একজন ‘রক্তযোদ্ধা’ রহিদের না বলা গল্প

, জাতীয়

এসএম জামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া | 2023-09-01 14:37:23

বছরের পর বছর স্বেচ্ছায় মুমূর্ষু রোগীদের নিয়মিত রক্ত দান করে মানবতার সেবায় এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কুষ্টিয়ার সাদিক হাসান রহিদ। এ পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার ব্যাগ রক্ত দিয়ে মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচিয়ে তোলার কাজে এগিয়ে এসেছেন। এখানেই তিনি থেমে থাকেননি। এলাকার বন্ধু বান্ধবকে সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন “স্বপ্ন প্রয়াস যুব সংস্থা” নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ বিনামূল্যে রক্ত পাচ্ছেন এখান থেকে।

সাদিক হাসান রহিদ একজন রক্তযোদ্ধা। নিয়মিত রক্তদাতা। রক্ত প্রয়োজন, এমন কথা শুনলে সে অস্থির হয়ে যায় রক্ত সংগ্রহ করে দিতে। ছোট বেলায় বন্ধুদের নিয়ে সাইকেল নিয়ে ঘুরতে ভালোবাসতেন। এখন মোটরসাইকেলে ঘুরে বেড়ান সে। পরিবারের খুব পরিশ্রমী ছেলে। বাবা মারা যাওয়ায় নানী এবং মামার কাছেই মানুষ। বিভিন্নভাবে দক্ষতা ও সফলতা দেখিয়েছেন। মিষ্টভাষী ও ভদ্র। নিজ এলাকায় তাকে সবাই খুব পছন্দ করে। অন্যকে সাহায্য করতে কখনো দ্বিতীয়বার চিন্তা করেন না এই সাদিক হাসান রহিদ।

মানুষের রক্ত লাল। এই লাল ভালোবাসায় বিলিয়ে শান্তি পান সাদিক হাসান রহিদ।

কুষ্টিয়া শহরের আমলাপাড়া ১৬ নং মুন্সী লেন সড়কের মৃত বাদশা মন্ডলের ছেলে সাদিক হাসান রহিদ। এখনও সে শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনও পরিচালনা করেন তিনি। কলকাকলি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে কুষ্টিয়া ইনিস্টিটিউট অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজিতে টেক্সটাইল ৬ষ্ঠ পর্বে পড়ালেখা করছে সে। স্বপ্ন প্রয়াস যুব সংস্থা নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।


সে জরুরি প্রয়োজনে অসুস্থ ব্যক্তির রক্তের প্রয়োজন পড়লে তা সংগ্রহ করে দেয়ার চেষ্টা করেন। তিনি নিয়মিত একটি ডায়েরি সংরক্ষণ করেন। তার অধীনে শতাধিক শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ রয়েছে তার সংগঠনে।

সেখানে নিকটাত্মীয়-স্বজন, বন্ধু এমনকি পরিচিতজনদের রক্তের গ্রুপ মোবাইল নম্বরসহ অসংখ্য ব্যক্তির নাম রয়েছে। কারও জরুরি প্রয়োজনে রক্ত লাগলে রহিদের সঙ্গে মোবাইলে অথবা সরাসরি যোগাযোগ করেন। রহিদ তাৎক্ষণিক ওই ব্যক্তিকে কোনো টাকা ছাড়াই রক্ত সংগ্রহ করে দেন।

সাদিক হাসান রহিদ জানান, মানুষ যখন খুব বিপদে পড়ে তখন অন্যকারও শরণাপন্ন হয়। বিশেষ করে যখন রক্তের প্রয়োজন হয় তখন মানুষ দিশাহারা হয়ে ওঠে। কোথায় পাবে, কীভাবে পাবে, কার সঙ্গে যোগাযোগ করলে রক্ত পাওয়া যাবে? সেই চিন্তা যেন তখন আকাশ সমান হয়ে দাঁড়ায়।

এরই মধ্যে একটা অন্যরকম অনুভূতি হয় তখন, যখন কারও বিপদে পাশে দাঁড়াতে পারি। রক্তের পোস্ট বা মেসেজ পেলেই সাধ্যমতো চেষ্টা করি রক্ত জোগাড় করার জন্য। যখন রক্ত জোগাড় করে দিই তখন রক্ত গ্রহীতা ও তার আত্মীয়-স্বজনের হাসিমুখ দেখতে পাই। তখনকার অনুভূতি বোঝানোর মতো নয়। রক্ত জোগাড় করে দিলে মনে প্রশান্তি কাজ করে। কারও মুখে হাসি ফোঁটাতে পারার আনন্দ আসলেই অন্যরকম।

তিনি বলেন, প্রায় ৪ বছর ধরে অসুস্থ মানুষকে রক্ত সংগ্রহ করে দেয়ার এ কাজটি করে যাচ্ছি। এ পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার মানুষকে কোনো টাকা ছাড়াই রক্ত সংগ্রহ করে দিয়েছি। আমি নিজেই তিরিশ বার রক্ত দিয়েছি। মঙ্গলবার সারাদিনে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ৬ জন রোগীর জন্য ৬ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে দিয়েছি।

তিনি আরও জানান, বিভিন্ন সময় অসুস্থ মানুষের রক্তের প্রয়োজন পড়ে। কোনো ব্যক্তি রক্তের প্রয়োজন জানালে বন্ধু, পরিচিতজন, নিকটাত্মীয়দের কাছে রক্তদানের জন্য অনুরোধে করি। সে ব্যক্তি সম্মতি হলে অসুস্থ ব্যক্তিকে রক্তদান করা হয়।


শামীম রানা জানান, রহিদ দীর্ঘ দিন ধরে মানুষকে বিনা টাকায় রক্ত দিয়ে সহযোগিতা করেন। তার এ কাজে আমরাও সহযোগিতার চেষ্টা করি।

সাংবাদিক এসএম জামাল জানান, রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সাদিক হাসান রহিদ অনেক মানুষকে রক্ত সংগ্রহ করে দেন। এতে অনেক মানুষ উপকৃত হয়।

পরিবেশ ও পাখি নিয়ে কাজ করা সংগঠন মানুষ মানুষের জন্য সংগঠনের সভাপতি শাহাবুদ্দিন মিলন জানান, আমরা অনেক সময় দেখি হাসপাতালে অনেক মুমূর্ষু গরিব রোগীর রক্তের প্রয়োজন হয়। ওই সময় সাদিক হাসান রহিদকে জানানো মাত্র বিভিন্ন জায়গায় ফোন দিয়ে যোগাযোগ করে রক্ত সংগ্রহ করে দেন। এটি খুবই ভালো কাজ। রহিদের এই কাজ সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।

তার সংগঠনের সকল কর্মকাণ্ড অংশগ্রহণ করেন। রহিদ তার সংগঠনের সাহায্যে অনেক মানুষের ফ্রিতে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করে দিয়েছেন। বিভিন্ন দিবস উদযাপন উপলক্ষে রহিদ ও তার বন্ধুরা মিলে ফ্রি রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করান।

রহিদ একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক। সব জাতীয় দিবস পালন করেন। সব স্বেচ্ছাসেবী কাজ করেন। বিভিন্নভাবে সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী কাজে যুক্ত।

রহিদ নিয়মিত তিন মাস পরপর রক্ত দান করেন। স্বপ্ন দেখে সুন্দর, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং রক্তের কোন‌ অভাব থাকবে না বাংলাদেশে। সবাই রক্ত দানে উৎসাহিত হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর