শেখ হাসিনার পেনাল্টি মিস হবে না



এরশাদুল আলম প্রিন্স, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি ও গণতান্ত্রিক বাম জোটের নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম-ছবি: শাহরিয়ার তামিম।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি ও গণতান্ত্রিক বাম জোটের নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম-ছবি: শাহরিয়ার তামিম।

  • Font increase
  • Font Decrease

সবচেয়ে বড় বাণিজ্য হলো এমপিগিরি

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমার নেতৃত্বেই প্রথম মিছিল হয়েছিল

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রথম প্রতিবাদ করেছিলাম আমি

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকির সরকার চাই


মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি ও গণতান্ত্রিক বাম জোটের অন্যতম নেতা। তুখোড় ছাত্রনেতা ও ডাকসুর সাবেক সভাপতি। দেশের সাম্প্রতিক রাজনীতি, নির্বাচন, ছাত্র রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী রাজনৈতিক উত্থান পতনের ইতিহাসের নানা দিক নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হয়েছিলেন ‘বার্তা২৪’ এর।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এরশাদুল আলম প্রিন্স।

বার্তা: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টির প্রস্তুতি ও ভাবনা সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: সত্য কথা বলতে দেশ আজ নানা দিক থেকে গভীর সংকটে। হয়তো রাজনৈতিক সংকটটা দৃশ্যমান বেশি এবং মানুষ এটা নিয়ে বেশি আলোচনা করে। কিন্তু আমি যখন সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলি, তখন দেখি, তারা নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করে বটে, কিন্তু তারা আরও বেশি চিন্তিত তাদের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে। গার্মেন্টসের শ্রমিকদের দাবি, তাদের ন্যূনতম মজুরি হতে হবে ১৬ হাজার টাকা। কিন্তু সরকারি ঘোষণা দেয়া হলো এর অর্ধেক। যদি ন্যূনতম প্রয়োজনের অর্ধেক মজুরি দেয়া হয়, তাহলে সরকারি সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনও যা পায় তার অর্ধেক হওয়া উচিত?

দেশের উন্নয়ন ও জিডিপি অনেক দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে-এ রকম একটি হিসাব আমাদের সামনে তুলে ধরা হয়, কিন্তু আমাদের মোট সম্পদ বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু সেই সঙ্গে বৈষম্যের হার বাড়া এ কথাই প্রমাণ করে যে এ সম্পদ সবার মধ্যে সমবন্টন হচ্ছে না। আমরা দেখতে পাচ্ছি, অর্থনীতির মধ্যে লুটপাটের ধারা বহুদিন ধরেই চলছে। এর একটি অশুভ প্রভাব আমাদের অর্থনীতি, সমাজ এমনকি রাজনীতির ভেতরেও অনুপ্রবেশ করেছে। রাজনীতিতেও এখন সবকিছু কেনা-বেচা ও লেনদেনের বিষয় হয়ে গেছে। নমিনেশন বাণিজ্য, ভোট বাণিজ্য, সিট বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, অবসর বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য। কোথায় বাণিজ্য নেই?

আর সবচেয়ে বড় বাণিজ্য হলো ‘এমপিগিরি’। আমাদের রাজনীতি বাণিজ্যিকীকরণ ও দুর্বৃত্তায়ন দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়েছে।

আমাদের ফিরে যেতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। আমাদের বামপন্থিদের ভিশন হলো- ভিশন মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১।

ইলেকশন নিয়ে আমরা আইয়ুব খানের আমল থেকেই সংগ্রাম করেছি। ‘এক লোক, এক ভোট’, ‘সার্বজনীন ভোটাধিকার দিতে হবে, দিতে হবে’। সে ভোট আদায় হলো, ভোটে জনগণ রায় দিলো। কিন্তু ভোটের সেই রায় কার্যকর করতে না দেওয়ায় আমাদের অস্ত্র হাতে সংগ্রাম করে রায় কার্যকর করতে হলো।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Sep/25/1537858657948.jpg

বার্তা : রাজনীতির এ বাণিজ্যিকীকরণ কীভাবে হলো?

মুজাহিদুল: মুক্তিযুদ্ধের যে চিন্তা ও ধারা ছিল সেখান থেকে দেশকে সম্পূর্ণ উল্টো দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পুঁজিবাদি লুটেরা ধনিক শ্রেণি এখন ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। যখন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা দেশ স্বাধীন করলাম এবং তিনি সরকার গঠন করলেন, তারপর থেকেই অবস্থা পরিবর্তন হতে থাকে। তার আগে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিতো মধ্যবিত্ত শ্রেণি। দলটির নেতৃত্ব এখন মধ্যবিত্তের হাতে নেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা এখন সম্পদ আহরণের উৎস হয়ে গেছে। আর বিএনপির জন্মই হয়েছে লুটেরা ধনিক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষার জন্য।

বার্তা : সুষ্ঠু নির্বাচনের ধারাবাহিকতা আমরা কেন ধরে রাখতে পারলাম না?

মুজাহিদুল: জনগণ চাক বা না চাক যে কোনও ভাবেই ক্ষমতায় যাওয়ার মানসিকতাই সুষ্ঠু নির্বাচনের ধারাবাহিকতা নষ্ট করেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে নীতি-মতাদর্শগত বিরোধ নেই সেটা আমি বলবো না। তবে মূল বিরোধ হলো লুটপাটের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব।

বার্তা : সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঐক্য প্রক্রিয়াকে কীভাবে দেখছেন?

মুজাহিদুল: সম্প্রতি যে ঐক্য হয়েছে তা আসলে বিদ্যমান দ্বিদলীয় কাঠামোর মধ্যেই ঘোরপাক খাচ্ছে। এর মাধ্যমে বরং আসল বিকল্পের সংগ্রামটিকে দুর্বল করা হচ্ছে। আমরা বামপন্থীরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে গিয়ে বিকল্প শক্তি গড়তে চাই। সে লক্ষ নিয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। আর নতুন ঐক্য প্রক্রিয়াটি এখনো প্রসেসে। বিএনপি ও বিএনপির সঙ্গে যে ২০ দল তাদের সঙ্গে নিয়ে একটি সরকারবিরোধী জোট গঠন করা হচ্ছে। সেটা তারা করুক। কিন্তু আমরা মনে করি, এক দু:শাসন নামিয়ে আরেক দু:শাসন ক্ষমতায় বসিয়ে আসল সমস্যার সমাধান হবে না। ফুটন্ত কড়াই থেকে বাঁচতে জ্বলন্ত চুলায় ঝাপ দিলে কোনো কাজ হবে না। বিপদ সরিয়ে আপদ আনলে কাজ হবে না। আমাদের মু্ক্তিযুদ্ধের ধারায় অগ্রসর হতে হবে।  

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Sep/25/1537858673584.jpg

বার্তা : আওয়ামী লীগতো মুক্তিযু্দ্ধের পক্ষের শক্তি। তাদের সাথে ঐক্য করার কথা ভাবছেন কি?

মুজাহিদুল: আওয়ামী লীগের ইতিহাসে অনেক উত্থান-পতন। একসময় ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ছিল। যখন সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্ব নিলেন তখন দলটি ডানপন্থী হয়ে গেলো। আবার বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এটি ধীরে ধীরে মধ্য-বামপন্থী ধারায় আসলো। সেখান থেকে আবার ডান ও মধ্য-ডান অবস্থাতে ফিরে এসেছে।

মোশতাক বঙ্গবন্ধুকে পরামর্শ দিয়েছিল সমাজতন্ত্র বাদ দিয়ে পুঁজিবাদের পথ ধরতে, ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে বাজার অর্থনীতির পথ ধরতে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু মোশতাকের কথা শোনেননি। মোশতাকের পরামর্শ ছিল সমাজতন্ত্র বাদ দিয়ে বাজার অর্থনীতি চালু করা। আমি সবিনয়ে আওয়ামী লীগের কাছে জিজ্ঞেস করতে চাই, আওয়ামী লীগ এখন বঙ্গবন্ধুর নীতিতে চলছে না মোশতাকের নীতিতে? বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আমার নেতৃত্বে প্রথম মিছিল হয়েছিল। প্রথম প্রতিবাদ করেছিলাম আমি। অনেক নেতাই সেদিন মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিল। এরপর সামরিক শাসনের মাধ্যমে দেশ মুক্তিযুদ্ধের ধারা থেকে সরে গেলো। এরপর আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের মূল ধারায় দেশকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়নি। ধর্ম নিরপেক্ষতায় প্রত্যাবর্তন করতে পারেনি। জামায়াতে ইসলামকে এখনও নিষিদ্ধ করা হয়নি। এসব নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি খেলা করছে।

অনেকে আমাদের বলে, আপনারা কি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে সমদূরত্বের নীতিতে চলেন? না, আমরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে দূরত্ব মেপে আমাদের দলের নীতি ঠিক করি না। তারাই আমাদের থেকে দূরত্ব মেপে নীতি ঠিক করে। কাজেই কাছে আসার সুযোগ কম। কারণ, আওয়ামী লীগের শ্রেণি চরিত্র বদলে গেছে। আগে ছিল মধ্যবিত্তের নেৃতৃত্বে পরিচালিত দল, এখন হয়েছে লুটেরা ধনিক শ্রেণি দ্বারা পরিচালিত দল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শুধু মুখে বললে হবে না। গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা মানতে হবে।

বার্তা : নির্বাচনকালীন সরকারের কোনো ফর্মুলা কি আপনাদের আছে?

মুজাহিদুল: আমরা এরশাদের বিরুদ্ধে যখন লড়াই করি, তখন তিন জোটের রূপরেখা প্রণিত হয়। সেটা ড্রাফট করার দায়িত্ব আমরা ওপরই ছিল। প্রথম ড্রাফটে  বলেছিলাম যে আগামী তিনটা নির্বাচন তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করতে হবে।  শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া- দুজনেই এতে আপত্তি করলেন। তাই ওটা রাখা হয়নি। আমরা চেয়েছিলাম নির্বাচনের ওপর মানুষের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু এখন পর্যন্তও মানুষ বিশ্বাস করে, দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না।

সরকার থেকে বলা হলো, অক্টোবরের মাঝামাঝি নির্বাচনকালী সরকার গঠন করা হবে। কিন্তু সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকার বলতে কিছু আছে কি? নাই। সরকার বলছে, নির্বাচনকালীন সরকারের কাজ হবে ‘রুটিন কাজ’। কিন্তু সংবিধানে ‘রুটিন কাজ’ বলে কিছু নেই। সরকার বলছে, শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে। কিন্তু সংবিধানে আছে নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। তাই সব কিছুই একটা প্রহসন। আমি এটাকে বলি ঐন্দ্রজালিক প্রহসন। আমরা নিরপেক্ষ তদারকির সরকার চাই। আজ্ঞাবহ কমিশনকে সরিয়ে দিতে হবে। সংসদ বহাল রেখে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনেক জটিলতা সৃষ্টি করবে। আমরা বলেছি, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা চালু করতে হবে। যে দল যতো শতাংশ ভোট পাবে ততো শতাংশ সিট পাবে। না ভোট দেয়ার সুযোগ দিতে হবে। নির্বাচনে সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। নির্বাচনের খরচ রাষ্ট্র চালাবে। নির্বাচন কমিশন সব তদারকি করবে। সব সরকারি খরচে হবে। প্রজেকসন মিটিং হবে। সেখানে প্রার্থীরা কথা বলবেন। অনেক দেশেই এ সিস্টেম আছে।

বার্তা: ইভিএম নিয়ে আপনাদের অবস্থান কী?

মুজাহিদুল: নাসিম সাহেব কয়েকদিন আগে বলেছেন, মেসি-রোনাল্ডো পেনাল্টি মিস করতে পারে, কিন্তু শেখ হাসিনার পেনাল্টি মিস হবে না। পেনাল্টি যাতে মিস না হয়, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। শোনা যায়-এটা অনুসন্ধান করে দেখতে হবে-সংসদে আইন পাস হওয়ার আগেই ও নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেই চার হাজার টাকার ইভিএম কেনার জন্য এলসি খুলে দেয়া হয়েছে। কে এই এলসি খুললো? এখানে কি কি লেনদেন হয়েছে? এসব যোগসূত্র খুঁজে দেখতে হবে। এসব ইঞ্জিনিয়ারিং কলাকৌশল থেকে বের হতে হবে। সামরিক শাসনের সময়ও এসব কলা কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে। 

বার্তা: আপনি তুখোড় ছাত্রনেতা ও ডাকসুর সভাপতি ছিলেন। ছাত্র রাজনীতির ইতিবাচক পরিবর্তন কীভাবে আসতে পারে?

মুজাহিদুল: ছাত্র রাজনীতি আসলে অবদমিত। ছাত্র রাজনীতি হচ্ছে যেটা আমরা গণজাগরণ মঞ্চে দেখেছি, যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ হয়েছে সেখানে এবং সাম্প্রতিক নিরাপদ সড়কের জন্য কিশোর বিদ্রোহও এর উদাহরণ। কিন্তু সাধারণ ছাত্রদের এ জাগরণকে দমন করে রেখেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে দখল করে রাখা এক ধরনের মাস্তান ও ক্যাডার বাহিনী। মিছিল না করলে, নেতার পেছন পেছন না ঘুরলে হলে সিট দেয়া হবে না-এসব চলছে। ছাত্র রাজনীতির নামে টেন্ডারবাজি-চাদাবাজি, লোকজনকে ধরে নিয়ে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে। যদি ছাত্র নির্বাচন হয় তবেতো এসব হবে না। তাই নির্বাচনও হচ্ছে না। এর সাথে যুক্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটা অশুভ অংশ। দু:খের বিষয় শিক্ষকদের একটা অংশও এর সাথে জড়িয়ে পড়েছে। দেশে সব নির্বাচন হচ্ছে, কিন্তু ছাত্র নির্বাচন হচ্ছে না। ছাত্রসংসদের জন্য ফি দিতে হচ্চে ছাত্রদের। কিন্তু ছাত্রসংসদ নেই। সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নেই ২৮ বছর। অথচ, দরকার বছর বছর নির্বাচন। কিন্তু সেটি হচ্ছে না।

বার্তা: জনগণের উদ্দেশ্যে বিশেষ বক্তব্য আছে কি?

মুজাহিদুল: আমি বলতে চাই, দেশকে আমাদের স্বপ্নের মতো করে, মনের মতো করে গড়ে তুলতে হলে অনেক কিছু করতে হবে। আমি সবিনয়ে  দর্শকদের বলতে চাই-মনে রাখবেন জমি বর্গা দেয়া যায়, কিন্তু স্বার্থ কখনো বর্গা দেয়া যায় না। যার যার স্বার্থ নিয়ে নিজে নিজের সংগঠন, সমিতি এগুলো গড়ে তুলুন। ‍কৃষকরা কৃষকের সংগঠন গড়ে তুলুন, শ্রমিকরা শ্রমিকের সংগঠন গড়ে তুলুন। ছাত্ররা ছাত্রদের। নিজেরা সক্রিয় হয়ে মাঠে নামেন। আপনার স্বার্থ আপনাকেই আদায় করে নিতে হবে। গ্যালারিতে বসে খেলা দেখলে হবে না। জনগণের প্রকৃত বিকল্প শক্তিকে চিহ্নিত করে তাদেরকে সামনে নিয়ে আসার জন্য ব্যবস্থা করেন। তাহলেই আমরা সবাই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে দেশ গড়তে পারবো।

বার্তা: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

মুজাহিদুল: বার্তা২৪ কেও অনেক ধন্যবাদ

 

   

‘স্বজন’ সংজ্ঞায় ধোঁয়াশা আওয়ামী লীগের



রুহুল আমিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেয়নি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। উপরন্তু বর্তমান মন্ত্রী-এমপিদের সন্তান ও স্বজনদের নির্বাচনে অংশ নিতে দিয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তবে ‘স্বজন’ বলতে কাদের বুঝানো হয়েছে সে বিষয়ে ধোঁয়াশা রেখে দিয়েছে দলটি।

এবার চার ধাপে দেশের মোট ৪৮১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন। সে লক্ষ্য ইতোমধ্যে প্রতিটি ধাপের নির্বাচনের জন্য পৃথক তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী ৮ মে অনুষ্ঠিত হবে প্রথম ধাপের নির্বাচন। যা শেষ হবে ৫ জুন চতুর্থ ধাপের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। তবে এরইমধ্যে প্রথম দফা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হলেও স্বজনদের অনেকেই মানেননি দলীয় নির্দেশনা।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী যে সব উপজেলায় মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদের তালিকা ইতোমধ্যে দপ্তরে পাঠিয়েছেন দায়িত্বশীল নেতারা । যেখানে ৫০ জনেরও অধিক স্বজনের নাম পেয়েছে কেন্দ্র। তবে নিষেধাজ্ঞা না মানা স্বজনদের নিয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি দলটি।

সূত্রটি জানায়, একটি প্রতিযোগিতামূলক, অংশগ্রহণমূলক ও প্রভাবমুক্ত একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষেই মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ফলে স্বজন সংজ্ঞায় যাই থাকুক, বর্তমান চেয়ারম্যান যারা পুনরায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাহিরে থাকছেন। এছাড়াও যারা সরাসরি রাজনীতির সাথে জড়িত ও রাজনৈতিক কারণেই নির্বাচনে লড়ছেন তাদের বিরুদ্ধেও নেওয়া হবে না কোন সাংগঠনিক ব্যবস্থা।

গত বুধবার (২৪ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে স্বজনদের কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হবে, এ-প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সেটা আমাদের উপর ছেড়ে দিন। আপনারা (সাংবাদিকরা) সব কিছু নির্ধারণ করলে আমরা পার্টি করতেছি কেন? এরপর আবারও অন্য আরেক সাংবাদিক একই প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আপনারা একটা সংজ্ঞা তো লিখে ফেলেছেন। না, আমি আর বলব না। আমাদেরটা আমাদের কাছে থাক; আমাদেরটা আমাদের কাছে আছে।

জানা যায়, প্রথম দফার ১৫২ উপজেলার নির্বাচনে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৬ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নির্দেশনা মেনে নিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন মাত্র ৩ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে আছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিব, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগারের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে সহিদুল ইসলাম ও নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী আয়েশা ফেরদৌস।

আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর কঠোর বার্তাকে উপেক্ষা করে এখনো যারা মাঠে আছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র। সূত্রটি জানায়, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে আগামী ৩০ এপ্রিলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা থেকে। দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার শোকজ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-এমপিদের দেওয়া হতে পারে চিঠি। প্রথম দফায় যারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন খোঁজ-খবর নেওয়া হবে তাদের বিষয়েও।

দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে এখনো মাঠে আছেন কয়েক ডজন প্রার্থী। চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বাচনি কার্যক্রম। তাদের মধ্যে আছেন নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার প্রার্থী আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরী। তার বাবা স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। তার মা কামরুন নাহার শিউলী কবিরহাট উপজেলার টানা তিনবারের চেয়ারম্যান। তিনি প্রার্থী হয়েছেন এবারও।

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী আয়েশা ফেরদাউস ও ছেলে আশিক আলী। বর্তমান চেয়ারম্যান এমপির ছোট ভাই মাহবুব মোর্শেদ লিটন। লিটন এবার ভাতিজাকে সমর্থন দিয়ে দাখিল করেননি মনোনয়ন।

মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খানের বড় ছেলে আসিবুর রহমান খান। এছাড়াও প্রার্থী হয়েছেন তার ছোট ভাই অ্যাডভোকেট ওবাইদুর রহমান খান ও চাচাতো ভাই পাভেলুর রহমান শফিক খান।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের এমপি মাহবুব-উল আলম হানিফের চাচাতো ভাই ও বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা। কুমিল্লার বরুয়ায় প্রার্থী হয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শ্যালক মো. হামিদ লতিফ ভূঁইয়া কামাল। তবে তার কোন দলীয় পদ-পদবি নেই। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরীর ছোট ভাই বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের ফুফাতো ভাই সাইদুর রহমান স্বপন, বরিশালের আগৈলঝাড়ায় এমপি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে আশিক আবদুল্লাহ, পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় এমপি মো. মকবুল হোসেনের ছেলে গোলাম হাসনায়েন রাসেল, পাবনার বেড়া উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন পাবনা-১ আসনের এমপি ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ছোট ভাই আব্দুল বাতেন ও ভাতিজা আব্দুল কাদের সবুজ।

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়নের ভগ্নীপতি বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ, তার মামা হুমায়ুন কবির পাটোয়ারী সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু এমপির ফুফাতো শ্যালক। তিনি আবারও প্রার্থী হয়েছেন। নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হক মুক্তির ভাগ্নি সোহেলী পারভিন নিরী। তিনি উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের এমপি আলী আজগার টগরের আপন ভাই বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আলী মুনছুর বাবু, চাচা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সহিদুল ইসলাম ও মো. আবু তালেবও জমা দিয়েছেন মনোনয়নপত্র। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচন করছেন বর্তমান সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ইসরাফিল হোসেন। তিনি মানিকগঞ্জ-৩ আসনের এমপি ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ফুফাতো ভাই। কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মো. মহব্বত আলী পুনরায় এ পদে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের শ্যালক।

পিরোজপুরের নাজিরপুরে উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন এস এম নূরে আলম সিদ্দিকী। তিনি পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিম এর ভাই। শরীয়তপুর সদর উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন শরীয়তপুর-১ আসনে এমপি ইকবাল হোসেন অপুর চাচাতো ভাই বিল্লাল হোসেন দিপু মিয়া। বোরহানউদ্দিন উপজেলার প্রার্থী আবুল কালাম সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভগ্নীপতি। ভোলার লালমোহনে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হোসেন রিমন ভোলা-৩ আসনের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের ফুফাতো ভাই। আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী নজরুল ইসলাম লাবু এমপির চাচাতো ভাই।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন চাঁদপুর-২ আসনের এমপি মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ভাতিজার স্ত্রী লাভলী চৌধুরী। তিনি ছাড়া আর কেউ এই পদে মনোনয়নপত্র জমা দেননি।

কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, দলের সর্বোচ্চ জায়গা থেকে নির্দেশনা দেয়ার পরও প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করা ভাবনার উদ্রেক করে। আমরা চাই, যে সব নেতাদের ত্যাগ, তিতিক্ষার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পেরেছে দলের সে সব ত্যাগী নেতাকর্মীরাই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসুক। তবে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের অফিসিয়াল সময় শেষ হলেও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সুযোগ এখনো আছে। এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের উচিত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো।

স্বজন বলতে কাদের বুঝানো হবে সে বিষয়ে কোন সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়নি জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে স্বজন বলতে কাদের বুঝানো হবে সে বিষয়ে আমাদের কোন সংজ্ঞা নির্ধারণ হয়নি। এই বিষয়ে আমরা এখনো কোন ব্যাখ্যা দিইনি।

আগামী ৩০ এপ্রিল ডাকা কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে স্বজনদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত আসতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এ সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, আমাদের বৈঠকের এজেন্ডায় এ বিষয়টি দেওয়া নেই, তবে কেউ যদি বিষয়টি নেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) সামনে তুলে ধরেন তাহলে আলোচনা হতে পারে, অথবা নেত্রীও কথা বলতে পারেন।

;

উপজেলা নির্বাচন

বরিশালে নতুন তিন প্রার্থী নিয়ে দুই উপজেলায় তোলপাড়



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আগামী ২১ মে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে নতুন দুইজন চেয়ারম্যান ও একজন নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীকে নিয়ে বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলাবাসীর মধ্যে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে।

নতুন প্রার্থীদের জয়জয়কারে চরম বেকায়দায় পড়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হেভিওয়েটের প্রার্থীরা।

নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, পরিবর্তনের পক্ষে সাধারণ সমর্থকরা ওই তিন প্রার্থীর পক্ষে কোমর বেঁধে মাঠে নামতে শুরু করেছেন। প্রার্থীরাও অনেকদিন ধরে নির্বাচনি মাঠও চষে বেড়াচ্ছেন।

গণসংযোগে নেমে তারা উন্নয়নবঞ্চিত উপজেলাবাসীর তীব্র ক্ষোভের কথা শুনলেও ভোটারদের কোনো ধরনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন না। তিন প্রার্থীই প্রায় একই সুরে কথা বলছেন, অতীতের জনপ্রতিনিধিদের মতো মুখে কথার ফুলঝুড়ি ছড়াতে চাই না! তারা শুধু এটুকুই বলছেন, নির্বাচিত হতে পারলে ভাগ্যবঞ্চিতদের ভাগ্য উন্নয়নে সবকিছু কাজে প্রমাণ করে দেবো। আর দুই বছরের মধ্যে ভাগ্য উন্নয়নে ব্যর্থ হলে পদত্যাগ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবো।

আলোচিত ওই তিন প্রার্থী হলেন- মুলাদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জহির উদ্দীন খসরু। ক্লিন ইমেজের প্রার্থী হিসেবে উপজেলা জুড়ে ব্যাপক পরিচিত জহির উদ্দীন খসরুর পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি এবার প্রকাশ্যে গণসংযোগে মাঠে নেমেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতাকর্মীরা।

অপর দুই প্রার্থী হলেন- বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদে জনতার চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনি মাঠে আলোড়ন সৃষ্টি করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক মেধাবী ছাত্র মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মো. আদনান আলম খান বাবু এবং বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও আলোচিত নারীনেত্রী মৌরিন আক্তার আশা।

জানা গেছে, বরিশাল-৩ (মুলাদী ও বাবুগঞ্জ) সংসদীয় আসনটি অনেকদিন থেকেই জাতীয় পার্টির দখলে। স্থানীয় নির্বাচনে জাপা এককভাবে প্রার্থী ঘোষণা না করলেও প্রার্থীদের বিজয়ী হতে জাপার সমর্থন মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছে।

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এ দুই উপজেলায় জাতীয় পার্টির বৃহৎ অংশের কর্মী-সমর্থকরা ইতোমধ্যে প্রকাশ্যে উল্লিখিত আলোচিত তিন প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে মাঠে নেমেছেন।

চেয়ারম্যান প্রার্থী দুই ভাই
দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে জেলার হিজলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন আপন দুই ভাই। এনিয়ে পুরো উপজেলা জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ২১ মে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে হিজলা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং অফিসার।

গত ২৩ এপ্রিল দুপুরে যাচাই-বাছাইতে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রাথমিকভাবে বৈধ ঘোষণা করা পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে দুইজনই হলেন আপন দুইভাই। তারা হচ্ছেন- সাবেক চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ টিপু সিকদার ও তার ছোটভাই আলতাফ মাহমুদ দিপু সিকদার।

অপর তিন প্রার্থী হলেন- নজরুল ইসলাম রাজু ঢালী, দেলোয়ার হোসেন ও হাফিজুর রহমান। জেলার আরো একটি উপজেলায় আপন দুইভাই প্রার্থী হচ্ছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে।

 

;

বিএনপি যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে: কাদের



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে বলেছেন, বিএনপি যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাদের নেতারা হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছেন। তাদের বোধগম্য হয় না যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের কাতারে দাঁড়িয়ে রাজনীতি করে; জনকল্যাণে পরিকল্পনা গ্রহণ ও কর্মসূচি নির্ধারণ করে।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) আওয়ামী লীগ উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানে এক বিবৃতিতে তিনি একথা বলেন। এতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিবৃতির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।

বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা সর্বদা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। অন্যদিকে বিএনপি গণবিরোধী রাজনীতি করে আসছে। রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাকালে তারা জনগণকে শত্রুজ্ঞান করে শাসন-শোষণ ও অত্যাচারের স্টিম রোলার চালিয়েছিল। সন্ত্রাস ও উগ্র-জঙ্গিবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। আর এখন সাংবিধানিকভাবে বৈধ ও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগারের মাধ্যমে বিভ্রান্তি ও নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করে জনগণকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ক্ষমতায় যাওয়ার অপচেষ্টা করছে।

বিএনপি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে সরকারবিরোধী তথাকথিত আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস-সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ও তার দোসরদের সন্ত্রাসী ও ক্যাডারবাহিনী সরকারের সুসমূণ পথচলা এবং দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। তাদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু দেশের জনগণ ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ। আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, পূর্বের ধারাবাহিকতায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের নামেও তারা অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী ও আদালত জনগণের নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বিএনপি নেতৃবৃন্দ সেটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালায়। বিএনপি প্রকৃতপক্ষে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন, সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া তাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত। বিএনপি ক্ষমতায় থেকে নিজেদের সন্ত্রাসী ও ক্যাডারবাহিনীর পাশাপাশি বাংলা ভাইয়ের মতো দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীর সৃষ্টি করেছিল এবং তাকে রক্ষা করার জন্য 'বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি' বলে উড়িয়ে দিয়েছিল। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে বদ্ধপরিকর।

সন্ত্রাসী বা অপরাধী যে-ই হোক তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে উল্লেখ করে বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, সফল রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জগদ্দল পাথরের মতো জেঁকে বসা বিচারহীনতার সংস্কৃতির অর্গল ভেঙে বিচারের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। সন্ত্রাসী বা অপরাধী যে-ই হোক তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। রাজনৈতিক বক্তব্যের আড়ালে সন্ত্রাসীদের রক্ষার অপকৌশল সফল হবে না।

;

আবারও একটি ডামি নির্বাচন করতে যাচ্ছে আ.লীগ- রিজভী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে ‘ডামি নির্বাচন’ উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, আবারও একটি ডামি নির্বাচন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।

তিনি বলেন, সংসদীয় এলাকাগুলোতে ‘এমপি রাজ’ শুরু হয়েছে। এমপির ভাই, খালা মামাদের দিয়ে ‘এমপি রাজ’ চালাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকালে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দাবদাহে নগরবাসীকে পানি বিতরণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রহুল কবীর রিজভী এ সব কথা বলেন।

এ সময় তিনি ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, ওবায়দুল কাদের এখন ‘সন্ত্রাসীদের মন্ত্রী’, ‘গুণ্ডাদের মন্ত্রী’। তাই, বিএনপি কর্মসূচি দিলে পালটা কর্মসূচি দেন।

রিজভী বলেন, সাংবাদিকরা ওবায়দুল কাদেরকে প্রশ্ন করেছিলেন, কেন বিএনপির প্রোগ্রামের সঙ্গে মিল রেখে প্রোগ্রাম দেন? তিনি (ওবায়দুল কাদের) উত্তরে বললেন, বিএনপিকে মানসিক চাপে রাখতে নাকি কর্মসূচি দেন। আসলে যারা ‘মানসিক বিকারগ্রস্ত’, তারাই এ সব কাজ করেন।

তিনি বলেন, এসব তো করে পাড়া-মহল্লার গুণ্ডারা। সন্ত্রাসী যারা, তারা।

রিজভী আরো বলেন, শেখ হাসিনা গণবিরোধী নীতি, গণবিরোধী প্রকল্প নিতে কখনো ভাবেন না। দেশে আজ চাল সংকট, আদা সংকট, পেঁয়াজ সংকট। এসবের পেছনে মূল কারণ শেখ হাসিনার গণবিরোধী প্রকল্প। এক কথায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি, শেখ হাসিনার ব্যর্থতা।

রাজনীতির প্রধান কাজ ‘সমাজ সেবা’ উল্লেখ করে রিজভী বলেন, সারাবিশ্বের রাজনীতি একটি সমাজ সেবা কাজ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের গণবিরোধী কাজের জন্য আমাদের সব সময় রাজপথে থাকতে হয়। এ জন্য আমরা সমাজের মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছি না।

এসময় বিএনপির আটক নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি করেন রিজভী।

অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, ইঞ্জিনিয়ার ইসরাকশ, বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

;