উচ্চ শিক্ষায় প্রতিবন্ধীদের ভর্তিতে বন্ধু সুলভ নয় ঢাবি!

, ক্যাম্পাস

আরিফ জাওয়াদ, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 14:16:16

প্রতিবন্ধীদের উচ্চ শিক্ষায় ভর্তিতে বন্ধু সুলভ নয় দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সেই সঙ্গে ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নানা জটিলতায় সম্মুখীন হতে হয় বলে অভিযোগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অধ্যয়নরত ও ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের। শ্রুতিলেখক নিয়ে পরীক্ষার হলে পড়তে হয় পরীক্ষায় নিয়োজিতদের জেরা সহ নানা জটিলতায়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সরকার ও রাজনীতি বিভাগের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী আসিফ করিম পাটোয়ারী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাতে আসিফ তাঁর শ্রুতি লেখক’ক নিয়ে জেরার সম্মুখীন হতে হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন। শুধু আসিফ না, নাম প্রকাশে ডজন খানেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে শ্রুতি লেখক নিয়ে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়েছে বলে অভিযোগ আছে বার্তা২৪.কমের কাছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইসলামিক স্টাডিজের তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আনোয়ার হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ভর্তি পরীক্ষায় তাঁর রয়েছে তিক্ত অভিজ্ঞতা। তিনি বার্তা২৪.কম’কে বলেন, আমি যেই স্কুল থেকে শ্রুতিলেখক নিয়েছিলান, সেখানকার প্রত্যায়নপত্রটি শ্রুতি লেখকের ছবি আঠা দিয়ে লাগিয়ে তার উপর স্বাক্ষর না থাকায়, পরীক্ষার একদিন আগে তাঁকে বড় রকমের এক ভোগান্তি পোহাতে হয়। পরে পুনরায় তাঁকে বাসায় গিয়ে আবারও নতুন করে শ্রুতিলেখকের স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে সেই ইস্যুটি সমাধান করতে হয়। অথচ সেটি তেমন কোন সমস্যা ছিল না, বলে অভিযোগ ওই শিক্ষার্থীর।

এ দিকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান বলেন, ভর্তির পরীক্ষায় বন্ধু সুলভ আচরণে ঢাবি একটি উদাহরণ হতে পারে। হয় তো শীগ্রই এ জটিলতা কাটিয়ে উঠে বন্ধু সুলভ হয়ে উঠবে বলে তাঁর প্রত্যাশা।

ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শ্রুতিলেখকদের নিয়ে ভোগান্তির ব্যাপারে বার্তা২৪.কমের কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিক আহসানের সঙ্গে।

তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি সাপোর্ট সেন্টার থাকে, তাঁরাই প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের যাবতীয় বিষয় দেখে থাকেন। যেখানে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য শ্রুতিলেখকদের একটি পোল রয়েছে, যাঁদেরকে যথাযথা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়। এমনকি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীী সাথে যার পূর্ব কোন পরিচিতি নেই। যাঁর যখন প্রয়োজন পড়বে সে সেখান থেকেই সহায়তা নিতে পারবেন। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এনন সাপোর্ট সেন্টারগুলো আমাদের দেশে চালু করা বেশ জরুরী বলে মনে করেন তিনি।

জানা গেছে এছাড়া দেশের প্রথম সারির একটি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী সংগ্রহে পরীক্ষা নয়, ভাইবার মাধ্যমে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে থাকে। এ অধ্যাপক অধ্যাপক তারিক বলেন, লিখেই কেন একজন মানুষের শিখন যাচাই করা হবে। মুখস্থ করিয়ে লিখিয়ে পরীক্ষা দুয়ে প্রমাণ করতে চাই যে সে পারে। গতানুগতিক ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষায় সমস্যা সমাধান ও প্রজেক্টবেজ শিখনের উপর গুরুত্ব দিতে হবে, যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীও উপকৃত হবেন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির একই ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালগুলো তাঁদের আইন ও ঐতিহ্যের কারণে এমনটা হয়ে থাকে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর যেমন খুশি তেমন শ্রুতি লেখক আনার সুযোগ রাখা উচিত। কারণ একজন শ্রুতি লেখকের সঙ্গে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর যেমন এডজাস্টমেন্টের প্রয়োজন হয়, তেমনি শ্রুতিলেখকের যথাযথ প্রশিক্ষণেরও প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করেন।

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা ৬ হাজার ৮৫। এর ১ শতাংশ (৬১ জন) প্রতিবন্ধী কোটায় ভর্তির সুযোগ পাবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) একাধিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর সাথে কথা হলে ; তাঁরা অভিযোগ করেন, অনেক বড় একটা অংশ আমাদের জন্য বরাদ্দ থাকলেও তা পূরণ হচ্ছে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষায় সুযোগে সদিচ্ছার অভাব।

অভিযোগের মাঝে প্রতিবন্ধীদের উচ্চ শিক্ষায় সুযোগ বৃদ্ধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) তাঁর প্রতিবন্ধী কোটাতে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তিতে নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডারস (স্নায়ু-বিকাশগত প্রতিবন্ধিতা) যুক্ত করেছে। অনেক শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এ পদক্ষেপ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষায় নিয়ে আসার পদক্ষেপ’কে বন্ধুসুলভ ভাবে দেখছেন।

এ ব্যাপরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি জাতীয় ইস্যু, তাছাড়া সদিচ্ছার অভাব থাকলেও আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অভাবগুলো পূরণে কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে উদ্যেগও নিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, ২০০৬ সালে জাতিংঘের Convention on the Rights of Persons with Disabilities, এটার কারণে ভারত তার আইনকে সংশোধন করেছে কিন্তু আমরা সংশোধন না করে আইন করেছি। ২০১৩ সালের প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা আইন পাশ করি। যেখানে ভারত সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য একই আইন রেখেছে কিন্তু আমাদের তা নেই। এছাড়া ওই সুরক্ষা আইনের পরবর্তীতে বিধিগুলোও আমরা পাইনি।

এ থেকে উত্তরণের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে মাঠ পর্যায় থেকে বিভিন্ন জিও, এনজিও, বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি নিয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। সেটি যদি মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদন সাপেক্ষে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, তাহলে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি না। সকল প্রকারের বাঁধা থেকে প্রতিবন্ধীরা মুক্ত হবেন, বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এ অধ্যাপক।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সাথে কথা হয় বার্তা২৪.কমের। তিনি জানান, আমরা প্রতিবন্ধীদের উচ্চ শিক্ষার ব্যাপারে যথেষ্ট যত্নশীল। তবে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেগুলো কাটিয়ে উঠতে আমাদের উদ্যেগ চলমান রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, শ্রুতি লেখক নিয়ম নীতি অনুসরণ করলে, সমস্যা হওয়ার কথা না। এমন কখনও সমস্যা হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। এ ব্যাপারে ভাল কোন সুপারিশ থাকলে সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়কে দেয়ার আহ্বান জানান উপাচার্য।

এ সম্পর্কিত আরও খবর