রাসূলুল্লাহ সা.-এর আনুগত্য ও অনুকরণের অপরিহার্যতা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজরত রাসূলুল্লাহ সা.-এর আনুগত্য ও অনুকরণ মুমিনের জন্য অপরিহার্য, ছবি: সংগৃহীত

হজরত রাসূলুল্লাহ সা.-এর আনুগত্য ও অনুকরণ মুমিনের জন্য অপরিহার্য, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হরজত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে শুধু যে অস্বীকার করেছে সে ছাড়া। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কে অস্বীকার করবে? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, যে আমার আনুগত্য করল; সে জান্নাতে যাবে আর যে আমার অবাধ্য হলো- সে অস্বীকার করল।’ -সহিহ বোখারি

বর্ণিত হাদিসের ভাষ্য অত্যন্ত পরিষ্কার। নবী করিম (সা.)-এর প্রকৃত উম্মতগণ জান্নাতে যাবে, কিন্তু যারা নবী করিম (সা.) কে মানবে না অথবা অস্বীকার করবে তাদের কী হবে? অপরদিকে যারা রাসূল (সা.) কে অনুসরণ করছে তারা কতটা করবে? এ ধরনের কিছু প্রশ্ন আমাদের সামনে আসে। সুতরাং আমরা এ সংক্রান্ত আলোচনা কোরআন-হাদিসের আলোকে উপস্থাপন করছি।

হাদিসের প্রথম অংশ ‘আমার সব উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে’ এ অংশের সঙ্গে মানুষের অনেক কিছু জড়িত। তবে এ হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী পহেলা যে বিষয়টা এসেছে তা হলো, ‘যে আমার আনুগত্য করল।’ এই আনুগত্যের দাবি হলো- নবী করিম (সা.) দীর্ঘ ২৩ বছরে কোরআনের যত নির্দেশনা পেয়েছেন এবং নিজের বিবেকবুদ্ধি প্রয়োগ করে যে সব কাজ করেছেন তা সবই নিজের পরিমণ্ডলে বাস্তবায়ন করা। এ ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা সূরা হাশরের ৭ নং আয়াতে বলেন, ‘রাসূল যা কিছু তোমাদের দেন তা গ্রহণ করো এবং যে জিনিস থেকে তিনি তোমাদের বিরত রাখেন তা থেকে বিরত থাকো। আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।’

এ আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে রাসূল (সা.)-এর ওপর যে নির্দেশনা এসেছে তা অনুসরণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে কোনো ছাড় নেই। যদি এমন কোনো ব্যাপার হয় যা আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে জড়িত, অথবা এ সংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়ে পরস্পরের মধ্যে বাদানুবাদ হয় তবে সেসব কিছুর সমাধানের জন্য মুমিনদেরকে সরাসরি আল্লাহর নির্দেশ এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রাসূলের আর সেসব লোকের যারা তোমাদের মধ্যে দায়িত্ব ও ক্ষমতার অধিকারী। এরপর যদি তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যাপারে বিরোধ দেখা দেয় তাহলে তাকে আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহ ও পরকালের ওপর ঈমান এনে থাকো। এটিই একটি সঠিক কর্মপদ্ধতি এবং পরিণতির দিক দিয়েও এটিই উৎকৃষ্ট।’ -সূরা আন নিসা: ৫৯

যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আনুগত্য করবে সে আল্লাহতায়ালার আনুগত্য করল, আর যদি কেউ নবী করিম (সা.) কে বাদ দিয়ে জীবনের কোনো বিষয় বাস্তবায়ন করে তবে তা আল্লাহর দায় থেকে সে মুক্ত হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ সূরা আন নিসার ৮০ নং আয়াতে বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করলো সে আসলে আল্লাহরই আনুগত্য করলো। আর যে ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নিলো, যাই হোক, তাদের ওপর তো আমি তোমাকে পাহারাদার বানিয়ে পাঠাইনি।’ মানব জীবনের সকল স্তরে যদি আল্লাহ নিদের্শিত এবং রাসূল (সা.) প্রদর্শিত নির্দেশাবলীর প্রতিফলন না ঘটে তবে তা হবে আনুগত্যহীন কাজ এবং তা এক পর্যায়ে মানুষকে কুফরির দিকে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে কোরআনে কারিমের নির্দেশনা হলো- ‘হে নবী! তাদেরকে বলুন, আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করো, তবে যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে নিশ্চই আল্লাহ এমন লোকদের মহব্বত করবেন না যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করতে অস্বীকার করে।’ -সূরা আল ইমরান: ৩২

হজরত রাসূল (সা.)-এর আনুগত্যের মাধ্যমে জান্নাত ও আল্লাহর রহমত পাওয়ার নিশ্চয়তা বিদ্যমান। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নামাজ কায়েম করো, জাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য করো, আশা করা যায়, তোমাদের প্রতি করুণা করা হবে।’ -সূরা আন নূর: ৫৬

তিনি আরও বলেন, ‘হে নবী! লোকদের বলে দাও, যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন। তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়।’ তাদেরকে বলো, ‘আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করো।’ -সূরা আলে ইমরান: ৩১

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আনুগত্য করার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর নির্দেশনা এসেছে কোরআনে কারিমে। নবী করিম (সা.) এর কোনো ফয়সালা, নিয়মাবলী ও কার্যাবলীর ব্যাপারে সামান্যতম কোনো ভিন্নতার মনোভাব পোষণ করলে তারা মুমিন হিসেবে গণ্য হবে না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘না, হে মুহাম্মদ! তোমার রবের কসম, এরা কখনও মুমিন হতে পারে না, যতক্ষণ এদের পারস্পরিক মতবিরোধের ক্ষেত্রে এরা তোমাকে ফায়সালাকারী হিসেবে মেনে না নেবে, তারপর তুমি যা ফায়সালা করবে তার ব্যাপারে নিজেদের মনের মধ্যে যেকোনো প্রকার কুণ্ঠা ও দ্বিধার স্থান দেবে না, বরং সর্বান্তকরণে মেনে নেবে।’ -সূরা আন নিসা: ৬৫

হাদিসেও নবীর আনুগত্যের ব্যাপারে খুব জোরালো নির্দেশনা এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে আমার আনুগত্য করল সে আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে আমার হুকুম অমান্য করল সে আল্লাহর হুকুমই অমান্য করল। আর যে আমিরের আনুগত্য করল সে আমারই আনুগত্য করল। যে আমিরের আনুগত্য করল না সে আমাকে অমান্য করল।’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম

নবী করিম (সা.)-এর আনুগত্য ও তার অনুসরণ করা ওয়াজিব। সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, জান্নাতি মানুষ হবার জন্য কখনই আল্লাহ এবং রাসূলের সামান্যতম বিরোধিতা করা যাবে না।

হাদিসের শেষাংশ ‘যে অস্বীকার করল।’ কে অস্বীকার করল? সাহাবাদের এমন প্রশ্নের উত্তরে রাসূল (সা.) বললেন, ‘যে আমার অবাধ্য হলো বা আমাকে অমান্য করল।’ সুতরাং আমাদের কাছে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, নবী করিম (সা.)-এর উম্মতের মধ্যে জান্নাতে যাবে না শুধুমাত্র সে, যে ‘রাসূলের অবাধ্য হয়েছে এবং তাকে অমান্য করেছে।’

এক্ষেত্রে নিম্নেবর্ণিত বিষয়গলো নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। যেমন-
ক. আমরা ফরজ ওযাজিব আমলগুলো কতটা গুরুত্বের সঙ্গে করি?
খ. আমাদের আর্থিক জীবনে হালাল-হারাম, সুদ-ঘুষ, ন্যায়-অন্যায় কতটা দেখে চলি?
গ. একজন ছাত্র, শিক্ষক, এমপি, মন্ত্রী, সচিব, পরিবারের কর্তা এবং দায়িত্বশীল হিসেবে আমার ওপর অর্পিত আমানত কতটা পুরো করি?
ঘ. সামাজিক জীবনে সকলের অধিকারের কতটুকু আদায় করতে পারি?
ঙ. আমাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে রাসূল (সা.)-এর কতটুকু অনুসরণ করি?
চ. যারা আল্লাহর দ্বীন প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে তাদের কতটা বিরোধিতা করি?
ছ. আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের জন্য আল্লাহতায়ালার দেওয়া সময়, অর্থ, মেধা এবং শ্রম দেওয়ার জন্য আমরা কতটা উদগ্রীব?

এ জাতীয় বিষয়গুলো সবসময় ভাবতে হবে। সে ভাবনা নবী করিম (সা.)-এর দেখানো পথে হতে হবে, অন্যথায় আমাদের অজান্তেই রাসূল (সা.) কে অমান্যকারিদের কাতারে শামিল হয়ে যেতে পারি এবং জান্নাতে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

হাদিসের শিক্ষা
১. সর্বাবস্থায় আল্লাহ এবং রাসূল (সা.)-এর আনুগত্য করার মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম করতে হবে।
২. হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সিরাত সবসময় অধ্যয়ন করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী যথাযথভাবে মনে রাখতে হবে।
৩. ব্যক্তিগত, সামাজিক, পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় সব পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কর্মনীতি অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
৪. সর্বোপরি কোনো কাজ করার আগেই ভাবতে হবে- এটা কী নবী (সা.)-এর দেখানো অথবা করণীয় পদ্ধতিতে হচ্ছে?

   

সৌদি পৌঁছেছেন ৩০ হাজার ৮১০ হজযাত্রী



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছর হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৩০ হাজার ৮১০ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন।

সোমবার (২০ মে) হজ পোর্টালের সবশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়।

সৌদিতে যাওয়া হজযাত্রীদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার হাজার ৭৪৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার গেছেন ২৭ হাজার ৬৩ জন।

বাংলাদেশ থেকে ৭৭টি ফ্লাইটে এসব হজযাত্রী সৌদি পৌঁছেছেন। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ৩২টি, সৌদি এয়ারলাইনসের ২৫টি এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস ২০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে।

এদিকে, সৌদি আরবে হজ পালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত দুইজন বাংলাদেশি মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে, গত ৯ মে বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রথম ডেডিকেটেড ফ্লাইট ৪১৫ জন হজযাত্রী নিয়ে সৌদির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এর মাধ্যমেই চলতি বছরের হজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। শেষ হবে ১০ জুন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ২০ জুন এবং শেষ হবে ২২ জুলাই।

;

হজের সময় সৌদিতে তাপদাহের আশঙ্কা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজের আনুষ্ঠাকিতায় হাজিরা, ছবি: সংগৃহীত

হজের আনুষ্ঠাকিতায় হাজিরা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া হজের সময় সৌদি আরবের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকতে পারে। এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন সৌদি ন্যাশনাল সেন্টার অব মেটিওরোলজির প্রধান আয়মান গোলাম।

আসন্ন হজে উচ্চ তাপমাত্রার জন্য সতর্ক করে প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আয়মান গোলাম বলেছেন যে, এ বছর হজের মৌসুম চলবে জুনের মাঝামাঝিতে। হজের মৌসুম সৌদি আরবে বছরের সবচেয়ে গরম সময়ের সঙ্গে মিলে গেছে।

বছরের এই সময়ে সাধারণত সৌদি আরবে তাপমাত্রা এবং বাতাসের আর্দ্রতা দুটোই অনেক বেশি থাকে। ফলে হজে অংশগ্রহণকারীদের সতর্ক থাকতে অবহিত করা হয়েছে।

জানা গেছে, হজ করতে আসা মুসল্লিদের ওপর তীব্র গরমের প্রভাব কমাতে তাদের বাসস্থানকে পর্যাপ্ত ঠাণ্ডা রাখা হবে হজ আয়োজনকারীদের অন্যতম অগ্রাধিকার। বিশেষ করে মিনা এবং আরাফাতের ময়দানে তাঁবুতে অবস্থান এবং হজের পাঁচতিন চলাচলে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

রোগীদের হজে যাওয়ার ক্ষেত্রে সৌদির নির্দেশনা
যারা দীর্ঘদিন ধরে রোগে ভুগছেন তাদের হজে যাওয়ার সময় চিকিৎসার নথিপত্র সঙ্গে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে সৌদি আরব। রোগীরা হজে গিয়েও যেন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান তা নিশ্চিত করতেই এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় জানায়, বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হয় এমন কোনো রোগে যদি আপনি ভুগে থাকেন এবং বিশেষ ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে চিকিৎসার নথিপত্র সঙ্গে নিয়ে আসতে ভুলবেন না। যেন সৌদিতে আসার ও যাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান।

এ ছাড়া বিদেশি হজযাত্রীদের সৌদি আরবে আসার আগেই ‘নেইসেরিয়া মেনিনজিটিডিস’ ভ্যাকসিন নিতে হবে এবং নিজ দেশের দ্বারা ভ্যাকসিন নেওয়ার বিষয়টির প্রমাণপত্র নিতে হবে।

বিদেশি হজযাত্রীদের পোলিও, কোভিড-১৯ এবং ফ্লুয়ের ভ্যাকসিন নেওয়া থাকতে হবে। এতে করে সব হজযাত্রীর স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া সৌদিতে বসবাসরত যারা হজ করতে চান তাদের হজ সংক্রান্ত ভ্যাকসিনগুলো গ্রহণ করতে হবে।

এই ভ্যাকসিন প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ হজযাত্রীদের পবিত্র মক্কা নগরীতে হজের জন্য যেতে মন্ত্রণালয়ের সেহাতি অ্যাপে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন করতে হবে।

;

হজযাত্রী কমেছে ৩৭ হাজারের বেশি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজ ক্যাম্পে প্রবেশ করছেন হাজিরা, ছবি: নূর এ আলম, বার্তা২৪.কম

হজ ক্যাম্পে প্রবেশ করছেন হাজিরা, ছবি: নূর এ আলম, বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

হজের খরচ বাড়ায় গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় ৩৮ হাজার কমেছে হজযাত্রীর সংখ্যা। করোনা পরবর্তী সময়ে ২০২৩ সালে এক লাখ ২২ হাজার ৮৮৪ জন বাংলাদেশি হজপালনে যান। যদিও বাংলাদেশের জন্য হজরে কোটা ছিল এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের। গত বছর হজ কোটার বিপরীতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কম ছিল নিবন্ধন সংখ্যা। যদিও সরকারি-বেসরকারিভাবে হজে যাওয়ার প্রাক-নিবন্ধনের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি।

কিন্তু হজ প্যাকেজের মূল্য বৃদ্ধির দরুণ কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও এবার নির্ধারিত কোটা পূরণ হয়নি। অবশেষ ৮৩ হাজার ২০৯ জন চূড়ান্ত নিবন্ধন করেন। তন্মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চার হাজার ৩১৪ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন হজপালন করবেন। আর ব্যবস্থাপনাসহ এবার হজে যাচ্ছেন ৮৫ হাজার ১১৭ জন। সে হিসেবে গত বছরের তুলনায় এবার সারাদেশে হজযাত্রীর সংখ্যা কমেছে ৩৭ হাজার ৭৬৭ জন।

যদিও এখন পর্যন্ত সরকারি মাধ্যমে ২ হাজার ৭৭১ জন ও বেসরকারি মাধ্যমে ৭৮ হাজার ২৭৩ জন যাত্রী হজের জন্য প্রাথমিকভাবে নিবন্ধন করে রেখেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতবারের তুলনায় এবার হজের মূল খরচ বেড়েছে। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও হজে যাওয়ার আগ্রহ কমেছে মানুষদের মধ্যে। এ কারণে অন্যবারের তুলনায় কমেছে হজযাত্রীর সংখ্যা।

আরও পড়ুন : বদলি হজ কখন করাবেন

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশনের (হাব) কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, হজের ব্যয় এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় হজে যাওয়ার মানুষের সংখ্যা কমেছে।

বিষয়টি নিয়ে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) নেতারা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, হজ কোটা পূরণ না হওয়ার প্রভাব তাদের ব্যবসায় পড়বে। কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পাওয়ায় অনেক ট্রাভেল এজেন্সি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

চলতি বছর একজন বাংলাদেশিকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে গড়ে প্রায় সাত থেকে আট লাখ টাকা খরচ হবে, যা অনেক আগ্রহীকে হজ পালনে নিরুৎসাহিত করেছে। বিমানভাড়া, সৌদি আরবে বাসাভাড়া, মক্কা ও মদিনায় যাতায়াত ব্যয়সহ মোয়াাল্লিম ফি অত্যধিক বৃদ্ধির কারণে মূল হজের খরচ অনেক বেড়ে গেছে।

হাব নেতাদের মতে, আগে মোয়াল্লিমের জন্য নির্ধারিত ফি ছিল এক হাজার থেকে ১২ শ রিয়াল, বর্তমানে তা করা হয়েছে পাঁচ হাজার রিয়াল, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার থেকে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। বিমানভাড়া করা হয়েছে এক লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এ ছাড়া সৌদি সরকারের শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট আরোপ অন্যতম।

তাদের মতে, হজের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের করার কিছু নেই। তবে বিমানভাড়া নির্ধারণ বা ভাড়া কম রাখার বিষয়টি সরকার হস্তক্ষেপ করে হজের খরচ কমানোর ব্যবস্থা করতে পারত।

২০০৯ সালে বাংলাদেশের হজযাত্রীর সংখ্যা ছিল ৫৮ হাজার ৬২৮ জন, যা ২০১৯ সালে বেড়ে হয় ১ লাখ ২৬ হাজার ৯২৩ জন। করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২২ সালে হজযাত্রীর সংখ্যা কমে দাড়ায় ৬০ হাজার ১৪৬ জনে।

জিলহজ মাসে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে ৯ মে শুরু হওয়া হজফ্লাইট শেষ হবে ১০ জুন। এই সময়ের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গাইডসহ হজপালনে সৌদি আরব যাবেন ৮৫ হাজার ১১৭ জন।

;

বদলি হজ কখন করাবেন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মসজিদে হারামের প্রবেশ পথ, ছবি: সংগৃহীত

মসজিদে হারামের প্রবেশ পথ, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ব্যস্ততার কারণে কেউ হজে যেতে না পারলে অন্য কাউকে দিয়ে বদলি হজ করানো যাবে না। কারণ এটি শরিয়ত নির্দেশিত অপারগতা নয়। বদলি হজ কেবল শরিয়তের দৃষ্টিতে মক্কায় যেতে অপারগদের জন্য প্রযোজ্য। বদলি হজের বিধান হলো-

হজ ফরজ হওয়ার পর হজ করা হয়নি, এখন শারীরিকভাবে মক্কায় যেতে অক্ষম এমন ব্যক্তির জন্য অন্য কাউকে পাঠিয়ে হজ করা ফরজ। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

বার্ধক্য বা অসুস্থতা থেকে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম হতে হবে। -মানাসিক লি-মোল্লা আলি কারি

অসিয়ত না করলেও মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা চাইলে তার জন্য বদলি হজ করাতে পারেন। এ ক্ষেত্রে শর্ত হলো- ওয়ারিশদের সবার স্বতঃস্ফূর্ত অনুমোদন লাগবে এবং ওয়ারিশদের মধ্যে কেউ অপ্রাপ্তবয়স্ক থাকলে তার ভাগের সম্পদ থেকে কিছুই নেওয়া যাবে না। -আদ দুররুল মুখতার

যার পক্ষ থেকে হজ করা হবে, তাকেই খরচ বহন করতে হবে। অসিয়ত করে গেলে প্রথমে তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে ঋণ আদায় করতে হবে। এরপর অসিয়তের বিধান অনুযায়ী বাকি সম্পদ তিন ভাগ করতে হবে। এর মধ্যে এক ভাগ থেকে অসিয়তের অংশ নিতে হবে। হজের অসিয়ত করে গেলে সেই খরচও এই অংশ থেকে নিতে হবে। -মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা

আরও পড়ুন: হজযাত্রীদের সেবায় সৌদি ঐতিহ্য

বদলি হজের বিনিময়ে মজুরি নেওয়া নাজায়েজ। কারণ ইবাদতের বিনিময়ে কোনো মজুরি নেওয়া যায় না। কেউ দিলে এবং নিলে দুজনেই গোনাহগার হবেন। হজের জন্য প্রয়োজনীয় খরচের বাইরে কোনো ধরনের লেনদেন করা যাবে না। -আল-বাহরুল আমিক

টাকা-পয়সার হিসাবের ঝামেলা এড়ানোর জন্য হজে পাঠানো ব্যক্তি যদি বদলি হজকারীকে বলেন, আপনাকে পুরো টাকা হাদিয়া হিসেবে দিলাম, তাহলে এই টাকা দিয়ে বদলি হজ আদায় হবে না। কারণ হাদিয়া দেওয়ার কারণে বদলি হজকারী ওই টাকার মালিক হয়ে যান। -যুবদাতুল মানাসিক

হজ করেছেন এমন নেককার ব্যক্তিকে বদলি হজের জন্য পাঠানো উত্তম। হজ করেননি এমন ব্যক্তিকে পাঠানো বৈধ। তবে হজ ফরজই হয়নি এমন ব্যক্তিকে পাঠানো মাকরুহে তানজিহি। আর হজ ফরজ হলেও আদায় করেননি এমন ব্যক্তিকে পাঠানো মাকরুহ তাহরিমি তথা নাজায়েজ। -সুনানে আবু দাউদ

;