আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ইতোমধ্যে পশু কেনা-বেচা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ফেনীর খামারি, ক্রেতা ও বেপারীরা। জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় হতে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ফেনীতে প্রতি বছরের মতো এবারও স্থানীয় চাহিদার তুলনায় পশু বেশি রয়েছে।
এবার জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৮৭ হাজার ২০০টি। তার মধ্যে বাণিজ্যিক ও পারিবারিকভাবে লালন-পালন করা হচ্ছে ৯০ হাজার ২৫০টি গবাদি পশু।
এর মধ্যে ৬৮ হাজার ৮০৪টি গরু, ৫ হাজার ৭২৮টি মহিষ এবং ১৫ হাজার ৭১৮টি ছাগল ও ভেড়া প্রস্তুত রয়েছে। সে হিসেবে স্থানীয় খামারিদের পশুতেই জেলার কোরবানির জন্য চাহিদা মিটবে বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ দপ্তর।
এদিকে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে শেষ সময়ে পশু পরিচর্যা ও বাজার ধরতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলার প্রায় ৫ শতাধিক খামারি। তবে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের দাবি-পশু খাদ্যের দামের প্রভাব পড়বে কোরবানির বাজারে।
ফেনী সদরের খামারি হাসান মাহমুদ বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার প্রতি বস্তা খাদ্যে হাজারেরও বেশি টাকা বেড়ে গেছে। সেই হিসেবে দামও কিছুটা বেশি হবে। সীমান্ত দিয়ে গরু প্রবেশ না করলে লাভবান হওয়া যাবে।
ছাগলনাইয়ার খামারি ওবায়দুল হক বলেন, ‘কোরবানির জন্য ১৩টি গরু এবং ৮টি ছাগল প্রস্তুত করেছি। বাজার দর অনুকূলে থাকলে আশা করি কোরবানির পশুর হাটে ভালো দাম পাব।’
সাজ্জাদ রাকিব নামে এক তরুণ উদ্যোক্তা বলেন, ‘কোরবানির শেষ সময়ে বাহির থেকে গরু আসার কারণে আমাদের প্রায়সময় ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। এমন কিছু হলে নতুন উদ্যোক্তারা এ খাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। সীমান্তে আরও নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।’
কোরবানির পশু বিক্রিতে খামারি নিচ্ছেন ভিন্ন ভিন্ন কৌশল। মেজবাউল হক নামে এক খামারি বলেন, ইতোমধ্যে বেশিরভাগ গরু বিক্রি হয়ে গেছে। অনেকে আগে এসেই পশু কিনে রাখছে। যা কোরবানির আগেরদিন পর্যন্ত খামারে রাখতে পারবেন। এছাড়া ক্রেতা চাইলে খামারে এসে লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে গরুর ওজন মেপেও গরু কিনতে পারছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ফেনীতে এবার কোরবানির পশু সংকটের শঙ্কা নেই। জেলায় ৫ হাজার ২৪৬ জন তালিকাভুক্ত খামারির বাইরেও ব্যক্তিগতভাবে অনেকে এক বা একাধিক পশু লালন-পালন করছেন। আসন্ন কোরবানি উপলক্ষ্যে জেলার প্রায় দুই শতাধিক পেশাদার ও মৌসুমি কসাইকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চামড়া সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ বিষয়ে অবহিতকরণ সভা করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
পশুর যোগান বেশি থাকায় ঈদ বাজার খামারি ও ক্রেতা উভয়ের অনুকূলে থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক দেশের বাহির থেকে অবৈধ উপায়ে গরু আমদানি বন্ধ রাখতে হবে। এই বিষয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। গরু আমদানি বন্ধ করা গেলে খামারিরা লাভবান হবে।
এদিকে কোরবানি পশু লালন-পালনে নিয়মিত খামারিদের প্রাণি সম্পদ দপ্তর সহযোগিতা করছে বলে জানান জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন রোগের টিকা, খামারি প্রশিক্ষণ, কারিগরি সহযোগিতা, কেমিক্যাল, হরমোন ও স্টোরয়েড সংক্রান্ত জনসচেতনতা তৈরি করতে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া দপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়মিত মাঠপর্যায়ে খোঁজখবর রাখছেন।
তিনি বলেন, কোরবানিতে গরু-ছাগলের পাশাপাশি ফেনীতে মহিষের চাহিদাও রয়েছে। কোরবানির জন্য জেলায় ৫ হাজার ৭২৮টি মহিষ প্রস্তুত রয়েছে। যার গতবছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
সোনাগাজী উপজেলার খামারি আতাউর রহমান বলেন, ‘এখানে অন্যান্য পশুর সঙ্গে মহিষ পালনের জন্য বেশি উপযোগী। তবে সাম্প্রতিক সময়ে চরাঞ্চলের সরকারি ও ফসলি জমি ভূমিদস্যুরা দখলে নেওয়ায় গরু-মহিষের চারণভূমি ছোট হয়ে আসছে। ফলে গোখাদ্য নিয়ে নতুন করে চিন্তায় করতে হচ্ছে। এবার কোরবানির বাজারে বিক্রির জন্য ১২টি মহিষ প্রস্তুত করেছি। প্রতিটি মহিষ গড়ে ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।’