‘সংলাপ’ ব্যর্থ হলে লংমার্চ-হরতাল-অবরোধ

বিএনপি, রাজনীতি

মুজাহিদুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 17:58:48

আসন্ন নির্বাচনে অংশহণ অথবা দাবি আদায়ে আন্দোলন উভয় পথেই চলতে চায় বিএনপি। চলমান সংলাপ সফল হলে নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং সফল না হলে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে ইতোমধ্যে তৃণমূলকে নির্দেশ দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। তৃণমূলও কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন বা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

দলের তৃণমূল ও মহানগরের একাধিক নেতার সাথে আলোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে। তাদের মতে, দাবি আদায় না হলে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বিএনপি চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে পারে।

বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, মূলত সরকারকে চাপে রাখতে তিনটি কৌশল অবলম্বন করে আন্দোলনের ছক তৈরি করা হয়েছে। আন্দোলনের প্রথম ধাপে মানববন্ধন, গণঅনশন, গণসংযোগ কর্মসূচি থাকবে। দ্বিতীয় ধাপে লংমার্চ-রোডমার্চ এবং তৃতীয় ধাপে হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি থাকবে। তবে সরকারের সাথে আলোচনার পথও খোলা রাখতে চায় দলটি।

সূত্রটি আরো জানিয়েছে, হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির আগে ঢাকায় বড় ধরনের জনসভা করতে চায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের জনশক্তি না থাকায় জনসভার সব আয়োজন ও কর্মী সংস্থান বিএনপিকেই যোগান দিতে হবে।  আগামী ৬ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওই জনসভা করবে ঐক্যফ্রন্ট, যেখান থেকে সরকারকে স্পষ্ট বার্তা দেয়া হবে। তারপরও যদি সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পাওয়া যায় তাহলে দুই ধাপে কর্মসূচি দেবে জোট। সবশেষে চূড়ান্ত আন্দোলন যাবে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বার্তা২৪.কম’কে  বলেন, ‘সাত দফা দাবি বাস্তবায়নে কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। আন্দোলন-সংগ্রাম ছাড়া ভিন্ন কোনো পথ নেই। ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে যা কিছু অর্জন তা ত্যাগ ও জীবনের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে। তাই সংগ্রাম থেমে থাকবে না, সংগ্রাম চলছে, চলবে। জনগণের দাবি আদায়ের প্রতিশ্রুতি আমরা রক্ষা করবো।’

তিনি আরো বলেন, ‘সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনসহ ৭ দফা দাবি আদায়ে যারাই মাঠে নামবে আমরা তাদের স্বাগত জানাতে পারি। সে যে দলেরই (জামায়াত) হোক। কেউ যদি অতীতে ভুল করে এখন জনগণের পক্ষে থাকে তাকে আমি স্বাগত জানাবো, এটাই রাজনীতির নিয়ম।’

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের এই বক্তব্যে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, তারা জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েই আন্দোলনের ছক আঁকছেন। তবে বিএনপি মনে করে, সরকার সহজে তার অবস্থান থেকে সরে আসবে না। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায় করতে হলে জনগণকে সম্পৃক্ত করে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সেই লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে দলটির।

বিএনপি নেতাদের দাবি, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠায় নিজেদের সক্ষমতা বেড়েছে। দলটি মূলত নির্বাচন ও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু সরকার সংলাপে রাজি হওয়ায় সুযোগটিকে হাতছাড়া করতে চায়না দলটি। তাই আগে সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে, পরে আন্দোলন।

বিএনপির সাংগঠনিক পদের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনকে হাতে রেখে একদিকে গতানুগতিক সভা, সমাবেশ করা হবে, অপরদিকে ধারাবাহিকভাবে দেশ অচল করে দেয়ার মতো কর্মসূচিও দেয়া হবে। তবে এখনি এদিকে না গিয়ে সরকার সংলাপ সমঝোতায় কতটা সম্মতি দেয় তা বিবেচনা করা হবে।

সম্প্রতি গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কর্যালয় ও নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একাধিক বৈঠক করেছেন বিএনপি নেতারা। বৈঠকে সরকারের সঙ্গে সংলাপ, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভূমিকা ও নিজেদের সক্ষমতা মূল্যায়ন করা হয়। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, দলের নেতারা মনে করেন এখনও বিএনপির জনপ্রিয়তা আছে, মাঠ পর্যায়ে পর্যাপ্ত লোকবল আছে। তবে তৃণমূল চাচ্ছে কেন্দ্রের নির্দেশনা। সরকারকে কেন ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচনের সুযোগ দেয়া হবে? আন্দোলনের মাধ্যমে সমাধান খোঁজার পরামর্শ দেন মধ্যম সারির নেতারা। সেখানে যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর