ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি : দুই বাঙালি শহীদের গল্প



যাকওয়ান সাঈদ, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি

ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি

  • Font increase
  • Font Decrease

১৯০৮ সালে মাত্র আঠার বছর বয়সে যে কিশোর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে হাসিমুখে ফাঁসির মঞ্চে আরোহণ করেছিল, তাঁর নাম ক্ষুদিরাম বসু। ক্ষুদিরাম বসুর সহযোগী ছিল প্রফুল্ল চাকি, ক্ষুদিরামের ফাঁসির মাস তিনেক আগেই যে পুলিশের হাতে ধরা দেবে না—তাই রিভলবারের গুলি নিজের দিকে তাক করে করেছিল আত্মহত্যা। প্রফুল্ল চাকির আত্মহত্যার দিনটি ছিল ২ মে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দ, আর ক্ষুদিরাম বসুকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল একই বছরের ১১ আগস্ট। এ দুই বিপ্লবীরই মৃত্যু হয়ে হয়েছিল একটি বিশেষ ঘটনা বা অপারেশনকে কেন্দ্র করে।

এ লেখাটি ক্ষুদিরাম বসু, প্রফুল্ল চাকি আর তাঁদের সেই অপারেশনটিকে কেন্দ্র করে। কয়েকটি উপ-শিরোনামের মধ্যদিয়ে আমরা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সেইসব দিনের গৌরবান্বিত ইতিহাসে কিছুক্ষণের জন্য বিচরণ করে আসতে পারি।

ক্ষুদিরামের জন্ম এবং বাল্যকাল

ক্ষুদিরামের জন্ম ১৮৮৯ সালের ডিসেম্বর মাসের এক বিকেলে, মেদেনীপুরের হবিবপুরে। বাবা ত্রৈলক্ষণাথ বসু জমিদারদের কাছারিতে কাজ করত। মায়ের নাম লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী।

পরপর দুই পুত্রসন্তানকে অল্প বয়সে হারিয়ে ত্রৈলক্ষণাথ বসু ও লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবীর সংসার-জীবনে একটি গভীর কষ্টের জায়গা তৈরি হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই, ক্ষুদিরামের যখন জন্ম হলো তখন তাকে নিয়ে সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ে। যদি না এই সন্তানটিও আবার মারা যায়! এমন অবস্থায়, তৎকালীন একটি সংস্কার, যা শিশুর প্রাণরক্ষার ক্ষেত্রে প্রচলিত ছিল, সেটিই প্রয়োগ করতে হলো ক্ষুদিরামের ওপর। উপাচার অনুযায়ী অল্প কিছু খুদ বা কড়ির বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল ক্ষুদিরামকে। অবশ্য কিনে নিয়েছিল তাঁরই সদ্যবিবাহিত বড়বোন। যেহেতু খুদের বিনিময়ে প্রাণরক্ষা হয়েছিল তাই তাঁর নামকরণ করা হয়েছিল ক্ষুদিরাম বসু।

দুঃখজনক বিষয় এই যে, ক্ষুদিরামের আর মা-বাবার কাছে ফেরা হয়নি, বা তাদের সান্নিধ্য পাওয়াও সম্ভব হয়নি। ক্ষুদিরামের সাত বছর বয়সে, ছয় মাসের অল্প ব্যবধানে তাঁর বাবা-মা মারা গিয়েছিলেন। বড় বোনের সংসারেই বেড়ে উঠেছিলেন ক্ষুদিরাম।

শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল হাটগাছিয়ার গিরিশ মুখার্জী পাঠশালায়। বোনের স্বামী চাকরিসূত্রে হাটগাছিয়ায় থাকতেন। পরবর্তী সময়ে চাকরি বদলি হলে তারা তমলুকে স্থানান্তরিত হয়। সেখানে ক্ষুদিরাম বসুকে হ্যামিল্টন স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয়। তাঁর বয়স যখন বারো, তখন তমলুকে দেখা দিয়েছিল কলেরা। ক্ষুদিরাম সেই কলেরা-রোধে নেমে পড়েছিল বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে। স্বভাবচরিত্রে ছিল ডানপিটে ধরনের, আর এই ডানপিটে স্বভাব বদলাতে না-বদলাতেই ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলে পড়তে হয়েছিল তাঁকে।

ক্ষুদিরামের বিপ্লবীজীবনের সূত্রপাত

১৯০৪ সালে বয়স যখন চৌদ্দ, ক্ষুদিরামের চিন্তা-চেতনায় বিপুল পরিবর্তন আসে। এসময় পুনরায় বোনের স্বামীর বদলির কারণে তাঁদের মেদেনীপুর চলে আসতে হয়। ক্ষুদিরামকে ভর্তি করে দেওয়া হয় মেদেনীপুর কলিজিয়েট স্কুলের অষ্টম শ্রেণীতে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ঋষি রাজনারায়ণ বসু—তিনিই ক্ষুদিরামসহ আরো অনেক স্কুলছাত্রের মনে স্বাধীনতার চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন।

একই স্কুলের ইতিহাস শিক্ষক—জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু, ক্ষুদিরামকে দেখেই টের পান এই ছেলের মধ্যে স্বদেশচেতনা অত্যন্ত গভীরভাবে প্রোথিত আছে। এবার শুধু ছেলেটিকে জাগিয়ে তোলাই কাজ। কাজটি জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু নিজ দায়িত্বে করলেন। ক্ষুদিরামকে তিনি নিজের একজন কাছের ছাত্র করে তুললেন।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ছিল মেদেনীপুর। জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসুর সান্নিধ্যে আসার অল্প সময়ের মধ্যেই ক্ষুদিরাম একটি বিপ্লবী দলে যোগদান করে। এরই মধ্যদিয়ে কিছু রণকৌশলও রপ্ত হয়ে যায় তাঁর। এখানেই লাঠি খেলা, তলোয়ার চালানো, বন্দুক অথবা রিভলবারের ব্যবহার শিখে নেয় ক্ষুদিরাম। যুদ্ধাহত ব্যক্তির প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যাপারেও এখান থেকেই ধারণা নেওয়া। বন্যাকবলিত মানুষের আশ্রয়স্থল তৈরিতে এসময় দলের সঙ্গে থেকে স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালন করে ক্ষুদিরাম।

প্রথম জেলে যাওয়া

মেদেনীপুরের বিপ্লবীদের দলপতি ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু। তাঁর সঙ্গে ক্ষুদিরাম বসুর প্রথম জেলে যাবার ঘটনায় একটি প্রাসঙ্গিকতা আছে। ১৯০৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাস, ক্ষুদিরামের বয়স তখন ১৬ বছর।

মেদেনীপুরের পুরনো জেলে একটি কৃষি ও শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যেমন, এসেছিল অনেক সাধারণ মানুষও। হঠাৎ সেই প্রদর্শনীতে দেখা গেল এক কিশোর লিফলেট বিলি করছে। কর্তাব্যক্তিদের নজরে এলে দেখা গেল লিফলেটটি মূলত ‘সোনার বাংলা’ নামক একটি পুস্তিকা যা ব্রিটিশবিরোধী প্রচারপত্রগুলোরই একটি। তাৎক্ষণিক ক্ষুদিরামকে গ্রেফতার করে তার নামে রাজদ্রোহের মামলা দিয়ে দেওয়া হয়। কাঠগড়ায় উঠিয়ে তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো, ‘কে তোমাকে এই পুস্তিকা বিলি করবার দায়িত্ব দিয়েছে?’ উত্তরে ক্ষুদিরাম বসু যেন কিছুই জানে না, এরকম ভাব করে। বলে, ‘তার নাম বলতে পারি না।’ তারপর তাকে আদালতের পুরো কক্ষ ইঙ্গিত করে বলা হলো, ‘দেখো তো এই কক্ষে সেই ব্যক্তিটি আছে কিনা?’ সত্যেন্দ্রনাথ বসু কক্ষেই ছিলেন, মানে তিনিই তাকে পুস্তিকা বিলির কাজটা দিয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষুদিরাম বসু কম বয়সসুলভ অভিব্যক্তি দিয়েই সত্যেন্দ্রনাথকে সারা আদালত ঘরের কোথাও খুঁজে পেল না। বলল, ‘নাহ, এই ঘরে তো সেই লোককে দেখতে পাচ্ছি না।’ আদালত ভাবল, ছেলেটি হয়তো আসলেও এতটা ভুলমনা, বা বিশেষ ‘ঘাওড়া’ প্রকৃতির, সুতরাং তাকে ছেড়ে দেওয়া হলো।

তবে হ্যাঁ, এ ঘটনার মধ্যদিয়ে ক্ষুদিরাম কিছুটা হলেও সন্দেহজনক চরিত্র হয়ে উঠল। চিন্তিত হয়ে পড়লেন ক্ষুদিরামের বোনের স্বামী, কেননা পুলিশ যে কোনো সময়ই ঘরে হানা দিতে পারে। যদিও ঘটনার পরপর ক্ষুদিরামকে অন্য এক আত্মীয়ের বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়, কিন্তু তবুও ক্ষুদিরামকে কেন্দ্র করে নিজের চাকরিটি হঠাৎ হাতছাড়া হবার আশঙ্কা কাটল না। এমন পরিস্থিতিতে যদিও বোনের স্বামী ক্ষুদিরামকে সরাসরি কিছু বললেন না, কিন্তু কিশোর ক্ষুদিরাম নিজেই যা বোঝার বুঝে নিল আর একদিন না বলে-কয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।

এরপর ক্ষুদিরাম বসু যার কাছে আশ্রয় পেল ইতিহাসে তার পরিচয় হিসেবে উল্লেখ আছে, তিনি আবদুল ওয়াহেদ সাহেবের স্ত্রী। এ মহিলা ছোটভাইয়ের মতো স্নেহ ভালোবাসায় ক্ষুদিরামকে গ্রহণ করেছিলেন।

যাই হোক, একটি আঠার বছরের জীবনে আর কতই বা ঘটনা থাকবে! তাই ছোট ছোট এসব বাঁকবদল বাদে ফাঁসির ঘটনাই মূলত ক্ষুদিরাম বসুর জীবনকে অধিকার করে রেখেছে। কেন ও কী কারণে ক্ষুদিরামের ফাঁসি হলো, বরং সেই আলাপেই প্রবেশ করা যাক।

প্রফুল্ল চাকি, ক্ষুদিরামের সহযোদ্ধা

এই পর্বে ক্ষুদিরামের সহযোদ্ধা প্রফুল্ল চাকিকেও পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। আমরা আগেও উল্লেখ করেছিলাম প্রফুল্ল চাকির কথা, পুলিশের কাছে ধরা না পড়ে যে আত্মহত্যাকেই বেছে নিয়েছিল।

অপারেশনকে কেন্দ্র করেই প্রফুল্ল চাকির সঙ্গে ক্ষুদিরামের প্রথম সাক্ষাত হয়। মানিকতলা আখড়ার এই সাক্ষাতের দিনই অপারেশনের মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ক্ষুদিরামকে। আর ক্ষুদিরামের সহযোগী হিসেবে উত্তরবঙ্গ থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল প্রফুল্ল চাকিকে। অপারেশনটির স্বার্থে দুজনকেই দেওয়া হয়েছিল ছদ্মনাম—ক্ষুদিরামের নাম হয়েছিল দুর্গাদাস সেন, আর প্রফুল্ল চাকির নাম দীনেশচন্দ্র রায়।

তাহলে কী ছিল সেই অপারেশন?

তাহলে কী ছিল সেই অপারেশন? আঠার বছর বয়সী ক্ষুদিরামকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, এবার সেই প্রসঙ্গে আসা যাক।

বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যখন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন তুমুল আকার ধারণ করেছিল, ঠিক সেই সময় ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী ‘বন্দে মাতরম’ বলা নিষিদ্ধ করে দেয়। আর যখন ‘বন্দে মাতরম’ নিষিদ্ধ হলো, সেসময় কলকাতার প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট ছিল মি. কিংসফোর্ড। এমনকি অন্য অনেক ব্রিটিশদের চেয়েও কিংসফোর্ড ছিল একটু বেশি মাত্রারই বেপরোয়া। ‘বন্দে মাতরম’ আইনকে কেন্দ্র করে তখন তার জেলখানায় তিল ধারণেরও ঠাঁই ছিল না।

ইংরেজ-শাসনের নির্যাতন তো ছিলই, সঙ্গে কিংসফোর্ডের বাড়তি নিষ্ঠুরতা যুক্ত হয়ে তৈরি হয়েছিল এক অতিশয় নির্দয় পরিস্থিতির। ফলশ্রুতিতে মেদেনীপুরের বিপ্লবীদের বৈঠকে একদিন সিদ্ধান্ত হলো, মি. কিংসফোর্ডকে শাস্তি দিতে হবে। আর সেই উপযুক্ত শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু এই মৃত্যুদণ্ড বাস্তবায়নে এমন কাউকেই খুঁজে পেতে হবে যে একই সঙ্গে বুদ্ধিদ্বীপ্ত এবং তেজি। সম্ভবত ১৯০৮ সালের মেদেনীপুরে অবস্থানকারী সব বিপ্লবী নেতাদেরই ক্ষুদিরামকে কাজটির জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে হয়েছিল।

ইংরেজ শাসকগোষ্ঠীও টের পেয়েছিল, যে কোনো সময় কিংসফোর্ডের ওপর হামলা হতে পারে। তাই এরইমধ্যে কিংসফোর্ডকে বদলি করে মুজফফরপুরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ক্ষুদিরাম আর প্রফুল্ল চাকি প্রথমে কলকাতা গিয়ে, তারপর সেখান থেকে মুজফফরপুরে রওনা হবে—এমনই প্ল্যান আগে থেকে ঠিক করা ছিল। সে অনুযায়ী তারা দুজন প্রথমে কলকাতায় এসে বিপ্লবী হেমচন্দ্র কানুনগোর বাসায় অবস্থান নেয়। সেখান থেকে গুলিভর্তি রিভলভার আর টিনের বাক্সে একটি বোমা নিয়ে মুজফফরপুরে চলে গেল। পরিকল্পনামতোই তারা প্রথমে একটি ধর্মশালায় আশ্রয় নেয়।

মি. কিংসফোর্ড ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিল, যে কোনো সময় তার ওপর হামলা হতে পারে। সবসময় তাই সাথে বন্দুকধারী নিয়ে চলাফেরা করত। কোর্টে কাজের সময় বাদে প্রায় পুরাটা সময় থাকত বাসায়। মাঝেমধ্যে সন্ধ্যার পরে ক্লাবে গিয়ে তাশ খেলে আসা। বলা চলে বন্দুকধারী-বেষ্টিত দিনাতিপাত করছিল কিংসফোর্ড।

দুই কিশোরের জন্য ব্যাপারটা কঠিনই হয়ে পড়ছিল। একটানা ১৯/২০ দিন সুযোগ-সন্ধানের পরও কোনোভাবেই কিছু ঘটাতে না পেরে ভেতরে ভেতরে কিছুটা অস্থির হয়ে ওঠে তারা। এই অস্থিরতা থেকেই ২৯ তারিখ তারা সিদ্ধান্ত নেয়, পরের দিন অপারেশন বাস্তবায়ন করবেই, যা হবার হবে। ১৯০৮ সালের এপ্রিল মাস।

পরদিন, ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকেই কিংসফোর্ডের বাড়ির আশেপাশে গিয়ে তারা দুজন অবস্থান নেয়। প্রথমে একজন প্রহরী ব্যাপারটি লক্ষ করে তাদের চলে যেতে বলে। তারা সে নির্দেশ অগ্রাহ্য করে আরেকটু গোপনীয়তা যোগ করে একটি গাছের আড়ালে গিয়ে দাঁড়ায়। কিংসফোর্ড কখন বাসা থেকে বের হয়, সেটাই তাদের দেখার বিষয়। কিংসফোর্ডকে একবার হত্যা করতে পারা গেলে তাদের ভোগ্যে যা হয় হবে।

তবে সবশেষ ক্ষুদিরাম তার হাতের মুঠোয় থাকা বোমাটি ছুড়ে মারলেও সেই বোমায় কিংসফোর্ড নয়, মারা গিয়েছিল দুজন নির্দোষ ব্রিটিশ নাগরিক। এ দুজন ছিল ব্যারিস্টার কেনেডি নামক এক ব্যক্তির স্ত্রী এবং কন্যা।

রাত সাড়ে আটটার দিকে ক্ষুদিরাম আর প্রফুল্ল কিংসফোর্ডের বাসা থেকে একটি গাড়ি বেরিয়ে আসতে দেখেছিল। মূলত, এই দেখার বিষয়টিতেই তাদের আরো পরিপক্বতার, মনোনিবেশের ও অপেক্ষার প্রয়োজন ছিল। তারা গাড়ির মধ্যে কে আছে সে বিষয়ে নিশ্চিত না হয়েই গাড়ি উদ্দেশ্য করে বোমা ছুড়ে মারে।

যদিও কে মারা গেল, কিংবা কিংসফোর্ড যে মারা যায়নি এসব ব্যাপারে জানবার কোনো সুযোগ তাদের রইল না। তারা বোম্বিং করবার সাথে সাথেই সেখান থেকে প্রস্থান করে।

ঘটনার পরে কেউ কেউ বলল এখানে তারা দুজন কিশোরকে দেখেছে। কে কীরকম দেখতে ছিল, সেসবও বলাবলি হলো। ফলত সব জায়গায় ঘোষণা করে দেওয়া হলো, এরকম কাউকে দেখলেই তাকে যেন পুলিশে সোপর্দ করা হয়। ঘোষণার ফলস্বরূপ সর্বত্র নিরাপত্তা জোরদার করে ক্ষুদিরাম আর প্রফুল্লকে ধরতে সচেষ্ট হলো পুলিশ এবং পরদিন সকালেই ক্ষুদিরাম ধরা পড়ে গেল।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/29/1567077539571.jpg
◤ ক্ষুদিরাম, ধরা পড়ার পরে ◢


প্রফুল্ল চাকির আত্মহত্যা

প্রফুল্ল জামাকাপড় পাল্টে সমস্তিপুর এলাকার দিকে যাচ্ছিল। এসময় একজন তাকে ডেকে জানতে চাইল, ‘কোথায় যাও?’ প্রফুল্ল জানালে রেলস্টেশনে যাচ্ছে, লোকটি বলল, এখন তো কোনো ট্রেন নেই। লোকটি প্রফুল্লকে তার বাসায় বিশ্রাম নেওয়ার আমন্ত্রণ জানায় আর যখন ট্রেন আসবে তখনই স্টেশনের দিকে যেতে বলে। প্রফুল্লও এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়।

যে ব্যক্তি প্রফুল্লকে এ সহযোগিতা করেছিল, তার পরিচয় জানা যায়নি। হয়তো তিনি প্রফুল্লের আসন্ন বিপদ বুঝতে পেরেই দয়াপরবশ হয়েছিলেন। এমনকি হয়ে থাকবে, তিনি বুঝতেও পেরেছিলেন এই ছেলে সেই দুজনেরই একজন, যারা গতকাল কেনেডির স্ত্রী আর কন্যাকে হত্যা করেছে। যখন এই ব্যক্তির আশ্রয়স্থল রেখে প্রফুল্লকে ট্রেনে উঠে পড়তে হলো, তখন থেকেই ঘটতে শুরু করে বিপত্তি।

প্রফুল্ল চাকি যেই কামরায় ওঠে, একই কামরায় সাদা পোশাকে একজন পুলিশসদস্য উঠেছিল। নাম নন্দলাল ব্যানার্জী। সাদা পোশাকে তাকে দেখেও বোঝার উপায় ছিল না সে একজন পুলিশ। কিন্তু প্রফুল্লকে দেখেই তার সন্দেহ হলে একটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি করার মধ্যদিয়ে তাঁকে নিজের নজরদারিতে আটকে রাখে ওই পুলিশসদস্য।

ট্রেন যখন স্টেশনে পৌঁছায় তখন ভোর। আশেপাশে কোনো কুলি ছিল না। প্রফুল্লই নন্দলালের ব্যাগপত্র মাথায় নিয়ে কুলির কাজটি করছিল। মাথা থেকে ব্যাগ নামিয়ে রাখতেই প্রফুল্ল টের পেল নন্দলাল ব্যানার্জী সেখানে নেই। এদিক ওদিক তাকাতে একটু পরে দেখা গেল, তিনি পাঁচজন পুলিশসদস্যকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন। আর প্রফুল্ল চাকিকে জানানো হচ্ছে—‘আপনাকে আমরা গ্রেফতার করলাম।’

পকেটে থাকা রিভলভারটি বের করে সঙ্গে সঙ্গেই প্রফুল্ল নন্দলালকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ল। উত্তেজনায় গুলিটি লক্ষভ্রষ্ট হয়। পরক্ষণেই, যখন ধরা পড়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই, রিভলবার গলায় ঠেকিয়ে নিজেকেই গুলি করে দিলেন প্রফুল্ল চাকি।

ক্ষুদিরামকে ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর ফাঁসির নির্দেশ

ফাঁসির মঞ্চ এবং তার আগে আদালতের জিজ্ঞাসাবাদের সময়ও ক্ষুদিরাম বসু নিতান্ত স্বাভাবিক আচরণ করছিল। এ দেখে তখন কারোরই আশ্চর্যের কোনো সীমা ছিল না। যেহেতু ক্ষুদিরাম জানত না তাঁর সহযোগী প্রফুল্ল আত্মহত্যা করেছে, কাজেই প্রফুল্লকে বাঁচাবার জন্য শেষপর্যন্ত পুরো অপারেশনটির দায়ভারও নিজের কাঁধেই রাখছিল। এর বাইরে কোনো সংগঠন বা ব্যক্তির নাম বলা দূরে থাক।

মামলাটি শুরু হয়েছিল মে মাসের ২১ তারিখ। ক্ষুদিরামকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছিল জুন মাসের ১৩ তারিখ। ফাঁসির রায় শুনেও ক্ষুদিরাম যথাস্বাভাবিক আচরণেই বহাল থেকেছিল। আদালত কর্তৃক তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘তুমি কি বুঝতে পেরেছো তোমাকে কী শাস্তি দেওয়া হয়েছে?’ ক্ষুদিরাম বসু বলল ‘হ্যাঁ আমি বুঝতে পেরেছি, এবং আমি আবার আসব।’

১৯০৮ সালের আগস্ট মাসের ১১ তারিখ ভোর ছয়টায় ক্ষুদিরামের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছিল।

   

চিড়িয়াখানায় কুকুরকে পান্ডা বানিয়ে প্রদর্শন



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
চিড়িয়াখানায় কুকুরকে পান্ডা বানিয়ে প্রদর্শন

চিড়িয়াখানায় কুকুরকে পান্ডা বানিয়ে প্রদর্শন

  • Font increase
  • Font Decrease

পূর্ব চীনের একটি চিড়িয়াখানা কুকুরকে ‘পান্ডা’ বানিয়ে প্রদর্শন করা হয়েছে। কুকুরের শরীরে সাদা এবং কালো রং মাখিয়ে আসল পান্ডাদের মতো বানিয়ে প্রদর্শন করা হয়। চীনের জিয়াংসু প্রদেশের তাইঝু চিড়িয়াখানায় গত ০১ মে এ ঘটনা ঘটে।

সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে এমন অবাক কাণ্ডের তথ্য প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়- পহেলা মে’র ছুটিকে কেন্দ্র করে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থী বাড়াতে কর্তৃপক্ষ চিড়িয়াখানায় ‘পান্ডা কুকুর’ দেখা যাবে বলে বিজ্ঞাপন দেয়। তাদের বিজ্ঞাপন দেখে দর্শনার্থীরা চিড়িয়াখানায় ছুটে আসে। এসে তাদের এমন কাণ্ড দেখে অনেক দর্শনার্থী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়।

নিউইয়র্ক পোস্টে বলা হয়, চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা দুটি চৌ চৌ কুকুরের মুখ কালো রং করেছেন, যাতে কুকুরগুলোকে ক্ষুদ্রাকৃতির পান্ডাদের মতো দেখা যায়। এই কুকুরগুলোকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টার মধ্যে প্রদর্শনের জন্য রেখে দেওয়া হয়, যেখানে দর্শনার্থীদের ভিড় করে তাদের দেখার জন্য জড়ো হয়।

যখন দর্শনার্থীরা বুঝতে পারেন কুকুরগুলো আসল পান্ডা নয়, তখন অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তারা অভিযোগ করেন, প্রাণীর সঙ্গে এমন আচরণ নিষ্ঠুরতা।

তবে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যে রং তারা ব্যবহার করেছেন তা ক্ষতিকারক নয় এবং এ রঙে কোনো রাসায়নিকও নয়।

চিড়িয়াখানার একজন মুখপাত্র জানান, তাদের চিড়িয়াখানায় কোনো পান্ডা ভাল্লুক ছিল না। তাই তারা এমনটি করেছেন। মানুষও চুলে রং করে। কুকুরের লম্বা পশম থাকলে প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করা যায়।

অন্য একজন জানান, তাদের চিড়িয়াখানায় আসল পান্ডা রাখার জায়গা নেই। এভাবে করলে দর্শনার্থীদের আরও বেশি আনন্দ দেওয়া যাবে বলে তারা এমনটি করেছেন।

উল্লেখ্য, চৌ চৌ একটি স্পিটজ-টাইপ কুকুর, যা মূলত উত্তর চীনে পাওয়া যায়।

;

চম্পারণের ১০৭ বছর



ফিচার ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

১০৭ বছর আগে ১৯১৭ সালের ১৫ এপ্রিল বিকেলের কথা। শোষণের হাত থেকে বাঁচার জন্য হাজার হাজার কৃষক বিহারের চম্পারণের মতিহারি রেলস্টেশনে তীক্ষ্ণ চশমা পরা এক লোকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। রাজকুমার শুক্লা নামে একজন চম্পারণের কৃষক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী জী কে চম্পারণে আসার জন্য অনুরোধ করেন।

তিনি এখানে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে না আসলেও প্রায় এক বছর ধরে তার উকিল বন্ধু ব্রজ কিশোর প্রসাদ, রাজেন্দ্র প্রসাদ, গোরখ প্রসাদ, চন্দ্রভাগা সহায় এবং বাবু ধারনীধরদের নিয়ে ভারতীয় ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কৃষকদের সমীক্ষা চালিয়েছিলেন। সাবধানতার সাথে ৪ হাজারের বেশি সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করেন তারা। প্রধানত কৃষকদের দুঃখজনক জীবনের বর্ণনা ও দ্বিগুণ করের আওতায় তাদের শোষণের কথা সমীক্ষায় উঠে আসে।

চম্পারণ সত্যাগ্রহ ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা এবং ভারতীয় জাতীয় আন্দোলনের পদ্ধতি ও মতাদর্শ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এটি অহিংস প্রতিরোধ এবং নাগরিক অবাধ্যতার সাথে মহাত্মা গান্ধীর প্রথম দিকের পরীক্ষাগুলির মধ্যে একটি চিহ্নিত করে, যা পরে তার নেতৃত্ব এবং ভারতের স্বাধীনতার জন্য বৃহত্তর আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে। চম্পারণ সত্যাগ্রহ ১৯১৭ সাল থেকে ১৯১৮ সালের মধ্যে ভারতের বিহারের চম্পারণ জেলায় সংঘটিত হয়েছিল।

১০০ বছর পর হস্তলিখিত সাক্ষ্যগুলি জাতীয় আর্কাইভস থেকে সংগ্রহ করে সবরমতী আশ্রমের আর্কাইভ বিভাগে প্রতিলিপি করা হচ্ছে। এসব আর্কাইভ আটটি খণ্ডে রূপান্তরিত হচ্ছে। কীভাবে কৃষকরা তাদের কণ্ঠস্বর উত্থাপিত হতে দেয় এবং শান্তিপূর্ণভাবে তাদের অধিকারের দাবি জানায়। সাক্ষ্য রেকর্ড করার এই সত্যাগ্রহের ফলেই চম্পারণ কৃষি আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল।

চম্পারণ সত্যাগ্রহ গান্ধীর নিপীড়ক ব্রিটিশ নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের উপায় হিসাবে অহিংস প্রতিরোধকে নিয়োগ করার প্রথম প্রচেষ্টাগুলির মধ্যে একটি হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। তিনি এই কৌশলটিকে “সত্যাগ্রহ” বলে অভিহিত করেন, যার অনুবাদ “সত্য শক্তি”।

 চম্পারণের মতিহারি রেলস্টেশন। ছবি: সংগৃহীত

চম্পারণ অভিযানের জনগণের হতাশা একটি কার্যকর রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়। গান্ধী জী এবং তার দল রেকর্ড করছিল কিভাবে কৃষকরা নীল চাষের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। নীলকররা কিভাবে কৃষকদের বাধ্য করছে নীল চাষ করার জন্য এসব বিষয় তুলে ধরেছেন। নীল চাষ না করলে কৃষকদের উপর দ্বিগুণ করন চাপিয়ে দেওয়া হতো। ব্রিটিশ রোপনকারীরা এজেন্টদের ব্যবহার করে বলপ্রয়োগ ও সহিংসতার মাধ্যমে কর আইন কার্যকর করতো।

সবরমতি আশ্রমের পরিচালকের মতে, গান্ধী ও তার অ্যাডভোকেট বন্ধুরা শ্রোতার ভূমিকা পালন করেন। গান্ধীর মাধ্যমে কৃষকরা নির্দ্বিধায় কথা বলতে পারেন। তারই ফল হলো আজ আমাদের সাথে কৃষকদের সম্পর্কের বিস্তারিত রেকর্ড রয়েছে জমিদার, ব্রিটিশ নীল কারখানার মালিকদের সাথে সম্পর্ক এবং ভূমি রাজস্ব কাঠামোর শোষণমূলক প্রকৃতি।

তিনি বলেন, চম্পারণ সত্যাগ্রহের সময়, বাপু দেখিয়েছিলেন যে মানুষকে স্বাধীনতার জন্য একটি গণআন্দোলনে আকৃষ্ট করার জন্য তাদের ব্যক্তিগত জীবনে একটি সুস্পষ্ট এবং পরিমাপযোগ্য পরিবর্তন করা গুরুত্বপূর্ণ। তবেই স্বাধীনতার ধারণা তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

চম্পারণ সত্যাগ্রহের ফলস্বরূপ, ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ কৃষকদের অভিযোগ তদন্তের জন্য চম্পারন কৃষি তদন্ত কমিটি নিয়োগ করতে বাধ্য হয়েছিল। এই কমিটি শেষ পর্যন্ত কৃষকদের অনুকূলে সংস্কারের সুপারিশ করেছিল, যা গ্রামীণ জনগণের মধ্যে উন্নত অবস্থা এবং ক্ষমতায়নের বোধের দিকে পরিচালিত করে।

;

রেলস্টেশনে বুকশপ আর চোখে পড়ে না!



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, খুলনা
ছবি: বার্তা২৪, খুলনা রেলওয়ে স্টেশন

ছবি: বার্তা২৪, খুলনা রেলওয়ে স্টেশন

  • Font increase
  • Font Decrease

একটা সময় ছিল যখন রেলের দীর্ঘ যাত্রায় রেলের বগিতে সময় কাটাতে হতো। তখন এই অলস সময় কাটাতে বইয়ের কোনো বিকল্প ছিল না। যাত্রাপথে বই খুলে গভীর মনোযোগ দিয়ে বই পড়তেন। সে কারণে রেলের বগিতে, স্টেশনগুলোতে কিছুক্ষণ পর পর বই বিক্রেতাদের হাকডাকও ছিল বেশ রকমের। স্টেশনেও থাকতো বই বিক্রির দোকান, যা ‘বুকশপ’ নামে পরিচিত ছিল। এখন তা শুধুই স্মৃতি মাত্র!

রেলস্টেশনে এসব বইয়ের দোকানে অনেক ধরনের বই পাওয়া যেতো, যা বাজারের বইয়ের দোকানগুলোতে থাকতো না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে সবকিছু। এখন বই কিনে আর কেউ রেলে চড়েন না। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় স্মার্টফোনে সময় পার করেন। রেলের কোচে এখন আর বইয়ের ফেরিওয়ালাও ওঠেন না, বই কেনার কাউকে পাওয়া যায় না বলে।

১৯৮৫ সালে খুলনা রেলস্টেশনে বইয়ের ব্যবসা শুরু করেছিলেন মো. আবু বক্কার। বিশাল বইয়ের দোকান ছিল রেলস্টেশনে। বইয়ের দোকানের নাম ছিল ‘প্রজ্ঞা রেলওয়ে বুক স্টল’। কিন্তু এখন আর এত বই নেই সে দোকানে। গুটি কয়েক বই রয়েছে সে বুকশপে। তবে এগুলোও বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এখন পুরনো স্টেশনের সেই দোকানটিতে চা, পান, সিগারেট বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে, খুলনার রেলস্টেশনটি এখন আন্তর্জাতিক মানের। যদিও সেখানে বইয়ের দোকান দেওয়ার জন্য কোনো স্থানই আর খালি নেই। আগ্রহও নেই রেল কর্তৃপক্ষের।

এ বিষয়ে প্রজ্ঞা রেলওয়ে বুক স্টলের মো. আবু বক্কার আক্ষেপ নিয়ে বলেন, এখন আমার বয়স ৮০। কী আর করবো! কেউ আর বই কিনে রেলে চড়েন না। বই পড়েনও না। অন্য ব্যবসা পারি না। তাই, এখন এই দোকানে বসে চা, পান, বিড়ি বিক্রি করি। কিছু পুরনো বই রয়েছে। কিন্তু বিক্রি হয় না’।

আবৃত্তিকার কামরুল কাজল জানান, রেলে চড়ার অনেক স্মৃতি রয়েছে আমার। প্রতিবার রেলে উঠলে নতুন নতুন বই কিনতাম। অনেক নতুন বই রেলস্টেশনের স্টলে পেতাম, যা খুলনার অনেক বইয়ের দোকানে পেতাম না। আবার রেলে উঠলে অনেক হকার বই বিক্রি করতেন। সেই সব বইগুলো ছিল সময় কাটানোর বড় অনুষঙ্গ। কিন্তু এখন বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ দেখি না।

রেলস্টেশনে বুকশপ বা বইয়ের স্টল এখন আর চোখেই পড়ে না! খুলনা রেলওয়ে স্টেশন, ছবি- বার্তা২৪.কম

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দীন বিশ্বাস জানান, এখনকার ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ কমে গেছে। আগ্রহ তৈরিতে এলাকাভিত্তিক পাঠাগার গড়ে তুলতে হবে। বইয়ের চাহিদা না থাকায় অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন।

রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল জোনের (রাজশাহী) ব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার জানালেন, পুরনো রেলস্টেশনগুলোতে বই বিক্রির জন্য স্থান থাকলেও নতুন যেসব স্টেশন তৈরি হয়েছে, সেসব স্টেশনে আলাদা স্থান রাখা হয়নি। এছাড়া যারা স্টেশনে ব্যবসা করার জন্য আবেদন করেছেন, তারা বেশির ভাগ খাবারের দোকান হিসেবে বরাদ্দ চান।

 

;

প্রকৃতিতে শোভা ছড়াচ্ছে ‘সোনালু ফুল’



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সবুজের ফাঁকে উঁকি দিয়ে হলুদ আভায় মুগ্ধতা ছড়ানো ফুল সোনালু। নজরকাড়া সৌন্দর্যে মুখরিত এই ফুল পথিকের মনে এনে দিচ্ছে প্রশান্তির ছোঁয়া। পরিবেশ ও প্রকৃতির শোভা বর্ধনে সোনালু দারুণ এক নিসর্গ মায়া এনে দিয়েছে। এই ফুলের দেখা মিলছে নওগাঁর বিভিন্ন পথে প্রান্তরে।

মঙ্গলবার (৭ মে) বিকেলে সরেজমিন দেখা যায়, নওগাঁ শহরের বরেন্দ্র অফিসের পাশে থোকায়-থোকায় হলুদ আভায় ঝুলে আছে সোনালু। ফুলের মাথা হতে লম্বা লতার মত বড় হয়েছে।

শীতকালে সব পাতা ঝরার পর বসন্তে একেবারেই মৃতের মতো দাঁড়িয়ে থাকে গাছটি। গ্রীষ্মের শুরুতে দু’একটি কচিপাতার সাথে ফুল ফুটতে শুরু করে। হলুদ সোনালি রঙের অসংখ্য ফুল সারা গাছজুড়ে ঝাড় লণ্ঠনের মতো ঝুলতে দেখা যায়।


জানা যায়, সোনালু গাছের পাতাঝরা মাঝারি আকৃতির । এটি আট থেকে ৯ মিটার উঁচু হয়। হলুদ বরণ এ ফুল দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি আছে তার বাহারি নামও। পরিচিত নামগুলো হলো সোনালু, সোনাইল, সোঁদাল, বান্দরলাঠিসহ আরো অনেক। ফুল থেকে ধীরে ধীরে লাঠির মত কালো রঙের ফল হয়ে সেটি কয়েক সেন্টিমিটার অব্ধি লম্বা হয়ে থাকে।

পথচারী আলমগীর বলেন, সোনালু দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আর শহরের মধ্যে চোখে পড়েনা বললেই চলে। যতবার দেখি খুব সুন্দর লাগে। মনের মধ্যে এনে দেয় এক প্রশান্তি। 

স্থানীয় বাসিন্দা মিঠু বলেন, আমি মোবাইল দিয়ে প্রচুর ছবি তুলেছি এই ফুলের। আমার খুব ভালো লাগে সোনালু ফুল। তবে এই ফুল যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য আমাদের গাছ লাগানো উচিৎ। আমাদের বাড়ির আশেপাশে অনেক সোনালু গাছ আছে যা আমাদের মুগ্ধ করে।


নওগাঁ সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এনায়েতুস সাকালাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন- এটি মূলত সৌন্দর্য বর্ধনে রোপণ করা হয়। গ্রাম বাংলায় এই ফুলকে বাদর লাঠি গাছ বলেও ডাকা হয়। এটির বৈজ্ঞানিক নাম 'কেসিয়া ফিসটুলা (Cassia Fastula)। এই উদ্ভিদ বাংলাদেশে অনেক জাতের আছে। ফুলটার জন্য বেশি খ্যাতি রয়েছে বলে অনেক জায়গায় লাগানো হয়। গাছের কাঠগুলো জ্বালানি কাজে ব্যবহার করা হয়।

;