চামড়ার দাম নিয়ে ব্যবসায়ী-পাইকারদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

ঢাকা, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 05:53:44

ঢাকা: রাজধানীর আড়তগুলোতে কোরবানির পশুর চামড়ার যৌক্তিক মূল্য না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, পাইকারদের সিন্ডিকেটের কারণে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পাইকাররা। তাদের দাবি, সরকার নির্ধারিত দামেই চামড়া কিনছেন তারা।

গতকাল বুধবার (২১ আগস্ট) ঈদের দিন সকাল থেকে রাজধানীবাসী নিজ এলাকায় পশু কোরবানি দেন। এরপরই পশুর চামড়া ফড়িয়া কিংবা মৌসুমী ব্যবসায়ীদের হাত ধরে তা চলে আসে সাইন্সল্যাব ও পোস্তায়। তবে এবার চামড়ার দাম নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। গরু, মহিষের চামড়া ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার আর ছাগল কিংবা ভেড়ার চামড়া বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪০ থেকে ৮০ টাকা দরে।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি হাজী মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত কয়েক বছরে চামড়ার দাম এত কম দেখিনি। নির্ধারিত দামের চেয়েও কম দামে বেচাকেনা হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ পশু বেশি জবাই হয়েছে। তাই চামড়ার দাম কিছুটা কম বলে মনে হচ্ছে।’

এবার ৭০ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন।

রফিকুল ইসলাম নামের এক মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় কম টাকায় বড় চামড়া কিনছি। গড়ে সাড়ে ৫শ টাকায় চামড়া কিনেছি। গতবারের চেয়ে বড় ও ভালো মানের চামড়া এবার অনেক কম দামে পেয়েছি। কিন্তু তারপরেও আড়তে বিক্রি করতে গিয়ে লাভের মুখ দেখছি না।’

মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না এমন অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, ‘নতুন ব্যবসায়ীরা অভিজ্ঞ না হওয়ায় তারা লোকসানে পড়েন। চামড়া চোখের পরিমাপে স্কয়ার ফিটে কেনা হয়। আমরা ২০ ফুট ধরে যে চামড়াটা কিনি, তারা সেটা ২৫ ফুট ধরে নিয়ে আসে। আড়াইশ টাকার পার্থক্য তখনই হয়ে যায়। তবুও এসব বিবেচনা করে আমরা সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে কিছুটা বেশি দামেই চামড়া কিনছি।’

সজীব আহমেদ নামের এক মৌসুমী ব্যবসায়ী বলেন, ‘কোম্পানি যে রেট দিছে, সে রেটে আমরা চামড়া কিনতে পারছি না। অনেক চামড়া অনেক জায়গায় চলে যাচ্ছে। আমরা চামড়া বিক্রি করে লাভের মুখ দেখছি না। আর এখনো আমার কিছু চামড়া রয়ে গেছে।’

সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী, ট্যানারি ব্যবসায়ীরা এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কেনার কথা ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় এবং ঢাকার বাইরের থেকে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। এছাড়া সারাদেশে খাসির চামড়া ১৮-২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৩-১৫ টাকায় সংগ্রহ করবেন ব্যবসায়ীরা।

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বছরে সারাদেশ থেকে কম বেশি ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া। এর অর্ধেকের বেশি আসে কোরবানির ঈদের সময়।

এদিকে চামড়া বিক্রির টাকা থেকে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল ব্যক্তিদের দান করেন কোরবানিদাতারা। এ বছর নামমাত্র দামে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তারা। চামড়ার ন্যায্য দাম না পাওয়ায় অনেক কোরবানিদাতা তা মাদরাসায় দান করে দিয়েছেন। আর নামমাত্র মূল্যে চামড়া বিক্রি হওয়ায় আর্থিক সহায়তার পরিমাণ কমে গেছে বলে জানালেন অনেকে।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর