প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে ভোগান্তিকে সাথী করেই রাজধানী ছেড়েছেন নগরবাসী। টিকিট স্বল্পতা ও অত্যধিক ভাড়া, সড়কে তীব্র ট্রাফিক জ্যামসহ নানাবিধ ভোগান্তির কারণে উত্তরাঞ্চলের মানুষের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ট্রেন।
কিন্তু ঘরমুখো মানুষের চাপ সামলে উঠতে প্রতিবারের মতো এবারও হিমশিম খেয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। শিডিউল বিপর্যয় তো নিয়মিত ঘটনা। পর্যাপ্ত আসনের অভাব আর ট্রেনের বগিগুলো কানায় কানায় পূর্ণ হওয়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষ ট্রেনের ছাদে চড়েই ঝুঁকিপূর্ণ ঈদযাত্রা করেছেন। আর ট্রেনের ছাদে ভ্রমণকে কেন্দ্র করে যমুনা সেতুর দুই পাড়ে জমে উঠেছে সুযোগসন্ধানী কিছু মানুষের ব্যবসা। তাদের সরবরাহ করা বাঁশের তৈরি মই বেয়ে ট্রেনের ছাদে উঠতে জন প্রতি লাগছে বিশ টাকা করে, নামতে গেলেও বিশ টাকা। বিশ টাকা খরচ করেই ‘লোকাল সিঁড়ি’ বেয়ে ট্রেনের ছাদে চড়ে গন্তব্যের দিকে ছুটেছেন টিকিট না পাওয়া অনেক যাত্রী।
মঙ্গলবার (৪ জুন) যমুনা সেতুর পূর্ব ও পশ্চিমসহ বেশ কয়েকটি রেলস্টেশনে ২০ টাকায় মই বেয়ে যাত্রীদের ট্রেনের ছাদে ওঠানামা করতে দেখা যায়। অবশ্য কোথাও দশ টাকাতেও এ সেবা নিতে দেখা গেছে। মইয়ের মালিকরা যাত্রী ওঠানামা করাতে দিনের প্রায় ২৪ ঘণ্টাই সজাগ থাকছেন রেলস্টেশনে। মই বেয়ে ট্রেনের ছাদে পুরুষ যাত্রীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আসন দখল করেছেন নারী যাত্রীরাও।
‘নীলসাগর এক্সপ্রেস’ ট্রেনের ছাদে ভ্রমণরত চিলাহাটিগামী যাত্রী ময়নুল সরদার বলেন, আজ থেকে অফিসের ছুটি শুরু। আগের দিনগুলিতে অফিস থাকায় ট্রেনের আগাম টিকিট কাটা হয়নি। এবারের ঈদে লম্বা সরকারি ছুটি। ভেবেছিলাম একটা স্ট্যান্ডিং টিকিট কেটে চলে যাবো। কিন্তু স্টেশনে এসে দেখি ট্রেন লেট। যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড়। তখন বাস যাওয়ারও আর ব্যবস্থা নাই। কী আর করার? কয়েকজন মিলে উঠে পড়লাম ছাদে।
২০ টাকায় ছাদ থেকে নামার জন্য মইয়ের ব্যাপারটিকে ভালোভাবেই নিচ্ছেন যাত্রী ময়নুল সরদার। তিনি বলেন, ছাদে ওঠানামা এতে সহজ কাজ না। ২০ টাকা দিয়ে সহজে ওঠানামা করা গেলে ভালোই তো। ভাড়া তো আর দিতে হয়নি, না হয় বিশ বিশ করে চল্লিশ টাকা তারা নিলো।
টাঙ্গাইল স্টেশনে এসে বিশ টাকা দিয়ে মই বেয়ে ট্রেনের ছাদ থেকে নামেন জুবায়ের নামের এক ব্যক্তি। বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, ট্রেনের ভেতরে যাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছি, না পেরে বাধ্য হয়ে ছাদে উঠে এসেছি। ওঠার সময় যে কষ্ট হয়েছে তাতে বিশ টাকায় মই বেয়ে নামাটা অনেক ভালো।
মই দিয়ে যাত্রী নামানোর সময় কথা হয় সুরুজ নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদের আগে আর ঈদের পরে চার-পাঁচ দিন করে আমরা মই নিয়ে আসি। যাত্রীদেরও সুবিধা হয়, আমরাও বিনিময়ে কিছু অর্থ পাই। ঈদের আগে পরে যতটা আয় হয় তাতে ঈদের খরচ ভালোভাবেই হয়ে যায় বলে জানান সুরুজ।
তবে মই দিয়ে ছাদে ওঠা-নামার বিষয়টি ট্রেনের ছাদে চড়ে ভ্রমণকে আরো উৎসাহ দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। প্রতিবার ঈদের সময় রেলওয়ে ও সরকারের পক্ষ থেকে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ট্রেনের ছাদে ভ্রমণকে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ নিসেবে বলে আসছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ের সূত্রে জানা যায়, রেলমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা আছে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ বন্ধ করার ব্যাপারে। এজন্য রেলওয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন।
গত কয়েকদিনে বেশকিছু ট্রেনের ছাদ থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। এমনকি বিমানবন্দর স্টেশনে রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেসের ছাদ থেকে যাত্রীদের পিটিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে কয়েকজন যাত্রীর আহত হওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এরপরও ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ বন্ধ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে রেলওয়ে সূত্র।
রেলওয়ে পুলিশ সদস্য শওকত আলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ট্রেনের ছাদে ওঠার ভিড় বেশি থাকে জয়দেবপুরে। আমরা আটকানোর চেষ্টা করি কিন্তু মানুষ তো কথা শুনতে চায় না। মানুষকে যথাযথ পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করে তারপর অনিয়ম বন্ধে বাধ্য করতে হবে।