রাঙামাটিতে হঠাৎ ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলে অতিষ্ঠ গ্রাহক

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাঙামাটি | 2024-04-25 14:11:09

ভুতুড়ে বিলে জর্জরিত রাঙামাটির ইসলামপুরবাসী। এক মাসের বিল ৩ হাজার থেকে শুরু করে ৭০ হাজার টাকার বেশি এসেছে কারো কারো। কাপ্তাই হ্রদের ওপারে বসবাস করা হতদরিদ্র খেটে খাওয়া কয়েকশ পরিবারের বিদ্যুৎ বিলে এমন তুঘলকি কাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন গ্রাহকেরা।

রাঙামাটি শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইসলামপুরে প্রায় দু’শতাধিক অসহায় দিনমজুর পরিবারের বসবাস, যাদের শতকরা ৯৯ ভাগই দিন এনে দিন খেয়ে সংসার চালাতে হয়।

এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে বাড়তি ভুতুড়ে বিল তাদের নাস্তানাবুদ করে ফেলেছে। যেখানে তাদের মাসের বিদ্যুৎ বিল আসে ৫শ থেকে ৭শ টাকা, সেখানে ৩ হাজার থেকে শুরু করে ৭০ হাজার টাকার বিল করেছে রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিভাগ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতি মাসের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছেন তারা। তাদের কোনো বকেয়া বিল নেই। প্রতি মাসে সাধারণত তাদের বিদ্যুৎ বিল আসে ২শ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ দেড় হাজার টাকা। কিন্তু হঠাৎ করে এমন ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলে তাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। তাদের প্রশ্ন, নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের পরেও কেন এমন বিদ্যুৎ বিল করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ! এমন বিদ্যুৎ বিলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অধিকাংশ গ্রাহকেরই দুই থেকে পাঁচ গুণ বেশি বিল করা হয়েছে। বিল কপিতে ব্যবহৃত ইউনিটের কলাম শূন্য থাকলেও পরিশোধের কলামে বিরাট অংকের টাকা বসিয়ে বিল সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিকার চাইতে গিয়ে হয়রানির শিকার হন বলেও অনেক গ্রাহক সংবাদমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মান্নান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি দিনমজুরের কাজ করি। এর আগে প্রতিমাসে আমার বাসায় একটি মিটারে ৫ থেকে ৭শ টাকা বিল আসতো। কিন্তু এখন আমাকে ১১ হাজার টাকার বিল ধরিয়ে দিয়েছে। এখন পরিবার নিয়ে খেয়েপড়ে বেঁচে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় এতগুলো টাকার বিল আমার জন্য চরম কষ্টকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে’।

অপর এক বাসিন্দা রোকেয়া বেগম বলেন, ‘আমি মানুষের বাসায় কাজ করে সংসার চালাই। আমাকে বিল দিয়েছে সাড়ে ২৪ হাজার টাকা। অথচ আমার বিল হতো ৮শ থেকে এক হাজার টাকা। এই বিল কীভাবে দেবো আমি’!

শওকত আলী নামের একজন বলেন, আমার বিল হতো ১ হাজার ৫শ টাকা। কিন্তু আমাকে বিল দিয়েছে ৫৭ হাজার টাকা। এই টাকা পরিশোধ করা কোনোমতেই সম্ভব নয়। আমি এমনিতেই অসুস্থ মানুষ। এই সময়ে এতগুলো টাকার বিল দিয়ে আমার ওপর জুলুম করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এভাবে অনেক গ্রাহককে ভুতুড়ে বিল দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। নানা ঝক্কি-ঝামেলার ভয়ে অনেকেই ভুতুড়ে বিল পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছেন’!

এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মচারী জানিয়েছেন, মিটার রিডাররা গ্রাহকের মিটার না দেখে বিল করায় এবং ‘সিস্টেম লস’ সমন্বয় করতে বাড়তি বিল করছেন। গ্রাহকেরা অভিযোগ করলে অনেক ক্ষেত্রে বিল কমিয়ে দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রেই গ্রাহককে আবার বাড়তি বিল পরিশোধ করতে হয়। এতে করে সাধারণ গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, নতুন প্রিপেইড মিটার লাগানোর কারণে পুরনো মিটারের যে রেটিং বকেয়া রয়েছে, তা একসঙ্গে বিল আকার তাদের দেওয়া হয়েছে।

রেটিং বকেয়া থাকার কারণ জানতে চাইলে রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জালাল উদ্দিন বলেন, ‘হয়ত বিদ্যুৎ বিল করার সময় বিলে কম রেটিং তোলা হয়েছে, যার কারণে দীর্ঘদিনের রেটিং জমা হয়ে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে যারা এই পরিমাণ বিদ্যুৎ বিল একসঙ্গে পরিশোধ করতে পারবেন না, তাদের কয়েক কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ দেওয়া হবে’।

এ সম্পর্কিত আরও খবর