতি

আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক, বার্তা২৪.কম | 2023-10-28 21:34:10

তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী বীরবিক্রম বলেছেন, কোনো উসকানি ছাড়া এক পাক্ষিকভাবে বিএনপি আজ যেভাবে অ্যাম্বুলেন্স, হাসপাতাল ও পুলিশ সদস্যদের ওপর আক্রমণ করেছে তাতে মনে হচ্ছে হরতাল দেওয়ার লক্ষ্যেই হয়তো তারা (বিএনপি) এই সহিংসতা চালিয়েছে। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিরোধী রাজনীতিক দলের সমাবেশে সরকার বাধা দেবে কিনা জানতে চেয়েছিলেন। আজ এটি পরিষ্কার হয়ে গেল প্রকৃতপক্ষে কারা সহিংসতা করেছে। রাষ্ট্রদূত নিশ্চয় এটি যাচাই করবেন। 

শনিবার সন্ধ্যায় বার্তা২৪.কম-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন শমসের মবিন চৌধুরী। কথা বলেছেন পরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম। 

বার্তা২৪.কম: আজ থেকে দেশের রাজনীতি নতুন করে আবার সংঘাতের পথে পা বাড়াল...আপনি একজন জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক, কুটনীতিক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এদিনের ঘটনাপ্রবাহকে কিভাবে বর্ণনা করবেন?

শমসের মবিন চৌধুরী বীরবিক্রম:  আমরা গণমাধ্যমে যা দেখতে পাচ্ছি, তাতে এই সংঘাত-সহিংসতা মূলতঃ বিএনপি তরফ থেকেই শুরু হয়। দেখা গেছে গাজীপুর থেকে আগত আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী-সমর্থকদের গাড়িকে বিএনপির কর্মীরা আক্রমণ করে প্রথমে, তারপরে তারা বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা-ভাঙচুর করে। এবং একের পর এক গাড়িতে আগুন দেয়। পুলিশের হাসপাতালে অগ্নিসংযোগ করে, এম্বুলেন্সেও অগ্নিসংযোগ করে। আপনি জানেন যে, এম্বুলেন্স সব ধরণের সহিংসতার ঊর্ধ্বে থাকার কথা। এম্বুলেন্সকে কেউ কোন দিন আক্রমণ করবে না, আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি..মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যখন দেখতাম কোন এম্বুলেন্স যাচ্ছে-তাতে কে আছে না আছে আমরা যাচাই করতাম না। আমরা কখনো এম্বুলেন্সে গুলি চালাই নাই। হয়তো আমরা জানতাম এই এম্বুলেন্স এ ভেতরে হয়তো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা লুকিয়ে আছে তা সত্ত্বেও আমরা এম্বুলেন্সে কোন দিন গুলি করিনি। এটি একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আচরণ। সেখানে আমরা দেখলাম বিএনপির লোকজন পুলিশ হাসপাতালেও আক্রমণ হয়েছে, সেখানে অনেকেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম একজন পুলিশ সদস্য সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন এ সংঘাতের কারণে... এখন পর্যন্ত সহিংসতা এক পক্ষ থেকেই আসছে মনে হচ্ছে। যা দেখলাম গণমাধ্যমে। তারা (বিএনপি)। এখন একদফা আন্দোলনকে তারা ইতিমধ্যে সহিংসতার দিকে নিয়ে গেছে। আন্দোলন মানে তো সহিংসতা নয়। শেষ পর্যন্ত তারা সমাবেশটি করতেও পারলো না। যেহেতু পুলিশের ওপর আক্রমণ হয়ে গেছে, পুলিশ স্বাভাবিক নিজদের নিরাপত্তার স্বার্থে, প্রাণরক্ষার স্বার্থে যে ধরণের অ্যাকশন নেয়ার কথা তা নিবে। একজন মারা গেছেন, একাধিক আহত হয়েছেন। হাসপাতালে আক্রমণ হয়েছে, বিচারপতির বাসায় আক্রমণ হয়েছে, সেখান থেকে তাদের সমাবেশও ভণ্ডুল হয়ে গেল।

বার্তা২৪.কম: এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিএনপি আসলে কি অর্জন করতে চেয়েছিল বলে মনে করেন আপনি?

শমসের মবিন চৌধুরী বীরবিক্রম: তাদের যেটি লক্ষ্য ছিল, জানি না আসল লক্ষ্য কি ছিল। সহিংসতা ঘটাবে এই লক্ষ্য হয়তো ছিল...আমি জানি না।  হরতাল একটি সেকালের একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। এখন হরতাল জনগণের কাছে কতটুকু প্রাসঙ্গিক হবে সেটা ...আপনি জানেন যে মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতেই মানুষের দৈনন্দিন জীবন-জীবিকা বিপদের মুখে আছে। সেখানে হরতাল করা মানে আবারও তাদের কর্মসংস্থান থেকে বিরত রাখা। সেই হরতাল যদি জনগণ পালন করে স্বতোঃস্ফূর্তভাবে পালন করে সে এক কথা, আর যদি জনগণ হরতাল পালন না করে , জনগণ যদি তাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায় তাহলে তো বিএনপি’র এই হরতালও ভণ্ডুল হয়ে যাবে।

বার্তা২৪.কম: আগামী জাতীয় নির্বাচনে আজকের সহিংসতা কি প্রভাব ফেলবে বলে আপনি মনে করেন-

শমসের মবিন চৌধুরী বীরবিক্রম: বেশ কিছুদিন ধরে ‘শান্তিপূর্ণ নির্বাচন’ ‘শান্তিপূর্ণ নির্বাচন’ বলে আসা হচ্ছিল। আপনি জানেন যে, অতিসম্প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।  সেখানে তিনি জানতে চেয়েছিলেন যে সরকার বিএনপির সমাবেশে কোন বাধা দিবে কিনা। সরকারের পক্ষ থেকে কোন বাধা আমার নজরে এখনো পড়েনি। সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই, যদিও সমাবেশে হাজার হাজার লোক এসেছে, সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা হলো। এর আগে এই  ধরণের ঘটনা কখনো ঘটেছে কিনা আমার মনে পড়ছে না। এমনকি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় যে আন্দোলন ‘এরশাদ বিরোধী আন্দোলন’ আশির দশকের শেষ দিকে তখনও আমার মনে পড়ে না বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলার ঘটনা ঘটেছে কিনা? প্রধান বিচারপতির কোনো ভূমিকাই তো নেই এখানে। প্রধান বিচারপতি তো রাষ্ট্রের একটি পদ। এটি কোন ব্যক্তিগত বা সরকারি পদ নয়। তার বাসায় কেন হামলা? আমার যেটা মনে হচ্ছে, সহিংসতার এই ঘটনাটি সুপরিকল্পিত। হরতাল দেওয়া লক্ষ্যেই হয়তো তারা এই সহিংসতা করেছে। জানি না বিএনপির কতজন আহত হয়েছেন, বিএনপির কেউ হতাহত হয়েছে কিনা জানি না আমরা। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দেখলাম হরতালের ঘোষণা দিলেন, দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে আমরা দেখলাম না। সকালে কয়েকজনকে দেখেছিলাম। এখন বিষয়টা হচ্ছে যে, এতে আমি বিশ্বাস করি যে আগামী নির্বাচনে এসব বাধা হবে না। নির্বাচন সময় মতো হবে। বিএনপি নির্বাচন করবে কি করবে না সেটা বিএনপির সিদ্ধান্ত।

বার্তা২৪.কম: একই দিনে রাজধানীতে বিএনপি জামায়াতের পৃথক কর্মসূচি। আপনার কি মনে হয়, বিএনপির কাঁধে অন্য কেউ ভর করেছে...এই সহিংসতায় পরস্পরের কোনো সংযোগ কি দেখতে পান-

শমসের মবিন চৌধুরী বীরবিক্রম: আপনি কি মনে করেন জামায়াত আদৌ বিএনপি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে? হয়তো তারা আনুষ্ঠানিকভাবে একই সঙ্গে কর্মসূচি করে না কিন্তু যুগপৎ সহিংসতা তো তারা করলো। অনেক জামায়াত কর্মীদের দেখলাম মিছিল নিয়ে এগুচ্ছে এবং সরকারের পদত্যাগ দাবি করছে। বিএনপির মতোই একই ভাষায় কথা বলছে। দল দু’টি একে অপরের ওপর নির্ভরশীল তা দ্ব্যর্থহীনভাবেই বলা যায়। 

বার্তা২৪.কম: আজকে বিএনপি’এই সহিংসতা পশ্চিমাবিশ্বের কাছে কি বার্তা গেল?

শমসের মবিন চৌধুরী বীরবিক্রম: মার্কিন রাষ্ট্রদূত ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বস্ত হতে চেয়েছিলেন, বিরোধীদের কর্মসূচি সরকার বাধা দেবে না। আমি বলতে চাই, তারা আজকে দেখুক সচক্ষে । আওয়ামী লীগের সমাবেশটি তো সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ছিল, যা দেখলাম। কোন ধরণের সহিংসতা ছিল না। রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক স্লোগান তো দিয়েই যাবে। কিন্তু আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে কোন সহিংসতা আমরা দেখিনি। বাধাও তেমন দেখিনি। আজকে সকল সহিংসতা একদিক থেকেই এসেছে। অনেক দূতাবাস এখানে আছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের তৎপরতা..তিনি সবই দেখেছেন নিশ্চয়ই। তিনি সেটা যাচাই করবেন, যে সহিংসতা কারা করেছেন।    

এ সম্পর্কিত আরও খবর