কোরবানি মহাবিশ্বের পালনকর্তার জন্য



ফয়সল আহমদ জালালী, অতিথি লেখক, ইসলাম
কোরবানির পশু হিসেবে বাংলাদেশে গরু বেশি জনপ্রিয়, ছবি: সংগৃহীত

কোরবানির পশু হিসেবে বাংলাদেশে গরু বেশি জনপ্রিয়, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অকারণে জীব হত্যা ইসলামে অন্যায়। ভালোবাসা দিয়ে প্রাণীর লালন-পালনের শিক্ষা দিয়েছে ইসলাম। প্রাণীর প্রতি কোনো নির্যাতন করা চলবে না। জগতের সকল জীবের প্রতি প্রীতি প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি বলেছেন, জগতের সব প্রাণীর প্রতি তোমরা করুণা প্রদর্শন করো আকাশের মালিক তোমাদের প্রতি করুণা করবেন। -সুনানে তিরমিজি: ১৯৩০

সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ মানুষের প্রয়োজনের অধীন করেছেন সৃষ্টির সব কিছু। বলেছেন, তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীর সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। -সূরা বাকারা: ২৯

মানুষ প্রয়োজনে বিশ্ব জগতের সব কিছু ব্যবহার করবে। কারণ মানুষের জন্য বিশ্ব জগৎ আর মানুষ পালনকর্তার জন্য। স্রষ্টার বিধান মেনে মানুষ তার প্রয়োজন মেটাবে, এটিই নিয়ম। ‘জীব হত্যা মহাপাপ’ এসব সস্তা বুলি। বিশ্ব সমাজের ভারসাম্য রক্ষায় তা অচল। বৈরাগ্যবাদ লোকালয়ে চলে না। বন জঙ্গলের সীমানায় ও এরূপ মতবাদ অচল। নিরামিষ ভোজী! সেতো তরকারি শাক-সবজির সমাহার। এগুলো প্রাণহীন? না, এগুলোর ও প্রাণ আছে। তারাও আল্লাহর নাম জপ করে। তাতো সৃষ্টিকর্তার কথা। প্রাণ না থাকলে জপ করে কিভাবে। আধুনিক বিজ্ঞান বিষয়টি খোলাসা করে দিয়েছে। বলছে, উদ্ভিদের ও প্রাণ আছে। রাব্বুল আলামীনের ঘোষণা, হিংস্রজাত পশু ছাড়া তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জীবকে হালাল করা হয়েছে। -সূরা মায়িদা: ১

সৃষ্টি যার তিনিই যেখানে বৈধ করেছেন সেখানে অতি সন্ন্যাসী সাজার কি আছে?

জবাই হবে আল্লাহর নামে
পশু জবাই করতে হবে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নামে। প্রাণীর প্রতি আমার যথেষ্ট প্রেম আছে। আছে ভালোবাসাও। আমার যেমন প্রাণ তারও সেরকম প্রাণ। প্রাণ আমার হোক আর পশুপাখির হোক, আল্লাহর নামের কাছে তা কিছুই নয়। কারণ আমাদের জীবন-মরণ সব আল্লাহর জন্য। ইসলাম ফিতরাতের ধর্ম। মানুষের নাড়ি বুঝে এর বিধান দেওয়া হয়েছে। এতে নেই কোনো প্রাণীপূজা আর নেই কোন প্রাণীর সাজা। আমার মালিক আর প্রাণীর মালিক একজনই। এক কথায় বিশ্ব জাহানের অধিপতি হলেন আল্লাহ। আমার জন্য তার গোশত হালাল করেছেন তিনিই। আমরা তারই হুকুমের অধীন। তার নামেই প্রাণীকে আমরা হালাল করি। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার হলো হালদারের মন্ত্র। এর ওপরে আর কোনো করুণা দেখানো হবে ভণ্ডামি। মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশির মতো।

হজরত আদম আ.-এর ছেলেদের কোরবানি
যুগে যুগে আল্লাহর নামে প্রাণী উৎসর্গ করার প্রচলন ছিল। আমরা যাকে কোরবানি বলি। আদি মানব হজরত আদম আলাইহিস সালামের দুই পুত্র কোরবানি করেছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, আদম দু’পুত্রের বৃত্তান্ত তুমি তাদেরকে যথাযথভাবে শোনাও। যখন তারা উভয়ে কোরবানি করেছিল....। -সূরা আল মায়েদা:২৭

হজরত ইবরাহিম আ.-এর কোরবানি
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস আলাইহিস সালামের কোরবানি ছিলো মহা এক পরীক্ষা। আল্লাহর পক্ষ হতে পুত্রকে কোরবানি করার আদিষ্ট হন তিনি। রবের পক্ষ হতে আদেশপ্রাপ্তির পর আল্লাহর নামে উৎসর্গ করতে আর হতে সামান্যতম ও কুন্ঠাবোধ করেননি পিতা ও পুত্র। মূর্তিমান সহনশীল এই পুত্র ছিলেন ইসমাঈল আ.। তখন তিনি ছিলেন পিতার একমাত্র সন্তান। সেই পরীক্ষার পরিসমাপ্তি ঘটে একটি দুম্বা কোরবানির মাধ্যমে। মুহাম্মাদ সা. তার ঊর্ধ্বতন পুরুষ ইবরাহিম আ.-এর অনুকরণে সেই কোরবানির বিধান চালু রাখেন। সাহাবায়ে কিরামের প্রশ্নের উত্তরে হজরত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছিলেন, এটি তোমাদের পূর্ব পুরুষ ইবরাহিম প্রবর্তিত রীতি।

মিল্লাতে ইবরাহিম
তাওহিদ তথ্য এক আল্লাহর বিশ্বাসে বলীয়ান ছিলেন হজরত ইবরাহিম আ.। শিরক ও মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে ছিল তার কঠোর অবস্থান। এ কারণে তাকে অগ্নিকুণ্ডেও নিক্ষিপ্ত হতে হয়েছিল। হজরত ইবরাহিম আ.-এর পরবর্তী নবীগণ ছিলেন তারই বংশজাত। ইসমাঈলি ধারার একমাত্র নবী হলেন মুহাম্মাদ সা.। বাকী সবাই ইসরাঈলি ধারার। বর্তমান বিশ্বে হজরত মূসা আ., হজরত ঈসা আ. ও মুহাম্মাদ সা.-এর অজস্র অনুসারী রয়েছেন। পশ্চিমা ঐতিহাসিকগণ এই তিন নবীর ধর্মকে ইবরাহিমি ধর্ম বলে অভিহিত করেন। ইসলামের নবী মুহাম্মাদ সা. তাদেরকে আল্লাহর রাসূল ছিলেন বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। শুধু স্বীকৃতিই নয়, তাদেরকে আল্লাহ্ কর্তৃক প্রেরিত বলে বিশ্বাস করাকে ঈমানের অন্যতম অঙ্গ বলে ঘোষণা করেছেন। অথচ ইহুদি ও খ্রিস্টানরা হজরত ইসমাঈল আ.-এর স্মৃতি বিজড়িত কোরবানির বিষয়টিও মানতে নারাজ। এখানে হজরত ইসহাক আ. কে তারা লক্ষ্য বানাতে চান। অথচ ঐতিহাসিক মক্কা-মোকাররামায় ইবরাহিম ও ইসমাঈল স্মৃতিবিজড়িত নিদর্শনাবলী এখনও অক্ষত। মিনা প্রান্তরে তাদের কোরবানিতে যাত্রাস্থলের পয়েন্টগুলো সুরক্ষিত। তা চোখে দেখার মতো বিশ্বাসযোগ্য। দুম্বা কোরবানির মাধ্যমে যার পরিসমাপ্তি ঘটে। পাহাড়ের টিলার ওপর তার স্মৃতিস্বরূপ একটি স্তম্ভও রয়েছে।

সূরা সাফফাতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম। সে যখন পিতার সঙ্গে দৌঁড়ঝাপের বয়সে পৌঁছল, তিনি বললেন, খোকা! আমি স্বপ্ন দেখি তোমাকে জবেহ করছি। এতে তোমার অভিমত কি। ছেলে বলল, আব্বু! আপনি আদেশ পালন করুন। আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন- ইনশাআল্লাহ। দু'জন আনুগত্য প্রকাশ করল আর পুত্রকে কাত করে শোয়াল। আমি তখন ডেকে বললাম, হে ইবরাহিম! তুমি স্বপ্নাদেশ পালন করেছ। আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয়ই এটি ছিল এক মহাপরীক্ষা। আমি তাকে মুক্তি দিলাম এক কোরবানির বিনিময়ে। -সূরা আস সাফফাত: ১০১-১০৭

হজরত রাসূলুল্লাহ সা.-এর কোরবানি
হজরত রাসূলুল্লাহ সা. ছাগল, ভেড়া ও গরু কোরবানি করেছেন। কোনো সময় নিজেই নিজের কোরবানি করেছেন। কোনো সময় সহধর্মিণীগণের পক্ষে এবং কোনো সময় উম্মাহর পক্ষ থেকে ছিল তার কোরবানি। প্রাণীকুলের প্রতি ছিল তার অকুণ্ঠ ভালোবাসা। তবে আল্লাহর ভালোবাসার কাছে দুনিয়ার সব ভালোবাসা তার কাছে ছিল পরাজিত। তাই নিজ হাতে তিনি পশু কোরবানি করেছেন।

হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. বলেন, আমি ঈদগাহে হজরত রাসূলুল্লাহ সা.-এর সঙ্গে ছিলাম। খুৎবা শেষে তিনি মিম্বর থেকে অবতরণ করলে তার কাছে একটি ভেড়া নিয়ে আসা হল। তিনি তা নিজ হাতেই জবাই করলেন। -সুনানে তিরমিজি: ১৫২১

যারা গরুর অতিমাত্রায় ভক্ত, তারা বলতে চান- ইসলামের নবী গরুর গোশত খান নাই। অথচ হজরত রাসূলুল্লাহ সা. গরু জবাই করেছেন, এমনকি গরুর কোরবানিও দিয়েছেন। উম্মত জননী হজরত আয়েশা রা. বলেন, আমরা মিনায় অবস্থানকালে আমাদের কাছে গরুর গোশত নিয়ে আসা হলো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম এটি কী। লোকজন বলল, হজরত রাসূলুল্লাহ সা. একটি গরু তার সহধর্মিণীগণের পক্ষে কোরবানি দিয়েছেন। এটি ছিল বিদায় হজের ঘটনা। এরপর তিনি আর কোরবানি করার সুযোগ পাননি। -সহিহ বোখারি: ৫২২৮ৎ

আমরা পরিবেশবাদী হই আর পশুপাখি প্রেমিক হই কিংবা গোপূজারী হই, সবাইকে মনে রাখতে হবে; আমরা মহান আল্লাহর গোলাম। গোলামের কাজ মনিবের দাসত্ব করা। যিনি বিশ্বজগতের মালিক তিনি যেনতেন মনিব নয়। তিনি খাদ্য ও আলো বাতাস দিয়ে গোটা জগত পালন করেন। তার আদেশের সামনে মাথা নত করার মাঝে রয়েছে গোটা জগতের কল্যাণ। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন তোমার রবের জন্য সালাত আদায় করো এবং কোরবানি করো। -সূরা কাওসার

নিবেদিত মনে কোরবানি
আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত পথে, হজরত ইবরাহিম আ. প্রদর্শিত ও মুহাম্মাদ সা. সমর্থিত কোরবানি একান্ত নিবেদিত মনে হতে হবে। এতে কোরবানি নামের ত্যাগ আমাদের জীবনে স্বার্থকতা নিয়ে আসবে। কোরবানি প্রদর্শনীর মহড়া নয়। নয় মুখ রক্ষার কোনো অনুষ্ঠান। ভূরিভোজের কোনো আয়োজনও নয়। দেহ, মন ও অর্থকে সম্পূর্ণরূপে পালনকর্তা আল্লাহর নামে বিসর্জন দেওয়ার নাম কোরবানি। এমনটি হলে পশুর লোম লোমে অর্জিত হবে পুণ্য। আল্লাহ তার গোলামের মনের ভাব দেখতে চান। তার কাছে পশুর কোনো গোশত ও শোণিতের কোনো মূল্য নেই। বান্দা কি মনে ও কোন বিশ্বাস নিয়ে কোরবানি করছে সেটি মূল্যায়ন করেন আল্লাহ ।

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানি করার সময় বলতেন ইন্নি ওয়াজ্জাহতু... আমি আমাকে মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তার সামনে সোপর্দ করলাম। শেষে বলতেন, ওহে আল্লাহ্! ইবরাহিম খলিল হতে যেভাবে কবুল করেছো- সেভাবে আমাদের থেকে কবুল করো।

আল্লাহর মহব্বতে বিলীন হয়ে ইবরাহীম আ.-এর ঘোষণা ছিলো- আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ মহাবিশ্বের পালনকর্তার জন্য নিবেদিত। -সূরা আনআম: ১৬২

লেখক: সিনিয়র মুহাদ্দিস ও গবেষক ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ

   

সৌদি পৌঁছেছেন ৩০ হাজার ৮১০ হজযাত্রী



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছর হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৩০ হাজার ৮১০ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন।

সোমবার (২০ মে) হজ পোর্টালের সবশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়।

সৌদিতে যাওয়া হজযাত্রীদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার হাজার ৭৪৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার গেছেন ২৭ হাজার ৬৩ জন।

বাংলাদেশ থেকে ৭৭টি ফ্লাইটে এসব হজযাত্রী সৌদি পৌঁছেছেন। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ৩২টি, সৌদি এয়ারলাইনসের ২৫টি এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস ২০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে।

এদিকে, সৌদি আরবে হজ পালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত দুইজন বাংলাদেশি মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে, গত ৯ মে বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রথম ডেডিকেটেড ফ্লাইট ৪১৫ জন হজযাত্রী নিয়ে সৌদির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এর মাধ্যমেই চলতি বছরের হজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। শেষ হবে ১০ জুন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ২০ জুন এবং শেষ হবে ২২ জুলাই।

;

হজের সময় সৌদিতে তাপদাহের আশঙ্কা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজের আনুষ্ঠাকিতায় হাজিরা, ছবি: সংগৃহীত

হজের আনুষ্ঠাকিতায় হাজিরা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া হজের সময় সৌদি আরবের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকতে পারে। এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন সৌদি ন্যাশনাল সেন্টার অব মেটিওরোলজির প্রধান আয়মান গোলাম।

আসন্ন হজে উচ্চ তাপমাত্রার জন্য সতর্ক করে প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আয়মান গোলাম বলেছেন যে, এ বছর হজের মৌসুম চলবে জুনের মাঝামাঝিতে। হজের মৌসুম সৌদি আরবে বছরের সবচেয়ে গরম সময়ের সঙ্গে মিলে গেছে।

বছরের এই সময়ে সাধারণত সৌদি আরবে তাপমাত্রা এবং বাতাসের আর্দ্রতা দুটোই অনেক বেশি থাকে। ফলে হজে অংশগ্রহণকারীদের সতর্ক থাকতে অবহিত করা হয়েছে।

জানা গেছে, হজ করতে আসা মুসল্লিদের ওপর তীব্র গরমের প্রভাব কমাতে তাদের বাসস্থানকে পর্যাপ্ত ঠাণ্ডা রাখা হবে হজ আয়োজনকারীদের অন্যতম অগ্রাধিকার। বিশেষ করে মিনা এবং আরাফাতের ময়দানে তাঁবুতে অবস্থান এবং হজের পাঁচতিন চলাচলে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

রোগীদের হজে যাওয়ার ক্ষেত্রে সৌদির নির্দেশনা
যারা দীর্ঘদিন ধরে রোগে ভুগছেন তাদের হজে যাওয়ার সময় চিকিৎসার নথিপত্র সঙ্গে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে সৌদি আরব। রোগীরা হজে গিয়েও যেন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান তা নিশ্চিত করতেই এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় জানায়, বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হয় এমন কোনো রোগে যদি আপনি ভুগে থাকেন এবং বিশেষ ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে চিকিৎসার নথিপত্র সঙ্গে নিয়ে আসতে ভুলবেন না। যেন সৌদিতে আসার ও যাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান।

এ ছাড়া বিদেশি হজযাত্রীদের সৌদি আরবে আসার আগেই ‘নেইসেরিয়া মেনিনজিটিডিস’ ভ্যাকসিন নিতে হবে এবং নিজ দেশের দ্বারা ভ্যাকসিন নেওয়ার বিষয়টির প্রমাণপত্র নিতে হবে।

বিদেশি হজযাত্রীদের পোলিও, কোভিড-১৯ এবং ফ্লুয়ের ভ্যাকসিন নেওয়া থাকতে হবে। এতে করে সব হজযাত্রীর স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া সৌদিতে বসবাসরত যারা হজ করতে চান তাদের হজ সংক্রান্ত ভ্যাকসিনগুলো গ্রহণ করতে হবে।

এই ভ্যাকসিন প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ হজযাত্রীদের পবিত্র মক্কা নগরীতে হজের জন্য যেতে মন্ত্রণালয়ের সেহাতি অ্যাপে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন করতে হবে।

;

হজযাত্রী কমেছে ৩৭ হাজারের বেশি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজ ক্যাম্পে প্রবেশ করছেন হাজিরা, ছবি: নূর এ আলম, বার্তা২৪.কম

হজ ক্যাম্পে প্রবেশ করছেন হাজিরা, ছবি: নূর এ আলম, বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

হজের খরচ বাড়ায় গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় ৩৮ হাজার কমেছে হজযাত্রীর সংখ্যা। করোনা পরবর্তী সময়ে ২০২৩ সালে এক লাখ ২২ হাজার ৮৮৪ জন বাংলাদেশি হজপালনে যান। যদিও বাংলাদেশের জন্য হজরে কোটা ছিল এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের। গত বছর হজ কোটার বিপরীতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কম ছিল নিবন্ধন সংখ্যা। যদিও সরকারি-বেসরকারিভাবে হজে যাওয়ার প্রাক-নিবন্ধনের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি।

কিন্তু হজ প্যাকেজের মূল্য বৃদ্ধির দরুণ কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও এবার নির্ধারিত কোটা পূরণ হয়নি। অবশেষ ৮৩ হাজার ২০৯ জন চূড়ান্ত নিবন্ধন করেন। তন্মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চার হাজার ৩১৪ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন হজপালন করবেন। আর ব্যবস্থাপনাসহ এবার হজে যাচ্ছেন ৮৫ হাজার ১১৭ জন। সে হিসেবে গত বছরের তুলনায় এবার সারাদেশে হজযাত্রীর সংখ্যা কমেছে ৩৭ হাজার ৭৬৭ জন।

যদিও এখন পর্যন্ত সরকারি মাধ্যমে ২ হাজার ৭৭১ জন ও বেসরকারি মাধ্যমে ৭৮ হাজার ২৭৩ জন যাত্রী হজের জন্য প্রাথমিকভাবে নিবন্ধন করে রেখেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতবারের তুলনায় এবার হজের মূল খরচ বেড়েছে। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও হজে যাওয়ার আগ্রহ কমেছে মানুষদের মধ্যে। এ কারণে অন্যবারের তুলনায় কমেছে হজযাত্রীর সংখ্যা।

আরও পড়ুন : বদলি হজ কখন করাবেন

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশনের (হাব) কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, হজের ব্যয় এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় হজে যাওয়ার মানুষের সংখ্যা কমেছে।

বিষয়টি নিয়ে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) নেতারা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, হজ কোটা পূরণ না হওয়ার প্রভাব তাদের ব্যবসায় পড়বে। কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পাওয়ায় অনেক ট্রাভেল এজেন্সি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

চলতি বছর একজন বাংলাদেশিকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে গড়ে প্রায় সাত থেকে আট লাখ টাকা খরচ হবে, যা অনেক আগ্রহীকে হজ পালনে নিরুৎসাহিত করেছে। বিমানভাড়া, সৌদি আরবে বাসাভাড়া, মক্কা ও মদিনায় যাতায়াত ব্যয়সহ মোয়াাল্লিম ফি অত্যধিক বৃদ্ধির কারণে মূল হজের খরচ অনেক বেড়ে গেছে।

হাব নেতাদের মতে, আগে মোয়াল্লিমের জন্য নির্ধারিত ফি ছিল এক হাজার থেকে ১২ শ রিয়াল, বর্তমানে তা করা হয়েছে পাঁচ হাজার রিয়াল, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার থেকে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। বিমানভাড়া করা হয়েছে এক লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এ ছাড়া সৌদি সরকারের শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট আরোপ অন্যতম।

তাদের মতে, হজের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের করার কিছু নেই। তবে বিমানভাড়া নির্ধারণ বা ভাড়া কম রাখার বিষয়টি সরকার হস্তক্ষেপ করে হজের খরচ কমানোর ব্যবস্থা করতে পারত।

২০০৯ সালে বাংলাদেশের হজযাত্রীর সংখ্যা ছিল ৫৮ হাজার ৬২৮ জন, যা ২০১৯ সালে বেড়ে হয় ১ লাখ ২৬ হাজার ৯২৩ জন। করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২২ সালে হজযাত্রীর সংখ্যা কমে দাড়ায় ৬০ হাজার ১৪৬ জনে।

জিলহজ মাসে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে ৯ মে শুরু হওয়া হজফ্লাইট শেষ হবে ১০ জুন। এই সময়ের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গাইডসহ হজপালনে সৌদি আরব যাবেন ৮৫ হাজার ১১৭ জন।

;

বদলি হজ কখন করাবেন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মসজিদে হারামের প্রবেশ পথ, ছবি: সংগৃহীত

মসজিদে হারামের প্রবেশ পথ, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ব্যস্ততার কারণে কেউ হজে যেতে না পারলে অন্য কাউকে দিয়ে বদলি হজ করানো যাবে না। কারণ এটি শরিয়ত নির্দেশিত অপারগতা নয়। বদলি হজ কেবল শরিয়তের দৃষ্টিতে মক্কায় যেতে অপারগদের জন্য প্রযোজ্য। বদলি হজের বিধান হলো-

হজ ফরজ হওয়ার পর হজ করা হয়নি, এখন শারীরিকভাবে মক্কায় যেতে অক্ষম এমন ব্যক্তির জন্য অন্য কাউকে পাঠিয়ে হজ করা ফরজ। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

বার্ধক্য বা অসুস্থতা থেকে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম হতে হবে। -মানাসিক লি-মোল্লা আলি কারি

অসিয়ত না করলেও মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা চাইলে তার জন্য বদলি হজ করাতে পারেন। এ ক্ষেত্রে শর্ত হলো- ওয়ারিশদের সবার স্বতঃস্ফূর্ত অনুমোদন লাগবে এবং ওয়ারিশদের মধ্যে কেউ অপ্রাপ্তবয়স্ক থাকলে তার ভাগের সম্পদ থেকে কিছুই নেওয়া যাবে না। -আদ দুররুল মুখতার

যার পক্ষ থেকে হজ করা হবে, তাকেই খরচ বহন করতে হবে। অসিয়ত করে গেলে প্রথমে তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে ঋণ আদায় করতে হবে। এরপর অসিয়তের বিধান অনুযায়ী বাকি সম্পদ তিন ভাগ করতে হবে। এর মধ্যে এক ভাগ থেকে অসিয়তের অংশ নিতে হবে। হজের অসিয়ত করে গেলে সেই খরচও এই অংশ থেকে নিতে হবে। -মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা

আরও পড়ুন: হজযাত্রীদের সেবায় সৌদি ঐতিহ্য

বদলি হজের বিনিময়ে মজুরি নেওয়া নাজায়েজ। কারণ ইবাদতের বিনিময়ে কোনো মজুরি নেওয়া যায় না। কেউ দিলে এবং নিলে দুজনেই গোনাহগার হবেন। হজের জন্য প্রয়োজনীয় খরচের বাইরে কোনো ধরনের লেনদেন করা যাবে না। -আল-বাহরুল আমিক

টাকা-পয়সার হিসাবের ঝামেলা এড়ানোর জন্য হজে পাঠানো ব্যক্তি যদি বদলি হজকারীকে বলেন, আপনাকে পুরো টাকা হাদিয়া হিসেবে দিলাম, তাহলে এই টাকা দিয়ে বদলি হজ আদায় হবে না। কারণ হাদিয়া দেওয়ার কারণে বদলি হজকারী ওই টাকার মালিক হয়ে যান। -যুবদাতুল মানাসিক

হজ করেছেন এমন নেককার ব্যক্তিকে বদলি হজের জন্য পাঠানো উত্তম। হজ করেননি এমন ব্যক্তিকে পাঠানো বৈধ। তবে হজ ফরজই হয়নি এমন ব্যক্তিকে পাঠানো মাকরুহে তানজিহি। আর হজ ফরজ হলেও আদায় করেননি এমন ব্যক্তিকে পাঠানো মাকরুহ তাহরিমি তথা নাজায়েজ। -সুনানে আবু দাউদ

;