ফাঁদে ফেলে ৬ নারী ধর্ষণ ছাত্রলীগ নেতার, ভিডিও ইন্টারনেটে

, জাতীয়

সেন্ট্রাল ডেস্ক ২ | 2023-09-01 16:24:52

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা মোঃ আরিফ হোসেন হাওলাদারের বিরুদ্ধে স্থানীয় ছয় নারীকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ ও ধর্ষণের ভিডিওচিত্র ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধর্ষণের পর ধারণকৃত ভিডিওচিত্র দেখিয়ে একাধিক নারীর কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। ক্ষতিগ্রস্ত নারীরা লোকলজ্জার ভয়ে প্রথমে জনসম্মুখে মুখ না খুললেও বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে গণমাধ্যমকে ছাত্রলীগ নেতার দ্বারা ‘ব্ল্যাকমেইল’-এর শিকার ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত কেউ কেউ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে বসবাস করছেন। অভিযোগ ওঠার পর এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা আরিফ। বাংলাদেশের খবরের কাছে মোবাইলফোনে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা ছয় নারীকে ধর্ষণ ও ভিডিওচিত্র ছড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। লিখিত কোনো কোনা অভিযোগ না পাওয়ার কারণ দেখিয়ে এ ঘটনায় কোনো এ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় পুলিশ। তবে দলীয়কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় আরিফকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ। ক্ষতিগ্রস্ত নারী, স্থানীয় জনগণ, ছাত্রলীগের নেতা ও থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভেদরগঞ্জের নারায়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আরিফ হোসেন হাওলাদার গোসলখানায় গোপন ক্যামেরা রেখে স্থানীয় এক নারীর অশ্লীল ভিডিও ধারণ করেন। পরে সেই ভিডিওচিত্র ওই নারীকে এবং তা ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন। একইসঙ্গে ধর্ষণচিত্রও গোপন ক্যামেরায় ধারণ করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেন, যা মোবাইলের মাধ্যমে হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর একই কায়দায় ফাঁদে ফেলে ৬ জন নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে আরিফের বিরুদ্ধে। গত ১৫ অক্টোবর থেকে এসব ভিডিও মোবাইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন আরিফ। লোকলজ্জার ভয়ে কোনো কোনো নারী মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না। কেউ কেউ এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। আবার এক নারীকে শ্বশুর বাড়ির লোকজন তার বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। আরিফ তার চাচাতো বোন স্থানীয় ডিগ্রি কলেজের ¯œাতক শ্রেণির ছাত্রীকেও ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাত্রলীগ নেতা নামধারী এই যুবকের লালসার শিকার হয়েছেন এক প্রবাসীর স্ত্রীও। ধর্ষণ করেই থেমে থাকেননি লম্পট আরিফ। ভিডিওচিত্র ফাঁস করার ভয় দেখিয়ে তিনি অনেক নারীর কাছ থেকে থেকে মোটা অংকের টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন। এদিকে, মোবাইলফোনে ইন্টারনেটে এসব অশ্লীল ভিডিও এলাকায় ঘৃণ্য প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কলেজ ছাত্রী পর্দার আড়াল থেকে জানান, ছাত্রলীগ নেতা আরিফ হোসেন হাওলাদার তার জীবন ধবংস করে দিয়েছে। আরিফ ভিডিও ফাঁস করায় লোকলজ্জার ভয়ে তিনি কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।   ক্ষতিগ্রস্ত এক নারীর বোন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘আমার বোনের গোসলের দৃশ্য গোপনে ভিডিও করে আরিফ। পরে ফাঁস করার ভয় দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে তাকে। সে কয়েক দফায় টাকাও নিয়েছে। আমার বোন এখন লোকলজ্জায় ঘর থেকে বের হতে পারছে না।’ নিজ সংগঠনের কর্মীর এমন কর্মকা- প্রসঙ্গে ভেদরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ওয়াসিম তালুকদার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, নারীদের সঙ্গে নারয়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফ হোসেন হাওলাদারের অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার অভিযোগ তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়ায় তাকে দল থেকে বহিঃষ্কার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা আরিফ হোসেন হাওলাদার বলেন, প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে তার বন্ধুত ছিল। কলেজছাত্রী চাচাত বোনের সঙ্গেও ছিল প্রেমের সম্পর্ক। বেশ কিছুদিন আগে নিজের মোবাইল ফোন চুরি হয়ে যায়। এরপর তার ফেসবুকের ইমুতে ফোন দিয়ে এক নারী এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এরপর তিনি ভেদরগঞ্জ একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ‘এর ক’দিন পরেই কে বা কারা আমাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরানোর জন্য এসব অশ্লীল ভিডিও আপলোড করেছে’ বলে দাবি করেন অভিযুক্ত আরিফ। তিনি বলেন, ‘ভিডিও ছড়ানোর বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’ ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘আরিফ হোসেন হওলাদারের সঙ্গে নারীদের অশ্লীল ভিডিওচিত্র বিভিন্ন মোবাইলে ছড়িয়ে পড়ার খবর পেয়ে আরিফদের বাড়ি গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় কেউ লিখিত কোনো অভিযোগও করেনি। আমার কাছে ভিডিওর কোনো ডকুমেন্ট নেই।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর