আকর্ষণজীবীদের কাছে পরাজিত কর্ষণজীবীরা

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’


অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রতিবছরই মে দিবস আসে বিশ্বের শ্রমিক শ্রেণীর আন্তর্জাতিক সংহতি আর সংগ্রামী ঐতিহ্য উদযাপনের দিন হিসেবে। মে দিবস সারা বিশ্বের মেহনতি মানুষের সংগ্রামের অনুপ্রেরণা এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ও সংহতির প্রতীক। ১৮৮৬ সালের ১ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো নগরীর শ্রমিকরা দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণ ও মজুরির দাবিতে সর্বাত্মক ধর্মঘটে যোগ দেয়। সেই ধর্মঘটের পিছনে ছিল শ্রমিক শ্রেণির মানবেতর জীবনের দুর্ভাগ্যজনক পটভূমি। আমেরিকা ও ইউরোপের সর্বত্র তখন হতভাগ্য শ্রমিকেদের দৈনিক ১৪ থেকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করাটা ছিল বাধ্যতামূলক।

মালিক পক্ষ শ্রমিকদের যত বেশি সম্ভব কাজ করিয়ে নিত। কিন্তু মজুরি দেওয়ার বেলায় কোনো ন্যায়-নীতির অনুসরণ করত না। এ ধরনের জুলুম ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাড়ায় শ্রমিকরা। শ্রমিক শ্রেণির প্রবল আন্দোলনের মুখে ১৮৬৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্টে ৮ ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণ করে আইন পাশ হয়। কিন্তু সে আইন কার্যকর না হওয়ায় শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা ১৮৮৬ সালের ১ মে হতে শুরু করে এক ঐতিহাসিক ধর্মঘট। আন্দোলন চুড়ান্ত রূপধারণ করে ৩ ও ৪ মে। সেই আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী শ্রমিকদের বুকের তাজা রক্তে শ্রমিক অধিকারের পাসকৃত আইনটি কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সেই থেকে দৈনিক ৮ ঘণ্টা শ্রমঘণ্টার নিয়ম বিশ্বের সর্বত্রই স্বীকৃতি পায়।

এটা ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত যে, শ্রমিকরাই হলো বিশ্ব সভ্যতার মূল কারিগর। কিন্তু প্রদীপের নিচে অন্ধকারের ন্যায় আলোকোজ্জ্বল মানবসভ্যতায় এই শ্রমিকশ্রেণি নানারকম শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হয়েছে। ঐতিহাসিক মে দিবসের শ্রমিক আন্দোলনের শতাধিক বছর পার হয়েছে। বিশ্বে দেশে দেশে ইতিমধ্যে শ্রমিকদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষায় প্রণীত হয়েছে বহু আইন। বাংলাদেশেও শ্রমিকের স্বার্থের অনুকূলে অনেক আইন বলবৎ রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা হলো, সেই আইনের বাস্তবিক প্রয়োগ অনেক ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত।

প্রতি বছর মে দিবস আসলেই শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে নানা রকম সভা-সমাবেশ, বক্তৃতা-বিবৃতি, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও র‌্যালির আয়োজন করা হয়। সংবাদপত্রে বের করা হয় বিশেষ ক্রোড়পত্র। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সম্প্রচার করা হয় আলোচনা অনুষ্ঠান, প্রমাণ্য অনুষ্ঠান ও টকশো। মে দিবস আসে আবার চলেও যায়। কিন্তু দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিকশ্রেণি তথা কৃষি শ্রমিকদের কথা থাকে উপেক্ষিত। অথচ কৃষিভিত্তিক আমাদের এই দেশ বাংলাদেশ। মোট জনশক্তির প্রায় ৫০ ভাগ এখনো প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে কৃষিকাজে নিয়োজিত। কিন্তু শ্রমিকশ্রেণির সর্বাধিক এ খাতটি নিয়ে তেমন কোন আলোচনা দেখা যায় না। উপরন্তু কৃষি শ্রমিকদের নেই কোন সংগঠন, সমিতি বা কারখানার শ্রমিকদের মতো ট্রেড ইউনিয়ন। আর তাই তাদের মৌলিক মানবিক ও সামাজিক অধিকার, সুযোগ-সুবিধা এবং নানাবিদও সমস্যা থেকে যায় অতল অন্ধকারে।

বলা হয়ে থাকে কৃষিই কৃষ্টির মূল আর সেই কৃষ্টি বিনির্মাণের মূল কারিগর হলো কৃষক। প্রত্যেক কৃষকই এক একজন কৃষি শ্রমিক। সে অর্থে দেশের সংখ্যগরিষ্ঠ শ্রমিকশ্রেণি হলো কৃষি শ্রমিক। এই কৃষি শ্রমিকদের অর্ধেকই হলো আবার নারী কৃষি শ্রমিক। যেখানে কৃষি শ্রমিকদেরকে শ্রমিকশ্রেণির অংশই মনে করা হয় না সেখানে নারী কৃষি শ্রমিক যারা ফসল রোপণ-বপণ, পরিচর্যা এবং ফসল সংগ্রহোত্তর কার্যক্রমের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত তাদের অবস্থান কোথায় তা সহজেই বোধগম্য। বিগত জাতীয় কৃষি শুমারিগুলোর রিপোর্টে দেখা যায়, দেশে কৃষিখামারের সংখ্যা ও আয়তন উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। বেড়েছে ভূমিহীন ও বর্গাচাষির সংখ্যা।

গ্রামে বর্গাচাষির সংখ্যা বেড়ে যাওয়া ও কৃষিখামারের আয়তন কমে যাওয়া কৃষি-অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক কিছু নয়। দ্রুত নগরায়ণ ও গ্রামে ভূমিহীনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় শহরেও ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। উচ্চ মূল্যের কৃষি উপকরণ, কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, কৃষিতে মধ্যস্বত্ত্বভোগী ও মহাজনের দৌরাত্ম্য, কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, নতুন প্রযুক্তির সাথে কৃষকরা খাপ খাওয়াতে না পারা প্রভৃতি কারণে স্বাধীনতা উত্তর সময়ে ক্রমান্বয়ে প্রান্তিক কৃষকরা ভূমিহীন জনগোষ্ঠীতে পরিণত হচ্ছে। বর্তমানে এদের অবস্থা হয় বর্গাচাষি বা কৃষি দিনমজুর কিংবা নগর শ্রমিক।

খুলনা বিভাগে জমিতে লবাণাক্ততা ও ও রাজশাহী বিভাগে খরা ও পানি স্বল্পতার কারণে অনেক জমি কৃষিকাজের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। ফলে বেকার হয়ে পড়ছে কৃষি শ্রমিক। এছাড়াও দেশে কৃষি শ্রমিকদের সারাবছর নিরবিচ্ছিন্ন কাজ থাকে না। তাই তারা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। এজন্য আমরা লক্ষ্য করি ধান কাটার মৌসুমে পর্যাপ্ত কৃষি শ্রমিক পাওয়া যায় না।

কৃষিতে শ্রম দিয়ে যারা জীবিকা অর্জন করে তাদেরকে কৃষি শ্রমিক বলা হয়। নানাবিধ কারণে কৃষিতে শ্রমশক্তি ক্রমহ্রাসমান। ২০০০ সালে দেশের মোট শ্রমশক্তির মধ্যে ৬০ শতাংশ ছিলো কৃষি শ্রমিক। সেটি কমে বর্তমানে ৩৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০৫০ সাল নাগাদ তা ২০ শতাংশে ঠেকতে পারে। মূলত কৃষি শ্রম খাতে অবহেলার কারণে দেশে কৃষিশ্রমিকের হার দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। কৃষি খাতে ভর্তুকি, প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রণোদনা, কৃষিঋণ, বিনামূল্যে এবং ভর্তুকিমূল্যে উচ্চফলনশীল বীজ সরবরাহ, সারসহ কৃষি উপকরণে উন্নয়ন সহায়তা প্রদান ইত্যাদির প্রচলন থাকলেও কৃষক যখন মাঠে কাজ করবেন তখন তার স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা তথা মানসিক প্রশান্তির জন্য কোনো অবকাঠামোগত সুবিধা নেই। প্রখর রোধে তারা কাজ করলেও বিশ্রাম নেয়ার কোন জায়গা নেই। কৃষককে মাঠে-ঘাটের নোংরা কাদামাটির ওপর বসেই খাবার খেতে হয়।

কাছাকাছি কোনো নিরাপদ পানির উৎস না থাকায় অনিরাপদ পানি খেতে হয়। কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা না থাকায় উন্মুক্ত স্থানে প্রাকৃতিক কাজ সম্পন্ন করতে হয়, ফলে ফসল ও পরিবেশ দূষিত হয়। এতে কৃষি শ্রমিকদের স্বাস্থ্যহানিসহ কর্মক্ষমতা কমে যায়, যা আমাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধির প্রধান অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। সাম্প্রতিক সময়ে বর্ষাকালে প্রায়শই দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাঠে কাজ করার সময় বর্জ্রপাতে কৃষি শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। মাঠে বালাইনাশক স্প্রে করার পর তাদের পরিষ্কার পানি দিয়ে হাত মুখ ধোয়ার সুযোগও অনেক সময় থাকে না। এসব কারণে কৃষি শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। কৃষি শ্রমিকদের এ দুরবস্থা থেকে মুক্ত করার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। কৃষি শ্রমিকদের জীবন, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষায় বিশ্রামাগার নির্মাণ করা প্রয়োজন।

কৃষি শ্রমিক ও কৃষকদের স্বাস্থ্য নিয়ে দেশে তেমন কোন চিন্তা ভাবনা হয়নি। কখনো কখনো মন্ত্রীরা কৃষকদের জন্য হাসপাতাল করার ঘোষণা দিলেও বাস্তবে এসব পরিকল্পনা অধরাই থেকে যায়। এখনো শতকরা ৯৫ ভাগ কৃষিশ্রমিক নিজের রক্তের গ্রুপই জানেন না। কৃষিকাজ করতে গিয়ে পচা শামুক বা অন্য কিছুতে হাত-পা কাটলে কোনো সুরক্ষা নেন না। সেই কাটা হাত-পা নিয়েই তারা কাজ করেন। ফলে প্রায়ই সেই কাটা অংশে ইনফেকশন দেখা দেয়। পরবর্তীতে অনেক সময় তাদের হাত পা কেটে ফেলতে হয়। অথচ বহু অনুন্নত দেশের কৃষক ও কৃষি শ্রমিক গামবুট, গ্লাভস, হ্যাট, মাস্ক ব্যবহার করেন। সেখানে প্রত্যেক কৃষি শ্রমিকের ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ রয়েছে। অথচ আমাদের দেশের কৃষিতে এর কোন বালাই নেই। এ নিয়ে সরকারের কৃষি বিভাগ তেমন ভাবে না। চিন্তা নেই কৃষি উপকরণ বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর। আবার কৃষি শ্রমিকরা রোদে কিংবা বৃষ্টিতে কাজ করার কারণে তাদের নানাবিধ রোগব্যাধি লেগেই থাকে। বালাইনাশক এর সংস্পর্শে থাকায় কৃষি শ্রমিকদের অনেকেই চর্মরোগসহ দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন।

কারোরই দ্বিমত নেই, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো কৃষি। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশে প্রায় আড়াই কোটি কৃষিশ্রমিক রয়েছেন। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ খাতে নিয়োজিত শ্রমিকদের যথাযথ স্বীকৃতি নেই। শ্রম আইনে শ্রমিকের সংজ্ঞায় কৃষিশ্রম অন্তর্ভুক্ত হলেও ব্যবস্থা নেই কৃষিখাতে নূন্যতম মজুরি নির্ধারণের। ফলে এ খাতে নিয়োজিত শ্রমিকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হন। তেমনই তারা বঞ্চিত প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকেও। যারা চিরকালই বঞ্চিত হয়ে আসছে। এদের নিয়ে ভাবা প্রয়োজন, কৃষি ও দেশের স্বার্থে। দেশের ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি-কৃষক-কৃষি শ্রমিক সবার কথা ভাবতে হবে।

প্রত্যেক কৃষকই এক একজন কৃষি শ্রমিক। নানাবিধ কারণে দেশের এই কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান। দেশের খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে যা বেশ উদ্বেগজনক। এই প্রেক্ষিতে কৃষকদের নানাবিধ অধিকারসমূহের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হওয়া জরুরি। যেমন- মানুষের মৌলিক অধিকারসমূহ নিশ্চিতকরণে কৃষকদের অগ্রাধিকার প্রদান করা। কৃষি শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষায় বিশ্রামাগার নির্মাণ করা। কৃষকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে বিনামূল্যে ইউনিয়নভিত্তিক স্যাটেলাইট ক্লিনিক গড়ে তোলা। প্রতিটি গ্রামে কৃষক ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে সেখানে তাদের বিনোদনের ব্যবস্থা করা। ন্যায্যমূল্যে কৃষকদের নিকট মানসম্মত বীজ, সার, কীটনাশক ও সেচের ব্যাবস্থা করা। ফসল মৌসুমে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা। সুদখোর মহাজনের হাত থেকে কৃষকদের রক্ষা করা। ফড়িয়া ও দালালদের হাত থেকে কৃষকদের সুরক্ষা প্রদান করা। কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা। অমৌসুমে কৃষকদের জন্য বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করা। খাসজমিসমূহ ভূমিহীন কৃষকদের মাঝে বণ্টন করে তাদেরকে পুনরায় কৃষিকাজে ফিরিয়ে নেয়া। কৃষকদের ক্ষমতায়নের জন্য কৃষক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা। জলবায়ু পরিবর্তন সহ যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকদের সুরক্ষা প্রদান করা। কৃষক ও কৃষি শ্রমিকদের এসব সুযোগ সুবিধা ও অধিকার নিয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। তা না হলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।

দুনিয়াজুড়ে শিল্প বিকাশের সাথে সাথে মন্দ হাওয়া বইছে কৃষিভূমিতে। প্রান্তিক পর্যায়ের কর্ষণজীবীরা পরাজিত হচ্ছে আকর্ষণজীবীদের কাছে। নগরের আলো ঢেকে দিচ্ছে গ্রামীণ কৃষি জীবনের প্রাণবন্ত প্রবাহ। জগতের কৃষি উন্নতির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় প্রতিনিয়ত পিছিয়ে পড়ছি আমরা। যোগাযোগ, শিক্ষা এবং নগরব্যবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে সরাসরি কৃষিকাজে নিয়োজিত থাকার মতো লোকবল কমে আসছে, বাড়ছে নগরমুখিতা, আলস্য আর বিদেশযাত্রার বিপুল প্রবণতা। একইসাথে বাড়ছে কৃষির সাথে ব্যক্তিগত সম্পৃক্তির অনাগ্রহ। মানুষের জীবন যেখানে অনেকাংশে এবং অনিবার্যভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল, সেই কৃষক ও কৃষিকে উপেক্ষা করে, তার সাথে সংশিলষ্ট ব্যক্তিবর্গকে অসম্মান করে জাতীয় অগ্রগতি আশা করাটা বোকামি। এক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের ক্ষুদ্র একটি দেশ আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। প্রতিদিন প্রায় সতের কোটি মানুষের খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করছে এদেশের কৃষক সমাজ। কিন্তু তাদের নেই কোন নির্ধারিত কর্মঘণ্টা বা নেই কোন নূন্যতম মজুরি। তারপরও ফসল মৌসুমে উদয়-অস্ত পরিশ্রম করে এরাই সচল রাখছে দেশের অর্থনীতির চাকা। তাই কৃষকদের অধিকার নিয়ে ভাবতে হবে আমাদের সবাইকে। খাদ্যে নিরবিচ্ছিন্ন স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও দীর্ঘমেয়াদী খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষিশ্রমিক তথা কৃষকদের ক্ষমতায়নের কোন বিকল্প নেই।

লেখক: অধ্যাপক, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগ; শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

   

রাঙ্গাবালী উপজেলায় সেই তিন প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলায় ত্রাণ বিতরণ কালে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়রম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের প্রার্থীর পক্ষে ত্রান প্রতিমন্ত্রী প্রকাশ্য ভোট দেওয়ায় আহব্বান জানানোর কারণে শুনানি শেষে তিন জনের প্রার্থীতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

রোববার (২ জুন) বিকেলে শুনানি শেষে এই নিশ্চিত করেছে ইসি অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।

এর আগে এই ঘটনায় বিকেল তিনটায় ত্রাণ ও দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান এমপি সশীরের এসে নির্বাচন কমিশনের কাছে এসে ভোট প্রকাশ্য ভোট চাওয়ার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পরবর্তীতে অভিযুক্ত তিন প্রার্থীর শুনানি হয়। শুনানি শেষে তাদের প্রার্থীতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন ইসি।

তারা হলেন, চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মো. সাইদুজ্জামান মামুন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রওশন মৃধা ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বেগম ফেরদৌসী।

এর আগে, গত ৩১ মে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে প্রতিমন্ত্রীকে শোকজ করে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া ঘাট নামক স্থানে এবং চালতাবুনিয়া ইউনিয়নের চালতাবুনিয়া বাজারে ত্রান বিতরণের সময় প্রতিমন্ত্রী প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। যা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এই কার্যক্রম উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর লঙ্ঘন।

সেজন্য আচরণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে কেন দোষী সাব্যস্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে বিষয়ে আজ নির্বাচন কমিশনে (কক্ষ নং-৩১৪, নির্বাচন ভবন, আগারগাঁও, ঢাকা) ব্যক্তিগতভাবে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য চিঠিতে বলা হয়েছিল।

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’

;

রাউজানে বাসের ধাক্কায় বাইক আরোহী তরুণের মৃত্যু



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামের রাউজানে বাসের ধাক্কায় বাইক আরোহী মো. ইমন (২১) নামে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ইমন রাউজান উপজেলার পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মগদাই গ্রামের মনসুর আলীর বাড়ির জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে।

এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও একজন। আহত সামির ওই এলাকার মো. মুসার ছেলে।

রোববার (২ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টায় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের বাগোয়ান ইউনিয়নের ধরেরটেক গঙ্গা মন্দিরের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুই যুবক মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়া পথে যাত্রীবাহী বাস হানিফ পরিববণ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চলন্ত বাসের নিচে চাপা পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে একজন নিহত হয়। পরে দুইজনকে উদ্ধার করে নোয়াপাড়া পাইওনিয়ার হাসপাতালে পাঠান হলে সেখানে চিকিৎসক ইমনকে মৃত ঘোষণা করেন।

পূর্বগুজরা পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফ বলেন, হানিফ পরিববণের সাথে মোটরসাইক দুর্ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে, অপরজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীর রয়েছে। আমরা ঘটনাস্থল থেকে বাস ও মোটরসাইকেল জব্দ করেছি। বাসের চালক পালাতক। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’

;

যশোরে পুলিশ হেফাজতে নারীর মৃত্যু, পরিবারের দাবি হত্যা



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, যশোর
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

যশোরের অভয়নগরে পুলিশ হেফাজতে আফরোজা বেগম নামে এক নারীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

রোববার (২ জুন) অভয়নগরের নওয়াপাড়ায় এ ঘটনাটি ঘটে। তিনি ওই এলাকার জলিল মোল্লার স্ত্রী।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাতে ১৫ পিস ইয়াবাসহ আটক হয় আফরোজা বেগম। পরে পুলিশ হেফাজতে সকালে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই নারীকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের ছেলে সাব্বির হোসেন জানান, শনিবার রাতে পুলিশের কয়েকজন সদস্য তাদের বাড়িতে এসে আফরোজা বেগমের কাছে ইয়াবা আছে এমন সন্দেহে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন । কিন্তু আফরোজা বেগম বিষয়টি অস্বীকার করলে তাকে ঘরের ভেতরে নিয়ে যেয়ে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। এক পর্যায়ে কোন মাদকদ্রব্য না পাওয়া গেলে সিলিং ফ্যানের সাথে চুল বেধে বেধরক মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে নিহতের স্বামী জলিল মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, আমার বউ সম্পূর্ণ নির্দোষ । পুলিশ আমার বাড়িতে এসে মিথ্যা অভিযানের নামে আমার সর্বোস্ব লুট করে নিয়ে গেছে। আমার স্ত্রীকে পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমি এই হত্যার বিচার চাই ।

যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হারুন অর রশীদ বলেন, পুলিশ একজন নারীকে আটক করার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমেলক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে যশোর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে পুলিশ। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই নারীকে পরিক্ষা করে মৃত অবস্থায় পায়।

তিনি আরও বলেন, মৃত্যুর আগে ওই নারীর রক্তচাপের মাত্রা ছিলো ২২০/১১০। যা স্বাভাবিক রক্তচাপের থেকে অনেক বেশী। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।

এবিষয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’

;

ঘূর্ণিঝড় রিমালে বন্ধ ২০ উপজেলা নির্বাচনে প্রচারের নির্দেশ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঘূর্ণিঝড় রিমালে স্থগিত থাকা ২০ উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারণায় সুযোগ দিতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান সকল জেলা প্রশাসকসহ রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছেন।

নির্দেশনায় বলা হয়, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের ৯ জুন অনুষ্ঠেয় নিয়ে ২০ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আইন ও বিধি মোতাবেক নির্বাচনে প্রচারণার সুযোগ দিতে মাননীয় নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এই ২০ উপজেলায় প্রচারণার সুযোগ দিতে নির্দেশনা দিয়েছে আউয়াল কমিশন।

যে ২০ উপজেলায় ভোট হবে- বাগেরহাটের শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, খুলনা জেলার কয়রা, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, পটুয়াখালী সদর, দুমকী, মির্জাগঞ্জ, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, ভোলার তজুমদ্দিন, লালমোহন, ঝালকাঠির রাজাপুর ও কাঠালিয়া, বরগুনার বামনা ও পাথরঘাটা, রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলা এবং নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুরী।

যেসব উপজেলায় নির্বাচনে স্থগিত হয়েছে সেগুলো হলো- বাগেরহাটের শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ ও মোংলা; খুলনার কয়রা, পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া; বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া; পটুয়াখালীর সদর উপজেলা, মির্জাগঞ্জ ও দুমকী; পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া; ভোলার তজুমুদ্দিন ও লালমোহন; ঝালকাঠির রাজাপুর ও কাঠালিয়া; বরগুনার বামনা ও পাথরঘাটা এবং রাঙামাটির বাঘাইছড়ি।

এর আগে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে প্রথমে ১৯টি এবং পরে আরও তিনটিসহ মোট ২২টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত করে ইসি। এই ২২ উপজেলার মধ্যে দুই উপজেলার ভোট আগামী ৫ জুন চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত হবে এবং বাকি ২০ উপজেলার ভোট ৯ জুন অনুষ্ঠিত হবে।

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’

;