রিকশা চালক রফিকুলের নতুন যুদ্ধ

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রংপুর, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 13:23:42

রফিকুল ইসলাম। পেশায় তিনি একজন রিকশা চালক। দেখেছেন মুক্তিযুদ্ধ। তখন তার বয়স এগারো। পরিবারের একমাত্র ছেলে সন্তান হওয়ায় যুদ্ধে যেতে পারেননি। সেই আক্ষেপ তাকে এখনো তাড়া করছে। তাই জীবনের শেষ প্রান্তে এসে শুরু করেছেন নতুন যুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলো ছড়াতে রং তুলি হাতে রফিকুল ছুটছেন স্কুল-কলেজ আর পাড়া-মহল্লায়। দেয়াল অঙ্কনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরছেন বাংলাদেশের স্বপ্ন দ্রষ্টাদের।

ঊনষাট বছর বয়সে পা রেখেছেন রফিকুল ইসলাম। কিন্তু বয়সের কাছে হার না মানা রফিকুল এখনো রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। যাত্রী সেবার পাশাপাশি রিকশায় রাখা রং তুলির ছোঁয়ায় দেয়ালে ফুটিয়ে তোলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনাসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ছবি।

২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর রংপুর মহানগরীর তাজহাট বাবুপাড়ার বটতলায় প্রথম দেয়াল অঙ্কন করেন তিনি। রং তুলির আঁচড়ে তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যা দৃষ্টি কেড়েছিল স্থানীয় যুবসমাজের। ওই দিন রফিকুল ইসলামের আঁকা ছবির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন স্থানীয় সমাজ সেবক ইঞ্জিনিয়ার শাহাদত হোসেন।

রফিকুল ইসলামের অর্ধশত দেয়াল অঙ্কনে বাংলাদেশের মানচিত্র, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনা, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়া, জাতীয় চার নেতা ও সাত বীর শ্রেষ্ঠও স্থান পেয়েছে।

শুধু ছবি আঁকাতেই থেমে নেই রফিকুল। দেয়াল অংকনের সঙ্গে সঙ্গে নিজ উদ্যোগে স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদরাসা, ঈদগাহ মাঠসহ বিভিন্ন স্থানে অন্তত সাড়ে ৩০০ কৃষ্ণচূড়া গাছের চারা রোপণ করেছেন।

রংপুর মহানগরীর তাজহাট বাবুপাড়া এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম। স্ত্রী রশিদা বেগম, দুই মেয়ে ও তিন ছেলেসহ মা-বাবাকে নিয়ে এক বাড়িতেই বসবাস করছেন তিনি। রফিকুলের তিন ছেলে রশিদুল ইসলাম রাজু, মাহমুদুল হাসান রাজিব ও রেজাউল ইসলাম রেজা। অন্যদিকে দুই মেয়ের মধ্যে রেশমা আকতার হাসি আগামী বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন। আর ছোট মেয়ে রতনা আকতার খুশি এবার এসএসসি পরীক্ষার ফলপ্রত্যাশী।

পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে থাকা রফিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে জানান, ১৯৮০ সাল থেকে রিকশা চালাচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি ১৯৮৩ সালে অবসর সময়ে কাজ করতেন প্রেস শ্রমিক হিসেবে। দীর্ঘ ১৬ বছরে নগরীর ছকিনা, ছাপাঘর, নিপুন, দৈনিক দাবানল ও দৈনিক পরিবেশে প্রেস শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন। ওই সময় থেকে তিনি কাগজে, আর্ট পেপারে স্কেচ করে ছবি আঁকা শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে দেয়ালে দেয়ালে শুরু করেন রং তুলির আঁচড়ে ছবি আঁকা।

তিনি বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্মের মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উন্মেষ ঘটানোর লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে দেয়ালে স্বহস্তে ছবি আঁকা শুরু করেছি। ইতোমধ্যে অর্ধশত ছবি আঁকা হয়েছে। ছবি আঁকার সঙ্গে সঙ্গে নিজ খরচে কৃষ্ণচূড়া গাছের প্রায় সাড়ে ৩০০ চারা রোপণ করেছি।’

রফিকুল আরও বলেন, ‘আমার ইচ্ছা পায়ে হেঁটে আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করে গণভবনে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করব। এরপর টুঙ্গিপাড়ায় এবং গণভবনে কৃষ্ণচূড়া চারা রোপণ করব। প্রশাসন যদি আমাকে এই পদযাত্রার জন্য অনুমতি দেন আমি পদযাত্রাকালীন বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকব।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর