যাদের জন্য আল্লাহ বরকতের দুয়ার খুলে দেবেন



মুফতি মাহমুদুল হাসান আশরাফী, অতিথি লেখক, ইসলাম
যাদের জন্য আল্লাহ বরকতের দুয়ার খুলে দেবেন, তা কোরআনে কারিমে স্পষ্ট করে বলা আছে

যাদের জন্য আল্লাহ বরকতের দুয়ার খুলে দেবেন, তা কোরআনে কারিমে স্পষ্ট করে বলা আছে

  • Font increase
  • Font Decrease

‘যদি সেই সময় জনপদের মানুষগুলো ঈমান আনতো এবং তাকওয়া অবলম্বন করতো, তাহলে আমি তাদের ওপর আসমান ও জমিনের যাবতীয় বরকতের দুয়ার খুলে দিতাম, কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে, অতঃপর তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য আমি তাদের পাকড়াও করেছি।’ -সুরা আল আরাফ : ৯৬

বর্ণিত আয়াতের তাফসিরে বলা হয়েছে, ঈমান আনা ও তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করলে আল্লাহ পাক বরকতের দুয়ার খুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক করে দিয়েছেন। আল্লাহর এই ওয়াদা চিরন্তন। অর্থাৎ ঈমান ও তাকওয়া অবলম্বনকারীদের আল্লাহ বরকতের দুয়ার খুলে দেবেন। এ জন্য আয়াতে উল্লেখিত আল্লাহ নির্ধারিত দু’টি শর্ত পূরণ করতে হবে।

বস্তুত দুনিয়ার জীবনে বরকত ও কল্যাণ লাভের জন্য আল্লাহ দু’টি শর্ত প্রদান করেছেন। আল্লাহ প্রদত্ত সাফল্য বহুমাত্রিক এবং সেটি দুনিয়া ও আখিরাতে পাওয়া যাবে। সকল ধনভাণ্ডার ও কল্যাণের চাবিকাঠি আল্লাহর হাতে এবং তিনি তার বান্দাদের দিতে চান। শর্ত দু’টির প্রথম হলো- ঈমান এবং দ্বিতীয়টি হলো- তাকওয়া। জীবনে সত্যিকার সুখ-শান্তি-পরিতৃপ্তি দানের মালিক আল্লাহ এবং সেটি যথার্থ ভোগ করতে পারে কেবল মুমিনরা। প্রাচুর্যের মধ্যে যে প্রকৃত সুখ নেই, তা আমরা প্রতিনিয়তই চারপাশে লক্ষ করছি। আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং তার পথে চলার মধ্যে যে পরিতৃপ্তি ও পরম সুখ রয়েছে তা কাফের-মুশরেকরা কখনও উপলব্ধি করতে পারে না। এখানে আল্লাহতায়ালা স্পষ্ট করেছেন, তার প্রতি ঈমান এবং তাকে ভয় করে চলার নীতি অবলম্বন করলে সেই জনপদকে তিনি সুখ-শান্তিতে ভরে দেবেন।

প্রশ্ন উঠতে পারে শতকরা নব্বইভাগ মুসলিম অধ্যুষিত আমাদের বাংলাদেশ এবং সমগ্র মুসলিম বিশ্বে প্রকৃত সুখ-শান্তি কি রয়েছে? এক কথায় জবাব হবে, না। আবার আমাদের মধ্যে একজনকেও পাওয়া যাবে না, যে বলতে পারে আল্লাহর ওয়াদা সঠিক নয়। তাহলে বলা যায় জাতিগতভাবে আমরা না মুমিন আর না মুত্তাকি। আমাদের কথাবার্তা, আচার-আচরণ, লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত, কোর্ট-কাচারি কোথাও তাকওয়ার লেশ নেই। আমাদের মতো এতো মিথ্যাবাদী, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী, আমানতে খেয়ানতকারী, হিংসা-বিদ্বেষে জর্জরিত বিশ্বে বিরল। যার ফলে আল্লাহর প্রতিশ্রুত লাঞ্ছনা ও অপমান আমরা ভোগ করছি।

মনে হতে পারে, আমরা তো আধা মুসলমান কিন্তু যারা আল্লাহকে আদৌ মানে না, তাদের কেন আমাদের ওপর শাসন করার ক্ষমতা দান করেছেন। এটিই তো আমাদের শাস্তি-লাঞ্ছনা, অপমান ও জিল্লতি।

এই বিশ্ব পরিচালনার ক্ষেত্রে আল্লাহর একটি নিয়ম রয়েছে। যারা মৌলিক মানবীয় গুণে ভূষিত অর্থাৎ যাদের মধ্যে রয়েছে সততা, বিশ্বস্ততা, আমানতদারিতা, সুশাসন, ন্যায়পরায়ণতা, কল্যাণকামিতা, পরিশ্রমপ্রিয়তা, আল্লাহ তাদের দুনিয়ায় নেতৃত্ব দেবেন এবং ঈমান না থাকার কারণে আখেরাতে শুভ ফল লাভ থেকে তারা বঞ্চিত হবে। আল্লাহ কারও আমল বিনষ্ট করেন না। আল্লাহ পাক যখন এই আয়াত নাজিল করেন, তখন প্রতিশ্রুতি প্রদানের সঙ্গে পাকড়াও করার কথাও বলেছেন। অল্পদিনের ব্যবধানে আল্লাহ পাক আরবের জাহেলি নেতৃত্ব উৎখাত করে সেখানে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।

এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা উল্লেখ করা যাতে পারে। যা ছিল প্রিয়তম নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনে ঘটে যাওয়া মুজেজা। একটি ঘটনা খন্দকের যুদ্ধকালীন যখন মুসলমানরা চরম দুর্ভিক্ষে পতিত হন। শত্রু কর্তৃক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সব বন্ধ হয়ে যায় এবং ক্ষুধায় তারা কাতর হয়ে পড়েন। এমন সময় হজরত জাবের (রা.) তার স্ত্রীকে এসে জানান যে, মুহাম্মদ (সা.) ও তার সাহাবিরা অভুক্ত রয়েছেন। এ কথা শুনে তার স্ত্রী বলেন, তাদের একটি ছাগল রয়েছে সেটি জবেহ করে দিয়ে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দাওয়াত দিন। হজরত জাবের (রা.) হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জানালে তিনি প্রকাশ্য ঘোষণা করে দেন যে, সবার আজ জাবেরের বাড়িতে দাওয়াত। হজরত জাবের (রা.) ভয় পেয়ে স্ত্রীকে গিয়ে বললে তিনি জবাব দেন, যেহেতু হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সেহেতু কোনো ভয় নেই বা সমস্যা নেই। এমনই ছিল আল্লাহর প্রতি তাদের তাওয়াক্কুল ও রাসুল (সা.)-এর প্রতি আস্থা। সেই রুটি ও গোশত যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবিরা খাওয়ার পরেও মদিনাবাসী তৃপ্তির সঙ্গে খেয়েছিলেন।

প্রসঙ্গত আরেকটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর বর্ণনা। তিনি আসহাবে সুফফার একজন সদস্য এবং সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী। একদিন তিনি ক্ষুধায় খুব কাতর হয়ে পড়লে হজরত আবু বকর (রা.) ও হজরত ওমর (রা.)-এর বাড়ি পর্যন্ত আলাপ করতে করতে যান। কিন্তু তারা কেউ তার অসহায়ত্ব উপলব্ধি করতে পারেননি। ফলে ফিরে মসজিদে চলে আসেন। নবী কারিম (সা.) বিষয়টি উপলব্ধি করে তাকে সঙ্গে করে বাড়ি নিয়ে যান। কোনো এক স্ত্রীর ঘরে এক পেয়ালা দুধ পান। দুধ নিয়ে মুহাম্মদ (সা.) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) কে বলেন, আসহাবে সুফফার সবাইকে ডেকে আনো। দুধ এক পেয়ালা আর মানুষ সত্তর জন, তিনি তাজ্জব হয়ে যান। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) ছিলেন খুবই ক্ষুধার্ত। তিনি ভাবলেন, এক ফোঁটা করে দুধও তো ভাগে পড়বে না। সবাই উপস্থিত হলে তাকেই দেওয়া হয় দুধ পান করানোর দায়িত্ব এবং সবাই তৃপ্তির সঙ্গে সেই দুধ পান করেন। বরকত দানের মালিক আল্লাহ। তার ভাণ্ডার অফুরন্ত। এটি ছিল নবী কারিম (সা.)-এর প্রতি আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনে এমন অনেক মুজেজা ঘটেছে।

উপরোক্ত ঘটনা দু’টি আল্লাহর প্রত্যক্ষ বরকত দানের উদাহরণ। সূরা আরাফের ৯৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা সাধারণভাবে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন, যেকোনো জনপদের মানুষ যদি তার প্রতি ঈমান আনে ও তাকে ভয় করে চলে তাহলে আল্লাহ তাদের জীবন থেকে দুঃখ-কষ্ট দূর করে আসমান ও জমিনের বরকতের দুয়ারসমূহ খুলে দেবেন। অন্যথা ঘটলে তারা আল্লাহর আজাবের মুখোমুখি হবে। আল্লাহ পাক আমাদের তার প্রতি ঈমান ও সকল অবস্থায় তাকে ভয় করে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

   

সৌদি পৌঁছেছেন ৩০ হাজার ৮১০ হজযাত্রী



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছর হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৩০ হাজার ৮১০ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন।

সোমবার (২০ মে) হজ পোর্টালের সবশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়।

সৌদিতে যাওয়া হজযাত্রীদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার হাজার ৭৪৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার গেছেন ২৭ হাজার ৬৩ জন।

বাংলাদেশ থেকে ৭৭টি ফ্লাইটে এসব হজযাত্রী সৌদি পৌঁছেছেন। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ৩২টি, সৌদি এয়ারলাইনসের ২৫টি এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস ২০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে।

এদিকে, সৌদি আরবে হজ পালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত দুইজন বাংলাদেশি মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে, গত ৯ মে বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রথম ডেডিকেটেড ফ্লাইট ৪১৫ জন হজযাত্রী নিয়ে সৌদির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এর মাধ্যমেই চলতি বছরের হজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। শেষ হবে ১০ জুন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ২০ জুন এবং শেষ হবে ২২ জুলাই।

;

হজের সময় সৌদিতে তাপদাহের আশঙ্কা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজের আনুষ্ঠাকিতায় হাজিরা, ছবি: সংগৃহীত

হজের আনুষ্ঠাকিতায় হাজিরা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া হজের সময় সৌদি আরবের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকতে পারে। এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন সৌদি ন্যাশনাল সেন্টার অব মেটিওরোলজির প্রধান আয়মান গোলাম।

আসন্ন হজে উচ্চ তাপমাত্রার জন্য সতর্ক করে প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আয়মান গোলাম বলেছেন যে, এ বছর হজের মৌসুম চলবে জুনের মাঝামাঝিতে। হজের মৌসুম সৌদি আরবে বছরের সবচেয়ে গরম সময়ের সঙ্গে মিলে গেছে।

বছরের এই সময়ে সাধারণত সৌদি আরবে তাপমাত্রা এবং বাতাসের আর্দ্রতা দুটোই অনেক বেশি থাকে। ফলে হজে অংশগ্রহণকারীদের সতর্ক থাকতে অবহিত করা হয়েছে।

জানা গেছে, হজ করতে আসা মুসল্লিদের ওপর তীব্র গরমের প্রভাব কমাতে তাদের বাসস্থানকে পর্যাপ্ত ঠাণ্ডা রাখা হবে হজ আয়োজনকারীদের অন্যতম অগ্রাধিকার। বিশেষ করে মিনা এবং আরাফাতের ময়দানে তাঁবুতে অবস্থান এবং হজের পাঁচতিন চলাচলে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

রোগীদের হজে যাওয়ার ক্ষেত্রে সৌদির নির্দেশনা
যারা দীর্ঘদিন ধরে রোগে ভুগছেন তাদের হজে যাওয়ার সময় চিকিৎসার নথিপত্র সঙ্গে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে সৌদি আরব। রোগীরা হজে গিয়েও যেন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান তা নিশ্চিত করতেই এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় জানায়, বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হয় এমন কোনো রোগে যদি আপনি ভুগে থাকেন এবং বিশেষ ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে চিকিৎসার নথিপত্র সঙ্গে নিয়ে আসতে ভুলবেন না। যেন সৌদিতে আসার ও যাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান।

এ ছাড়া বিদেশি হজযাত্রীদের সৌদি আরবে আসার আগেই ‘নেইসেরিয়া মেনিনজিটিডিস’ ভ্যাকসিন নিতে হবে এবং নিজ দেশের দ্বারা ভ্যাকসিন নেওয়ার বিষয়টির প্রমাণপত্র নিতে হবে।

বিদেশি হজযাত্রীদের পোলিও, কোভিড-১৯ এবং ফ্লুয়ের ভ্যাকসিন নেওয়া থাকতে হবে। এতে করে সব হজযাত্রীর স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া সৌদিতে বসবাসরত যারা হজ করতে চান তাদের হজ সংক্রান্ত ভ্যাকসিনগুলো গ্রহণ করতে হবে।

এই ভ্যাকসিন প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ হজযাত্রীদের পবিত্র মক্কা নগরীতে হজের জন্য যেতে মন্ত্রণালয়ের সেহাতি অ্যাপে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন করতে হবে।

;

হজযাত্রী কমেছে ৩৭ হাজারের বেশি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজ ক্যাম্পে প্রবেশ করছেন হাজিরা, ছবি: নূর এ আলম, বার্তা২৪.কম

হজ ক্যাম্পে প্রবেশ করছেন হাজিরা, ছবি: নূর এ আলম, বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

হজের খরচ বাড়ায় গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় ৩৮ হাজার কমেছে হজযাত্রীর সংখ্যা। করোনা পরবর্তী সময়ে ২০২৩ সালে এক লাখ ২২ হাজার ৮৮৪ জন বাংলাদেশি হজপালনে যান। যদিও বাংলাদেশের জন্য হজরে কোটা ছিল এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের। গত বছর হজ কোটার বিপরীতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কম ছিল নিবন্ধন সংখ্যা। যদিও সরকারি-বেসরকারিভাবে হজে যাওয়ার প্রাক-নিবন্ধনের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি।

কিন্তু হজ প্যাকেজের মূল্য বৃদ্ধির দরুণ কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও এবার নির্ধারিত কোটা পূরণ হয়নি। অবশেষ ৮৩ হাজার ২০৯ জন চূড়ান্ত নিবন্ধন করেন। তন্মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চার হাজার ৩১৪ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন হজপালন করবেন। আর ব্যবস্থাপনাসহ এবার হজে যাচ্ছেন ৮৫ হাজার ১১৭ জন। সে হিসেবে গত বছরের তুলনায় এবার সারাদেশে হজযাত্রীর সংখ্যা কমেছে ৩৭ হাজার ৭৬৭ জন।

যদিও এখন পর্যন্ত সরকারি মাধ্যমে ২ হাজার ৭৭১ জন ও বেসরকারি মাধ্যমে ৭৮ হাজার ২৭৩ জন যাত্রী হজের জন্য প্রাথমিকভাবে নিবন্ধন করে রেখেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতবারের তুলনায় এবার হজের মূল খরচ বেড়েছে। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও হজে যাওয়ার আগ্রহ কমেছে মানুষদের মধ্যে। এ কারণে অন্যবারের তুলনায় কমেছে হজযাত্রীর সংখ্যা।

আরও পড়ুন : বদলি হজ কখন করাবেন

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশনের (হাব) কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, হজের ব্যয় এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় হজে যাওয়ার মানুষের সংখ্যা কমেছে।

বিষয়টি নিয়ে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) নেতারা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, হজ কোটা পূরণ না হওয়ার প্রভাব তাদের ব্যবসায় পড়বে। কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পাওয়ায় অনেক ট্রাভেল এজেন্সি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

চলতি বছর একজন বাংলাদেশিকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে গড়ে প্রায় সাত থেকে আট লাখ টাকা খরচ হবে, যা অনেক আগ্রহীকে হজ পালনে নিরুৎসাহিত করেছে। বিমানভাড়া, সৌদি আরবে বাসাভাড়া, মক্কা ও মদিনায় যাতায়াত ব্যয়সহ মোয়াাল্লিম ফি অত্যধিক বৃদ্ধির কারণে মূল হজের খরচ অনেক বেড়ে গেছে।

হাব নেতাদের মতে, আগে মোয়াল্লিমের জন্য নির্ধারিত ফি ছিল এক হাজার থেকে ১২ শ রিয়াল, বর্তমানে তা করা হয়েছে পাঁচ হাজার রিয়াল, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার থেকে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। বিমানভাড়া করা হয়েছে এক লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এ ছাড়া সৌদি সরকারের শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট আরোপ অন্যতম।

তাদের মতে, হজের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের করার কিছু নেই। তবে বিমানভাড়া নির্ধারণ বা ভাড়া কম রাখার বিষয়টি সরকার হস্তক্ষেপ করে হজের খরচ কমানোর ব্যবস্থা করতে পারত।

২০০৯ সালে বাংলাদেশের হজযাত্রীর সংখ্যা ছিল ৫৮ হাজার ৬২৮ জন, যা ২০১৯ সালে বেড়ে হয় ১ লাখ ২৬ হাজার ৯২৩ জন। করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২২ সালে হজযাত্রীর সংখ্যা কমে দাড়ায় ৬০ হাজার ১৪৬ জনে।

জিলহজ মাসে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে ৯ মে শুরু হওয়া হজফ্লাইট শেষ হবে ১০ জুন। এই সময়ের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গাইডসহ হজপালনে সৌদি আরব যাবেন ৮৫ হাজার ১১৭ জন।

;

বদলি হজ কখন করাবেন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মসজিদে হারামের প্রবেশ পথ, ছবি: সংগৃহীত

মসজিদে হারামের প্রবেশ পথ, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ব্যস্ততার কারণে কেউ হজে যেতে না পারলে অন্য কাউকে দিয়ে বদলি হজ করানো যাবে না। কারণ এটি শরিয়ত নির্দেশিত অপারগতা নয়। বদলি হজ কেবল শরিয়তের দৃষ্টিতে মক্কায় যেতে অপারগদের জন্য প্রযোজ্য। বদলি হজের বিধান হলো-

হজ ফরজ হওয়ার পর হজ করা হয়নি, এখন শারীরিকভাবে মক্কায় যেতে অক্ষম এমন ব্যক্তির জন্য অন্য কাউকে পাঠিয়ে হজ করা ফরজ। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

বার্ধক্য বা অসুস্থতা থেকে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম হতে হবে। -মানাসিক লি-মোল্লা আলি কারি

অসিয়ত না করলেও মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা চাইলে তার জন্য বদলি হজ করাতে পারেন। এ ক্ষেত্রে শর্ত হলো- ওয়ারিশদের সবার স্বতঃস্ফূর্ত অনুমোদন লাগবে এবং ওয়ারিশদের মধ্যে কেউ অপ্রাপ্তবয়স্ক থাকলে তার ভাগের সম্পদ থেকে কিছুই নেওয়া যাবে না। -আদ দুররুল মুখতার

যার পক্ষ থেকে হজ করা হবে, তাকেই খরচ বহন করতে হবে। অসিয়ত করে গেলে প্রথমে তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে ঋণ আদায় করতে হবে। এরপর অসিয়তের বিধান অনুযায়ী বাকি সম্পদ তিন ভাগ করতে হবে। এর মধ্যে এক ভাগ থেকে অসিয়তের অংশ নিতে হবে। হজের অসিয়ত করে গেলে সেই খরচও এই অংশ থেকে নিতে হবে। -মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা

আরও পড়ুন: হজযাত্রীদের সেবায় সৌদি ঐতিহ্য

বদলি হজের বিনিময়ে মজুরি নেওয়া নাজায়েজ। কারণ ইবাদতের বিনিময়ে কোনো মজুরি নেওয়া যায় না। কেউ দিলে এবং নিলে দুজনেই গোনাহগার হবেন। হজের জন্য প্রয়োজনীয় খরচের বাইরে কোনো ধরনের লেনদেন করা যাবে না। -আল-বাহরুল আমিক

টাকা-পয়সার হিসাবের ঝামেলা এড়ানোর জন্য হজে পাঠানো ব্যক্তি যদি বদলি হজকারীকে বলেন, আপনাকে পুরো টাকা হাদিয়া হিসেবে দিলাম, তাহলে এই টাকা দিয়ে বদলি হজ আদায় হবে না। কারণ হাদিয়া দেওয়ার কারণে বদলি হজকারী ওই টাকার মালিক হয়ে যান। -যুবদাতুল মানাসিক

হজ করেছেন এমন নেককার ব্যক্তিকে বদলি হজের জন্য পাঠানো উত্তম। হজ করেননি এমন ব্যক্তিকে পাঠানো বৈধ। তবে হজ ফরজই হয়নি এমন ব্যক্তিকে পাঠানো মাকরুহে তানজিহি। আর হজ ফরজ হলেও আদায় করেননি এমন ব্যক্তিকে পাঠানো মাকরুহ তাহরিমি তথা নাজায়েজ। -সুনানে আবু দাউদ

;