হাদিসে বর্ণিত তিন সংখ্যা, বিশ্লেষণ ও মর্মকথা



মোহাম্মদ নিজামুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
হাদিসে বর্ণিত তিন সংখ্যা, বিশ্লেষণ ও মর্মকথা, ছবি: সংগৃহীত

হাদিসে বর্ণিত তিন সংখ্যা, বিশ্লেষণ ও মর্মকথা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনেক হাদিসে তিন সংখ্যার বিশেষত্ব দেখা যায়। কোনো হাদিসে তিনি বিশেষ তিনটি গুণ অর্জনের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। আবার কোনো হাদিসে বিশেষ তিনটি দোষের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। কখনও বিশেষ তিনটি কাজের ফলাফল বর্ণনা করেছেন। আবার কখনও তিন ব্যক্তি সম্পর্কে কোনো বিশেষত্ব বর্ণনা করেছেন। এ ধরনের কয়েকটি হাদিস বর্ণনা করা হলো।

তিনটি গুণ অর্জনে ঈমানের স্বাদ
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার মধ্যে তিনটি গুণ আছে, সে ঈমানের স্বাদ পাবে। ১. আল্লাহ তার রাসূল অন্য সব কিছু থেকে তার কাছে অধিক প্রিয় হওয়া, ২. কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্য ভালোবাসা ও ৩. কুফুরিতে প্রত্যাবর্তনকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো অপছন্দ করা।’ –সহিহ মুসলিম: ১৬

তিন কাজের আদেশ
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে তিনটি কাজের অসিয়ত করেছেন। ১. প্রতি মাসে তিন দিন রোজা পালন করা, ২. চাশতের নামাজ আদায় করা, ৩. বিতরের নামাজ আদায় করে শয়ন করা। -সহিহ বোখারি: ১১৭৮

তিনটি সন্তান মৃত্যুবরণ করলে জান্নাত
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো নারীর তিনটি নাবালেগ সন্তান মৃত্যুবরণ করলে, তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম। -সহিহ বোখারি: ১০১

তিন ধরনের লোকের জন্য পুরস্কার
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তিন ধরনের লোকের জন্য দু’টি করে পুরস্কার রয়েছে। ১. ওই আহলে কিতাব, যে তার নবীর ওপর ঈমান এনেছে এবং রাসূল (সা.) ওপর ঈমান এনেছে। ২. যে কৃতদাস আল্লাহর হুকুম পালন করে এবং তার মালিকের হুকুম পালন করে ও ৩. ওই মালিক, যে তার কৃতদাসীকে মুক্ত করে দিয়ে তাকে বিয়ে করে। -সহিহ বোখারি: ৯৭

সত্যবাদী ব্যবসায়ীরা তিন ব্যক্তির সঙ্গে থাকবে
হজরত আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীরা (আখেরাতে) নবী, সিদ্দিক (সত্যবাদী) ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে। -সুনানে তিরমিজি: ১২০৯

মৃত্যুর পরেও তিন আমলের সওয়াব পাওয়া যায়
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায় তিন প্রকার আমল ছাড়া। ১. সদকায়ে জারিয়া, ২. এমন ইলম যার দ্বারা উপকার হয় ও ৩. পুণ্যবান সন্তান যে তার জন্য দোয়া করতে থাকে। -সহিহ মুসলিম: ৪১১৫

তিন ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া নিঃসন্দেহে কবুল হয়। মজলুমের দোয়া, মুসাফিরের দোয়া ও সন্তানের জন্য পিতার দোয়া। -সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৮৬২

ঘুমন্ত অবস্থায় শয়তান মানুষকে তিনটি গিট দেয়
আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পশ্চাদংশে তিনটি গিট দেয়। প্রতি গিটে সে এ বলে চাপড়ায়, তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি শুয়ে থাকো। অতঃপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে তাহলে একটি গিট খুলে যায়, পরে অজু করলে আরেকটি গিট খুলে যায়, অতঃপর নামাজ আদায় করলে আরেকটি গিট খুলে যায়। তখন তার প্রভাত হয় উৎফুল্ল। অন্যথায় সে সকালে উঠে কলুষ কালিমা ও আলস্য সহকারে। -সহিহ বোখারি: ১১৪২

আল্লাহ বান্দার তিনটি কাজ অপছন্দ করেন
সাহাবি হজরত মুগিরা ইবনে শুবাহ (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসূলকে (সা.) বলতে শুনেছি, আল্লাহ তোমাদের তিনটি কাজ অপছন্দ করেন- ১. অনর্থক কথাবার্তা, ২. সম্পদ নষ্ট করা এবং ৩. অত্যধিক সওয়াল করা। -সহিহ বোখারি: ১৪৭৭

তিনটি জিনিস বান্দার কবর পর্যন্ত যায়
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তিনটি বস্তু মৃত ব্যক্তির অনুসরণ করে। দু’টি ফিরে আসে, আরেকটি তার সঙ্গে থেকে যায়। তার পরিবারবর্গ, তার ধন-সম্পদ এবং তার আমল তার অনুসরণ করে। পরিবারবর্গ ও তার ধন-সম্পদ ফিরে আসে এবং তার আমল তার সঙ্গে থেকে যায়। -সহিহ বোখারি: ৬৫১৪

মুনাফিকের তিনটি আলামত
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি- ১. সে কথা বললে মিথ্যা বলে, ২. ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে ও ৩. তার কাছে আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে। -সহিহ মুসলিম: ১১৫

উম্মতে মুহাম্মদিকে তিনটি জিনিস দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, অন্যসব উম্মতের চেয়ে তিনটি বিষয়ে আমাদের (উম্মতে মুহাম্মদিকে) মর্যাদা দান করা হয়েছে। ১. আমাদের (নামাজের) কাতার ফেরেশতাদের কাতারের মতো করা হয়েছে, ২. সমগ্র পৃথিবী আমাদের জন্য মসজিদ করে দেওয়া হয়েছে ও ৩. পানি না পেলে পৃথিবীর মাটিকে আমাদের জন্য পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ করে দেওয়া হয়েছে। - সহিহ মুসলিম: ১০৫২

তিন সময়ে নামাজ পড়া নিষেধ
উকবা ইবনে আমির আল জুহানি (রা.) বলেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তিন সময়ে নামাজ আদায় করতে এবং মৃতদের দাফন করতে নিষেধ করেছেন- ১. সূর্য যখন আলোকোদ্ভাসিত হয়ে উদয় হতে থাকে তখন থেকে তা পরিষ্কারভাবে উপরে ওঠা পর্যন্ত, ২. সূর্য যখন ঠিক দ্বিপ্রহরের সময় থেকে হেলে যাওয়া পর্যন্ত ও ৩. সূর্য ক্ষীণ আলোক হওয়া থেকে তা সম্পূর্ণ অস্ত যায়া পর্যন্ত। -সহিহ মুসলিম: ১৮১৪

আল্লাহর নিকট তিন কাজ হারাম, অপর তিন কাজ অপছন্দনীয়
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তোমাদের ওপর হারাম করেছেন মায়েদের অবাধ্য হওয়া, জীবন্ত কন্যা সন্তানকে মাটিতে পুঁতে ফেলা এবং অন্যের হক আদায় না করা। আর তিনটি বিষয় তিনি তোমাদের জন্য অপছন্দ করেন। তা হলো- ১. নিরর্থক কথা বলা, ২. অধিক প্রশ্ন করা ও ৩. সম্পদ বিনষ্ট করা। -সহিহ মুসলিম: ৪৩৭৫

তিন জায়গায় মিথ্যা বলা জায়েজ
ইবনে শিহাব (রহ.) বলেন, তিনটি স্থান ছাড়া আর কোনো বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মিথ্যা বলার অনুমতি দিয়েছেন বলে আমি শুনিনি। ১. যুদ্ধ কৌশলের ক্ষেত্রে, ২. মানুষের মধ্যে আপস-মীমাংসা করার জন্য ও ৩. সহধর্মিণীর সঙ্গে স্বামীর কথা ও স্বামীর সঙ্গে সহধর্মিণীর কথা বলার ক্ষেত্রে। -সহিহ মুসলিম: ৬৫২৭

তিন ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না
হজরত আম্মার ইবনে ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূল (সা.) বলেছেন, তিন শ্রেণির মানুষ কখনও জান্নাতে যাবে না। ১. যে ব্যক্তি তার পরিবারে বেহায়াপনার সুযোগ দেয়, ২. পুরুষের বেশধারী নারী ও ৩. নিয়মিত নেশাদার দ্রব্য পানকারী। -তাবরানি, তারগিব: ৩৩৮১

অন্য হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রতারক, ধোঁকাবাজ, কৃপণ এবং উপকার করে খোটা দানকারী জান্নাতে যেতে পারবে না। -তিরমিজি: ১৯৬৩

   

সৌদি পৌঁছেছেন ৩০ হাজার ৮১০ হজযাত্রী



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছর হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৩০ হাজার ৮১০ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন।

সোমবার (২০ মে) হজ পোর্টালের সবশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়।

সৌদিতে যাওয়া হজযাত্রীদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার হাজার ৭৪৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার গেছেন ২৭ হাজার ৬৩ জন।

বাংলাদেশ থেকে ৭৭টি ফ্লাইটে এসব হজযাত্রী সৌদি পৌঁছেছেন। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ৩২টি, সৌদি এয়ারলাইনসের ২৫টি এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস ২০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে।

এদিকে, সৌদি আরবে হজ পালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত দুইজন বাংলাদেশি মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে, গত ৯ মে বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রথম ডেডিকেটেড ফ্লাইট ৪১৫ জন হজযাত্রী নিয়ে সৌদির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এর মাধ্যমেই চলতি বছরের হজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। শেষ হবে ১০ জুন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ২০ জুন এবং শেষ হবে ২২ জুলাই।

;

হজের সময় সৌদিতে তাপদাহের আশঙ্কা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজের আনুষ্ঠাকিতায় হাজিরা, ছবি: সংগৃহীত

হজের আনুষ্ঠাকিতায় হাজিরা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া হজের সময় সৌদি আরবের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকতে পারে। এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন সৌদি ন্যাশনাল সেন্টার অব মেটিওরোলজির প্রধান আয়মান গোলাম।

আসন্ন হজে উচ্চ তাপমাত্রার জন্য সতর্ক করে প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আয়মান গোলাম বলেছেন যে, এ বছর হজের মৌসুম চলবে জুনের মাঝামাঝিতে। হজের মৌসুম সৌদি আরবে বছরের সবচেয়ে গরম সময়ের সঙ্গে মিলে গেছে।

বছরের এই সময়ে সাধারণত সৌদি আরবে তাপমাত্রা এবং বাতাসের আর্দ্রতা দুটোই অনেক বেশি থাকে। ফলে হজে অংশগ্রহণকারীদের সতর্ক থাকতে অবহিত করা হয়েছে।

জানা গেছে, হজ করতে আসা মুসল্লিদের ওপর তীব্র গরমের প্রভাব কমাতে তাদের বাসস্থানকে পর্যাপ্ত ঠাণ্ডা রাখা হবে হজ আয়োজনকারীদের অন্যতম অগ্রাধিকার। বিশেষ করে মিনা এবং আরাফাতের ময়দানে তাঁবুতে অবস্থান এবং হজের পাঁচতিন চলাচলে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

রোগীদের হজে যাওয়ার ক্ষেত্রে সৌদির নির্দেশনা
যারা দীর্ঘদিন ধরে রোগে ভুগছেন তাদের হজে যাওয়ার সময় চিকিৎসার নথিপত্র সঙ্গে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে সৌদি আরব। রোগীরা হজে গিয়েও যেন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান তা নিশ্চিত করতেই এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় জানায়, বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হয় এমন কোনো রোগে যদি আপনি ভুগে থাকেন এবং বিশেষ ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে চিকিৎসার নথিপত্র সঙ্গে নিয়ে আসতে ভুলবেন না। যেন সৌদিতে আসার ও যাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান।

এ ছাড়া বিদেশি হজযাত্রীদের সৌদি আরবে আসার আগেই ‘নেইসেরিয়া মেনিনজিটিডিস’ ভ্যাকসিন নিতে হবে এবং নিজ দেশের দ্বারা ভ্যাকসিন নেওয়ার বিষয়টির প্রমাণপত্র নিতে হবে।

বিদেশি হজযাত্রীদের পোলিও, কোভিড-১৯ এবং ফ্লুয়ের ভ্যাকসিন নেওয়া থাকতে হবে। এতে করে সব হজযাত্রীর স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া সৌদিতে বসবাসরত যারা হজ করতে চান তাদের হজ সংক্রান্ত ভ্যাকসিনগুলো গ্রহণ করতে হবে।

এই ভ্যাকসিন প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ হজযাত্রীদের পবিত্র মক্কা নগরীতে হজের জন্য যেতে মন্ত্রণালয়ের সেহাতি অ্যাপে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন করতে হবে।

;

হজযাত্রী কমেছে ৩৭ হাজারের বেশি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজ ক্যাম্পে প্রবেশ করছেন হাজিরা, ছবি: নূর এ আলম, বার্তা২৪.কম

হজ ক্যাম্পে প্রবেশ করছেন হাজিরা, ছবি: নূর এ আলম, বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

হজের খরচ বাড়ায় গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় ৩৮ হাজার কমেছে হজযাত্রীর সংখ্যা। করোনা পরবর্তী সময়ে ২০২৩ সালে এক লাখ ২২ হাজার ৮৮৪ জন বাংলাদেশি হজপালনে যান। যদিও বাংলাদেশের জন্য হজরে কোটা ছিল এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের। গত বছর হজ কোটার বিপরীতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কম ছিল নিবন্ধন সংখ্যা। যদিও সরকারি-বেসরকারিভাবে হজে যাওয়ার প্রাক-নিবন্ধনের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি।

কিন্তু হজ প্যাকেজের মূল্য বৃদ্ধির দরুণ কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও এবার নির্ধারিত কোটা পূরণ হয়নি। অবশেষ ৮৩ হাজার ২০৯ জন চূড়ান্ত নিবন্ধন করেন। তন্মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চার হাজার ৩১৪ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন হজপালন করবেন। আর ব্যবস্থাপনাসহ এবার হজে যাচ্ছেন ৮৫ হাজার ১১৭ জন। সে হিসেবে গত বছরের তুলনায় এবার সারাদেশে হজযাত্রীর সংখ্যা কমেছে ৩৭ হাজার ৭৬৭ জন।

যদিও এখন পর্যন্ত সরকারি মাধ্যমে ২ হাজার ৭৭১ জন ও বেসরকারি মাধ্যমে ৭৮ হাজার ২৭৩ জন যাত্রী হজের জন্য প্রাথমিকভাবে নিবন্ধন করে রেখেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতবারের তুলনায় এবার হজের মূল খরচ বেড়েছে। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও হজে যাওয়ার আগ্রহ কমেছে মানুষদের মধ্যে। এ কারণে অন্যবারের তুলনায় কমেছে হজযাত্রীর সংখ্যা।

আরও পড়ুন : বদলি হজ কখন করাবেন

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশনের (হাব) কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, হজের ব্যয় এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় হজে যাওয়ার মানুষের সংখ্যা কমেছে।

বিষয়টি নিয়ে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) নেতারা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, হজ কোটা পূরণ না হওয়ার প্রভাব তাদের ব্যবসায় পড়বে। কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পাওয়ায় অনেক ট্রাভেল এজেন্সি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

চলতি বছর একজন বাংলাদেশিকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে গড়ে প্রায় সাত থেকে আট লাখ টাকা খরচ হবে, যা অনেক আগ্রহীকে হজ পালনে নিরুৎসাহিত করেছে। বিমানভাড়া, সৌদি আরবে বাসাভাড়া, মক্কা ও মদিনায় যাতায়াত ব্যয়সহ মোয়াাল্লিম ফি অত্যধিক বৃদ্ধির কারণে মূল হজের খরচ অনেক বেড়ে গেছে।

হাব নেতাদের মতে, আগে মোয়াল্লিমের জন্য নির্ধারিত ফি ছিল এক হাজার থেকে ১২ শ রিয়াল, বর্তমানে তা করা হয়েছে পাঁচ হাজার রিয়াল, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার থেকে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। বিমানভাড়া করা হয়েছে এক লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এ ছাড়া সৌদি সরকারের শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট আরোপ অন্যতম।

তাদের মতে, হজের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের করার কিছু নেই। তবে বিমানভাড়া নির্ধারণ বা ভাড়া কম রাখার বিষয়টি সরকার হস্তক্ষেপ করে হজের খরচ কমানোর ব্যবস্থা করতে পারত।

২০০৯ সালে বাংলাদেশের হজযাত্রীর সংখ্যা ছিল ৫৮ হাজার ৬২৮ জন, যা ২০১৯ সালে বেড়ে হয় ১ লাখ ২৬ হাজার ৯২৩ জন। করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২২ সালে হজযাত্রীর সংখ্যা কমে দাড়ায় ৬০ হাজার ১৪৬ জনে।

জিলহজ মাসে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে ৯ মে শুরু হওয়া হজফ্লাইট শেষ হবে ১০ জুন। এই সময়ের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গাইডসহ হজপালনে সৌদি আরব যাবেন ৮৫ হাজার ১১৭ জন।

;

বদলি হজ কখন করাবেন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মসজিদে হারামের প্রবেশ পথ, ছবি: সংগৃহীত

মসজিদে হারামের প্রবেশ পথ, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ব্যস্ততার কারণে কেউ হজে যেতে না পারলে অন্য কাউকে দিয়ে বদলি হজ করানো যাবে না। কারণ এটি শরিয়ত নির্দেশিত অপারগতা নয়। বদলি হজ কেবল শরিয়তের দৃষ্টিতে মক্কায় যেতে অপারগদের জন্য প্রযোজ্য। বদলি হজের বিধান হলো-

হজ ফরজ হওয়ার পর হজ করা হয়নি, এখন শারীরিকভাবে মক্কায় যেতে অক্ষম এমন ব্যক্তির জন্য অন্য কাউকে পাঠিয়ে হজ করা ফরজ। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

বার্ধক্য বা অসুস্থতা থেকে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম হতে হবে। -মানাসিক লি-মোল্লা আলি কারি

অসিয়ত না করলেও মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা চাইলে তার জন্য বদলি হজ করাতে পারেন। এ ক্ষেত্রে শর্ত হলো- ওয়ারিশদের সবার স্বতঃস্ফূর্ত অনুমোদন লাগবে এবং ওয়ারিশদের মধ্যে কেউ অপ্রাপ্তবয়স্ক থাকলে তার ভাগের সম্পদ থেকে কিছুই নেওয়া যাবে না। -আদ দুররুল মুখতার

যার পক্ষ থেকে হজ করা হবে, তাকেই খরচ বহন করতে হবে। অসিয়ত করে গেলে প্রথমে তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে ঋণ আদায় করতে হবে। এরপর অসিয়তের বিধান অনুযায়ী বাকি সম্পদ তিন ভাগ করতে হবে। এর মধ্যে এক ভাগ থেকে অসিয়তের অংশ নিতে হবে। হজের অসিয়ত করে গেলে সেই খরচও এই অংশ থেকে নিতে হবে। -মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা

আরও পড়ুন: হজযাত্রীদের সেবায় সৌদি ঐতিহ্য

বদলি হজের বিনিময়ে মজুরি নেওয়া নাজায়েজ। কারণ ইবাদতের বিনিময়ে কোনো মজুরি নেওয়া যায় না। কেউ দিলে এবং নিলে দুজনেই গোনাহগার হবেন। হজের জন্য প্রয়োজনীয় খরচের বাইরে কোনো ধরনের লেনদেন করা যাবে না। -আল-বাহরুল আমিক

টাকা-পয়সার হিসাবের ঝামেলা এড়ানোর জন্য হজে পাঠানো ব্যক্তি যদি বদলি হজকারীকে বলেন, আপনাকে পুরো টাকা হাদিয়া হিসেবে দিলাম, তাহলে এই টাকা দিয়ে বদলি হজ আদায় হবে না। কারণ হাদিয়া দেওয়ার কারণে বদলি হজকারী ওই টাকার মালিক হয়ে যান। -যুবদাতুল মানাসিক

হজ করেছেন এমন নেককার ব্যক্তিকে বদলি হজের জন্য পাঠানো উত্তম। হজ করেননি এমন ব্যক্তিকে পাঠানো বৈধ। তবে হজ ফরজই হয়নি এমন ব্যক্তিকে পাঠানো মাকরুহে তানজিহি। আর হজ ফরজ হলেও আদায় করেননি এমন ব্যক্তিকে পাঠানো মাকরুহ তাহরিমি তথা নাজায়েজ। -সুনানে আবু দাউদ

;