ইন্টারনেটের অপব্যবহার ও রাজনৈতিক দুষ্টচক্রের সৃষ্টি কিশোর গ্যাং!

ঢাকা, জাতীয়

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-29 15:41:14

এ সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু ‘কিশোর গ্যাং’। সাধারণ জনগণ থেকে আইনশৃঙ্খলা-রক্ষাকারী বাহিনী সবারই মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এরা। রাজধানী থেকে শুরু হওয়া ‘কিশোর গ্যাং’-এর ট্রেন্ড ছড়িয়ে পড়েছে জেলা-উপজেলা কিংবা মফস্বল শহরেও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিবারিক অনুশাসনের অভাব, ইন্টারনেটের অপব্যবহার ও রাজনৈতিক দুষ্টচক্র, মূলত এই তিন কারণে গড়ে উঠছে কিশোর গ্যাং। যারা উঠতি বয়সেই সমাজে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ছে।

কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধগুলোর একটি বড় উদাহরণ বরগুনার রিফাত হত্যাকাণ্ড। ০০৭ নামের একটি কিশোর গ্রুপের সদস্যদের মধ্যকার মনোমালিন্য, স্বার্থের দ্বন্দ্ব থেকে সেখানে হত্যাকাণ্ডের মতো মারাত্মক ঘটনা ঘটে। যা গোটা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাসে কিশোর গ্যাং’র ১ হাজার ২০০জন সদস্যকে রাজধানীসহ সারা দেশ থেকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কিশোর গ্যাং’র সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করা হয়েছে ।

আরও পড়ুন: হিরোইজম থেকে কিশোর গ্যাং, আছে মাদকের প্রভাব!

তবে কিশোর অপরাধীদের সমস্যা শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ করে সমাধান করা যাবে না বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞদের দাবি এ সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে তৃণমূল পর্যায় থেকে। যার প্রথম ধাপ পরিবার, মাঝে সমাজ ও শেষ ধাপে রাষ্ট্র।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিগত ১০-১৫ বছর আগেও দেশে কিশোর গ্যাং নিয়ে কোনো আলোচনা ছিল না। কিন্তু গত ১০ বছরের ব্যবধানে দেশের প্রতিটি কিশোরের হাতে পৌঁছেছে স্মার্ট ফোন এবং ইন্টারনেট। অপরাধ প্রবণতা বাড়ায় এমন কিছুই ইন্টারনেটে কিশোররা শিখছে বেশি। পারিবারিক ও সামাজিক অনুশাসন ভেঙে পড়ায় কিশোরদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে।

ফলে তাদের ভেতরে সঠিক ও সুস্থ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকেই ট্রেন্ড হিসেবে দেখছে। এছাড়া এলাকা ভিত্তিক রাজনৈতিক ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্যও সচেতনভাবে কিশোর গ্যাং সৃষ্টি করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আকিব উল হক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘একজন কিশোর প্রাইভেসির নাম করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। সে খারাপ কিছু শিখছে কিনা তা পরিবারের লোকজন জানার চেষ্টা করছে না। পারিবারিক এমন সংস্কৃতি থেকেই কিশোররা ইন্টারনেটে নানা অপরাধমূলক অনুষ্ঠান দেখে নিজেকে অপরাধী হিসেবে গড়ে তুলছে।’

তিনি বলেন, ‘কিশোরকাল মানব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ সময় তাদের সুন্দর পরিবেশ উপহার না দিলে, তারা ভুল পথে চলে যাবে এটাই স্বাভাবিক। আমাদের সমাজে সেই পরিবেশ নেই বলেই কিশোররা অপরাধী হয়ে উঠছে। তাদের সুস্থ বিনোদনের অভাব, খেলার মাঠের অভাব ও সংস্কৃতি চর্চারও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। তাই কিশোররা ভুল পথে চলে যাচ্ছে।’

আরও পড়ুন: সন্ধ্যার পর কিশোররা বাইরে থাকবে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম কে বলেন, ‘শক্ত হাতে দমন করা হবে’ পুলিশের এসব কথা বললে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে আসবে না। মনে রাখতে হবে সামাজিক সমস্যার কারণে কিশোররা ভুল পথে চলে গেছে। শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ করে এই সমস্যা সমাধান করা যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেটের সুস্থ ব্যবহার, সামাজিক ও পারিবারিক অনুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত কৈশোর জীবন কাটানোর সুযোগ দিতে হবে তাদের। সুস্থ বিনোদন ও সৃষ্টিশীল কাজের পরিবেশ করে দিতে হবে। এছাড়া স্কুল ও কলেজে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে অনেকাংশে এ সমস্যা সমাধান করা যাবে।’

আরও পড়ুন: হাতিরঝিল থেকে কিশোর গ্যাংয়ের শতাধিক সদস্য আটক

এ সম্পর্কিত আরও খবর