বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ভরসা বাঁশ-বেত

, জাতীয়

নড়াইল প্রতিনিধি, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 01:53:13

নড়াইল: সদর উপজেলার আইড়িয়া গ্রামের ঋষিপাড়ায় প্রায় একশত পরিবারের বসবাস। তাদের প্রধান পেশাই হল বাঁশ ও বেত দিয়ে বিভিন্ন প্রকার বাহারি জিনিসপত্র তৈরি করে বিক্রি করা। আর এ কাজ করেই তারা তাদের ভাগ্য বদলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
 
মেলা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ হাট-বাজারে বাঁশ ও বেতের তৈরি ওই সব জিনিসপত্র বিক্রি করাই তাদের আয়ের একমাত্র উৎস। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের অধীনে ঋণ নিয়ে তারা চালিয়ে যাচ্ছে বেঁচে থাকার এ লড়াই।
 
জানা গেছে, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে প্রতিটি ইউনিয়নে একাধিক সমিতি রয়েছে। প্রতিটি সমিতিতে ৬০ জন সদস্য রয়েছে। এর মধ্যে ৪০ জন নারী এবং ২০ জন পুরুষ। প্রতি সদস্য সপ্তাহে ৫০ টাকা করে জমা করবে। এভাবে দুই বছর জমা করতে হবে। একটি সমিতিতে দুই বছরে ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা জমা হবে। এখানে সরকারের পক্ষ থেকে আরও সমপরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে। এছাড়া রয়েছে বিশেষ বরাদ্দ। সব মিলিয়ে প্রায় ৯ লাখ টাকা ওই সমিতির সদস্যদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করা হয়। এক বছরের মধ্যে ওই ঋণ পরিশোধ করে পুনরায় আরও বেশি ঋণ নেয়া যায়। সমিতি পরিচালনার জন্য ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি রয়েছে। 
 
নড়াইল সদর উপজেলায় ২১৮টি সমিতি রয়েছে। এর সদস্য সংখ্যা ৯ হাজার ৩৩৯ জন। সমিতিতে মূলধন রয়েছে প্রায় ১১ কোটি টাকা। যা সদস্যদের মাঝে বিতরণ করা হয়। এমনই একটি এলাকার নাম সদর উপজেলার আইড়িয়া গ্রামের ঋষিপাড়া। 
 
ঋষিপাড়া এলাকার দিপু কুমার বিশ্বাস ও তার স্ত্রী উন্নতি রাণী বার্তা২৪.কমকে বলেন,‘আমরা বেত দিয়ে ধামা, পালা, সের তৈরি করে তা হাট-বাজারসহ বিভিন্ন মেলায় বিক্রি করি। যা খরচ বাদে আমাদের প্রতি পিস মালে দেড় থেকে দুইশত টাকা লাভ হয়। সেই টাকা দিয়েই চলে আমাদের সংসার।’
 
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের অধীনে থাকা ঋষিপাড়া সমিতির সদস্য গৌতম বিশ্বাস বলেন, ‘এ সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে বাঁশ ও বেত কিনে বিভিন্ন জিনিস আমরা তৈরি করি। আমাদের এখান থেকে খুলনা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, যশোরসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি করা জিনিস ক্রয় করে বিক্রি করে। কার্তিক মাস থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত প্রায় ৯ মাস আমাদের কাজের খুব বেশি চাপ থাকে। এ সময় জিনিসপত্র বানিয়ে সংরক্ষণ করি এবং সারা বছর ধরে তা বিক্রি করি।’
 
গোউর বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বাসন্তী বলেন, ‘আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই এই সমিতির সদস্য। এখান থেকে ১০ হাজার টাকা  ঋণ নিয়ে বাঁশ কিনে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে হাট-বাজারে বিক্রি করছি। এখান থেকে পাওয়া লাভের টাকা দিয়ে সংসারের খরচসহ সন্তানকে লেখাপড়া শেখাচ্ছি। আমরা অনেক ভালো আছি।’
 
আরও পড়ুন: ঝিনাইদহে পানির দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁঠাল!
 
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আউড়িয়া ইউনিয়নের মাঠ সহকারী আল হেলাল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমাদের সমিতি সদস্যদের মধ্যে স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ করে। সদস্যরা তাদের ইচ্ছা মতো প্রতি মাসে বা বছর শেষেও ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারে। স্বল্প সুদ যেটা নেয়া হয় তাও আমাদের সমিতিতে জমা থাকে। স্বল্প আয়ের এসব মানুষকে এখন আর এনজিওর ঋণের জালে জড়াতে হচ্ছে না।’
 
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সদর উপজেলা সমন্বয়কারী (অ.দা.) মো. মনিরুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘অন্য সমিতি বা এনজিও তাদের ঋণের কিস্তির জন্য অনেক চাপাচাপি করে থাকে। তবে আমাদের এখানে সদস্যরা স্বাধীনভাবে তাদের সমিতি থেকে ঋণ নিতে এবং জমা দিতে পারে। প্রতিটি সদস্যদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা হলে পরে মোবাইলের গোপন পিন কোডের মাধ্যমে তারা টাকা তুলে নেন। কিস্তির কত টাকা তিনি জমা দিচ্ছেন তাও সাথে সাথে মোবাইলে ম্যাসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়। এ কারণে একজনের টাকা অন্য কারো কাছে যাওয়া বা তুলে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
 
তিনি আরও জানান, সদর উপজেলায় ২১৮টি সমিতি রয়েছে। এর সদস্য সংখ্যা ৯ হাজার ৩৩৯ জন। সমিতিতে মূলধন রয়েছে প্রায় ১১ কোটি টাকা। যা সদস্যদের মাঝে বিতরণ করা হয়। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর