জাবিতে ছাত্রলীগের ২ গ্রুপের মারমুখী অবস্থান

, ক্যাম্পাস

জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2024-02-01 05:59:16

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অবাঞ্ছিত শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করতে বিক্ষোভ মিছিল ও শোডাউন করেছে ছাত্রলীগের বিদ্রোহী অংশের নেতাকর্মীরা। এসময় লিটনের সমর্থনে বঙ্গবন্ধু হলে এসে যোগ দেয় শেখ রাসেল হলের নেতাকর্মীদের।

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টায় প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীর উপস্তিতিতে ছাত্রলীগের বিদ্রোহী অংশ মুরাদ চত্বর থেকে বিক্ষোভ-মিছিল শুরু করে বঙ্গবন্ধু হলের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। এসময়ে হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারীরাও হল গেইটে অবস্থান নেয়।

এসময় নেতাকর্মীদের 'লিটনের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে; এক দফা এক দাবি, লিটন তুই কবে যাবি; অবাঞ্চিত সেক্রেটারী, মানি না মানব না; প্রভৃতি স্লোগান দিতে দেখা যায়। তবে এক পর্যায়ে নেতাকর্মীরা হলের প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে লিটনকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ কটুবাক্য বিনিময় করতে থাকে।

এর আগে, ২৩ জানুয়ারি শাখা ছাত্রলীগের ছয় হলের নেতাকর্মীরা জমি দখলসহ প্রায় ছয়টি অভিযোগ এনে সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনকে ক্যাম্পাস থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। এরই প্রেক্ষিতে ২৭ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এ ঘটনার তদন্তে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। আর এ ঘটনার তদন্ত চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি হলের হল কমিটি গঠন করলে বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটে।

বুধবার (৩১ জান্য রাত সাড়ে ৮টার দিকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আখতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হল ও শেখ হাসিনা হলের হল কমিটি গঠন করা হয়। আর এ থেকেই বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটে। কমিটি ঘোষণার পর ক্ষুব্ধ হয়ে মুরাদ চত্ত্বরে জমায়েত করতে থাকে লিটনের অনুসারী ৬টি হলের বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা।

এছাড়া ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা জানায়, একটি হল কমিটি গঠন করতে হলে সিনিয়র নেতাকর্মীদের সাথে আলোচনা করতে হয়। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কোনো আলোচনা ছাড়াই দুই হলের কমিটি গঠন করেছে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে। তবে হাবিবুর রহমান লিটন কেন্দ্রের কাছে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে ও ক্যাম্পাসের রাজনীতি সচল আছে বোঝাতে কোনো আলোচনা ছাড়াই হুটহাট দুই হলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। হুটহাট হল কমিটি ঘোষণা করে সাধারণ সম্পাদক নিজের অপকর্মগুলোকে ঢেকে তদন্তের মোড় ঘুরানোর চেষ্টা করছে।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জাহিদুজ্জামান শাকিল বলেন, ‘অবাঞ্ছিত এবং একঘরে সেক্রেটারি কিভাবে হল কমিটি দেয় তা আমাদের বোধগম্য না৷ তাছাড়া আমাদের সাথে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই দুটি হল কমিটি দেওয়া হয়েছে। আমরা এ কমিটি মানি না।’

এছাড়া ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা আরও জানায়, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন স্থানীয় হওয়ায় ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় জমি দখল, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসাসহ অনেক অপকর্মের সাথে জড়িত। তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের তদন্তের ফলাফল নিজের পক্ষে আনতে কমিটিকে উপঢৌকন দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহ-সভাপতি বলেন, কমিটির সদস্যরা তদন্তের জন্য একসাথে আসার কথা। মঙ্গলবার রাতে কমিটির একজন সদস্য একাই ক্যাম্পাসে এসেছেন। তদন্ত এখানে প্রশ্নবিদ্ধ।

এদিকে, দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে অবস্থান নেয় ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। ঘটনার শেষ পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান ঘটনাস্থলে আসলে দীর্ঘক্ষণ ছয় হলের নেতাকর্মীদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে বিদ্রোহী ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা নিজ নিজ হলে ফিরে যায়।

বঙ্গবন্ধু হলের সামনে বিদ্রোহীদের অবস্থান শেষে ঘটনা স্থলে প্রক্টরিয়াল টীম নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান৷ এসময় তিনি বিদ্রোহীদের সাথে কথা বলেন। অবাঞ্চিত হওয়া সত্ত্বেও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরে হল কমিটি দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিদ্রোহীরা। জমি দখল ও নিজের অর্থ আত্মসাৎকে বৈধতা দিতেই এই কমিটি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা৷ লিটনের বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত কার্যক্রমের মাঝেই হল কমিটি দেয়াকে অনভিপ্রেত বলে মন্তব্য করেন তারা৷ এসময় অবাঞ্চিত সাধারণ সম্পাদককে অবিলম্বে ক্যাম্পাস ত্যাগের আল্টিমেটাম দেন তারা৷ হলের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে হল তল্লাশির দাবি জানান তারা।

প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বিদ্রোহীদের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এখানে কিছু করতে পারবে না। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বিশৃঙখলা না হোক। আমি আজকে প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারিকে এটা জানাবো৷ কিন্তু এখানে তো আমার কিছু করার নেই। এটা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ দেখবে। হল রেইড দিতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অথরিটির সাইন লাগে। চাইলেই তো রেইড দেয়া যায় না।’

উল্লেখ্য, চলমান এ বিদ্রোহে বিশ্ববিদ্যালয়ের কামালউদ্দিন হল, রবীন্দ্রনাথ হল, রফিক-জব্বার হল, আলবেরুনি হল, মীর মশাররফ হল ও সালাম-বরকত হলের সাধারণ সম্পাদকের প্যানেলের নেতাকর্মীরা সম্পৃক্ত।

এ সম্পর্কিত আরও খবর