লতা মঙ্গেশকরের সেরা ১০ বাংলা গান

সুরতাল, বিনোদন

বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-12-13 21:05:34

গায়িকা নয় মাত্র ১৩ বছর বয়সে অভিনেত্রী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন লতা মঙ্গেশকর। সেইসময় বাবাকে হারান গায়িকা, পাঁচ ভাই-বোনের কথা ভেবে ওই বয়সেই হাল ধরেন সংসারের।

১৯৪২ সালে একটি মারাঠি ছবির সৌজন্যে প্রথম গান রেকর্ড করেন তিনি। পরের বছর মরাঠি ছবি ‘গাজাভাউ’-এর জন্য ‘মাতা এক সুপুত কি দুনিয়া বদল দে তু’ গানটি রেকর্ড করেন লতা মঙ্গেশকর, এটি ছিল তার প্রথম হিন্দি গান। এরপর লতার মুম্বাইয়ে আসা এবং ওস্তাদ আমান আলি খানের কাছে ধ্রুপদী গানের তালিম পর্ব শুরু। এরপর ধীরে ধীরে বলিউডে পায়ের নীচের মাটি শক্ত করতে শুরু করেন লতা। যদিও চ্যালেঞ্জের মুখে পদে পদে পড়েছিলেন লতা।

 

প্রযোজক শশধর মুখোপাধ্যায় ‘শহীদ’ ছবিতে লতাকে দিয়ে গান গাওয়াতে রাজি হননি, সংগীত পরিচালক গুলাম হায়দারকে তিনি বলেছিলেন, ‘মেয়েটার গলাটা বড্ড সুরু।’ পরে মিউজিক ডিরেক্টর গুলাম হায়দার পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেছিলেন, আগামী দিনে এই মেয়েকে দিয়ে গান গাওয়াতে পায়ে ধরবে গোটা বলিউড। এরপর তাঁর হাত ধরেই বলিউডে প্রথম বড় ব্রেক পান লতা। মজবুর (১৯৪৮) ছবির ‘দিল মেরা তোড়া, মুঝে কাহিন কা না ছোড়া’ গানটি রেকর্ড করেন লতা। শিল্পীর কথায়, ‘গুলাম হায়দার আমার গডফাদার।’

শুরুর দিকে লতার গায়েকিতে নূর জাহানের ছাপ খুঁজে পেয়েছেন অনেকে, তবে দ্রুত তা কাটিয়ে উঠে নিজস্ব স্টাইল তৈরি করেছিলেন সুরসম্রাজ্ঞী।

 

লতা মঙ্গেশকর ৩৫টিরও বেশি ভারতীয় ভাষায় গান গেয়েছিলেন। গেয়েছেন বাংলা গানও। বলা যায়, ভারতীয় সংগীত জগতের কিংবদন্তি গায়িকা লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে বাঙালি ও বাঙালি সংস্কৃতির গভীর যোগযোগ ছিল। যার ফলস্বরূপ লতা মঙ্গেশকর তার মাতৃভাষার পর সবচেয়ে বেশি গান গেয়েছেন বাংলা ভাষায়।

 

১৯৫৬ সালে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে ‘প্রেম একবারই এসেছিল জীবনে’ গানটি ছিল লতার গাওয়া প্রথম বাংলা গান। লতাকে বাংলা গান গাওয়ানোর ক্ষেত্রে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। এরপর সলিল চৌধুরিও লতাকে দিয়ে বহু কালজয়ী গান গাওয়ান।

 

এছাড়া সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের সুরেও লতা বেশ কিছু কালজয়ী বাংলা গান গেয়েছেন। সুধীন দাশগুপ্তর সুরেও কিছু বিখ্যাত গান গেয়েছেন। পরবর্তী সময় বহু সুরকারের সুরে লতা মঙ্গেশকর বাংলা গান গেয়েছেন।

 

তবে সবচেয়ে বেশি গান তিনি গেয়েছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে। যদিও মান্না দে, শচীন দেব বর্মন, রাহুল দেব বর্মন, সলিল চৌধুরি, গীতা দত্ত, অনিল বিশ্বাস, অশোক কুমার, কিশোর কুমার, শক্তি সামন্ত, হৃষিকেশ মুখার্জি, বিশ্বজিত, বাপী লাহিড়ি প্রমুখের সাথে লতা মঙ্গেশকরের খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল। তবে সবচেয়ে নিবিড় সম্পর্ক ছিল হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। লতার মা হেমন্তকে খুব ভালবাসতেন। এছাড়া বোনেরা আশা, মীনা, উষা ও ভাই হৃদয়নাথ সবাই হেমন্তের ভক্ত ছিলেন। আশা ভোঁসলে তো নিজের ছেলের নামও রেখেছিলেন হেমন্তের নামে।

 

প্রথমের দিকে কলকাতায় এসে লতা হেমন্তের কলকাতার বাড়িতে থেকেছেন। হেমন্তের সুরে হিন্দি ও বাংলা ছবিতে লতা প্রচুর কালজয়ী গান গেয়েছেন। দুজনে ডুয়েটও গেয়েছেন প্রচুর। হেমন্তের কাছে রবীন্দ্র সংগীত শিখেছেন লতা মঙ্গেশকর। লতাকে দিয়ে প্রথম রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইয়েছেন হেমন্ত। বাংলা সাহিত্য সম্পর্কেও যথেষ্ট উৎসাহী লতা মঙ্গেশকর বাংলার রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র প্রমুখের মারাঠি অনুবাদ পড়েছেন।

 

 উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন অভিনীত বাংলা ছবির বিশেষ ভক্ত লতা মঙ্গেশকরের বাড়িতে উত্তম-সুচিত্রার ছবির ক্যাসেট, সিডি রয়েছে। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রযোজনায় হিন্দি ও বাংলা ছবিতে গান গেয়ে কোনওদিন পারিশ্রমিক নেননি লতা।

 

 ৭৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি তার জাদুকরি কণ্ঠ দিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রেখেছিলেন।

অনেকেই হয়ত জানেন না আরডি বর্মনের ক্যারিয়ারের প্রথম ও শেষ গানটি লতার কণ্ঠে রেকর্ড করা।

 

নতুন শতাব্দীতে গানের জগত থেকে নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছিলেন লতা, তবুও ‘বীর জারা’, ‘রং দে বসান্তি’র মতো ছবির অ্যালবামের শোভা বাড়িয়েছে তাঁর সুমধুর কন্ঠ। ২০১৯ সালে ভারতীয় আর্মিকে শ্রদ্ধার্ঘ্য দেন লতা, রেকর্ড করেন ‘তেরি মিট্টি কি সওগন্ধ’, এটিই লতা মঙ্গেশকরের রেকর্ড করা শেষ গান।

লতা মঙ্গেশকরের বিখ্যাত গানের তালিকা অগুনতি, ‘অ্যায় মেরে বাতান কে লোগো’, ‘লাগ জা গলে, ‘চালতে চালতে’, ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’- এই তালিকা শেষ হওয়ার নয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর