ঢাবির জগন্নাথ হলে ছাত্রলীগের দু'গ্রুপের সংঘর্ষ, ১ জন আইসিইউতে

, ক্যাম্পাস

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2024-02-17 00:04:52

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলে ছাত্রলীগের দু'গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৪ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত একজনকে আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়েছে।

শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন- জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অপূর্ব চক্রবর্তী। তিনি বর্তমানে রাজধানীর পপুলার হাসপাতালের আইসিউতে ভর্তি আছেন।

আনুমানিক রাত ৮টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষে পাল্টাপাল্টি হামলার পাশাপাশি হলের ফ্লোর ও এক নেতার মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। তবে সংঘর্ষের ঘটনায় দু'পক্ষই এক অন্যকে দোষারোপ করেছে।

সংঘর্ষে আহত হয়েছেন- পলাশ রায় সৌরব, অপুর্ব চক্রবর্তী, পল্লব মন্ডল, অর্পণ কুমার বাপ্পি, বিপ্লব পাল, বর্ষণ রয়, কার্তিক কুমার।

এরা বিশ্ববিদ্যালয়ে তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অন্যপক্ষের আহত হয়েছেন অভিষেক ভাদুড়ি, জয় দাস, ধ্রুব, চিন্ময়, রিদ্ধি, অভি ও প্রিতম। এরা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের মাঠে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে একটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়। কনসার্ট চলাকালীন ধাক্কাধাক্কিকে কেন্দ্র করে প্রথমে দু'গ্রুপের মধ্যে সাময়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এসময় কয়েকটি চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। সাময়িক উত্তেজনার পর একটি গ্রুপ ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এবং অন্য গ্রুপ মাঠে অবস্থান করে। তখন ওয়ারফেজ ব্যান্ড ৩য় গান পারফর্ম করছিল। পরবর্তীতে কনসার্টের শেষ মুহূর্তে যখন মমতাজ গান গাইতেছিল তখন আরেকটি বড় গ্রুপ হল মাঠে আসে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চার নেতা কনসার্ট ত্যাগ করলে শুরু হয় সংঘর্ষ। আমি দেখলাম কয়েকজন দৌড়ে নতুন বিল্ডিংয়ে উঠে পড়ল। পুকুর পাড়ে দেখলাম স্টাম্প, লাঠি, পাইপ নিয়ে শুধু মারামারি চলছে।

তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী ও হল ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী ঋভু মন্ডল বলেন, যখন চার নেতা কনসার্টে এসেছিল, মমতাজের গান শেষ হলো। তখন তিন নেতা বের হচ্ছিল, তখন গণেশ ঘোষ তার কর্মীসহ এমন অবস্থা তৈরি করেছে যাতে সৈকত ভাই (ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক) বের হতে না পারে। ফলে কর্মীদের মধ্যে একটা ছোট ঝামেলা তৈরি হলে সৈকত ভাই তাদের সাথে কথা বলে বের হয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, সৈকত ভাই বের হয়ে গেলে জুনিয়র কর্মীদের মধ্যে হট্টগোল তৈরি হয়। পরে আমরা আমাদের কর্মীদের নিয়ে ভেতরে চলে আসি। পরবর্তীতে ইনান ভাইয়ের তিনটি গ্রুপ ও সাদ্দাম ভাইয়ের দুইটি গ্রুপসহ মোট পাঁচটি গ্রুপের নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে নতুন ভবনের সেক্রেটারি ব্লকের তিনতলা ভাঙচুর করে চার তলায় যেতে চায়। হামলায় হলের সভাপতি কাজল দাস, সাধারণ সম্পাদক অতুনু বর্মণ ও হল ছাত্রলীগের নেতা রাজিব বিশ্বাস, গণেশ ঘোষ, সবুজ মণ্ডলের গ্রুপ উপস্থিত ছিল। প্রত্যেকের হাতে স্টাম্প, রড, কাঠের টুকরো, এস এস পাইপ ছিল। হামলায় আমাদের ৮ জন নেতাকর্মী আহত হয়।

হামলায় গুরতর আহত হন অপুর্ব চক্রবর্তী। তিনি বলেন, আমি আমার কর্মীদেরকে ভেতরে যেতে বলে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে রাজিব বিশ্বাস ও গণেশ এসে আমার মাথায় ও চোখে রড দিয়ে বাড়ি দেয় ফলে আমার চোখের কোণে কেটে যায় এবং মাথা ফেটে যায়। আমি তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে চলে আসি। তার পরে আমি আর জানি না।

জগন্নাথ হলের একাধিক শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় ও ঢাবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণার পর তৎকালীন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক উৎপল বিশ্বাসের গ্রুপ দুই ভাগ হয়ে যায়। তখন একই গ্রুপে ছিলেন লিয়ন বালা, ঋভু মণ্ডল ও জয়ন্ত, রাজীব, গণেশ ও সবুজ। এরা ইনানের অনুসারী ছিলেন। পরবর্তীতে লিয়ন বালা, ঋভু মণ্ডল ও জয়ন্ত ইনানের গ্রুপ ছেড়ে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের গ্রুপে যোগ দেন। এ নিয়ে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বরেও দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। অপূর্ব চক্রবর্তী বলেন, এসব ঘটনার জের ধরেই তার ওপর হামলা করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের অনুসারী ও হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব বিশ্বাস বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের সাথে হল ছাত্রলীগ নেতা গণেশ ঘোষের একটু ধাক্কা লাগে। গণেশ ঘোষ শেখ ইনানের অনুসারী। এসময় গণেষ সৈকতের কাছে মাফ চাইলে সৈকত ঘটনার মীমাংসা করে দেন। সৈকত ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে তার অনুসারী সুস্ময়, অপুর্ব চক্রবর্তীসহ আরও অনেকে আমাদের উপর লাঠিসোঁটা নিয়ে আক্রমণ করে। এতে আমাদের অভিষেক ভাদুড়ি, জয় দাস, ধ্রুব, চিন্ময়, রিদ্ধি, অভি ও প্রিতম আহত হয়। জগন্নাথ হলে তার অবস্থান শক্ত হওয়ায় অন্য গ্রুপ তার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অভিযোগ করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। হামলা-মারামারি হয়েছে এমনটি আমি শুনিনি। তবে জানতে পেরেছি কিছু শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামান্য বিষয় নিয়ে সাময়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল, কিন্তু মারামারির বিষয়ে আমি এখনও শুনিনি। এমন কিছু হয়ে থাকলে আমরা ব্যবস্থা নিবো।

ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বার্তা২৪.কমকে বলেন, মাতাল অবস্থায় গণেশ আমার গায়ের উপর পড়লে আমি মীমাংসা করে দিয়ে চলে আসি। পরে জানতে পারি আমার গ্রুপের সাথে পূর্ব শত্রুতার জেরে হলের অন্যান্য কয়েকটি গ্রুপ একত্রিত হয়ে বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসে তাদের উপর হামলা করেছে। বাইরে কাদেরকে ঢুকানো হয়েছে তাদেরকে শনাক্ত করতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর