যেসব ভুলের কারণে নামাজ হয় না



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
নামাজ সহিহ-শুদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয় মাসয়ালা জানা জরুরি

নামাজ সহিহ-শুদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয় মাসয়ালা জানা জরুরি

  • Font increase
  • Font Decrease

একজন মুসলিম হিসেবে আমরা নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি। অনেক সময় না-জানা কিংবা অবহেলার কারণে নামাজে বিভিন্ন ধরনের ভুল হয়। সেসব ভুলের দরুণ কখনও নামাজ মাকরূহ হয়ে যায়, আবার কখনও নামাজই হয় না; নষ্ট হয়ে যায়। তাই এখানে বহুল প্রচলিত কতিপয় ভুল-ভ্রান্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

তাকবিরে তাহরিমা মনে মনে বলা

অনেকে নামাজের শুরুতে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে হাত বাঁধাকেই তাকবিরে তাহরিমা মনে করে। ফলে তারা আর মুখে তাকবির উচ্চারণ করে না। এটি একটি মারাত্মক ভুল। এর দ্বারা নামাজ সহিহ হয় না। কারণ নামাজের শুরুতে স্পষ্ট উচ্চারণে তাকবির তথা ‘আল্লাহু আকবার’ বলা ফরজ। যেহেতু এই তাকবিরের মাধ্যমে নামাজ বহির্ভূত সব কাজ হারাম হয়ে যায় তাই একে ‘তাকবিরে তাহরিমা’ বলা হয়। এই তাকবির স্পষ্টভাবে মুখে উচ্চারণ করে বলা ফরজ।

সুতরাং কেউ যদি শুধু দুই হাত উঠিয়ে নাভির নিচে বেঁধে নেয়; কিন্তু মুখে ‘আল্লাহু আকবার’ না বলে বা মনে মনে বলে তাহলে তার নামাজের প্রথম ফরজ আদায় না হওয়ার কারণে তার নামাজ সহিহ হবে না। অতএব তাকবির স্পষ্টভাবে মুখে উচ্চারণ করতে হবে। শুধু মনে মনে বলা যথেষ্ট হবে না। -মারাকিল ফালাহ : ২১৮

ইমামের আগে তাকবিরে তাহরিমা শেষ করে ফেলা

অনেক মুসল্লিকে দেখা যায়, তারা ইমামের সঙ্গে তাকবিরে উলা ধরার জন্য একেবারে ইমামের সঙ্গে সঙ্গেই তাকবিরে তাহরিমা বলে। এক্ষেত্রে অসতর্কতার দরুণ কখনও কখনও মুক্তাদির নামাজ অশুদ্ধ হয়ে যায়। কেননা মুক্তাদির নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য তার তাকবিরে তাহরিমা, ইমামের তাকবিরে তাহরিমা বলে শেষ করার পরে শেষ হওয়া জরুরি। ইমামের তাকবিরে তাহরিমা শেষ হওয়ার আগেই যদি মুক্তাদির তাকবির বলা শেষ হয়ে যায় তাহলে তার ইক্তেদা ও নামাজ সহিহ হবে না।

অনেক সময় ইমাম সাহেবের তাকবিরে তাহরিমা দীর্ঘ করে টেনে বলার কারণে মুক্তাদির তাকবির তার আগে শেষ হয়ে যায়। ফলে মুক্তাদির নামাজ শুদ্ধ হয় না। অতএব মুক্তাদিদের এ ভুল থেকে বাঁচানোর জন্য ইমামের কর্তব্য হলো, তাকবিরে তাহরিমার ‘আল্লাহ’ শব্দের লামকে এক আলিফের চেয়ে বেশি দীর্ঘ না করা। -আদ দুররুল মুখতার : ১/৪৮০

আল্লাহু আকবারের ‘হামজা’ অথবা ‘বা’ কে টেনে পড়া

কোনো কোনো মুসল্লি ও ইমামকে নামাজের মধ্যে তাকবির বলার সময় ‘আল্লাহু আকবার’-এর (বা) টেনে পড়তে শোনা যায়। এটা একটা বড় ভুল। কারণ (বা) এ ‘মদ’ করলে অর্থাৎ টেনে দীর্ঘ করে পড়লে তার অর্থে চরম বিকৃতি ঘটে। বিনা মদে ‘আকবার’ অর্থ ‘সবচেয়ে বড়’। আর মদ সহকারে ‘আকবা-র’ শয়তানের বাচ্চার নাম। এ ভুলটি যদি তাকবিরে তাহরিমার মধ্যে হয় তাহলে নামাজ আরম্ভই হবে না। আর নামাজের ভেতরের কোনো তাকবিরে হলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। তদ্রূপ ‘আল্লাহু আকবার’ এর প্রথম অথবা দ্বিতীয় ‘আ’-কে টেনে দীর্ঘ করে পড়লে নামাজ ভেঙ্গে যাবে। কেননা সেক্ষেত্রেও তাকবিরের অর্থ ও মর্ম ভীষণভাবে পাল্টে যায়। সেক্ষেত্রে তা প্রশ্নবোধক বাক্যে পরিণত হয়, যা আল্লাহতায়ালার বড়ত্ব ও মহত্ত্বে সংশয় প্রকাশ করে। -মারাকিল ফালাহ : ২২৩

নামাজ একটি ফরজ ইবাদত

মনে মনে কেরাত পড়া

যে সব নামাজে আস্তে কেরাত পড়া হয়, সেসব নামাজে অনেককে দেখা যায়, তারা মুখ-ঠোঁট না নেড়ে মনে মনে সুরা-কেরাত পড়েন। তারা হয়তো মনে করেন, আস্তে কেরাত পড়া মানে মনে মনে পড়া। এই ধারণা ঠিক নয়। কারণ নামাজে কেরাত আস্তে পড়ার অর্থ হলো- নিচু স্বরে তেলাওয়াত করা। আর মনে মনে পড়া কোনোক্রমেই নিম্নস্বরে পড়া নয়।

আস্তে কেরাত পড়ার সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো- এমনভাবে পড়া, যেন পাঠকারী নিজে শুনতে পায়। আর সর্বনিম্ন এতটুকু তো অবশ্যই জরুরি যে, সহিহ-শুদ্ধভাবে হরফ উচ্চারণ করা হবে এবং ঠোঁট-জিহবার নড়াচড়া দেখা যাবে। হাদিস শরিফে আছে, জোহর ও আসর নামাজে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কেরাত পড়তেন, তখন কোনো কোনো আয়াত সাহাবায়ে কেরামও কখনও কখনও শুনতে পেতেন।

হজরত আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোহর ও আসর নামাজের প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতেহার সঙ্গে আরেকটি সুরা পড়তেন। কখনও কোনো কোনো আয়াত আমাদের শুনিয়ে পড়তেন।’ –সহিহ বোখারি : ৭৭৮

অতএব কেরাত পড়ার সময় জিহবা ও ঠোঁট ব্যবহার করে মাখরাজ থেকে সহিহ-শুদ্ধভাবে হরফ উচ্চারণ করতে হবে। অন্যথায় শুধু মনে মনে পড়ার দ্বারা কেরাত আদায় হবে না এবং নামাজও সহিহ হবে না। -মারাকিল ফালাহ : ২১৯

রুকুতে গিয়ে তাকবিরে তাহরিমা বলা শেষ করা

অনেকে জামাতে ইমামকে রুকু অবস্থায় পেলে রাকাত ধরার জন্য দ্রুত রুকুতে চলে যায়। এ ক্ষেত্রে অনেকেই তাকবিরে তাহরিমা রুকুতে গিয়ে বলে। আবার অনেকে পূর্ণ তাকবির রুকুতে গিয়ে না বললেও দাঁড়িয়ে তাকবির শুরু করে, কিন্তু শেষ করে রুকুতে গিয়ে। অর্থাৎ দাঁড়ানো অবস্থায় ‘আল্লাহু’ বলে আর রুকু অবস্থায় গিয়ে ‘আকবার’ বলে। এটা একটা বড় ভুল। এভাবে তাকবিরে তাহরিমা বললে নামাজ হবে না। বরং পুরো তাকবিরে তাহরিমা দাঁড়িয়ে বলা জরুরি। পূর্ণ তাকবির কিংবা তাকবিরের কিছু অংশও যদি রুকুতে গিয়ে (অর্থাৎ হাত হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছার পর) বা তার কাছাকাছি গিয়ে শেষ হয় তাহলে নামাজ হবে না। অবশ্য দাঁড়ানোর কাছাকাছি থাকা অবস্থায় পূর্ণ তাকবিরে তাহরিমা বলা শেষ করলেও নামাজ হয়ে যাবে।

অতএব তাকবিরে তাহরিমা পুরোটাই দাঁড়ানো বা দাঁড়ানোর কাছাকাছি অবস্থার ভেতর বলে শেষ করতে হবে। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া : ১/৮৪

ইমামের রুকু থেকে উঠার পর রুকুতে যাওয়া

কোনো কোনো সময় এমন হয় যে, জামাত চলাকালীন আগন্তুক মুসল্লি তাকবিরে তাহরিমা বলে রুকুতে যাচ্ছে আর এদিকে ইমাম ‘সামিয়াল্লাহ’ বলে রুকু থেকে উঠে গেছেন। এক্ষেত্রে উক্ত মুসল্লি ইমামের সঙ্গে রুকু না পাওয়ার কারণে ওই রাকাত পায়নি। কেননা রাকাত পাওয়ার জন্য ইমামের সঙ্গে রুকু পাওয়া জরুরি। আর রুকু পাওয়ার জন্য এক মুহূর্তের জন্য হলেও ইমামের সঙ্গে রুকুতে শরিক হওয়া আবশ্যক। যদি কেউ ইমামকে রুকু অবস্থায় এক মুহূর্তের জন্যও না পায়; বরং ইমামের রুকু থেকে উঠে যাওয়ার পর, অর্থাৎ তার মাথা এবং হাঁটু থেকে হাত উঠে যাওয়ার পর রুকুতে যায় তাহলে সে ওই রাকাত পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে না।

অনেক মুসল্লি ইমামের রুকু থেকে উঠে যাওয়ার পর রুকুতে গিয়ে সেই রাকাত পেয়েছে বলে ধারণা করে এবং এক রাকাত কম আদায় করে। এতে তার নামাজ হয় না।

মুসল্লিদের এই মারাত্মক ভুল থেকে রক্ষার জন্য ইমামদের উচিত হলো, রুকু থেকে উঠা আরম্ভ করতেই তাকবির বলা শুরু করা। কেননা কোনো কোনো ইমাম সাহেব রুকু থেকে উঠার সময় কিছুদূর উঠার পর তাকবির বলেন। ফলে নবাগত মুসল্লি দূর থেকে মুসল্লিদেরকে রুকু অবস্থায় দেখে তাকবিরে তাহরিমা বলে রুকুতে যায়। অথচ তখন ইমাম সাহেব রুকু অবস্থায় নেই। এতে সে ইমামের সঙ্গে রুকু পেয়েছে মনে করে সে হিসেবে নামাজ পড়ার দরুণ তার নামাজ বাতিল হয়ে যায়। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১২০

প্রথম সালামের পর ইমামের ইক্তেদা করা

অনেককে দেখা যায়, শেষ বৈঠকে যখন ইমাম সাহেব ডানদিকে সালাম ফিরিয়ে ফেলেন তখনও তারা তার ইক্তেদা করেন। এটাও ঠিক নয়। কারণ প্রথম সালামের ‘আসসালামু’ শব্দটি বলার সঙ্গে সঙ্গেই ইমামের ইক্তেদার সময় শেষ হয়ে যায়। এরপর আর ইমামের ইক্তেদা করা সহিহ নয়। সুতরাং এ অবস্থায় মুসল্লি ইমামের ইক্তেদা করলে তার নামাজ আদায় হবে না। -হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাল মারাকি : ২৫১

 

 

   

সৌদি পৌঁছেছেন ৩০ হাজার ৮১০ হজযাত্রী



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছর হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৩০ হাজার ৮১০ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন।

সোমবার (২০ মে) হজ পোর্টালের সবশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়।

সৌদিতে যাওয়া হজযাত্রীদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার হাজার ৭৪৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার গেছেন ২৭ হাজার ৬৩ জন।

বাংলাদেশ থেকে ৭৭টি ফ্লাইটে এসব হজযাত্রী সৌদি পৌঁছেছেন। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ৩২টি, সৌদি এয়ারলাইনসের ২৫টি এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস ২০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে।

এদিকে, সৌদি আরবে হজ পালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত দুইজন বাংলাদেশি মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে, গত ৯ মে বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রথম ডেডিকেটেড ফ্লাইট ৪১৫ জন হজযাত্রী নিয়ে সৌদির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এর মাধ্যমেই চলতি বছরের হজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। শেষ হবে ১০ জুন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ২০ জুন এবং শেষ হবে ২২ জুলাই।

;

হজের সময় সৌদিতে তাপদাহের আশঙ্কা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজের আনুষ্ঠাকিতায় হাজিরা, ছবি: সংগৃহীত

হজের আনুষ্ঠাকিতায় হাজিরা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া হজের সময় সৌদি আরবের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকতে পারে। এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন সৌদি ন্যাশনাল সেন্টার অব মেটিওরোলজির প্রধান আয়মান গোলাম।

আসন্ন হজে উচ্চ তাপমাত্রার জন্য সতর্ক করে প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আয়মান গোলাম বলেছেন যে, এ বছর হজের মৌসুম চলবে জুনের মাঝামাঝিতে। হজের মৌসুম সৌদি আরবে বছরের সবচেয়ে গরম সময়ের সঙ্গে মিলে গেছে।

বছরের এই সময়ে সাধারণত সৌদি আরবে তাপমাত্রা এবং বাতাসের আর্দ্রতা দুটোই অনেক বেশি থাকে। ফলে হজে অংশগ্রহণকারীদের সতর্ক থাকতে অবহিত করা হয়েছে।

জানা গেছে, হজ করতে আসা মুসল্লিদের ওপর তীব্র গরমের প্রভাব কমাতে তাদের বাসস্থানকে পর্যাপ্ত ঠাণ্ডা রাখা হবে হজ আয়োজনকারীদের অন্যতম অগ্রাধিকার। বিশেষ করে মিনা এবং আরাফাতের ময়দানে তাঁবুতে অবস্থান এবং হজের পাঁচতিন চলাচলে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

রোগীদের হজে যাওয়ার ক্ষেত্রে সৌদির নির্দেশনা
যারা দীর্ঘদিন ধরে রোগে ভুগছেন তাদের হজে যাওয়ার সময় চিকিৎসার নথিপত্র সঙ্গে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে সৌদি আরব। রোগীরা হজে গিয়েও যেন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান তা নিশ্চিত করতেই এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় জানায়, বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হয় এমন কোনো রোগে যদি আপনি ভুগে থাকেন এবং বিশেষ ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে চিকিৎসার নথিপত্র সঙ্গে নিয়ে আসতে ভুলবেন না। যেন সৌদিতে আসার ও যাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান।

এ ছাড়া বিদেশি হজযাত্রীদের সৌদি আরবে আসার আগেই ‘নেইসেরিয়া মেনিনজিটিডিস’ ভ্যাকসিন নিতে হবে এবং নিজ দেশের দ্বারা ভ্যাকসিন নেওয়ার বিষয়টির প্রমাণপত্র নিতে হবে।

বিদেশি হজযাত্রীদের পোলিও, কোভিড-১৯ এবং ফ্লুয়ের ভ্যাকসিন নেওয়া থাকতে হবে। এতে করে সব হজযাত্রীর স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া সৌদিতে বসবাসরত যারা হজ করতে চান তাদের হজ সংক্রান্ত ভ্যাকসিনগুলো গ্রহণ করতে হবে।

এই ভ্যাকসিন প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ হজযাত্রীদের পবিত্র মক্কা নগরীতে হজের জন্য যেতে মন্ত্রণালয়ের সেহাতি অ্যাপে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন করতে হবে।

;

হজযাত্রী কমেছে ৩৭ হাজারের বেশি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজ ক্যাম্পে প্রবেশ করছেন হাজিরা, ছবি: নূর এ আলম, বার্তা২৪.কম

হজ ক্যাম্পে প্রবেশ করছেন হাজিরা, ছবি: নূর এ আলম, বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

হজের খরচ বাড়ায় গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় ৩৮ হাজার কমেছে হজযাত্রীর সংখ্যা। করোনা পরবর্তী সময়ে ২০২৩ সালে এক লাখ ২২ হাজার ৮৮৪ জন বাংলাদেশি হজপালনে যান। যদিও বাংলাদেশের জন্য হজরে কোটা ছিল এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের। গত বছর হজ কোটার বিপরীতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কম ছিল নিবন্ধন সংখ্যা। যদিও সরকারি-বেসরকারিভাবে হজে যাওয়ার প্রাক-নিবন্ধনের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি।

কিন্তু হজ প্যাকেজের মূল্য বৃদ্ধির দরুণ কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও এবার নির্ধারিত কোটা পূরণ হয়নি। অবশেষ ৮৩ হাজার ২০৯ জন চূড়ান্ত নিবন্ধন করেন। তন্মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চার হাজার ৩১৪ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন হজপালন করবেন। আর ব্যবস্থাপনাসহ এবার হজে যাচ্ছেন ৮৫ হাজার ১১৭ জন। সে হিসেবে গত বছরের তুলনায় এবার সারাদেশে হজযাত্রীর সংখ্যা কমেছে ৩৭ হাজার ৭৬৭ জন।

যদিও এখন পর্যন্ত সরকারি মাধ্যমে ২ হাজার ৭৭১ জন ও বেসরকারি মাধ্যমে ৭৮ হাজার ২৭৩ জন যাত্রী হজের জন্য প্রাথমিকভাবে নিবন্ধন করে রেখেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতবারের তুলনায় এবার হজের মূল খরচ বেড়েছে। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও হজে যাওয়ার আগ্রহ কমেছে মানুষদের মধ্যে। এ কারণে অন্যবারের তুলনায় কমেছে হজযাত্রীর সংখ্যা।

আরও পড়ুন : বদলি হজ কখন করাবেন

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশনের (হাব) কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, হজের ব্যয় এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় হজে যাওয়ার মানুষের সংখ্যা কমেছে।

বিষয়টি নিয়ে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) নেতারা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, হজ কোটা পূরণ না হওয়ার প্রভাব তাদের ব্যবসায় পড়বে। কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পাওয়ায় অনেক ট্রাভেল এজেন্সি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

চলতি বছর একজন বাংলাদেশিকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে গড়ে প্রায় সাত থেকে আট লাখ টাকা খরচ হবে, যা অনেক আগ্রহীকে হজ পালনে নিরুৎসাহিত করেছে। বিমানভাড়া, সৌদি আরবে বাসাভাড়া, মক্কা ও মদিনায় যাতায়াত ব্যয়সহ মোয়াাল্লিম ফি অত্যধিক বৃদ্ধির কারণে মূল হজের খরচ অনেক বেড়ে গেছে।

হাব নেতাদের মতে, আগে মোয়াল্লিমের জন্য নির্ধারিত ফি ছিল এক হাজার থেকে ১২ শ রিয়াল, বর্তমানে তা করা হয়েছে পাঁচ হাজার রিয়াল, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার থেকে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। বিমানভাড়া করা হয়েছে এক লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এ ছাড়া সৌদি সরকারের শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট আরোপ অন্যতম।

তাদের মতে, হজের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের করার কিছু নেই। তবে বিমানভাড়া নির্ধারণ বা ভাড়া কম রাখার বিষয়টি সরকার হস্তক্ষেপ করে হজের খরচ কমানোর ব্যবস্থা করতে পারত।

২০০৯ সালে বাংলাদেশের হজযাত্রীর সংখ্যা ছিল ৫৮ হাজার ৬২৮ জন, যা ২০১৯ সালে বেড়ে হয় ১ লাখ ২৬ হাজার ৯২৩ জন। করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২২ সালে হজযাত্রীর সংখ্যা কমে দাড়ায় ৬০ হাজার ১৪৬ জনে।

জিলহজ মাসে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে ৯ মে শুরু হওয়া হজফ্লাইট শেষ হবে ১০ জুন। এই সময়ের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গাইডসহ হজপালনে সৌদি আরব যাবেন ৮৫ হাজার ১১৭ জন।

;

বদলি হজ কখন করাবেন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মসজিদে হারামের প্রবেশ পথ, ছবি: সংগৃহীত

মসজিদে হারামের প্রবেশ পথ, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ব্যস্ততার কারণে কেউ হজে যেতে না পারলে অন্য কাউকে দিয়ে বদলি হজ করানো যাবে না। কারণ এটি শরিয়ত নির্দেশিত অপারগতা নয়। বদলি হজ কেবল শরিয়তের দৃষ্টিতে মক্কায় যেতে অপারগদের জন্য প্রযোজ্য। বদলি হজের বিধান হলো-

হজ ফরজ হওয়ার পর হজ করা হয়নি, এখন শারীরিকভাবে মক্কায় যেতে অক্ষম এমন ব্যক্তির জন্য অন্য কাউকে পাঠিয়ে হজ করা ফরজ। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

বার্ধক্য বা অসুস্থতা থেকে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম হতে হবে। -মানাসিক লি-মোল্লা আলি কারি

অসিয়ত না করলেও মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা চাইলে তার জন্য বদলি হজ করাতে পারেন। এ ক্ষেত্রে শর্ত হলো- ওয়ারিশদের সবার স্বতঃস্ফূর্ত অনুমোদন লাগবে এবং ওয়ারিশদের মধ্যে কেউ অপ্রাপ্তবয়স্ক থাকলে তার ভাগের সম্পদ থেকে কিছুই নেওয়া যাবে না। -আদ দুররুল মুখতার

যার পক্ষ থেকে হজ করা হবে, তাকেই খরচ বহন করতে হবে। অসিয়ত করে গেলে প্রথমে তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে ঋণ আদায় করতে হবে। এরপর অসিয়তের বিধান অনুযায়ী বাকি সম্পদ তিন ভাগ করতে হবে। এর মধ্যে এক ভাগ থেকে অসিয়তের অংশ নিতে হবে। হজের অসিয়ত করে গেলে সেই খরচও এই অংশ থেকে নিতে হবে। -মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা

আরও পড়ুন: হজযাত্রীদের সেবায় সৌদি ঐতিহ্য

বদলি হজের বিনিময়ে মজুরি নেওয়া নাজায়েজ। কারণ ইবাদতের বিনিময়ে কোনো মজুরি নেওয়া যায় না। কেউ দিলে এবং নিলে দুজনেই গোনাহগার হবেন। হজের জন্য প্রয়োজনীয় খরচের বাইরে কোনো ধরনের লেনদেন করা যাবে না। -আল-বাহরুল আমিক

টাকা-পয়সার হিসাবের ঝামেলা এড়ানোর জন্য হজে পাঠানো ব্যক্তি যদি বদলি হজকারীকে বলেন, আপনাকে পুরো টাকা হাদিয়া হিসেবে দিলাম, তাহলে এই টাকা দিয়ে বদলি হজ আদায় হবে না। কারণ হাদিয়া দেওয়ার কারণে বদলি হজকারী ওই টাকার মালিক হয়ে যান। -যুবদাতুল মানাসিক

হজ করেছেন এমন নেককার ব্যক্তিকে বদলি হজের জন্য পাঠানো উত্তম। হজ করেননি এমন ব্যক্তিকে পাঠানো বৈধ। তবে হজ ফরজই হয়নি এমন ব্যক্তিকে পাঠানো মাকরুহে তানজিহি। আর হজ ফরজ হলেও আদায় করেননি এমন ব্যক্তিকে পাঠানো মাকরুহ তাহরিমি তথা নাজায়েজ। -সুনানে আবু দাউদ

;