হিজাব-নিকাব পরায় হেনস্থা: রাবি শিক্ষককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, পাঁচবছর অব্যাহতি

, ক্যাম্পাস

রাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-03-12 19:07:55

ছাত্রীদের হিজাব-নিকাব খুলতে বাধ্য ও কটাক্ষ করার অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমানকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এই ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

এছাড়া এদিন দুপুরে বিভাগের একাডেমিক কমিটির এক সভায় ড. হাফিজুর রহমানকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. আশরাফ-উজ-জামান।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগের একাডেমিক কমিটির একটি সভা করা হয়েছে। সভায় অভিযোগটি যাচাই-বাছাই করে অভিযুক্ত শিক্ষককে বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে পাঁচ বছরের জন্য অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার থেকেই অব্যাহতি কার্যকর হবে। অভিযুক্ত শিক্ষক নিজের অভিযোগ স্বীকার করায় কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি।

এর আগে মানববন্ধনে 'স্টপ সারকাজম অ্যাবাউট হিজাব', 'শিক্ষক যদি এমন হয়, আমাদের নিরাপত্তা কোথায়!', 'বাবার মতো শিক্ষকের এ কেমন আচরণ!', 'মাই হিজাব, মাই রাইট', 'নিকাব নিয়ে হয়রানি, মানছি না, মানবো না', 'শেখ হাসিনার বাংলায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাকারীর ঠাঁই নাই', 'হিজাব আমার অধিকার, হিজাব আমার অহংকার'সহ বিভিন্ন লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়।


মানববন্ধনে ভুক্তভোগীদের মধ্যে ফাতেমাতুস্ সানিহা নামে প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষকদের কাজ হচ্ছে, সাহায্যের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আগলে রাখা। অথচ সেই শিক্ষক (ড. হাফিজ) ক্লাসের প্রথম দিনেই একটা কাগজ দিয়ে বাতাস করায় আমাকে দাঁড় করান। তিনি বলেন, 'পা থেকে মাথা পর্যন্ত এভাবে প্যাকেটের মতো করে এসেছো কেন? তোমার গরম তোমার কাছে রাখো'। উনি আমার সম্মানীত পোশাককে প্যাকেটের সঙ্গে তুলনা করেছেন। আমার ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি সংবিধানেরও অবমাননা করেছেন। সংবিধানের ১২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সব নাগরিকের ধর্মীয় অধিকার এবং প্রত্যেকের পোশাকের স্বাধীনতা রয়েছে।

ভুক্তভোগী এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, তিনি শুধু আমাকেই এমন কথা বলেননি, আমার বান্ধবীদেরও বলেছেন। আমার এক বান্ধবীর নিকাবকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, 'হোয়াট ইজ দিস? এরকম লম্বা এটা কী ঝুলিয়ে এসেছো?' এভাবে তিনি আমাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়ে হেনস্থা করেছেন। আমি চাই না, আমাদের এই শান্তিপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কোনো বোন এভাবে হেনস্থার শিকার হোক। আমি চাই না, আর কোনো বোন বুলিংয়ের শিকার হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ুক! ড. হাফিজুর রহমানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী সজীব বলেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের থেকে আমরা এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা কখনোই আশা করি না। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষক রয়েছেন, যারা বহির্বিশ্বে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান উজ্জ্বল করেছেন। কিন্তু ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ড. হাফিজুর রহমানের মতো কিছু শিক্ষক আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ক্ষুণ্ণ করেছেন।

তিনি বলেন, স্পষ্টতই এখানে ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। তিনি মেসেঞ্জারে বিভিন্ন ছাত্রীদের ফ্লার্টিং মেসেজ করেছেন। মেসেজগুলো খুবই অরুচি পূর্ণ। এক শিক্ষকের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে এ ধরনের মেসেজ মানানসই নয়। তিনি ক্লাসের মধ্যে ছাত্রীর হিজাব খুলতে বাধ্য করেছেন। এটা যৌন নিপীড়নের পাশাপাশি ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপও। ড. হাফিজুর রহমানকে স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।

একপর্যায়ে মানববন্ধনের স্থানে আসেন রাবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক হুমায়ুন কবির, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক এবং কয়েকজন সহকারী প্রক্টর।

এসময় উপ-উপাচার্য আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করে বলেন, আমরা বিষয়টা অবগত হয়েছি। একটা জরুরি মিটিং ডেকেছি ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে। মিটিংয়ের পরে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো, কী করা যায়! প্রয়োজনে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করবো।

প্রসঙ্গত, সোমবার (১১ মার্চ) সকালে ফেসবুকে ইসলামিক স্টাডিজ পরিবার (রাবি) নামে একটি গ্রুপে সিদরাতুল মুনতাহা নামে একটি আইডি থেকে একটি পোস্ট করা হয়। ওই পোস্টে বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে শ্রেণিকক্ষে হিজাব-নিকাব পরে যাওয়ায় কটাক্ষ ও হেনস্থা করার অভিযোগ করা হয়। পরবর্তীতে মেসেঞ্জারে ছাত্রীদের সঙ্গে করা আপত্তিকর কিছু কথোপকথনের স্ক্রিনশট পোস্ট করা হয় ওই গ্রুপটিতে। এরপর বিকেলে ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন করেন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী।

এ সম্পর্কিত আরও খবর