রাজশাহীতে পরাজয়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জিততে চায় আ.লীগ

রাজশাহী, জাতীয়

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 20:38:12

রাজশাহী থেকে: ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মাঝেও সর্বত্র ভোটের আমেজ। হাতে সময় মাত্র একদিন। শেষ মূহুর্তে ভোটারদের মন জয়ে তাই সব শক্তি নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনে পাঁচজন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এবং বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের মধ্যে।

১৩৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১৪টি কেন্দ্রকেই গুরুত্বপূর্ণ বলছে প্রশাসন। অবশ্য এর কারণও আছে। গেলো বারের ভোটের হিসেবকে ভিত্তি ধরেই এগুচ্ছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে প্রশাসন যন্ত্রেরও বাড়তি দৃষ্টি এখানে।

সূত্রমতে, বিএনপি প্রভাবিত কেন্দ্রই এখানে বেশি। সিটি ভোটকে কেন্দ্র করে শান্ত এ শহরটি ঢেকে আছে উত্তাপের মোড়কে। উত্তাপের কারণ অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের নেতাদের কথায়। এক দিকে বাক যুদ্ধ,অন্যদিকে ভোট টানার কৌশল। জয়ে মরিয়া দুটি দলই। নিজেদের হারানো অবস্থান ফিরে পেতে একদিকে যেমন আওয়ামী লীগের চ্যালেঞ্জ। বিপরীতে নিজ দলের অবস্থান ধরে রাখতেও মরিয়া বিএনপি।

তবে এবার কেবল আত্নবিশ্বাসেই ভর করে নয়, গতবারের পরাজয়ের কারণ সনাক্ত করে বিএনপি অধ্যুষিত ভোট কেন্দ্রগুলোর ওপর বাড়তি নজর দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল।

যে কারণে পাল্টে যেতে পারে ভোটের হিসেব নিকেষ। এমনটিই বলছিলেন, সাহেব বাজার এলাকার বাসিন্দা শফিকুর রহমান।

তার মতে, ক্ষমতায় থাকার সুবিধে,সরকারে থাকার ধারাবাহিকতা, উন্নয়ন সেই সঙ্গে প্রশাসনে নিজেদের প্রভাব। সকল কৌশল নিয়েই এগুচ্ছে আওয়ামী লীগ।

আর বিএনপি।শেষ মুহূর্তের তাদের পরিস্থিতি কি?

"নিজেদের অর্ন্তকোন্দল, নানা ধারায় বিভক্তি নগরবাসীর কাঙ্খিত উন্নয়ন বঞ্চণা, বোমা কাণ্ডে অডিও ফাঁস, মামলা কাঁধে নিয়ে ঘর ছাড়া বিএনপি নেতাকর্মী, সমর্থকরা পুলিশের তাড়ার মুখে। এসব বিবেচনায় বাড়তি সুবিধে টুকুও ঘরে তুলবে আওয়ামী লীগ"- বলছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শফিকুর রহমান।

তার কথার সত্যতা মিলল নগরীর আনাচে কানাচে ঘুরে।

নগরীর সপুরায় ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ৬৭ নম্বর কেন্দ্র রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট। গতবার এ কেন্দ্র জিতেছিলো বিএনপি। এই কেন্দ্রের ভোটার বোয়ালিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল বাশার সুজন। অন্যদিকে রয়েছেন বিএনপি নেতা শাহিন ইকবাল।

আওয়ামী লীগ নেতা আবুল বাশার সুজন বলছিলেন, চেষ্টা করেও শাহিন ইকবালকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমরাও শাহিন ইকবালকে সেভাবে প্রচারে দেখিনি। এবার কিন্তু আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না, আমাদের জয়টাই টার্গেট।

একই চিত্র নগরীর বহরমপুরে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ১২ নম্বর কেন্দ্রে। ডিবি আনোয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনকে তৎপর দেখা গেলেও বিপরীতে একই কেন্দ্রের ভোটার বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম কানাকে দিনে রাতে খুঁজেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

সকল স্তরের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চলছে ভোটার তুষ্টি বাড়িয়ে আওয়ামী লীগের প্রতি ভোটারদের সমর্থন বাড়াতে। নিখুঁত ছক কষে নির্বাচনী কার্যক্রমে নিয়োজিত করা হয়েছে ত্যাগী নেতাকর্মীরা।

গতবারের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা এগুচ্ছি।গতবার হেফাজতের সমর্থন নিয়ে ঝামেলা ছিলো, এবার সেটা নেই। এটা আমাদের জন্যে স্বস্তির - বলছিলেন আওয়ামী লীগের এক নেতা।

এই নেতা আরও বলেন, নগরীর ১৪ নম্বর ওর্য়াডের ৮৮ নম্বর কেন্দ্র শিরোইল কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়।২০১৩ সালে এ কেন্দ্রে ভোটার ছিলো ২ হাজার ৮০০ জন। এ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন পেয়েছিলেন ৮৫২ ভোট এবং বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল পেয়েছিলেন ১ হাজার ৪১০ ভোট। ৫৫৮ ভোটের ব্যবধান। এমন ব্যবধানের যোগফলই ছিলো মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের বিজয়।

এমন কেন্দ্রগুলোতেই এবার আমাদের বাড়তি নজর। ব্যবধান কমিয়ে কিভাবে নিজেদের পক্ষে ভোট বাড়ানো যায়,সেটি মাথায় রেখেই কেন্দ্র প্রতি কর্মী মোতায়েন চলছে। কোন কৌশলে বিজয় অর্জন সম্ভব- সেটি নিরূপণেই পাল্লা দিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। যোগ করেন ওই নেতা।

একাধিক ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহানগরীতে কট্টর আওয়ামী লীগ বিরোধী অনুভূতিকে পূঁজি করে গতবার নগরবাসীর ভোট বিএনপি টানলেও এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন।

শেষ পর্যন্ত সকল সমীকরণ আর জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে কে হবেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নগর পিতা?

একদফা বিরতির পর আওয়ামী লীগ নেতা মহানগর সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সদস্য এবং জাতীয় নেতা শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের সন্তান এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র পদে পুনরায় ফিরবেন নাকি মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নিজের জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন?

আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠেয় ভোটেই মিলবে এ প্রশ্নের উত্তর।

 

ছবি: সংগৃহিত

এ সম্পর্কিত আরও খবর