শিবনারায়ণ চন্দরপল : আনসাং হিরো



সাফাত জামিল, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
চন্দরপলের ট্রেডমার্ক স্ট্যান্স

চন্দরপলের ট্রেডমার্ক স্ট্যান্স

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রায় ২৫ বছর আগের কথা। জর্জটাউনে মার্চের এক সকালে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি তৎকালীন বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওপেনিংয়ে ১১৩তম টেস্ট খেলতে নামা ডেসমন্ড হেইন্সের সাথে রয়েছেন ৭৩ টেস্ট খেলে ফেলা রিচি রিচার্ডসন। ওপেনিং বোলার—কার্টলি অ্যামব্রোস আর কোর্টনি ওয়ালশ। মিডল অর্ডারে মাত্র ২০ টেস্ট খেলে সত্তরোর্ধ্ব ব্যাটিং গড়ের জিমি অ্যাডামসের সাথে আছেন কিংবদন্তি ব্রায়ান লারা—গ্যারি সোবার্সের রেকর্ড টেস্ট স্কোর যার হাতছোঁয়া দূরত্বে।

এত এত ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট গডের মাঝে আর আছেন অভিষেক ম্যাচে নামা ১৯ বছর বয়সী শিবনারায়ণ চন্দরপল—লিকলিকে গড়নের মধ্যে বেশ বেমানান যার জার্সি ও প্যাড। দলে তাঁর অন্তর্ভুক্তি ২০১৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতানো কোচ ফিল সিমন্সের বদলি হিসেবে। কারো কারো মতে, গায়ানিজদের সন্তুষ্ট করতেই নাকি নেওয়া হয়েছিল অমন ‘রাজনৈতিক’ সিদ্ধান্ত।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/20/1566284611732.jpg
অভিষেক টেস্টেই চন্দরপল পেয়ে যান ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি


মজার ব্যাপার হলো, ব্যাটিং স্কিলের চেয়ে তাঁর লেগ-ব্রেক বোলিংই প্রাধান্য পেয়েছিল নির্বাচকদের কাছে। প্রথম ইনিংসে ১৬ ওভার বল করে উইকেটশূন্য চন্দরপল পরবর্তীতে ছয় নম্বরে নেমে অ্যালান ইগলসডেনের বলে পয়েন্টের পেছনে দুর্দান্ত এক কাটে হাঁকান প্রথম বাউন্ডারি। সেদিন ইংল্যান্ডের শক্ত বোলিং অ্যাটাক দুমড়ে-মুচড়ে তরুণ চন্দরপল তুলে নেন নিজের ৬৬ টেস্ট ফিফটির প্রথমটি।

টেন্ডুলকার ও জয়সুরিয়ার পর তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুই দশকেরও বেশি সময় কাটিয়ে অবসরের পথে পা দেওয়া চন্দরপল গড়ে গেছেন রেকর্ডের পর রেকর্ড। ইন্দো-ক্যারিবিয়ান হিসেবে ১০০ টেস্ট খেলা একমাত্র উইন্ডিজ ক্রিকেটার শিবনারায়ণ এই ফরম্যাটে করেছেন এগারো হাজারেরও বেশি রান, সর্বকালের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর তালিকায় রয়েছেন আট নম্বরে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/20/1566284663316.jpg
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০ হাজারেরও বেশি রানের মালিক শিবনারায়ণ


ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় ব্রায়ান লারার ছায়ায় কাটানো চন্দরপল নিজের ১৯তম টেস্টে ভারতের বিপক্ষে দেখা পান প্রথম সেঞ্চুরির। এর ঠিক এক মাস পর সেই ভারতের বিপক্ষেই পেয়ে যান প্রতীক্ষিত ওয়ানডে সেঞ্চুরিটিও।

ধীরগতির ব্যাটিংই ছিল তাঁর মূল স্টাইল। তাই টেস্টের চতুর্থ দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক যে চন্দরপল, তা জেনে যে কেউই অবাক হবেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬৭ বলের সেই বিস্ফোরক ইনিংসের পরপরই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৪১৮ রানের রেকর্ড চেজে করেছিলেন ১০৪। ২০০৫ সালে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে মাত্র দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে অধিনায়কত্বের অভিষেকে পান ডবল সেঞ্চুরির স্বাদ। যদিও সেনাপতির গুরুভার ঠিকঠাক বহন করতে না পেরে পরের বছরই ইস্তফা দেন শিবনারায়ণ। তাতে ফলও মিলল হাতেনাতে—ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অপরাজিত দুই সেঞ্চুরিতে স্বরূপে ফেরেন এই বাঁহাতি গ্রেট।

জীবনের প্রায় অর্ধেকটা সময় টেস্ট ক্রিকেট খেলেই কাটিয়ে দেওয়া চন্দরপল নিজের জাত চিনিয়েছেন সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও। তাঁর অনবদ্য পারফরমেন্সে ভর করে ২০০৪ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতে উইন্ডিজ দল। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হয়েও এ টুর্নামেন্টের ২০০৬ সালের আসরে ওপেনিংয়ে নামেন চন্দরপল, দলকে টেনে নেন ফাইনাল পর্যন্ত।

তবে ক্রিকেটের আদি সংস্করণের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যানকে দুহাত ভরে সাফল্য এনে দিয়েছে ২০০৮ সাল। সেবার ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩ টেস্টে চন্দরপল তোলেন ৪৪২ রান, অর্জন করেন উইজডেন বর্ষসেরা এবং আইসিসি বর্ষসেরা ক্রিকেটারের মুকুট।

ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই উইন্ডিজ ক্রিকেটের ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি চন্দরপলকে পরিণত করেছে হাল না ছাড়া এক নাবিকে। একই কথা প্রযোজ্য ব্রায়ান লারার ক্ষেত্রেও, তবে একক আধিপত্য সবসময়ই তাঁকে রেখেছে অন্যদের থেকে এক ধাপ উপরে। কিন্তু শিব তাঁর প্রতিভা দিয়ে অন্যান্যদের গড়ে তুলেছেন প্রায় পুরোটা সময়। লারা অবসরে যান ২০০৬ সালে, ওয়ালশ ২০০১, অ্যামব্রোস ২০০০, রিচার্ডসন ১৯৯৫ আর হেইন্স ১৯৯৪ সালে। অন্যদিকে চন্দরপল তাঁর অভিষেকের পর থেকে খেলেছেন প্রায় ১০০ ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানের সাথে। এমনকি তাঁদের মধ্য থেকে সেরাদের সেরা ক্রিস গেইল, রামনারেশ সারওয়ানরা এসে চলেও গেছেন। অন্যদেরও সঙ্গ পেয়েছেন খুব কম সময়ের জন্য, যাদের মধ্যে ৪২ জন খেলেছেন মাত্র পাঁচ বা তার চেয়েও কম টেস্ট।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/20/1566284728477.jpg
২০০৪ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের উচ্ছ্বাস


চন্দরপল নিজেকে রীতিমতো এক সৈনিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। হার মেনে নেওয়ার ব্যাপারটি ছিল তার ডিকশনারির বাইরে। বলা বাহুল্য, ইতিহাসের অন্য যে কোনো ব্যাটসম্যানের থেকে সবচেয়ে বেশিবার অপরাজিত থাকার রেকর্ডটা তাঁরই দখলে। অনেকের মতে, তাঁর ঘুমপাড়ানি ব্যাটিং বড়ই নিস্প্রভ, নিস্তেজ। কেউ কেউ তাঁকে স্বার্থপর ভাবতেও দ্বিধা করেন না। তবে চন্দরপল ক্যারিয়ারজুড়ে করে গেছেন তাঁর কাজটিই। দিগভ্রান্ত ব্যাটিংয়ের দিনে ক্রিজে তাঁর উপস্থিতি সবসময় ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বশেষ ভরসা আর ম্যাচ বাঁচানোর সর্বশ্রেষ্ঠ সুযোগ। হেরে যাওয়া ম্যাচে তাঁর থেকে বেশি রান নেই অন্য আর কোনো ব্যাটসম্যানের।

খেলোয়াড়দের কারো শরীরজুড়ে থাকে ট্যাটুর পসরা, কান ফুটিয়ে দুলও পরেন কেউ কেউ। আর শিবের ক্যারিয়ারজুড়ে আলোচনায় ছিল তার দুই চোখের নিচের কালো দাগ। হোক পুরো কালো বর্ণ অথবা নিজ দেশের পতাকা—শুরু থেকেই প্রতিটি ম্যাচে তাঁকে দেখা গেছে এই রূপেই। বিশেষ কোনো স্টাইল নয়, বরং রোদের প্রতিফলন থেকে বাঁচতেই এমন ‘প্যাচ’ ব্যবহার করতেন চন্দরপল। তবে এই প্যাচ ঠিক কতটুকু কার্যকরী, সেটির সপক্ষে এখনো কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/20/1566284781042.jpg
রোদের প্রতিফলন থেকে বাঁচতে চোখের নিচে ‘প্যাচ’ ব্যবহার করতেন চন্দরপল


দৃষ্টিনন্দন শটের আহামরি কোনো প্রদর্শনী তেমন দেখা যায়নি তাঁর সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারে। উল্টো দর্শনীয় ছিল ক্রিজে তাঁর বিচিত্র এক কাঁকড়ারূপী ব্যাটিং স্ট্যান্স, যা নিকট অতীতে দেখা যায়নি অন্য কোনো ব্যাটসম্যানের মধ্যে। চন্দরপলের ভাষ্যমতে, বোলারের মুখোমুখি প্রায় ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে দাঁড়িয়ে তিনি পেতেন দুই চোখের পূর্ণ দর্শন, সাথে দারুণ ভারসাম্য। বন্ধু আর প্রতিবেশিদের বোলিং মোকাবেলায় গায়ানার ছোট্ট গ্রামে কৈশোরেই শিবনারায়ণ আয়ত্ত করেন এই টেকনিক।

তা ঠিক কতটা কার্যকরী ছিল এই স্ট্যান্স? শুরুর দিকে ব্রেট লি’র মতো ফাস্ট বোলাররা ধন্দে পড়ে যেতেন যে ব্যাটসম্যান চন্দরপল আদৌ বল মোকাবেলায় প্রস্তুত ছিলেন কিনা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে শিব দেখিয়ে দিয়েছেন যে প্রথাগত মডেল বা ধরন অনুসরণ না করেও কিভাবে সর্বোচ্চ স্তরের সফলতা অর্জন করা সম্ভব। কখনো মারমুখী, কখনো কচ্ছপগতি—ক্যারিয়ারের প্রারম্ভে পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে ব্যাটিং স্টাইলের ভিন্নতা তাঁকে সবসময়ই আলাদা রেখেছে অন্যদের থেকে। তিন-তিনবার ১০০০ মিনিটেরও বেশি সময় অপরাজিত থাকার এবং সবচেয়ে বেশি ১৭টি অপরাজিত টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ড তো আর এমনি এমনি গড়েননি!

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/20/1566284840669.jpg
চন্দরপলের ট্রেডমার্ক স্ট্যান্স


উইন্ডিজ ক্রিকেটের ধৈর্যের প্রতিমূর্তি শিবনারায়ণ চন্দরপলের ত্রিশ টেস্ট সেঞ্চুরির শেষটি আসে বাংলাদেশের বিপক্ষে, ২০১৪ সালে। তার ঠিক দুই বছর পরই ৪১ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান আগেই উইন্ডিজ বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ পড়া চন্দরপল।

৭৭ ফার্স্ট-ক্লাস সেঞ্চুরির মালিক চন্দরপল পরবর্তীতে তিন মৌসুম সফলতার সাথে কলপ্যাক চুক্তিতে খেলেছেন ইংলিশ কাউন্টি ক্লাব ল্যাঙ্কাশায়ারে। আর নিজ শহর গায়ানার হয়ে ছেলে ত্যাগনারায়ণ চন্দরপলের সঙ্গে এখনো খেলে যাচ্ছেন ফার্স্ট-ক্লাস ক্রিকেট। বল-ব্যাটের লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক আঙিনায় বিশ বছরেরও বেশি সময় কাটানো শিবের ধার যে এতটুকুও কমেনি, তার প্রমাণ আরো একবার পাওয়া গেছে চলতি বছরের এপ্রিলেই। সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে ২০০ রানের দলীয় স্কোরই যেখানে বিশাল ব্যাপার, সেখানে ২৫টি চার আর ১৩ ছক্কায় আইসিসির স্বীকৃতিহীন ঘরোয়া এক টি-টুয়েন্টি লীগে চন্দরপল একাই খেলেছেন ২১০ রানের বিস্ফোরক ইনিংস!

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/20/1566284885858.jpg
ছেলে ত্যাগনারায়ণের সাথে শিব


চটকদার চার-ছক্কার পসরা যদি হয়ে থাকে উইন্ডিজ ক্রিকেট সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ, তবে শিবনারায়ণ চন্দরপল সেখানে এমন এক যুগের ধারক ও বাহক—সংকটের সময় যেখানে দলীয় মনোবলে নিহিত ছিল সফলতা। এমন একজন ব্যাটসম্যানের গুণগান গাওয়ার সর্বোৎকৃষ্ট শব্দমালা খুঁজতে তাই হিমশিম খেতে হয় ক্রিকেটবোদ্ধাদের। ক্যারিয়ারের সোনালি সময়ে শিবনারায়ণ যদি পেতেন চলমান বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের মতো কোনো আসর, নিজের শৈল্পিক তুলিতে নিশ্চিতভাবেই রাঙাতেন দলীয় অর্জনের পাল্লা। কেননা ব্যক্তিগত রেকর্ড বা স্বতন্ত্র উজ্জ্বলতা নয়, বরং গোটা ক্যারিয়ারে দলীয় সাফল্যকেই সবকিছুর উপরে স্থান দিয়েছেন কদিন আগেই ৪৫-এ পা রাখা এই ব্যাটিং জিনিয়াস।

অভিবাদন, হে আনসাং হিরো!

   

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;