তারা ভাবার্থহীন চোখ দিয়া আমারে দেখতে থাকে

  • সানজিদা আমীর ইনিসী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

গহন

আমি ঝড়ের মতো অসুস্থতা বুকে ধইরা রাখব
কখনো আলাদা হব না অস্থিময় ব্যথা থিকা
সতীচ্ছদ ছিঁড়লে প্রাচীন মঞ্চের মানুষেরা উইঠা আসতে থাকবে
আমারে দেখতে চাইবে সেইসব হারাইয়া যাওয়া শতকের গৃহস্থ ধর্ম করা নারীর মতো—
নরম-স্থিরতায় মোড়া

বিজ্ঞাপন

তারা ভাবার্থহীন চোখ দিয়া আমারে দেখতে থাকে

শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির মতো অর্ধচন্দ্রাকার হৃদয়ে আমি শিল্প পুষি
কালবৈশাখী লণ্ডভণ্ড কইরা দিলেও আমি তাদের হারাইয়া যাওয়া সভ্যতা আর
এখনকার সৌম্য-শিল্প
তারা শিল্প বোঝে না
তারা আমার অসুস্থতা জানে না

বিজ্ঞাপন

আমি চিরকাল একটুকু শ্বাস নেবার জন্য হাহাকার করতে চাই
আমি তোমারে জঞ্জাল থিকা ঝড়ে পরিণত করতে চাই
মানুষের আয়ু—এত অল্প—নম্রতায় এক আয়ু বৃথা যাইতে থাকে

আমাদের হাতে অঙ্ক একরাশ
সিদ্ধ হওয়া কোনো মন্ত্রতে তা ভবিষ্যত আয়ু হইয়া আসতে থাকবে না মহাকাল পর্যন্ত
রন্ধ্রে রন্ধ্রে তাই চাই নৈপুণ্যের ঝড় তোমারে কবলিত করুক

আমার অসৃকে প্রবাহমান প্রেম—
এক আয়ু অব্যর্থ কাটাইয়া দেওয়ার এই একমাত্র পন্থা
সন্ত-সন্ন্যাসীরা যা এখনো খুঁইজা যাইতেছে।

উপশম

জখম হইয়া আমার কাছে আইসো না
বা মনে মনে ভাবতে থাইকো না পৃথিবীর কোথাও আমি আছি—
ছুইটা আইসা
জড়ায়ে ধরলেই তৎক্ষণাৎ নির্বাসিত হইবে তোমার সমস্ত যন্ত্রণা

আমার পা ভেদ কইরা শেকড়েরা চইলা গেছে মাটির গভীরে
শেকড় আছে বইলা—
আমারে গাছ ভাইবো না
গাছ হইলে তোমার শরীরে হাত বুলাইতাম
আমি মূলত পাথর
তোমার বাঁইচা থাকাকালীন জখম-ব্যথা আমারে উদ্বিগ্ন করবে না
এত অল্প ব্যথা আমি বুঝতে পারি না

আমি অনুভব করি প্রলয়—
আমার ভেতর যখন হয়
আমার ইদানীং খুব মনে হয়
অধিক ব্যথায় সবকিছু বুইঝা ওঠার আগে একদিন চূর্ণ-বিচূর্ণ হব
তোমার মৃত্যুসংবাদে।

মধ্যরাত্তির

মধ্যরাত্তিরে
পাশের বাড়ি থিকা কুকুরের ডাক ভাইসা আসলে
আমার ঘুম ভাইঙ্গা যায়
যেন দূরে সইরা যাইতেছো মনে কইরা
আরো জাপটাইয়া ধইরা শুই
আমার শরীরের ভাষা কি তোমার শরীরে মুদ্রিত হয় না তখন?
দুই অক্ষর
এক অক্ষর
বা তার চেয়েও কম?

মৃৎ-কিরণ

তোমার থিকা খইসা পড়ার সম্ভাবনায় ভীত আমি—
মাছের ব্যাঞ্জন ছাইড়া পালা কইরা ছুটি নিয়া দিনাতিপাত করছি মেছোহাটায়
পিউরি রঙের বাসনের খাবারে আঁশটে গন্ধহীন রাত চইলা গেছে
তোমার জিম্মায় অমন ধীরস্থিরভাবে খাবার চাওয়ার ভাষা আমার ছিল না

তোমার উপনিবেশে দেশদ্রোহী হওয়ার বাসনায়
একের পর এক পথে আমি তখন সময়রে পয়মন্ত ভাইবা হাঁটতাম
পথ বাঁকলে হঠাৎ পা’র আঙুল কাচুমাচু হইয়া যাইত
ভাবতাম—যুদ্ধ না
আমি বরং সুরতিতে বেহদ্দ সব সুখ জিতা যাই
তারপর মুঠো মুঠো এত সুখ বিনিময়ে যেন পৃথিবীর সব আঙ্গিক পরিবর্তন
আমাদের দৃষ্টির অগোচরে হইয়া যায়

তোমার ক্ষয়িষ্ণু ক্ষমতা নিলামে উঠুক
সব শাসনরে খারিজ কইরা এইবার তুমি ক্ষীণ হও
এতসব যুদ্ধ থিকা বিচ্ছিন্ন হইয়া তোমার পুরী গাঢ় হইয়া আসুক এই বাঁকে
তোমার প্রতাপ গচ্ছিত রাইখা ফিরায়া নেব সহসা কিছু কিরণ।

সমুদ্র-হাবেলী

আঁটসাঁট ঘেরাও জামাকাপড় শরীর কামড়ে ধরলে
পা’র পাতা থেকে শন-মতো চুল
নিয়ম আত্মস্থ করে-করে অবশ হইয়া যায়

ধুমধাম আমি আমারে পার কইরা যাই
বাকি কয়েকজন, এরাও ঘেরাও কইরা আছে আমাকে
তাদের মতো কনভেনশনাল কেউ হইয়া উঠতে থাকি আমি।
মনে পড়ে—একটা স্বপ্ন কয়েক রাতে
আমি একা একা ভাবছিলাম আর
দেখার চেষ্টা করছিলাম

আমার আর কিছুই নাই
অশান্তি-শান্তি
উদ্বিগ্নতা-অস্থিরতা
কয়েকটা সমুদ্র একসঙ্গে মিইশা গিয়া
বড় না, বরং
ছোট একটা সমুদ্র হইয়া আছে
বৈরিতা নাই
ব্যস্ততা নাই
আমার ঘর নাই
ঘর বানানোর কাজ মুলতবি রাইখা
সমুদ্র সাম-রাজ্যে বইসা থাকি
ঘুমাইয়া কাঁদি
যখন
দিনে একবার আলোরা বাঁকা হইয়া ঝিমায়

পৃথিবীতে না-থাকা আর থাকা দুইটাকেই খোশ বইলা জানায় সমুদ্র
আমি তারে বিশ্বাস করি
কত বেলাবসান হয়
আহ্বান নাই
ঘর নাই
শান্তি বা অশান্তিও নাই।