সৌদি আরবের বিনিয়োগ আনতে ১৭ সদস্যের কমিটি

ঢাকা, জাতীয়

আসিফ সওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 23:04:43

সৌদি আরবের ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব ঘরে তুলতে ১৭ সদস্যের নির্বাহী মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ মনিটরিং কমিটির প্রধান করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্যসচিব মো নজিবুর রহমানকে।

৭ এপিল রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের পরিচালক মো. মোশারাফ হোসেনের স্বাক্ষরিত এক চিঠি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

নির্বাহী কমিটি সৌদি আরবের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাধাগুলো দূর করতে চেষ্টা করবে। এ বিনিয়োগ যাতে খুব দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশে আসতে পারে সে জন্য এ নির্বাহী কমিটি কাজ করে যাবে । নির্বাহী কমিটিতে মোট ১৪ জন সচিব রয়েছে। এছাড়া এতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আর পাবলিক ও প্রাইভেট পাটনারশিপের নির্বাহী কর্মকতা রয়েছেন।

সম্প্রতি তেল নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে ও ঝুঁকি কমাতে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে সৌদি আরব। এরই অংশ হিসেবে কয়েকটি দেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার। কয়েকমাস আগে পাকিস্তানে ২ হাজার কোটি ও ভারতে ১০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এর অব্যবহিত পর বাংলাদেশ সফরে এসে সাড়ে ১৩ কোটি ডলার বিনিয়োগের চুক্তি করেছে উচ্চপর্যায়ের সৌদি প্রতিনিধি দল। যদিও ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের প্রস্তাব তৈরি করেছিল ঢাকা।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করে সৌদি আরবের অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মোহাম্মেদ আল তোয়াইজরি এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক মন্ত্রী ড. মজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবির নেতৃত্বে ৩৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল। সফরকালে সৌদি দলটির কাছে ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। এর মধ্যে শুধু বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতেই প্রায় ২ হাজার ১৩০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব ছিল বাংলাদেশের। তবে বাংলাদেশের প্রায় ২৯টি প্রস্তাবের মধ্যে দুটি চুক্তি এবং চারটি সমঝোতা করেছে সৌদি আরব।

সফরকালে ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র (সোলার আইপিপি) নির্মাণে সৌদি প্রতিষ্ঠান আলফানার সঙ্গে চুক্তি করেছে ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (ইজিসিবি)। এতে ১০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে সৌদি প্রতিষ্ঠান। আর ট্রান্সফরমার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উৎপাদনে সৌদি প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশনের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে জেনারেল ইলেকট্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড। এতে সাড়ে ৩ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে সৌদি প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে সফরকে কেন্দ্র করে বড় বিনিয়োগ আশা করছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) এক সূত্র জানায়, সৌদি ব্যবসায়ী বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়ে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের জয়েন্ট স্টক অফ ফার্ম অ্যান্ড কোম্পানিজ নিবন্ধন করেছে।

তারা বিডার ঊর্ধ্বন কর্মকর্তাকে জানিয়েছে, সৌদ আরব কেন আগে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেনি সেই বিষয়ে অফসোস করেছে। সৌদি বিনিয়োগকারীরা বলেছেন, অনেক আগেই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা যেত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সৌদি আরবের এত হাইপ্রোফাইল ডেলিগেশনের এটাই প্রথম বাংলাদেশ সফর। বিশেষ করে বিনিয়োগের আলোচনায় অতীতে সৌদি আরবের তরফ থেকে এমন আগ্রহ দেখানো হয়নি। ফলে ক্রাউন প্রিন্সের পাঠানো প্রতিনিধি দলের এ সফর থেকে বাংলাদেশের প্রত্যাশা ছিল অনেক।’

একইভাবে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম শুধু ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার নয়, বাংলাদেশে আরও বেশি সৌদি বিনিয়োগ আশা করেন। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান ও ভারতে সৌদি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত এসেছে দেশটির শীর্ষ পর্যায় থেকে। আর বাংলাদেশ থেকে যে প্রকল্পগুলো প্রস্তাব করা হয়েছিল, তা নিয়ে দুই দেশই কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য দু’দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের একটি যৌথ টাস্কফোর্স করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা প্রকল্পগুলোকে নিয়ে কাজ করে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সে সময় শুধু নির্দিষ্ট অঙ্কের মধ্যে বিনিয়োগ সীমাবদ্ধ থাকবে না। এ থেকে বলা যায়, বাংলাদেশে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্সের সফরের দুয়ার খুলল।’

তবে বিনিয়োগ আকর্ষণের সক্ষমতা বাড়াতে সৌদি আরবের আগ্রহ মূল্যায়নে জোরারোপ করে অনেকেই বলছেন, সৌদিরা তেল থেকে বের হয়ে নিজেদের অর্থনীতিকে অন্যভাবে সাজানোর চেষ্টা করছে। তবে তারা কোন স্থানে বিনিয়োগ করতে চায়, তাদের সক্ষমতা ও বিনিয়োগের আগ্রহের কারণগুলোসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আমরা কোন স্থানে রয়েছি, তা নিয়ে বাংলাদেশের একটি মূল্যায়ন থাকা উচিত। আমরা যে ধরনের প্রকল্পে বিনিয়োগ চাই, তাতে বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ কতটা রয়েছে, সেটা বিবেচনা করতে হবে। তুলনামূলকভাবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিনিয়োগ আকর্ষণের ভাবমূর্তি কতটা রয়েছে, তা এখানে প্রভাব ফেলেছে। বিনিয়োগের ভাবমূর্তিতে বাস্তব অর্থে দেখলে ভারতে ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ হয় প্রতি বছর। পাকিস্তানে এত সংকটের পরও গত বছর প্রায় ৫০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে। আমরা মাত্র ২০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ নিয়ে এসেছি। যারা বিনিয়োগ করে, তারা রিটার্নের বিষয়টিও চিন্তা করে।

সূত্র জানায়, সৌদি প্রতিনিধি দলের সফরকালে দুটি বিনিয়োগ চুক্তি ছাড়াও বাংলাদেশের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এবং সৌদি আরবের আল মাম ট্রেডিং এস্টেটের মধ্যে জনশক্তি রফতানি বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। ইউরিয়া ফরমালডিহাইড-৮৫ প্লান্ট নির্মাণে সৌদি আরবের ইউসুফ আল রাজি কনস্ট্রাকশন এস্টেটের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন। এছাড়া ‘সৌদি-বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সৌদি আরবের আল আফালিক গ্রুপ (এএইচ গ্রুপ) এবং বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। আর বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি) ও রিয়াদ কেবলস গ্রুপ অব কোম্পানির মধ্যে তার উৎপাদনের বিষয়ে স্বাক্ষর হয়েছে আরেকটি সমঝোতা স্মারক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর