টাকার বান্ডিল ছড়িয়ে ছিটিয়ে এফআর টাওয়ারের ভেতরে

ঢাকা, জাতীয়

শাহারিয়ার হাসান ও মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 22:38:30

রাজধানীর বনানীর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত এফআর টাওয়ারের বিভিন্ন ফ্লোরের ভেতরে টাকার বান্ডিল ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এছাড়া ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোরে ৪০ থেকে ৫০টি ল্যাপটপ ও নানা মূল্যবান জিনিসপত্র দেখতে পেয়েছেন ফায়ারের উদ্ধার কর্মীরা।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে টাকা, ল্যাপটপ ও এসব মূল্যবান জিনিসপত্র ভবনটিতে অবস্থিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অফিসের সম্পত্তি। আগুন লাগার পর এসব জিনিসের মায়া ত্যাগ করে প্রাণে বাঁচার আশায় এসব ফেলেই অফিস ত্যাগ করেছেন ভবনটির বিভিন্ন অফিসে কর্মরতরা।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) দুপুরে ভবনটির ভেতরে উদ্ধার কাজে কর্মরত ফায়ার ফাইটার ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, অগ্নিদগ্ধ ভবনটির ৮, ৯ ও ১০ তলায় সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনটির এই তিনটি তলাসহ ওপড়ের দিকে আরও বেশ কয়েকটি তলায় বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের একাউন্স, মার্কেটিং ও আইটি অফিস থাকতে পারে। সেসব অফিস আগুনে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে থাকা টাকার বান্ডিল, ল্যাপটপ ও মূল্যবান জিনিসপত্র এখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

এসব মালামাল ও জিনিসপত্র কিভাবে হস্তান্তর করা হবে- ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে এ আলোচনা করতে শোনা যায়। এই সময় তাদের বলতে শোনা যায়, ভবনের ভেতরে টাকার বান্ডিল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ৪০ থেকে ৫০টি ল্যাপটপ আছে।

এ বিষয়ে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মোস্তাক আহমেদ ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের বলেন, ‘পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস মিলে সম্পদগুলো ভবন মালিকদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’

এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামকে বলেন, ‘বিল্ডিংয়ের ভেতর অনেক মালামাল ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস আমাদের কাছে ভবনের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলে সংশ্লিষ্ট অফিসের মালিক ও ফ্ল্যাট মালিকদের সঙ্গে নিয়ে সার্চ অভিযান চালাব। পুলিশের ২২টি টিম ভবনের ২২টি ফ্লোরে কাজ করবে এই অভিযানে।’

তিনি বলেন, ‘নির্দিষ্ট অফিসের মালিকই যেন নির্দিষ্ট অফিসে ঢুকতে পারে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। তাদের সঙ্গে নিয়ে মালামাল বুঝিয়ে দিয়ে ভবনের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হবে। মালামাল বুঝিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত ভবনটি ঘিরে রাখা হবে।’

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে বনানীর ২২ তলা বিশিষ্ট এফআর টাওয়ারে আগুন লাগে। পরে এ আগুন ওপরে ও নিচে ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। প্রাথমিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, ভবনটির ৯তলায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্রের বিস্ফোরণ থেকে এ আগুনের সূত্রপাত হয়।

এ সময় ভবনটিতে আটকা পড়েন বহু মানুষ। বিশেষ করে ১১, ১২ ও ১৩ তলায় অবস্থানরতরা অতিরিক্ত ধোঁয়া ও অত্যধিক তাপের কারণে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ছুটাছুটি করতে থাকেন। আটকে পড়া লোকজন ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাচের জানালা ভেঙে দেন।

সময় বাড়ার সাথে সাথে এই আগুন ভয়াবহ রূপ নেয়। জীবন বাঁচাতে অনেকে ভবন থেকে লাফ দেন। এই সময় শ্রীলঙ্কান নাগরিক নিরোস লাফিয়ে পড়ে আহত হন। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর বাইরে আরও পাঁচ জন লাফিয়ে পড়ে নিহত হন।

অনেককেই জানালার কাছে এসে হাত নাড়িয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের দৃষ্টি করতে দেখা যায়, যা এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। ফায়ার সার্ভিসের সাথে আগুন নেভানোর কাজে দেখা যায় বিমান বাহিনীর সদস্যদের। পাঁচটি হেলিকপ্টার নিয়ে তারা হাতিরঝিল থেকে পানি নিয়ে ভবনটির আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন।

প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও উদ্ধার কাজ চলে রাতভর। সন্ধ্যায় আগুন নেভানোর পর ভবনটির ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় ভবনটিতে কর্মরত একাধিক ব্যক্তির লাশ। আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান কয়েকজন। সব মিলিয়ে এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত হয়েছেন মোটি ২৫ জন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর