ফিতরার আর্থসামাজিক গুরুত্ব



মাওলানা আবদুল জাব্বার, অতিথি লেখক, ইসলাম, বার্তা২৪.কম
ফিতরার আর্থসামাজিক গুরুত্ব, ছবি: সংগৃহীত

ফিতরার আর্থসামাজিক গুরুত্ব, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সদকাতুল ফিতর আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে, রোজা শেষে, ঈদুল ফিতরের দিন গরিবের আনন্দের জন্য নির্ধারিত পরিমাণ খাদ্যপণ্য অথবা অর্থ প্রদান করার জন্য, ইসলাম নির্ধারিত বিশেষ ব্যবস্থা।

সামর্থ্যবান, জীবিকা নির্বাহের অত্যাবশকীয় সামগ্রী ছাড়া নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকদের পক্ষ থেকে, গরিবদের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ প্রদান করাই মূলত সদকাতুল ফিতর, যা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর ওপর ওয়াজিব।

রোজা না রাখলে অথবা রাখতে না পারলেও তার ওপর ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব। ফিতরা ওয়াজিব করা হয়েছে প্রথমত রোজাদারদের জন্য। রোজার রাখার ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকলে তার এক ধরনের ক্ষতিপূরণ হিসেবে। দ্বিতীয়ত অসহায় মিসকিনদের জন্য ঈদের রিজিকের ব্যবস্থা করার জন্য, যাতে তারাও সবার সঙ্গে আনন্দ উপভোগ করতে পারে। অসহায়, গরিব-মিসকিন যারা জাকাত পাওয়ার যোগ্য, তারাই ফিতরার হকদার। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) রোজা ফরজ হওয়ার বছরেই জাকাত ফরজ হওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে জাকাতের মতো এ ক্ষেত্রে এক বছর অতিক্রান্ত হওয়া জরুরি নয়। বরং কেউ যদি ঈদের আগের দিনও নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, তাকেও ফিতরা আদায় করতে হবে।

নিজের এবং নিজের অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান, এমনকি প্রাপ্তবয়স্ক অধীনস্থ সন্তানদের জন্যও ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব।

সন্তানের নামে সম্পদ থাকলে সেখান থেকেও ফিতরা আদায় করা যাবে। কোনো এতিম শিশুর ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়ে থাকলে তার পক্ষ থেকেও আদায় করা ওয়াজিব। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) স্বীয় উম্মতের ক্রীতদাস ও স্বাধীন, নারী ও পুরুষ, ছোট ও বড় সবার ওপর ফিতরা ওয়াজিব করেছেন এবং তা ঈদের দিন ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগেই আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। এমন কি, ঈদের দিন সকালে কোনো শিশু ভূমিষ্ঠ হলে তার পক্ষ থেকেও ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। অর্থাৎ সদকাতুল ফিতর হলো- জানের সদকা, মালের নয়; তাই জীবিত সব মুসলিমের জানের সদকা আদায় করার জন্যই ফিতরার ব্যবস্থা।

ফিতরা প্রদানের ক্ষেত্রে পরিবারের কয়েকজনের সদকা মিলিয়ে একজন গরিবকে একসঙ্গে দেওয়া যেতে পারে; অথবা একজনের সদকা কয়েকজন গরিবকেও দেওয়া যেতে পারে। তবে অধিকতর উত্তম হলো- একজন গরিবকে এই পরিমাণ ফিতরা দেওয়া, যা দিয়ে সে তার ছোটখাটো প্রয়োজন পূরণ করতে পারে কিংবা দু’তিন বেলা খেতে পারে।

ঈদুল ফিতরের দিন সকালে ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করা উত্তম। তবে জাকাতের মতো সে সময়ের আগেও আদায় করা যায়। আবার কোনো কারণে সময়মতো আদায় করতে না পারলে পরেও আদায় করা যায়। কেউ আদায় না করে মারা গেলে তার পক্ষ থেকে তার উত্তরাধিকারী দিয়ে দিলেও আদায় হয়ে যাবে।

ফিতরা আদায় করা মহান আল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ একটি আদেশ। বিত্তবান মুসলিম নাগরিকদের ওপর ফিতরা ওয়াজিব করে দেওয়া হয়েছে মূলত গরিব-অসহায় মানুষদের হক। পবিত্র রমজান মাসে রোজা পালনের পুরস্কার হিসেবে আল্লাহতায়ালা ঈদের আনন্দ প্রদান করেছেন। গরিব মানুষগুলো এই সমাজেরই মানুষ। তারা সারা বছরই দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে নিদারুণ কষ্টের মাঝে থাকে। তারা কমপক্ষে ঈদের দিন যাতে আনন্দে সবার সঙ্গে শরিক হতে পারে, এ জন্য তাদের কিছু খাদ্য ও বস্ত্রের ব্যবস্থা করে দেওয়া উচিত।

সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব। ফিতরার মাধ্যমে মুসলিম সমাজে বসবাসকারী ধনীদের অর্থ গরিবদের মধ্যে বণ্টিত হয় এবং এর দ্বারা তাদের জীবন-যাপনে কিছুটা হলেও গতি সৃষ্টি হয়।

নগদ অর্থ দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করা যাবে কি না এ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) পণ্য দিয়ে ফিতরা প্রদান করেছেন- অথচ ওই যুগেও মুদ্রা হিসেবে দিরহাম প্রচলিত ছিল। দিরহামের দ্বারা কেনাকাটা, দান-খয়রাত করা হতো। হজরত মুহাম্মদ (সা.) খাদ্যবস্তু দিয়ে ফিতরা প্রদান করতেন। এ জন্য মুসলমান পণ্ডিতদের বড় অংশ টাকা দিয়ে ফিতরা প্রদানের ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেন।

তবে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ও তার অনুসারীদের মতে, নগদ অর্থ দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করা যাবে।

কেননা, ফিতরা আদায়ের অন্যতম লক্ষ্য হলো- দরিদ্র মানুষকে ঈদের আনন্দে শরিক করা। দরিদ্র মানুষের যেমন প্রয়োজন খাদ্যের, তেমনি প্রয়োজন কাপড়-চোপড় ও অন্যান্য সামগ্রীর। এখন সবাই যদি শুধু খাদ্য দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করে, তাহলে হয়তো সংশ্লিষ্ট প্রাপকের ঘরে জমা হয়ে যাবে অঢেল খাদ্য। অথচ তার এত খাবারের প্রয়োজন নেই। বরং প্রয়োজন তার কাপড়-চোপড় কিংবা সেমাই, চিনি ও অন্যান্য সামগ্রী। এ অবস্থায় প্রয়োজন পূরণের জন্য তাকে অতিরিক্ত খাবার বিক্রি করতে হবে। এতে যেমন রয়েছে বিড়ম্বনা, তেমনি বিক্রি করতে হবে তুলনামূলকভাবে কম মূল্যে। এতে হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হবে দরিদ্র মানুষটি।

অতএব ইমাম আবু হানিফার মতে, এ ক্ষেত্রে কোনো সীমাবদ্ধতায় না গিয়ে বিষয়টি উন্মুক্ত রাখাই উত্তম, যাতে সবার জন্যই তা সহজ হয়ে যায়। ইসলাম সহজকে পছন্দ করে যদি তাতে গোনাহ না হয়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সহজ করো, কঠিন করো না।’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম

সদকাতুল ফিতর প্রদানের পরিমাণের ক্ষেত্রে ইনসাফ করতে হবে। যেমন- সদকাতুল ফিতর গম, যব, খেজুর, কিশমিশ আর পনির দিয়ে আদায় করা যায়। বিভিন্ন পণ্য নির্ধারণের মৌলিক উদ্দেশ্য হলো- যাদের ওপর এই ফিতরা ওয়াজিব, তাদের আর্থিক অবস্থার ভিন্নতার কারণে সুবিধামতো এবং সামর্থ্য অনুযায়ী পণ্য দিয়ে ফিতরা আদায় করতে পারেন। আসলে উত্তম হলো- সর্বোচ্চ মূল্যের পণ্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা। ধনীদের সর্বোচ্চ এবং সাধারণদের মাঝামাঝি মূল্যে আদায় করা শ্রেয়।

সবচেয়ে ইনসাফ হলো- যারা যে চালের ভাত খান বা যারা যে খেজুর দ্বারা ইফতার করেন, তারা এর সমমানের বা সমমূল্যের ফিতরা আদায় করবেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তাই উত্তম, দাতার কাছে যা সর্বোৎকৃষ্ট এবং যার মূল্যমান সবচেয়ে বেশি।’ –সহিহ বোখারি

একজন মুসলমানের মুখে হাসি ফুটানো উত্তম সদকা। ফলে সদকাতুল ফিতরের মাধ্যমে সওয়াবের পাশাপাশি গরিব-অসহায়দের ঈদ আনন্দে শরিক করে মুখে হাসি ফোটানোর সওয়াবও পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশের ইসলামিক ফাউন্ডেশন দেশের সরকারের প্রতিনিধিত্ব করে। এ ছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামি সংস্থা, ইমাম, খতিবসহ যারা এ বিষয়টির সঙ্গে জড়িত, সবার উচিত ফিতরা নির্ধারণ বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা এবং সবার মধ্যে সামর্থ্য অনুযায়ী সদকাতুল ফিতর আদায়ের আগ্রহ সৃষ্টি করা। ফিতরা আদায় করা মূলত প্রত্যেক উপযুক্ত ব্যক্তির নিজস্ব দায়িত্ব। এটা গরিবের হক যা নষ্ট করা কোনোভাবেই উচিত হবে না। তাই আমাদের সবার দায়িত্ব নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী বেশি মূল্যের পণ্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করে নিজে লাভবান হওয়া এবং গরিবদের বেশি সহযোগিতা করা।

বাংলাদেশের মুসলমানেরা টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করতে চাইলে দুই কেজি চল্লিশ গ্রাম মধ্যমানের চালের মূল্য পরিশোধ করতে হবে। জাকাত বোর্ড প্রতি বছর শহর ও গ্রাম এলাকার জন্য ফিতরার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। এ বছরও সরকার ফিতরার সর্বনিম্ন ৭০ এবং সর্বোচ্চ এক হাজার ৯৮০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। সম্ভব হলে চাল বা খাদ্যবস্তু দিয়ে ফিতরা প্রদান করা ইনসাফপূর্ণ হবে বলে অনেকে মনে করেন।

   

সৌদি পৌঁছেছেন ৩০ হাজার ৮১০ হজযাত্রী



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছর হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৩০ হাজার ৮১০ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন।

সোমবার (২০ মে) হজ পোর্টালের সবশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়।

সৌদিতে যাওয়া হজযাত্রীদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার হাজার ৭৪৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার গেছেন ২৭ হাজার ৬৩ জন।

বাংলাদেশ থেকে ৭৭টি ফ্লাইটে এসব হজযাত্রী সৌদি পৌঁছেছেন। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ৩২টি, সৌদি এয়ারলাইনসের ২৫টি এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস ২০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে।

এদিকে, সৌদি আরবে হজ পালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত দুইজন বাংলাদেশি মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে, গত ৯ মে বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রথম ডেডিকেটেড ফ্লাইট ৪১৫ জন হজযাত্রী নিয়ে সৌদির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এর মাধ্যমেই চলতি বছরের হজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। শেষ হবে ১০ জুন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ২০ জুন এবং শেষ হবে ২২ জুলাই।

;

হজের সময় সৌদিতে তাপদাহের আশঙ্কা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজের আনুষ্ঠাকিতায় হাজিরা, ছবি: সংগৃহীত

হজের আনুষ্ঠাকিতায় হাজিরা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া হজের সময় সৌদি আরবের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকতে পারে। এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন সৌদি ন্যাশনাল সেন্টার অব মেটিওরোলজির প্রধান আয়মান গোলাম।

আসন্ন হজে উচ্চ তাপমাত্রার জন্য সতর্ক করে প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আয়মান গোলাম বলেছেন যে, এ বছর হজের মৌসুম চলবে জুনের মাঝামাঝিতে। হজের মৌসুম সৌদি আরবে বছরের সবচেয়ে গরম সময়ের সঙ্গে মিলে গেছে।

বছরের এই সময়ে সাধারণত সৌদি আরবে তাপমাত্রা এবং বাতাসের আর্দ্রতা দুটোই অনেক বেশি থাকে। ফলে হজে অংশগ্রহণকারীদের সতর্ক থাকতে অবহিত করা হয়েছে।

জানা গেছে, হজ করতে আসা মুসল্লিদের ওপর তীব্র গরমের প্রভাব কমাতে তাদের বাসস্থানকে পর্যাপ্ত ঠাণ্ডা রাখা হবে হজ আয়োজনকারীদের অন্যতম অগ্রাধিকার। বিশেষ করে মিনা এবং আরাফাতের ময়দানে তাঁবুতে অবস্থান এবং হজের পাঁচতিন চলাচলে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

রোগীদের হজে যাওয়ার ক্ষেত্রে সৌদির নির্দেশনা
যারা দীর্ঘদিন ধরে রোগে ভুগছেন তাদের হজে যাওয়ার সময় চিকিৎসার নথিপত্র সঙ্গে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে সৌদি আরব। রোগীরা হজে গিয়েও যেন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান তা নিশ্চিত করতেই এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় জানায়, বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হয় এমন কোনো রোগে যদি আপনি ভুগে থাকেন এবং বিশেষ ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে চিকিৎসার নথিপত্র সঙ্গে নিয়ে আসতে ভুলবেন না। যেন সৌদিতে আসার ও যাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান।

এ ছাড়া বিদেশি হজযাত্রীদের সৌদি আরবে আসার আগেই ‘নেইসেরিয়া মেনিনজিটিডিস’ ভ্যাকসিন নিতে হবে এবং নিজ দেশের দ্বারা ভ্যাকসিন নেওয়ার বিষয়টির প্রমাণপত্র নিতে হবে।

বিদেশি হজযাত্রীদের পোলিও, কোভিড-১৯ এবং ফ্লুয়ের ভ্যাকসিন নেওয়া থাকতে হবে। এতে করে সব হজযাত্রীর স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া সৌদিতে বসবাসরত যারা হজ করতে চান তাদের হজ সংক্রান্ত ভ্যাকসিনগুলো গ্রহণ করতে হবে।

এই ভ্যাকসিন প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ হজযাত্রীদের পবিত্র মক্কা নগরীতে হজের জন্য যেতে মন্ত্রণালয়ের সেহাতি অ্যাপে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন করতে হবে।

;

হজযাত্রী কমেছে ৩৭ হাজারের বেশি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজ ক্যাম্পে প্রবেশ করছেন হাজিরা, ছবি: নূর এ আলম, বার্তা২৪.কম

হজ ক্যাম্পে প্রবেশ করছেন হাজিরা, ছবি: নূর এ আলম, বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

হজের খরচ বাড়ায় গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় ৩৮ হাজার কমেছে হজযাত্রীর সংখ্যা। করোনা পরবর্তী সময়ে ২০২৩ সালে এক লাখ ২২ হাজার ৮৮৪ জন বাংলাদেশি হজপালনে যান। যদিও বাংলাদেশের জন্য হজরে কোটা ছিল এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের। গত বছর হজ কোটার বিপরীতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কম ছিল নিবন্ধন সংখ্যা। যদিও সরকারি-বেসরকারিভাবে হজে যাওয়ার প্রাক-নিবন্ধনের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি।

কিন্তু হজ প্যাকেজের মূল্য বৃদ্ধির দরুণ কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও এবার নির্ধারিত কোটা পূরণ হয়নি। অবশেষ ৮৩ হাজার ২০৯ জন চূড়ান্ত নিবন্ধন করেন। তন্মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চার হাজার ৩১৪ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন হজপালন করবেন। আর ব্যবস্থাপনাসহ এবার হজে যাচ্ছেন ৮৫ হাজার ১১৭ জন। সে হিসেবে গত বছরের তুলনায় এবার সারাদেশে হজযাত্রীর সংখ্যা কমেছে ৩৭ হাজার ৭৬৭ জন।

যদিও এখন পর্যন্ত সরকারি মাধ্যমে ২ হাজার ৭৭১ জন ও বেসরকারি মাধ্যমে ৭৮ হাজার ২৭৩ জন যাত্রী হজের জন্য প্রাথমিকভাবে নিবন্ধন করে রেখেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতবারের তুলনায় এবার হজের মূল খরচ বেড়েছে। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও হজে যাওয়ার আগ্রহ কমেছে মানুষদের মধ্যে। এ কারণে অন্যবারের তুলনায় কমেছে হজযাত্রীর সংখ্যা।

আরও পড়ুন : বদলি হজ কখন করাবেন

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশনের (হাব) কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, হজের ব্যয় এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় হজে যাওয়ার মানুষের সংখ্যা কমেছে।

বিষয়টি নিয়ে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) নেতারা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, হজ কোটা পূরণ না হওয়ার প্রভাব তাদের ব্যবসায় পড়বে। কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পাওয়ায় অনেক ট্রাভেল এজেন্সি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

চলতি বছর একজন বাংলাদেশিকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে গড়ে প্রায় সাত থেকে আট লাখ টাকা খরচ হবে, যা অনেক আগ্রহীকে হজ পালনে নিরুৎসাহিত করেছে। বিমানভাড়া, সৌদি আরবে বাসাভাড়া, মক্কা ও মদিনায় যাতায়াত ব্যয়সহ মোয়াাল্লিম ফি অত্যধিক বৃদ্ধির কারণে মূল হজের খরচ অনেক বেড়ে গেছে।

হাব নেতাদের মতে, আগে মোয়াল্লিমের জন্য নির্ধারিত ফি ছিল এক হাজার থেকে ১২ শ রিয়াল, বর্তমানে তা করা হয়েছে পাঁচ হাজার রিয়াল, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার থেকে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। বিমানভাড়া করা হয়েছে এক লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এ ছাড়া সৌদি সরকারের শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট আরোপ অন্যতম।

তাদের মতে, হজের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের করার কিছু নেই। তবে বিমানভাড়া নির্ধারণ বা ভাড়া কম রাখার বিষয়টি সরকার হস্তক্ষেপ করে হজের খরচ কমানোর ব্যবস্থা করতে পারত।

২০০৯ সালে বাংলাদেশের হজযাত্রীর সংখ্যা ছিল ৫৮ হাজার ৬২৮ জন, যা ২০১৯ সালে বেড়ে হয় ১ লাখ ২৬ হাজার ৯২৩ জন। করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২২ সালে হজযাত্রীর সংখ্যা কমে দাড়ায় ৬০ হাজার ১৪৬ জনে।

জিলহজ মাসে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে ৯ মে শুরু হওয়া হজফ্লাইট শেষ হবে ১০ জুন। এই সময়ের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গাইডসহ হজপালনে সৌদি আরব যাবেন ৮৫ হাজার ১১৭ জন।

;

বদলি হজ কখন করাবেন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মসজিদে হারামের প্রবেশ পথ, ছবি: সংগৃহীত

মসজিদে হারামের প্রবেশ পথ, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ব্যস্ততার কারণে কেউ হজে যেতে না পারলে অন্য কাউকে দিয়ে বদলি হজ করানো যাবে না। কারণ এটি শরিয়ত নির্দেশিত অপারগতা নয়। বদলি হজ কেবল শরিয়তের দৃষ্টিতে মক্কায় যেতে অপারগদের জন্য প্রযোজ্য। বদলি হজের বিধান হলো-

হজ ফরজ হওয়ার পর হজ করা হয়নি, এখন শারীরিকভাবে মক্কায় যেতে অক্ষম এমন ব্যক্তির জন্য অন্য কাউকে পাঠিয়ে হজ করা ফরজ। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

বার্ধক্য বা অসুস্থতা থেকে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম হতে হবে। -মানাসিক লি-মোল্লা আলি কারি

অসিয়ত না করলেও মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা চাইলে তার জন্য বদলি হজ করাতে পারেন। এ ক্ষেত্রে শর্ত হলো- ওয়ারিশদের সবার স্বতঃস্ফূর্ত অনুমোদন লাগবে এবং ওয়ারিশদের মধ্যে কেউ অপ্রাপ্তবয়স্ক থাকলে তার ভাগের সম্পদ থেকে কিছুই নেওয়া যাবে না। -আদ দুররুল মুখতার

যার পক্ষ থেকে হজ করা হবে, তাকেই খরচ বহন করতে হবে। অসিয়ত করে গেলে প্রথমে তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে ঋণ আদায় করতে হবে। এরপর অসিয়তের বিধান অনুযায়ী বাকি সম্পদ তিন ভাগ করতে হবে। এর মধ্যে এক ভাগ থেকে অসিয়তের অংশ নিতে হবে। হজের অসিয়ত করে গেলে সেই খরচও এই অংশ থেকে নিতে হবে। -মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা

আরও পড়ুন: হজযাত্রীদের সেবায় সৌদি ঐতিহ্য

বদলি হজের বিনিময়ে মজুরি নেওয়া নাজায়েজ। কারণ ইবাদতের বিনিময়ে কোনো মজুরি নেওয়া যায় না। কেউ দিলে এবং নিলে দুজনেই গোনাহগার হবেন। হজের জন্য প্রয়োজনীয় খরচের বাইরে কোনো ধরনের লেনদেন করা যাবে না। -আল-বাহরুল আমিক

টাকা-পয়সার হিসাবের ঝামেলা এড়ানোর জন্য হজে পাঠানো ব্যক্তি যদি বদলি হজকারীকে বলেন, আপনাকে পুরো টাকা হাদিয়া হিসেবে দিলাম, তাহলে এই টাকা দিয়ে বদলি হজ আদায় হবে না। কারণ হাদিয়া দেওয়ার কারণে বদলি হজকারী ওই টাকার মালিক হয়ে যান। -যুবদাতুল মানাসিক

হজ করেছেন এমন নেককার ব্যক্তিকে বদলি হজের জন্য পাঠানো উত্তম। হজ করেননি এমন ব্যক্তিকে পাঠানো বৈধ। তবে হজ ফরজই হয়নি এমন ব্যক্তিকে পাঠানো মাকরুহে তানজিহি। আর হজ ফরজ হলেও আদায় করেননি এমন ব্যক্তিকে পাঠানো মাকরুহ তাহরিমি তথা নাজায়েজ। -সুনানে আবু দাউদ

;