যে দেশে ধর্মত্যাগের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

দেশে দেশে ইসলাম, ইসলাম

মুহাম্মাদ রাহাতুল ইসলাম | 2024-01-20 22:19:57

মৌরিতানিয়া, আফ্রিকার ১১তম বৃহত্তম এবং বিশ্বের ২৮তম বৃহত্তম দেশ। প্রশাসনিক নাম মৌরিতানিয়া ইসলামিক প্রজাতন্ত্র। দেশটি আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত। এর আয়তন এক লাখ ৩০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এটি সেনেগাল এবং পশ্চিম সাহারা, মালি এবং আলজেরিয়ার মধ্যে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের সীমানায় অবস্থিত। মৌরিতানিয়া নামটি প্রাচীন ‘বারবার’ মৌরি উপজাতি এবং তাদের রাজ্য মৌরেতানিয়া থেকে এসেছে।

মৌরিতানিয়ায় মোট জনসংখ্যার পরিমাণ পাঁচ লাখের কাছাকাছি। দেশটির প্রায় শত ভাগ লোকই মুসলমান। মৌরিতানিয়ার সংবিধান দেশটিকে একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে এবং ইসলামকে নাগরিক ও রাষ্ট্রের একমাত্র ধর্ম হিসাবে মনোনীত করে। মৌরিতানিয়ার মুসলমানরা ধর্মভীরু। দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। মৌরিতানিয়া সাংবিধানিকভাবে একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র। এদেশের মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে। এদেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবনযাত্রার মান এবং কর্মসংস্থান হতে বঞ্চিত হলেও তারা ভীষণ রকম ধর্মপরায়ণ।

মৌরিতানিয়ার রাজধানী নোয়াকচটকে অবস্থিত মদিনা আল মোনাওয়ারা মসজিদ, ছবি : সংগৃহীত

 

মৌরিতানিয়ার আইনি ব্যবস্থা ফরাসি নাগরিক আইন এবং শরিয়া আইনের মিশ্রণ। ইসলাম ও ধর্মের বিরুদ্ধে অপরাধের শাস্তি বিশেষভাবে কঠোর। সেখানে কিছু অপরাধের জন্য শরিয়া আইনের প্রয়োগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, এদেশের আইন ধর্মত্যাগকে নিষিদ্ধ করে এবং এটিকে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করে। মৌরিতানিয়ায় পাবলিক স্কুল এবং প্রাইভেট সেকেন্ডারি স্কুলে প্রতি সপ্তাহে চার ঘন্টা ইসলামিক শিক্ষা প্রদান করতে হয়।

এখানকার জীবনাচারের সঙ্গে আরব ইসলামি ঐতিহ্য ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। মানুষ কথা বলে আরবিতে। চলনে বলনেও তারা পুরোপুরি আরব। মৌরিতানিয়া পশ্চিম আফ্রিকার একটি উন্নয়নশীল মুসলিম দেশ। আরব দুনিয়ার পশ্চিমে অবস্থিত মৌরিতানিয়ার রাষ্ট্রীয় ভাষা আরবি। ভাষা ও সমাজ-সংস্কৃতিতে আরবদের মতো হলেও আরবদের সঙ্গে তাদের তেমন কোনো সখ্যতা নেই।

মৌরিতানিয়ায় শিক্ষাবর্ষ অক্টোবরে শুরু হয় এবং জুনে শেষ হয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশের বয়স ৬ বছর। দেশটিতে প্রচুর মসজিদ, মাদ্রাসা, মক্তব ও ইসলামি সংস্কৃতি কেন্দ্র রয়েছে। ধর্মের প্রতি সাধারণ মানুষের রয়েছে প্রবল ঝোঁক।

মৌরিতানিয়া খনিজ, হাইড্রোকার্বন এবং মৎস্য সম্পদের উল্লেখযোগ্য মজুদসহ একটি সম্পদ সমৃদ্ধ দেশ হলেও সঠিক ব্যাবস্থাপনার অভাবে মৌরিতানিয়ার অর্থনীতি এখনও মূলত কৃষি ও পশুসম্পদের ওপর নির্ভরশীল। দেশটির হাজার হাজার বছর আগের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে এবং সেখানে রয়েছে বেশ কিছু সুসংরক্ষিত ঐতিহাসিক স্থান। যেমন- চিনগুয়েটি শহর, যা তার প্রাচীন গ্রন্থাগার এবং মসজিদের জন্য পরিচিত। মৌরিতানীয়রা মালেকি মাজহাব অনুসরণ করে। দেশটি ২৮ নভেম্বর ১৯৬০ সালে ফ্রান্স উপনিবেশিকতা থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছে।

মুসলিম বণিকদের সঙ্গে বাণিজ্যবহর ও ধর্ম প্রচারকদের মাধ্যমে অষ্টম শতাব্দীতে এই অঞ্চলে ইসলামের আগমন ঘটে। মৌরিতানিয়ায় রয়েছে মনোমুগ্ধকর সব প্রাকৃতিক দৃশ্য, যা প্রথম দেখাতেই দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কাড়ে। মৌরিতানিয়া শতভাগ মুসলমানদের দেশ। দারিদ্রপীড়িত হলেও তারা আঁকড়ে ধরে আছে সঠিক ইসলামকে।

২০২৩ সালে মৌরিতানিয়ার রাজধানী নোয়াকচটকে মুসলিম বিশ্বের সাংস্কৃতিক রাজধানী নির্বাচন করা হয়। এ শহরে রয়েছে ঐতিহাসিক কিছু মসজিদ। এর অন্যতম হলো- জামে মদিনা আল মোনাওয়ারা। যা স্থানীয়ভাবে সৌদি মসজিদ নামে প্রসিদ্ধ। এটি সৌদি আরবের অর্থায়নে নির্মিত। দেশটিতে প্রচুর মসজিদ, মাদ্রাসা, মক্তব ও ইসলামি সংস্কৃতি কেন্দ্র রয়েছে। চলে দাওয়াতে তাবলিগের কাজও।

এ সম্পর্কিত আরও খবর