এতিমদের টাকা চোররা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

সেন্ট্রাল ডেস্ক ২ | 2023-08-28 14:49:53

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা এতিমদের টাকা চুরি করেছে, তারা যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে; সেজন্য আমি সবার কাছে আহ্বান জানাচ্ছি। গতকাল বুধবার বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের বিশ্ব স্বীকৃতি উদযাপন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি একথা বলেন। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নচিত্র দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দিতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। সাতই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ উপলক্ষে এই জনসভার আয়োজন করা হয়। এতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দলীয় প্রচারের দিকটাও ছিল উল্লেখ করার মতো। দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে বিভিন্ন রংয়ের পোশাক পরে বর্তমান ও সম্ভ্যব্য প্রার্থীর সমর্থকদের শক্তির জানান দিতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশের এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্যের আগে নৌকা আকৃতির মঞ্চে দাঁড়িয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণ তার ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ কবিতাটি শোনান। জনসভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, লে কর্নেল (অব.) ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ। জনকল্যাণে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের, দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করে থাকে। আমাদের লক্ষ্য জনগণের উন্নয়ন। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে। কিন্তু এর আগে যারা সরকারে ছিল, সেই জিয়া সরকার, এরশাদ সরকার বা খালেদা জিয়ার সরকারের সময় দেশ তো এত উন্নত হয়নি। কারণ তারা স্বাধীনতাই বিশ^াস করে না। তারা শুধু নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছে। ভাঙ্গা সুটকেস জাদুর বাক্স হয়ে গেছে। আর ছেড়া গেঞ্জি থেকে ফ্রেন্স শিপন বের হয়। জিয়াউর রহমান, এইচ এম এরশাদ ও খালেদা জিয়া কখনো দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করেননি অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাই আপনাদের কাছে আমার আহ্বান, যুদ্ধাপরাধী-খুনিরা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে, সেজন্য সবাই সতর্ক থাকবেন। খালেদা জিয়ার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, যারা এতিমদের টাকা চুরি করেছে, দুর্নীতি করে বিদেশে টাকা পাচার করেছে। দেশের মানুষকে হত্যা করে, আগুন দিয়ে পোড়ায়, এরা যেন আর কোনো দিন ক্ষমতায় না আসতে পারে। দেশকে যেন আর ধ্বংসের দিকে না নিতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যেন বাংলাদেশ এগিয়ে যায়। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। এসময় তিনি জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক থেকে যুব সমাজকে রক্ষায় সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে দেশকে সন্ত্রাসের অভ্যারণ্যে পরিণত করেছিল অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তারা দেশকে একটা নরকে পরিণত করেছিল। ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে খালেদা জিয়া আন্দোলনের নামে আগুন দিয়ে প্রায় তিন হাজার মানুষকে পুড়িয়েছে। এটা যেন একটা উৎসব। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতির ২৩ বছরের সংগ্রাম ও বঞ্চনার ইতিহাস এবং মুক্তির জন্য সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরেন তার কন্যা। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় আসে। যেখানেই এই ৭ মার্চের ভাষণ বাজতো, তারা বাধা দিত। আমি স্যালুট জানাই, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আমাদের নেতাকর্মীদের। সকল বাধা উপেক্ষা করে এই ভাষণ বাজানো হয়। জাতির পিতার নামটিও তারা মুছে ফেলতে চেষ্টা করেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ইতিহাস কেউ নিশ্চিহ্ন করতে পারে না। ইতিহাসও প্রতিশোধ নেয়। আজকে তা প্রমাণ হয়েছে। তিনি বলেন, এই ৭ মার্চের ভাষণ আজ ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিলে স্বীকৃতি পেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বক্ষণে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পুরো জাতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করতো জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সময় ইয়াহিয়ার সামরিক ফরমান বাংলাদেশের মানুষ ছুড়ে ফেলে দিত। ৩২ নম্বর থেকে যে নির্দেশনা দিত, তারা মেনে নিত, এমনকি সে নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করত। সাতই মার্চের ভাষণের আবেদন শেষ হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে স্বাধীনতার কথা, অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলেন। স্বাধীনতা অর্জন করা গেলেও, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন সম্ভব হয়নি। আমাদের দায়িত্ব তার সেই আকাঙ্খা পূরণ করা। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এর আগে ভোরে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সাতই মার্চের কর্মসূচি শুরু করে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ও পরে দলীয় সভাপতি হিসেবে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর