টাঙ্গুয়ার হাওরে শিক্ষার্থীদের ভরসা নৌকা

ঢাকা, জাতীয়

তৌফিকুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা, টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে ফিরে | 2023-08-25 00:17:06

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ জলাভূমি। প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এ হাওরে মাত্র ৪০টি পরিবার বসবাস করে।

টাঙ্গুয়ার হাওরে বসবাসরত ছেলেমেয়েদের শিক্ষা অনেকটাই নৌকার ওপর নির্ভরশীল। বর্ষাকালে চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরের স্কুলে যেতে হয় নৌকায় চেপে।

বর্ষায় নৌকাই হয়ে ওঠে হাওরবাসীর চলাচলের একমাত্র বাহন, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

মিঠা পানির এই হাওরের রাস্তাঘাট ছয় থেকে আট মাস পানির নিচে থাকে, ফলে ওই সময় স্কুলে যাওয়ার একমাত্র বাহন নৌকা। এজন্য এ অঞ্চলের শিশুদের স্কুলে যাওয়ার হার কম। কয়েক দিন পর পর স্কুলে যায় তারা।

স্থানীয় মুরাদ শেখ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘নৌকায় স্কুলে যাওয়াটা শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই অনেক সময় আমরা ওদের স্কুলে যেতে দিই না।’

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা এবং তাহিরপুর উপজেলার জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এ হাওর ঘুরে দেখা যায়, হাওরের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় জড়ো হয় ঠিকই, কিন্তু নৌকা এলেই কেবল তাদের স্কুলে যাওয়া সম্ভব হয়। না এলে স্কুলে যাওয়া হয় না।

মমিনুল ইসলাম নামে এক স্কুলছাত্র বলে, ‘এখন বর্ষাকাল হাওয়ায় হাওরে পানি বেশি। তাই নৌকা ছাড়া স্কুলে যাওয়া যায় না। আমাদের বাড়ি থেকে স্কুল অনেক দূরে হওয়ায় নিয়মিত স্কুলে যাই না।’

হাওর এলাকার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রাজু বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলে, 'বলতে গেলে বর্ষা মৌসুমে টাঙ্গুয়ার হাওরের কেউই তেমন স্কুলে যায় না। বেশিরভাগ সময় ঝড়-বৃষ্টি লেগেই থাকে। আমাদের জন্য এ হাওরে আলাদা স্কুল থাকলে ভালো হতো।’

হাওর সংলগ্ন তাহেরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাদিউজ্জামান বলেন, 'হাওরের শিক্ষার্থীরা স্কুলে খুব কমই আসে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।’

বছরের অন্তত ছয় মাস পানির নিচে থাকে হাওর এলাকা, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম 

 

তাহেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ ইমতিয়াজ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, তাহিরপুর উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ১৩৩টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৪টি, দু’টি স্কুল রয়েছে কলেজ পর্যায় পর্যন্ত। আর কলেজ রয়েছে চারটি। হাওর বেষ্টিত গ্রামগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে হওয়ায় বর্ষাকালে ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করতে হয় শিক্ষার্থীদের। তাহিরপুর ছাড়াও জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভপুর, ধরমশালা, দিরাই, শাল্লাসহ বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষার্থীদের বর্ষাকালে নৌকায় করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়।

সাংবাদিক ও হাওর উন্নয়ন কর্মী আতিক রহমান পূর্ণিয়া বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, 'হাওরে ভাসমান স্কুল বা বোট স্কুল দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। স্কুল নিতে হবে শিশুদের কাছে। হাওরের শিশুরা স্কুলে যেতে চায়। বাস্তবতা হলো পাড়ায় পাড়ায় ওভার নাইট স্কুল বানানো সম্ভব না। তাই লাগবে ভাসমান স্কুল। ভাসমান স্কুল প্রকল্প বেসরকারি পর্যায়ে সফল হয়েছে।’

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন-পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, হাওরবাসীর সঙ্গে সব সময় বৈষম্য করা হয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই এ বৈষম্য করা হয়। হাওরের উন্নয়নে হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতর পদক্ষেপ নিলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। হাওরে শিক্ষার হার ৩৮ শতাংশ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭১ শতাংশ শিশু ভর্তি হলেও বছর শেষে তা দাঁড়ায় ৪৪ শতাংশে। তাই হাওরের শিক্ষার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে নজর আরো বাড়াতে হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর