রামেক হাসপাতালের বেসিনে এডিস মশার লার্ভা

রাজশাহী, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী | 2023-08-31 01:51:56

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ভেতরে, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের বাসভবন ও ছাত্রী হোস্টেলসহ নগরীজুড়ে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এডিস মশার লার্ভা। এর মধ্যে হাসপাতালের ভাঙা বেসিন ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচ স্থানে জমে থাকা পানির নমুনা পরীক্ষায় লার্ভা পাওয়া গেছে।

আর নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাড়ির ফুলের টব, পরিত্যক্ত পাত্র, দোকানের ব্যাটারির সেল ও টায়ারে এবং রাস্তার ধারের পাইপে জমে থাকা বৃষ্টির পানি থেকে সংগৃহীত নমুনাতেও উপস্থিতি মিলেছে লার্ভার।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. গোপেন্দ্র নাথ আচার্য্য বুধবার (৭ আগস্ট) সকালে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘রাজশাহীতে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি নিশ্চিত হতে কীটতত্ত্ববিদদের নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছিলাম। গত পাঁচদিন ধরে মাঠ পর্যায় থেকে নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহী নগরীতে এডিস মশার লার্ভার ব্যাপক উপস্থিতির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।’

ডা. গোপেন্দ্রনাথ আচার্য জানান, এডিস মশার ঘনত্ব, প্রজনন ক্ষেত্র ও বিস্তার সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জানতে গত ১ আগস্ট তিনজন কীটতত্ত্ববিদকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। গত ২ আগস্ট থেকে তারা কাজ শুরু করেন। পাঁচ দিনে তারা নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডের সন্দেহজনক জায়গাগুলো থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন।

গঠিত ঐ কমিটির প্রধান ছিলেন রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ তায়েজুল ইসলাম। কমিটির অপর দুই সদস্য ছিলেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের কীটতত্ত্বীয় কারিগর (টেকনিশিয়ান) আব্দুল বারী ও রাজশাহী সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের কীটতত্ত্বীয় কারিগর উম্মে হাবিবা।

কীটতত্ত্ববিদ তায়েজুল ইসলাম জানান, তারা রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফাল্গুনী হোস্টেলের সামনে আইসক্রিমের কৌটায় জমে থাকা পানি, অধ্যক্ষের বাসভবনের সামনে নারিকেলের মালায়ে জমে থাকা বৃষ্টির পানি, রামেক হাসপাতালের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সামনে পড়ে থাকা ভাঙা বেসিন ও ওয়ার্ডের পাঁচটি জায়গায় জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভা পেয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকেও নমুনা সংগ্রহ করেছিলাম। এর মধ্যে নগরীর উপশহরের রংধনু টাওয়ারের পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের ড্রামে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে, একই এলাকার ২২৪ নম্বর বাড়িতে পরিত্যক্ত পাত্রে, তিন নম্বর সেক্টরের১৬৪ নম্বর বাড়ির ফুলের টবে ও পরিত্যক্ত কর্কশিট ও ২০১ নম্বর বাড়ির ফুলের টব থেকে নমুনা সংগ্রহ করি। ৮ নং ওয়ার্ডের সিপাইপাড়া এলাকায় বাড়িতে ফুলের টবে, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কেশবপুরে কয়েকটি বাড়িতে পানিতে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পেয়েছি।’

কমিটির তথ্যমতে, নগরীর শিরোইল এলাকা থেকে ভদ্রা পর্যন্ত রাস্তার পাশে হাঁটু সমান উুঁচ করে যেসব পাইপ পুঁতে রাখা হয়েছে, তার ভেতরে জমে থাকা পানিতে ও একই এলাকার ব্যবসায়ী সেলিমের টায়ারের দোকানে ব্যাটারির সেলে জমে থাকা পানি ও শুকুরআলী নার্সারির মাটির পাত্রে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতেও তৈরি হয়েছে এডিস মশার লার্ভা।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের বাসভবনের সামনে থেকে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ার ব্যাপারে অধ্যক্ষ নওশাদ আলী বলেন, ‘মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের বাসভবনটি গত ৮/১০ বছর ধরে পরিত্যক্ত রয়েছে। ওই বাসায় তিনি থাকেন না।’

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, ‘হাসপাতালে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে, বিষয়টি এখনো জানি না। যদি সত্যিই পাওয়া যায় তবে হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে আরও বেশি তৎপর হব।’

জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এফএএম আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, ‘দেশে যখন এডিস মশা আছে, তখন রাজশাহীতেও থাকতে পারে। তবে সেই মশাটি ডেঙ্গু আক্রান্ত কি-না অর্থাৎ মশাটি ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করছে কি-না, সেটাই কথা। তবে আক্রান্ত হলে তা পরীক্ষার ব্যবস্থা এখানে নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে কমিটি নমুনা সংগ্রহ করে লার্ভা পেয়েছেন, তাদের উচিত দ্রুত মাঠপর্যায়ের তথ্য রাজশাহী সিটি করপোরেশনে মেয়রকে হস্তান্তর করা। তাহলে মেয়র ওই মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করার উদ্যোগ নিতে পারবেন। বাড়িতে হলেতাদেরও সতর্ক করতে পারেন।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর