তারেক মাসুদ: আমাদের সেলুলয়েডের কবি



মরিয়ম সুলতানা, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
তারেক মাসুদ

তারেক মাসুদ

  • Font increase
  • Font Decrease

ঋত্বিক ঘটকের কিন্তু সিনেমা বানানোর কথা ছিল না। তবুও কেন তিনি সব ছেড়েছুঁড়ে কেবল সিনেমা বানাতে নেমেছিলেন, তা কি আমরা জানি? তিনি সিনেমা বানিয়েছিলেন কারণ সিনেমাই হলো একসাথে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করার একমাত্র মাধ্যম। অন্য কোনো মাধ্যমে যদি এরচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা যেত তাহলে সিনেমা ছেড়ে সেই মাধ্যমেই স্থানান্তরিত হতে রাজি ছিলেন ঋত্বিক ঘটক।

একজন ঋত্বিক ঘটকের মতো আমাদেরও একজন তারেক মাসুদ ছিলেন, যাকে বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম নক্ষত্র হিসেবে ধরা যায়। তিনি সিনেমার নেশায় পড়ে সিনেমা বানিয়েছিলেন কিনা জানি না, তবে তিনি তাঁর নিজের সমগ্র জীবন যে শুধুমাত্র সিনেমার জন্যই উৎসর্গ করে গিয়েছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের যখন মৃতপ্রায় দশা, নামকাওয়াস্তে বাণিজ্যিক ছবির প্রবল দাপটে সত্যিকারের চলচ্চিত্র শিল্প যখন রীতিমতো গাঢ় অন্ধকারের মাঝে ধুঁকছে; তখন এই স্বপ্নের ফেরিওয়ালা একটা আলোর মশাল হাতে জ্বেলে অক্লান্তভাবে ছুটে বেড়িয়েছেন দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। তিনি চেয়েছিলেন আবাল বৃদ্ধা বণিতা সকলের মাঝে মুক্তির আলো ছড়িয়ে দিতে। তাইতো জীবনের শেষ দিন অবধি চলচ্চিত্রের জন্য কাজ করে গেছেন সেলুলয়েডের এই কবি, আমাদের তারেক মাসুদ।

যদিও তিনি পৃথিবী থেকে চিরবিদায়ের আগে লিখে গিয়েছেন, “চলচ্চিত্রকার না হলে লেখক হওয়ার চেষ্টা করতাম।” কেন তবে তিনি লেখক না হয়ে সিনেমাওয়ালা হলেন? তবে কি ঋত্বিকের মতো তাঁরও উদ্দেশ্য ছিল, নিজের চিন্তা-ভাবনা এবং দর্শনকে সিনেমার মধ্যদিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে পৌঁছে দেওয়া? উদ্দেশ্য যেটাই হোক, তিনি যে সিনেমাকে নিছক একটা বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেননি; তা আজ আমরা তাঁর রেখে যাওয়া কাজগুলির মধ্যদিয়ে উপলব্ধি করতে পারি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/13/1565706104240.jpg
◤ তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ পরিচালিত অন্তর্যাত্রা সিনেমার পোস্টার ◢


আবু তারেক মাসুদ, পরবর্তীকালে যিনি আমাদের কাছে তারেক মাসুদ হিসেবে ধরা দিয়েছেন, ১৯৫৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে, বাংলাদেশ) ফরিদপুর মহকুমার নূরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের নাম নুরুন নাহার মাসুদ ও বাবার নাম মশিউর রহমান মাসুদ। তাঁর বাবা ছিলেন কলকাতার বিখ্যাত প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েট, সত্যিকারের একজন আধুনিক মনের মানুষ। কিন্তু তারেক মাসুদের নানির মৃত্যুর পর তার পিতার মাঝে এক আমূল পরিবর্তন আসে এবং নিমিষেই তিনি হয়ে ওঠেন একজন কট্টরপন্থী মুসলমান। ফলস্বরূপ তাঁর পিতা তাদের বাড়িতে মহিলাদের পর্দা করার বিধান চালু করে। সেই সাথে তারেককে একজন ‘আলেম’ বানানোর ইচ্ছেও পোষণ করেন। অতঃপর শিশু তারেকের প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয় একটি আলিয়া মাদ্রাসা।

এরপর পুরো ষাটের দশক তারেক মাসুদ তাঁর পিতার নির্দেশে ছুটে চলেছেন এক মাদ্রাসা থেকে আরেক মাদ্রাসায়। তার বর্ণনানুযায়ী তিনি প্রায় প্রায় পাঁচ-ছয়টি মাদ্রাসায় পড়েছেন যেগুলি দেশের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত। কোনোটি ওই ফরিদপুরের ভাঙ্গায়, কোনোটি ঢাকার লালবাগে, কোনোটি ঢাকার কাকরাইলে, কোনোটি আবার যশোরের মধুমতি নদীর পাড়ের বাহিরদিয়ায় অবস্থিত। পরবর্তীতে তিনি ঢাকার লালবাগের একটি মাদ্রাসা থেকে মৌলানা পাস করেন।

জীবনের প্রথম মাদ্রাসা দর্শনের অভিজ্ঞতা তারেক মাসুদ দিয়েছেন এভাবে, “আমার প্রথম ভর্তি হওয়া ভাঙ্গার মাদ্রাসাসংলগ্ন একটি বিরাট দিঘি ছিল। যেটি আমরা ব্যবহার করতাম। আমি যখন প্রথম মাদ্রাসায় গেলাম সেদিন রাত ৩টা সাড়ে ৩টার দিকে আমাকে তুলে সেই বিরাট দিঘির ঘাটে নিয়ে যাওয়া হলো। কুয়াশার মধ্যে সামান্য আলো-আঁধারিতে দেখা যাচ্ছিল সবাই মেসওয়াক করছে। আমাকেও মেসওয়াক করা শিখানো হলো। আসলে একটি শিশুর ওই ধরনের অভিজ্ঞতা একরকম ইন্দ্রজালিক অভিজ্ঞতা।”

এরপর এলো ১৯৭১ সালের সেই অমানবিক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ক্ষণ, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। তারেক মাসুদ এবং তার পরিবার প্রত্যক্ষ করলেন যুদ্ধের ভয়াবহতা। কিন্তু ১৯৭১ সালের ওই নয় মাসের যুদ্ধের পর বাংলাদেশে স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে যেন তারেক মাসুদের জীবনেও স্বাধীনতা ফিরে এলো। কারণ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তাঁর মাদ্রাসা শিক্ষার পরিসমাপ্তি ঘটে। তাঁর কট্টরপন্থী মুসলিম বাবার হাত ধরেই তিনি ফের প্রবেশ করেন সাধারণ শিক্ষার জগতে। বাবার উদ্যোগে তিনি ১৯৭৩ সালে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রাইভেটে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন এবং প্রথম বিভাগে পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের কো-এড কলেজ ‘আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ’-এ ভর্তি হন। কিন্তু তিনি আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে মাত্র ছয় মাস পড়াশোনা করার পর নটরডেম কলেজে বদলি হয়ে যান এবং সেখান থেকে মানবিক বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/13/1565706254284.jpg
◤ তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র-যাত্রায় স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ ছিলেন বড় অনুপ্রেরণা ◢


তিনি আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে পড়ার সময় থেকেই ঢাকার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে যেতে থাকেন। চাচাত ভাই কামাল মাহমুদের বন্ধু স্থপতি প্রিন্সের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশ ফিল্ম সোসাইটির অফিসে যান এবং ১৯৭৪ সাল থেকে তিনি চলচ্চিত্র সংসদের নিয়মিত কর্মী হয়ে ওঠেন। ১৯৭৪ সালের পর থেকেই তিনি চলচ্চিত্র চর্চার পরিধিতে নিজেকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করে তোলেন। চলচ্চিত্র ছাড়াও তারেক মাসুদ আগ্রহী ছিলেন সংগীত, চিত্রকলা, স্থাপত্য, নৃতত্ত্ব এবং মনঃস্তত্ত্ব বিষয়ে। সব বিষয়ের সঙ্গে চলচ্চিত্রের আন্তঃসম্পর্ক বিষয়ে তিনি বুঝতে চাইতেন। সেজন্যই পরবর্তীতে বিভিন্ন বিষয়ের মেধাবী সমবয়সীদের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে এবং পারস্পরিক লেনদেনের মধ্য দিয়ে প্রস্তুতি চলে চলচ্চিত্রে নেতৃত্বদানের।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই তিনি বাম আন্দোলন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলন প্রভৃতির সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকেছেন। চলচ্চিত্র আন্দোলনের মাধ্যমেই পরিচয় হয় মোরশেদুল ইসলাম, তানভীর মোকাম্মেল, শামীম আখতার প্রমুখের সাথে। তিনি চলচ্চিত্র বিষয়ক অসংখ্য কর্মশালা এবং কোর্সে অংশ করেছিলেন। শিক্ষাগুরু হিসেবে পেয়েছিলেন বিকল্পধারার চলচ্চিত্রের অন্যতম পথিকৃৎ প্রয়াত আলমগীর কবীরকে।

এরপর তিনি পুনে ফিল্ম ইন্সটিটিউটে ফিল্মের ওপর পড়তে যেতে চাইলেন কিন্তু হঠাৎ করে সেখান থেকে স্কলারশিপ দেওয়া বন্ধ হয়ে গেলে সে আশায় গুড়েবালি পড়ল। তারপর ১৯৮২ সালে তিনি ফের আমেরিকায় ফিল্মের ওপর পড়তে যাওয়ার জন্য মনস্থির করে ফেললেন, এমনকি পারিবারিকভাবে অর্থও যোগাড় করে ফেলেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/13/1565705853091.jpg
◤ তারেক মাসুদের শিক্ষাগুরু ছিলেন বিকল্পধারার চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ আলমগীর কবীর ◢


তার এই আমেরিকায় যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “১৯৮২ সালে আমি আমেরিকায় ফিল্মের ওপর পড়াশোনার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলাম এবং পারিবারিকভাবে অর্থ জোগাড় করেছিলাম। এদিকে সুলতান তখন আমাদের মতো যুবকদের কাছে কিংবদন্তি। তার ওপর আহমদ ছফার একটি লেখা আমাদের সুলতানের ওপর চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্বুদ্ধ করে। আমরা তখন বিচ্ছিন্নভাবে বেশ কয়েকজন সুলতানের ওপর প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করার কথা ভাবছিলাম। আমরা যারা বিকল্পধারা নিয়ে ভাবছিলাম তাঁরা সুলতানের ওপর ছবি করাটা খুবই জরুরি মনে করছিলাম। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেন আমার সুলতানের প্রতি এই আগ্রহের বিষয়টি জানতেন। তখন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স করেছি। আনোয়ার ভাই আমাদের ক্যামেরার শিক্ষক ছিলেন। তিনি সবসময় উৎসাহ দিতেন ছবি বানানোর জন্য। আমি একদিন তাঁর জিগাতলার বাসায় গিয়ে যখন বললাম যে আমি তো পড়াশোনার জন্য বিদেশ চলে যাচ্ছি। উনি বললেন, আজকের কাগজ দেখেছো? আমি বললাম, না। উনি আবার বললেন, ইত্তেফাক খুলে দেখো, ব্যাক পেইজে বড় করে নিউজ শিল্পী সুলতান হাসপাতালে, মারাত্মকভাবে অসুস্থ। মনে আছে তুমি বলেছিলে সুলতানের ওপর ডকুমেন্টারি করবে। তুমি যদি এখন পড়তে বাইরে চলে যাও, ফিরে এসে দেখবে শিল্পী নেই। তোমার মনের মধ্যে কিন্তু একটা বিরাট আফসোস থেকে যাবে। আমি আনোয়ার ভাইকে বললাম, আমি বাইরে যাবার যাবতীয় কাজ সেরে ফেলেছি, আমি চলে যাব। তারপর জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডে ছয় নাম্বার বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। অনেক সময় নিচ্ছে সেদিন বাসটা, এটাও একটা কাকতালীয় ঘটনা। বাসটা এত দেরি না করলে হয়তো মাথার মধ্যে এত উল্টো বুদ্ধি আসত না। বাস আসছে না, আসছে না। এ সময় আমার মাথায় উল্টো বুদ্ধিটা এলো, আমি বিদেশে যাব না। ওই টাকা দিয়েই ইমিডিয়েটলি আমি সুলতানের ওপর ছবি বানানো শুরু করে দেব। দ্যাটস হাউ আই গট্ ইনটু ফিল্ম মেকিং।”

তারেক মাসুদ ‘আদম সুরত’ নির্মাণ শুরু করেন ১৯৮২ সালে। তার মূলধন ছিল পৌনে দুই লাখ টাকা। কিন্তু সুলতানের খামখেয়ালী, ভুলোমনা, উদাসীন স্বভাবের কারণে ওই ছবি নির্মাণ করতে লেগে যায় সুদীর্ঘ ৭ বছর। ছবির ব্যয় বেড়ে যায় বহুগুণ। সে সময় ছবির এই দীর্ঘসূত্রিতার কারণে নানা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ চলতে থাকে তার প্রতি। বন্ধুরা ঠাট্টা করে বলতে থাকেন, তারেক মাসুদ নতুন চলচ্চিত্র আন্দোলনের জন্ম দিচ্ছেন, যার নাম ‘সিনেমা-দেরীতে’। কারণ তখন বিশ্বব্যাপী নতুন সিনেমা আন্দোলনের নাম ছিল ‘সিনেমা-ভেরীতে’।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/13/1565705343466.jpg
◤ ১৯৮৪ সালে আদম সুরত চলচ্চিত্রের শুটিংয়ে তারেক মাসুদ ◢


কিন্তু এই দীর্ঘ ৭ বছর সুলতানের সাথে থেকে থেকে তিনি লাভ করেন নতুন এক জীবনদৃষ্টি, সুলতানের চোখ দিয়ে আবিষ্কার করেছেন যেন নতুন বাংলাকে। সুলতানের জীবনদর্শনও তাকে গভীরভাবে আলোড়িত করে, যা তার পরবর্তী কাজগুলিতে লক্ষ্যণীয়। চেতনে হোক কিংবা অবচেতনে, তারেকের কাজে সুলতানের প্রভাব বিদ্যমান। এ প্রসঙ্গে তারেক মাসুদ বলেন, “আদম সুরত বানাতে গিয়ে আমি যতই ইমপ্রাকটিক্যাল কাজ করি না কেন, এমন এক আলোকপ্রাপ্ত মানুষের সঙ্গে দীর্ঘদিন থাকার ও চলার ফলে আমার একটা আত্মোন্নয়ন ঘটেছে বলে আমি মনে করি। শুধু গ্রামবাংলা নয়, শিল্প সম্পর্কে, জীবন সম্পর্কে কিছু ধারণা আমার মধ্যে বিকশিত হয়েছে।”

এই ছিল তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র যাত্রার প্রারম্ভিক ভাগ। কিন্তু কে ভেবেছিল যে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার এক সাধারণ মাদ্রাসা ছাত্র কালক্রমে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বরপুত্র হয়ে উঠে উঠবে?

তারেক মাসুদ তার সমগ্র জীবনে যা যা দেখেছেন, যে যে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন; সেগুলিকেই তিনি পরবর্তী সময়ে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি তার শিল্পকর্মের মধ্যদিয়ে তার সময়কার সময়টিকে ধরতে চেয়েছেন। চিত্রায়িত করেছেন পেছনে ফেলে আসা সময়কেও। তার সময়কার বর্তমান এবং আবহমান বাংলার ইতিহাসকে তিনি ছুঁতে চেয়েছিলেন তার সৃষ্টিকর্মের মধ্যদিয়ে।

তারেক মাসুদ মৃত্যুর আগ অবধি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের অন্যতম নীতিনির্ধারক ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীন-ধারার চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বাংলাদেশের সবচেয়ে সুপরিচিত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ। তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি চলচ্চিত্রকার যাঁর চলচ্চিত্র পৃথিবীর প্রায় ৪৪টি দেশে বাণিজ্যিকভাবে প্রদর্শিত হয়েছে। এমন নজির বাংলা ভাষার চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে একমাত্র সত্যজিৎ রায় ছাড়া আর কারোই নেই।

অস্কার পুরস্কার প্রতিযোগিতায় তারেক মাসুদের মাটির ময়না (২০০২) একমাত্র চলচ্চিত্র যা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছে। ভুবনবিখ্যাত ‘কান’ চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁর ছবি মাটির ময়না ‘আন্তর্জাতিক সমালোচক’ পুরস্কার লাভ করেছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/13/1565705022586.jpg
◤ তারেক মাসুদ পরিচালিত মাটির ময়না সিনেমার পোস্টার ◢


এছাড়াও ২০১১ সাল পর্যন্ত তারেক মাসুদের চলচ্চিত্রকর্মসমূহের মধ্যে প্রামাণ্য চিত্রগুলো হচ্ছে : সোনার বেড়ি (১৯৮৭), আদমসুরত (১৯৮৯), আহ আমেরিকা (১৯৮৯), গণতন্ত্র মুক্তি পাক (১৯৯০), ইউনিসন (১৯৯২), মুক্তির গান (১৯৯৫), শিশুকণ্ঠ (১৯৯৭), মুক্তির কথা (১৯৯৯), নিরাপত্তার নামে (১৯৯৮), অন্য শৈশব (২০০২) এবং কানসাটের পথে (২০০৮)।

আর কাহিনীচিত্রসমূহ হচ্ছে : শামীম আখতারের সঙ্গে যৌথভাবে স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি সে (১৯৯৩), মাটির ময়না (২০০২), ক্যাথরিন মাসুদের সঙ্গে যৌথভাবে অন্তর্যাত্রা (২০০৬), স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি নরসুন্দর (২০০৯) এবং রানওয়ে (২০১০)।

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট ‘কাগজের ফুল’ নামক চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের লোকেশন ঠিক করার জন্য তারেক মাসুদ তার সহকর্মীদের নিয়ে পাবনার ইছামতী নদীর তীরে যান। লোকেশন-নির্বাচন শেষে দুপুরে ঢাকার উদ্দেশে তারেক মাসুদ তার গাড়িবহর নিয়ে রওনা দেন এবং খানিক পরে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে তারেক মাসুদের সঙ্গে ছিলেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাংবাদিক, সম্প্রচার কিংবদন্তি, টেলিভিশন সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ও বিশিষ্ট চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীর। তিনিও একই দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদের সাথে মারা যান। প্রাণ হারায় আরো ৩ জন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/13/1565704665207.jpg
◤ দুর্ঘটনায় নিহত হন তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর (ডানে) ◢


কাগজের ফুল ছাড়াও তারেক মাসুদের অনেকগুলো ছবি নির্মাণাধীন ছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশের লোকজ উৎসব, মেলা দিবস ইত্যাদি নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র এবং বাংলাদেশের সিনেমা হলের বেহাল অবস্থা নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্রের নির্মাণপ্রক্রিয়া প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল। আর, তার স্বপ্নের ছবি কাগজের ফুলের প্রেক্ষাপট এবং ব্যাপ্তি ছিলো বিশাল। ছবির বিষয়বস্তু ছিল ১৯৪৭ সালের দেশভাগ। এবং এই ছবিই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেটের ছবিতে পরিণত হতে যাচ্ছিল।

এই কিংবদন্তির প্রয়াণ দিবসে তার প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।

তথ্যসূত্র :
১. তারেক মাসুদের দেয়া সাক্ষাৎকার
২. উইকিপিডিয়া
৩. বাংলাপিডিয়া ও অন্যান্য

   

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

  • Font increase
  • Font Decrease

‘পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত/ সবুজে হদুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত/ ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে/ ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলে শুয়েছে মাঠের পরে/ কৃষাণ কনের বিয়ে হবে, তার হলদি কোটার শাড়ী/ হলুদে ছোপায় হেমন্ত রোজ কটি রোদ রেখা নাড়ি/ কলমী লতার গহনা তাহার গড়ার প্রতীক্ষায়/ ভিনদেশী বর আসা যাওয়া করে প্রভাত সাঁঝের নায়।’ পল্লীকবি জসীম উদদীনের ‘ধান ক্ষেত’ কবিতার অপূর্ব চিত্রায়ন কৃষকের শ্রম-ঘাম আর প্রকৃতির তরফে। কাব্যে-পঙক্তির বিমূর্ত চিত্র মূর্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ মাঠে। কিষান-কিষানির বুক ভরা আশার সার্থক রূপায়ন হতে চলেছে এ-মৌসুমে।

এখন ভরা বৈশাখ। এ-সময়টা বোরো ধানের। বোরো ধান দেশের খাদ্যচাহিদার অন্তত ৫৫ শতাংশ মিটিয়ে থাকে। দেশের হাওরভুক্ত ৭টি জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরে এই বোরোর চাষ বেশি হয়ে থাকে। এই ধান অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে দেশের খাদ্যচাহিদায় ঘাটতি পড়ে না। তাই এই ধান চাষ থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া, বিশেষ করে রোদের উপস্থিতি অতি জরুরি। বর্তমানে সে পরিস্থিতি চলছে।

সিলেট অঞ্চলের মানুষ বলে এই অঞ্চলের মানুষের চাওয়া-পাওয়া, হতাশা-উচ্চাশার সঙ্গে আমি পরিচিত। তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে টানছি। তাদের সঙ্গে থেকে জেনেছি, বোরো মৌসুমে নির্বিঘ্নে ঘরে ফসল তোলা কতটা জরুরি। গবাদি পশুর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি খড় সংরক্ষণও। তীব্র রোদ এখানে সমস্যার নয়, এটা বরং আনন্দের। কারণ এই রোদ গা পোড়ালেও বুক ভরা আশার সার্থক বাস্তবায়নের পথ দেখায়। দেশের যে খাদ্যচাহিদা, যে খাদ্যনিরাপত্তা সেটা এই বোরো ধানের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই চাষ থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে দরকার হয় প্রকৃতির সহায়তা। এবার এখন পর্যন্ত সে সহায়তা আছে, যদিও এ মাসের শুরুর দিকে একবার ঝড়বৃষ্টিসহ শঙ্কার কালমেঘ হাতছানি দিয়েছিল। সেটা আপাতত দূরে সরেছে।

কিষান-কিষানির দরকার এখন তীব্র রোদ। তারা এটা পাচ্ছে। দেশে তীব্র তাপদাহ। এখানেও এর ব্যতিক্রম নয়। তবু তারা এই রোদের প্রার্থনায় রয়েছে। বৃষ্টি এখন তাদের কাছে দুর্যোগ-সম। কারণ এই বৃষ্টি এবং অতি-বৃষ্টিসৃষ্ট বন্যা তাদের স্বপ্নসাধ গুঁড়িয়ে ভাসিয়ে নিতে পারে সব। ২০১৭ সালের দুঃসহ স্মৃতি এখনও বিস্মৃত হয়নি সুনামগঞ্জের কৃষকেরা। সে বছর সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৩৭ হাওরের ফসল বন্যায় এবার ভেসে গিয়েছিল। গতবার কৃষক নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তুলেছেন। এরআগের বছর অন্তত ২০টি হাওরের ফসলহানি হয়েছিল বন্যায়।

প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ক্ষেতের ফসল, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা। এখানে প্রচণ্ড তাপদাহ তাই প্রভাব ফেলে সামান্যই। রোদে পুড়ে, প্রয়োজনে ছাতা মাথায় দিয়ে কিষান-কিষানিরা স্বপ্ন তোলেন ঘরে। তারা বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা না করে বরং রোদ আরও কিছুদিন অব্যাহত রাখার প্রার্থনায় বসেন। কৃষকেরা পরিমিত বৃষ্টি চায় চৈত্র মাসে, বৈশাখে চায় খাঁ খাঁ রোদ্দুর, কারণ এই রোদে সোনালী ধান ঘরে ওঠে। লোককথার প্রচলিত, ধান তোলার মৌসুমে ঝড়বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য হাওরবাসীরা তন্ত্রসাধক বা ‘হিরাল’ ও ‘হিরালি’-দের আমন্ত্রণ জানাতেন। তারা এসে মন্ত্রপাঠ করে ঝড়বৃষ্টি থামানোর জন্য চেষ্টা করতেন। লোকায়ত বিশ্বাস থেকে আগেকার মানুষজন এমন আচার পালন করতেন। এসবে সত্যি কাজ হতো কিনা সেটা বিতর্ক এবং ব্যক্তি-বিশ্বাসসাপেক্ষ, তবে এই হিরাল-হিরালিদের আমন্ত্রণ বলে বৈশাখে একদম বৃষ্টি চায় না হাওরের কৃষক।

হাওরপারের মানুষেরা যখন রোদ অব্যাহত থাকার প্রার্থনায়, তখন দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহে পুড়তে থাকা মানুষেরা আছেন বৃষ্টিপ্রার্থনায়। দেশের জায়গায়-জায়গায় বৃষ্টি প্রার্থনায় ইস্তিস্কার নামাজ পড়া হচ্ছে, গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদ আসছে এর। কোথাও প্রবল বিশ্বাসে কেউ কেউ ‘ব্যাঙের বিয়ে’ দিচ্ছেন, এটাও বৃষ্টি প্রার্থনায়। সামাজিক মাধ্যমে গরমের তীব্রতার আঁচ মিলছে, বৃষ্টি নাকি ধান—কোনটা জরুরি এই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। কেবল তাই নয়, বাংলাদেশের প্রচণ্ড তাপদাহ নিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে দেশের মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া। গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে টানা দ্বিতীয় বছর বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের ঘোষণাও এসেছে। বৃষ্টি-প্রার্থনায় নামাজের আয়োজনের কথাও এসেছে বিশ্বমিডিয়ায়।

একদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ, অন্যদিকে খাদ্যনিরাপত্তার প্রধান উপকরণ ধান ঘরে তোলার অনিশ্চয়তা—তবু অনেকের কাছে সাময়িক স্বস্তিই যেন মুখ্য। অথচ আর দিন দশেক বেরো আবাদ-এলাকায় বৃষ্টি না নামলে ধানগুলো ঘরে ওঠত কৃষকের। নিশ্চিত হতো খাদ্যনিরাপত্তার।

প্রকৃতির ওপর আমাদের হাত নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই; তবু মনে করি আমাদের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশে কৃষকদের গুরুত্ব থাকা উচিত। আমাদের চাওয়ায় হয়তো প্রকৃতির রীতি বদলাবে না, তুমুল রোদ্দুরের দেশে হঠাৎ বৃষ্টি নামবে না, তবে ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত রোদ্দুর কামনায় কৃষক স্বস্তি পাবে; ভাবতে পারবে এই দেশ আছে তাদের সঙ্গে।

কৃষকের জয় হোক। অন্তত বোরো-এলাকায় প্রকৃতি কৃষকের সঙ্গে থাকুক।

;

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;