সুখের এপাশ ওপাশ



ড. শাখাওয়াৎ নয়ন

  • Font increase
  • Font Decrease

ভুটানের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের নাম ‘মিনিস্ট্রি অফ হ্যাপিনেস’। নামটা সুন্দর না? আমার কাছে কিন্তু অনেক সুন্দর মনে হয়েছে। ভুটানের রাজা তো রীতিমত একজন অসাধারন মোটিভেশনাল স্পিকার। দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনো দেশের সরকার প্রধান এত সুন্দর করে বক্তব্য দিতে পারে কি না,আমার সন্দেহ আছে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে একটা আন্তর্জাতিক সেমিনারে আমার দেখা হয়েছিল।

আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘সুখ বলতে তোমরা কি বোঝো?’ তিনি আমাকে যা বলেছিলেন, অল্প কথায় তার মানে হচ্ছে- ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’। অস্বীকার করি কিভাবে? করিওনি। তবে বিষয়টি নিয়ে জানার এবং কিছু লেখার আগ্রহ পুষে রেখেছিলাম। তবে আজ কেন সুখ বিষয়ক এই লেখায় প্রয়াসী হলাম? কারণ আজ আমার জন্মদিন (২০ মে)। আপাতঃ বিবেচনায় সুখের দিন।

চলুন, সুখের আলোচনায় ফিরে যাই। সুখ কি? কেমন? সুখের বয়স কত? সুখের হায়াত-মউত? সুখের রঙ? পরিমান? সুখ তুমি কি বড় জানতে ইচ্ছে করে, তাই না? সমাজবিজ্ঞানীরা, মনোবিজ্ঞানীরা মানুষের সুখে থাকা বিষয়ক কতগুলি প্রশ্ন করেন, আর সেই প্রশ্নের উত্তরগুলিকে সম্পদের পরিমান, রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার মতো কিছু আর্থসামাজিক উপাদানের সাথে মিলিয়ে দেখেন। বায়োলজিস্টরা একই প্রশ্নের সেট ব্যবহার করেন, কিন্তু মানুষের উত্তরগুলিকে বায়োকেমিক্যাল ও জেনেটিক উপাদানগুলির সাথে সম্পর্কিত করেন। এগুলির মাধ্যমে খুবই ভিন্ন ধরনের ফলাফল পান। চলুন দেখা যাক, কী ধরনের ফলাফল তারা পেয়েছেন?

বায়োলজিস্টরা (জীববিজ্ঞানী, স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী) মনে করেন, লক্ষ লক্ষ বছর ধরে বিবর্তনের মাধ্যমে বায়োলজিক্যাল মেকানিজম আমাদের মানসিক ও আবেগের জগতকে পরিচালনা করে আসছে। অন্যান্য মানসিক অবস্থার মতোই, আমাদের মানসিক সুখও বাহ্যিক প্যারামিটার দ্বারা (যেমন, বেতন, সামাজিক মর্যাদা, ক্ষমতা এবং সম্পর্ক বা রাজনৈতিক অধিকার) খুব একটা নির্ধারিত হয় না। বরং স্নায়ু, নিউরণ, সিনাপসের এক জটিল প্রক্রিয়ায় এবং সেরোটোনিন, ডোপামিন এবং অক্সিটোসিনের মতো বিভিন্ন বায়োকেমিক্যালের দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে। তার মানে কি দাড়ালো? মানুষের সুখ কিংবা অসুখ সব কিছুই ঘটে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে? তাহলে কি কোনো বিশেষ ঘটনা, ইভেন্ট কিংবা উপলক্ষ্যই সুখের নিয়ামক নয়?

একজন রাজনীতিবিদ যদি নির্বাচনে জয়লাভ করেন, তাহলে কি তিনি খুশি হন না? কিংবা লটারী বিজয়, বাড়ি কেনা/নির্মাণ, চাকুরিতে প্রোমোশন অথবা এমনকি সত্যিকারের ভালোবাসা খুঁজে পেয়ে কেউ কি কখনো সুখী হয় না? বায়োলজিস্টরা এসব কী বলছেন?

বায়োলজিস্টরা তথ্য প্রমাণ দিয়ে জোরালোভাবেই বলছেন, একজন ব্যক্তি লটারী জিতে অথবা একটি নতুন প্রেমের খোঁজ পেয়ে আনন্দে লাফাচ্ছেন, তার লাফানোর অর্থ আসলে টাকা-পয়সা কিংবা প্রেমিক/প্রেমিকার জন্য নয়। ওসব আসলে তার রক্তে প্রবাহিত বিভিন্ন হরমোনের প্রতিক্রিয়া। লাফা-ঝাপার মাধ্যমে সে মস্তিস্কের বিভিন্ন অংশে ইলেক্ট্রিক সিগন্যালের ঝড় ও ঝলকানির প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন মাত্র। কী অদ্ভুত কথা! তাহলে এতো দিন যা জানলাম, বুঝলাম-সবই ভূল?

বায়োলিজিস্টদের মতে, বিবর্তন প্রক্রিয়ায় সুখের কোনো ধরনের প্রাকৃতিক নির্বাচন কাজ করে না, সুখে থাকার ক্ষমতা কিংবা বৈশিষ্টগুলি পরবর্তী প্রজন্মে স্থানান্তরিত হয় না। বিবর্তন আমাদের খুব বেশি সুখী বা অসুখী কোনোটাই রাখতে চায় না। প্রাকৃতিক বিবর্তন আমাদের এমনভাবেই তৈরি করেছে যে, আমরা ক্ষনস্থায়ীভাবে তীব্র আনন্দের উপভোগ করতে পারবো, কিন্তু তা কখনোই চিরস্থায়ী হবে না। আগে হোক বা পরে হোক তা এক সময় কমে যাবে। এটি আমাদের একটি ক্ষনস্থায়ী আনন্দের ঢেউ উপভোগ করতে সক্ষম করে তোলে। কিন্তু তা চিরতরের জন্য টিকে থাকে না। আগে বা পরে এই ঢেউ স্তিমিত হয়ে আসে এবং অপ্রীতিকর কোনো অনুভুতি সেখানে প্রতিস্থাপিত হয়, যাকে আমরা ‘দুঃখ’ বলি।

এক্ষেত্রে আমরা যদি যৌণ সঙ্গমের কথাই চিন্তা করি, যা সবচেয়ে আনন্দদায়ক অনুভূতি। জীবজগৎ রক্ষা করার জন্য প্রকৃতি চায় সকল প্রানী যৌণ সঙ্গম করুক। প্রশ্ন হচ্ছে, সকল প্রানী যৌণ সঙ্গম কেন করবে? বিশেষ করে মানুষের যৌণ সঙ্গমে ঝক্কি-ঝামেলাও কম না। প্রকৃতি উক্ত ঝক্কি-ঝামেলা পোহানোর জন্য পুরষ্কারের ব্যবস্থা করে। পুরষ্কারটা কি? প্রকৃতি বলে, ‘তুমি যদি যৌণ সঙ্গম করো, আমি তোমাকে আনন্দ দিব। এমন আনন্দ দিব যা তুমি আর কোনো কিছুতেই পাবে না’। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, যৌণতার ঐ চরম সুখের অনুভূতিও দ্রুত শেষ হয়ে যায়। তার মানে কোনো সুখেরই স্থায়ীত্বকাল খুব বেশি না। যে কারনে আমরা দুঃখকেই বেশি করে দেখি। একই সাথে সুখ যত দ্রুত চলে যায় কিংবা শেষ হয়ে যায়; দুঃখ তত তাড়াতাড়ি চলেও যায় না কিংবা শেষও হয় না। কেন? তাহলে কি আমাদের দুঃখগুলো কাছিমের মতো? ধীর গতি সম্পন্ন এবং দীর্ঘজীবী?

কোনো কোনো গবেষক, মানুষের বায়োকেমিস্ট্রিকে এয়ার-কন্ডিশনিং সিস্টেমের সাথে তুলনা করে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করেছেন। প্রকৃতিতে যেমন একেক সময় একেক রকম তাপমাত্রা থাকে, কিন্তু প্রকৃতির তাপমাত্রা যা-ই থাকুক এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম যেমন ঘরের তাপমাত্রাকে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় রাখে। তেমনি মানব দেহের সুখের সিস্টেমও ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হয়। কারণ প্রত্যেক মানুষের দেহে একটি ইউনিক সিস্টেম আছে, যা তার জন্য সুখের কিংবা দুঃখের মাত্রা নির্ধারণ করে। আমরা যদি মানুষের সুখের মাত্রাকে এক থেকে দশ পর্যন্ত একটি গুনগত স্কেলে পরিমাপ করি তাহলে দেখা যায় যে, কিছু মানুষ একটি আনন্দদায়ক বায়োকেমিক্যাল সিস্টেম নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। যাদের মেজাজ/মর্জি ছয় থেকে দশ পর্যন্ত উঠানাম করে। যা একটা সময় আট মাত্রায় স্থিতিশীল হয়। এই ধরনের একজন ব্যক্তি বেশ সুখী, এমনকি তিনি যদি কারাগারে থাকেন কিংবা তার সকল টাকা পয়সা ষ্টক এক্সচেঞ্জে হারিয়েও ফেলেন, কিংবা তিনি যদি ডায়াবেটিকসের রোগীও হন, তারপরেও তিনি সুখী মানুষই থাকবেন।

আবার এক ধরনের মানুষ পাওয়া যায়, যাদের স্কোর তিন থেকে সাতের মধ্যে উঠানামা করে এবং একটা সময় পাঁচ মাত্রায় এসে স্থিতিশীল হয়। এই ধরনের মানুষের যদি সব কিছুও থাকে, তারপরেও তারা সাধারনত অসুখী হয়। তাদের যত অর্জন কিংবা প্রাপ্তিই হোক, কোনোভাবেই বিষন্নতা থেকে বের হতে পারে না। এই ধরনের একজন মানুষ একদিন সকালে যদি কোটি টাকার লটারী জিতে যায়, দুপুরে যদি শোনে এইডস এবং ক্যান্সারের টীকা আবিস্কার হয়েছে, বিকেলে যদি টেলিভিশনে দেখে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চিরস্থায়ী শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, সন্ধ্যায় যদি দেখে পাঁচ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া তার সন্তান বাড়ি ফিরে এসেছে, এত কিছুর পরেও সে সাত মাত্রার বেশি সুখী হতে পারে না। কারণ ঘটনা যা-ই ঘটুক না কেন, সে কেবলমাত্র সর্বোচ্চ সাত মাত্রায় সুখী হবার ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছে কিংবা গড়ে উঠেছে।

এবার আপনার পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুদের কথা এক মুহুর্তের জন্য চিন্তা করুন। আপনি এমন কিছু মানুষকে অবশ্যই খুঁজে পাবেন, যারা সব সময়ই অপেক্ষাকৃত আনন্দে থাকে, তাদের জীবনে যা কিছুই ঘটুক না কেন। আবার এমন কিছু মানুষও খুঁজে পাবেন, যারা অধিকাংশ সময় বিষন্ন/হতাশ থাকে। তাদের জীবনে যত প্রাপ্তিই ঘটুক না কেন, তা তাদের জৈব-রসায়ন পরিবর্তন করে না। মস্তিষ্কের ভিতরে নিউরনে কেবলমাত্র ক্ষনিকের ঝলকানি/ঢেউ তৈরি করে, তারপর আবার তার সেট পয়েন্টে ফিরে যায়।

উপরে আলোচিত মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক ফলাফলের সঙ্গে এটি কিভাবে পরিমাপ করবেন? যেমন ধরুন, বিবাহিত দম্পতিরা কি অবিবাহিতদের চেয়ে গড়ে বেশি সুখী? প্রথমত, এই ফলাফলগুলি পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে কার্যকারণ সম্পর্কের দিকটি হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে গবেষকদের ধারনার বিপরীত হতে পারে। একথা সত্য যে অবিবাহিত ও তালাকপ্রাপ্তদের তুলনায় বিবাহিতরা বেশি সুখী। তবে এর মানে এই নয় যে, বিয়ে মানুষের জীবনে সুখ নিয়ে আসে। এমনও হতে পারে, সুখের অনুভূতিই মানুষকে বিয়ে করতে উদ্বুদ্ধ করে। অথবা আরো সঠিকভাবে যদি বলা হয়, সেরোটোনিন, ডোপামিন এবং অক্সিটোসিন এর মতো উপাদানগুলি মানুষকে বিয়ে করতে উদ্বুদ্ধ করে এবং বজায় রাখে। যারা আনন্দদায়ক বায়োকেমিস্ট্রি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে, তারা সাধারনত সুখী ও সন্তুষ্ট হয়ে থাকে। এই ধরনের মানুষের মধ্যে আকর্ষনীয় স্বামী কিংবা স্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা বেশি থাকে। তাদের মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটার সম্ভাবনা কম থাকে। কারণ একজন বিষণ্ণ ও অসন্তুষ্ট মানুষের চেয়ে একজন সুখী মানুষের সাথে সংসার করা সহজ।

বায়োলজিস্টরা যুক্তি দেন যে, সুখ বায়োকেমেস্ট্রি দ্বারা নির্ধারিত। কিন্তু তারা মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক কারণগুলিকেও অস্বীকার করেন না। মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক কারণগুলিও সুখকে প্রভাবিত করে। কারণ আমাদের মানসিক সিস্টেমের পুর্ব নির্ধারিত সীমানার (রেঞ্জের) মধ্যে কিছুটা মুভ করার স্বাধীনতা আছে, কিন্তু নির্ধারিত সীমানার চেয়ে উপরে অথবা নিচের মাত্রা অতিক্রম করার স্বাধীনতা নেই। এতে কি লাভ হয়? এটি বিবাহ এবং বিবাহ বিচ্ছেদ এই দুই সীমানার মধ্যবর্তী স্থানে প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন, যার সুখের মাত্রা পাঁচ স্কোরে স্থিতিশীল, সে হয়তো খুশিতে বেপরোয়াভাবে রাস্তায় নেমে জামা-কাপড় খুলে নাচবে না। কিন্তু কোনো না কোনো আনন্দের ঘটনায়, তাকে মাঝে-মধ্যে সাত স্কোর পর্যন্ত সুখ ভোগ করতে সক্ষম করে তুলতে পারে। তার সুখ শেষ হয়ে গেলে আবার পাঁচ মাত্রায় স্থিতিশীল হয়ে যাবে। আবার কোনো বিরাট খারাপ ঘটনায়ও তার সুখ কখনই তিন মাত্রার নিচে নামবে না।

আরেকটা উদাহরণ দেয়া যাক, একজন মধ্যযুগীয় কৃষকের সাথে বর্তমান যুগের প্যারিস নিবাসী একজন চিফ এক্সিকিউটিভ ব্যাংকারের সাথে তুলনা করুন। মধ্যযুগীয় কৃষক মাটির ঘরে বসবাস করতো, আর ব্যাংকার সর্বাধুনিক বাড়িতে বসবাস করে। এদের মধ্যে কে বেশি সুখী? যার মস্তিষ্ক সেরোটোনিনের পরিমান বেশি নিঃসরণ করে/করেছে সে-ই বেশি সুখী। সুতরাং সুখের সাথে সময়কাল, লাইফস্টাইল, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ-সম্পত্তির কোনো সম্পর্ক নেই। সেরোটোনিন-ই মূলকথা।

আমরা যদি সুখের শুধু জৈবিক দিকটি বিবেচনা করি তাহলে সুখের ঐতিহাসিক দিকটির গুরুত্ব কমে যায়। কেননা আমরা জানি, মানব জীবনে ঐতিহাসিক ঘটনা প্রভাব ফেলে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, বেশিরভাগ ঐতিহাসিক ঘটনা আমাদের বায়োকেমেস্ট্রিতে কোনো প্রভাব ফেলে না। ইতিহাস বাহ্যিক উদ্দীপনাকে পরিবর্তন করতে পারে মাত্র, তবে এটি দেহের অভ্যন্তরে সেরোটোনিনের মাত্রা পরিবর্তন করতে পারে না; আর তাই ইতিহাস কিংবা ঐতিহাসিক ঘটনাবলী মানুষকে সুখী করতে পারে না। এটি কেবল ব্যক্তিগত জীবনেই না, সামাজিক এবং রাজনৈতিক জীবনেও একইভাবে কাজ করে। ফরাসী বিপ্লবের কথা চিন্তা করুন। বিপ্লবীরা রাজাকে হত্যা করলো, কৃষকদের ভূমি দিল, মানুষকে সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতা দিল। সমগ্র ইউরোপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করে দিল। তারপরেও ফরাসীদের বায়োকেমেস্ট্রিতে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেনি। যাদের শরীরে আনন্দদায়ক বায়োকেমেস্ট্রি ভালো ছিল, তারা বিপ্লবের আগে যেমন সুখী ছিল, বিপ্লবের পরেও সুখী ছিল। যারা বিষণ্ণ, হতাশ ধরনের মানুষ ছিল, তার বিপ্লবের আগে পরে একই ছিল। যারা রাজার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করতো, তারা পরবর্তীতেও নতুন ব্যবস্থার/শাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।

যেহেতু বায়োকেমেস্ট্রি ছাড়া আর কোনো কিছুই (ধন-সম্পদ, স্বাধীনতা, বিপ্লব) মানুষকে স্থায়ীভাবে সুখী করতে পারে না, তাহলে কি মানুষের ব্রেন কেমেস্ট্রি আরো ভালোভাবে বুঝতে পারলে এবং যথাযথ চিকিৎসা আবিস্কার করতে পারলে অসুখী মানুষকে সুখী করা যাবে? সম্ভবতঃ করা যাবে। আমরা জানি, নতুন যুগের জনপ্রিয় স্লোগান হচ্ছে-‘হ্যাপিনেস বিগেইন্স উইদিন’। আপনাদের নিশ্চয়ই ১৯৩২ সালে বিশ্ব মহামন্দার সময় প্রকাশিত এডলাস হাক্সলির সেই বিখ্যাত উপন্যাস ‘ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’ এর কথা মনে আছে। উক্ত উপন্যাসে তিনি একটি সুখী রাষ্ট্রের প্রতিচ্ছবি এঁকেছেন, যেখানে পুলিশ ও ব্যালটের বদলে রাজনীতির ভিত্তি হিসেবে মনস্তাত্ত্বিক ড্রাগ জায়গা করে নিয়েছে। প্রত্যেক মানুষ প্রতিদিন সিন্থেটিক ড্রাগ ‘সোমা’র একটি ডোজ নেয়, (আজকের দিনের ভয়ংকর ড্রাগ কোকেইন, হেরোইন কিংবা ইয়াবার মতো নয়) যা উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতাকে কোনো প্রকার ক্ষতিগ্রস্ত না করেই মানুষকে সুখী করে। উক্ত রাষ্ট্রে যা-ই ঘটুক না কেন, সবাই তাদের বর্তমান অবস্থায় সবচেয়ে বেশি সন্তুষ্ট, তাই সেখানে কখনো যুদ্ধ, বিপ্লব, স্ট্রাইক অথবা বিক্ষোভ হয় না। সকলই সুখী জীবন-যাপন করে। আমিও এমন একটি স্বর্গীয় পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি, যেখানে পৃথিবীর সকল প্রাণী সুখী হবে।


লেখক: কথাসাহিত্যিক, একাডেমিক, ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া।

   

চাকরি ছেড়ে বসের সামনেই ঢোল বাজিয়ে নাচলেন যুবক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নিত্যদিনের অফিসের কর্মপরিবেশে অনেকের মধ্যেই 'বিরক্তি' চলে আসে। তবুও ধৈয্য নিয়ে সব সহ্য করে টিকে থাকার জন্য চালিয়ে যান লড়াই। তবে এ যাত্রায় সকলের দ্বারা টিকে থাকা সম্ভব হয় না। অফিসের 'বিষাক্ত' কর্মপরিবেশে অনেকেই ভোগেন মানসিক সমস্যায় কিংবা ব্যক্তিজীবনে। এমন পরিবেশ থেকে বাঁচতে একেক জন একেক পন্থা অবলম্বন করে থাকেন।

তবে অনিকেত নামের এক যুবক এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে যা করেছেন নেট দুনিয়ায় তা রীতিমতো ভাইরাল। এসব থেকে মুক্তি পেতে চাকরিটাই ছেড়ে দিয়েছেন এই যুবক। এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি, বসের সামনেই ঢাকঢোল বাজিয়ে নেচে উদযাপন করেছেন এমন মুহূর্তের।

ঘটনাটি ভারতের পুনে রাজ্যের। অনিকেত নামের ওই যুবক বিক্রয় সহযোগী হিসেবে চাকরি করতেন।

তার এমন উদযাপনের একটি ভিডিও ইন্সটাগ্রাম শেয়ার করেছেন অনীশ ভগত।

ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, গত তিন বছর ধরে এই কোম্পানির সাথে কাজ করেও বেতন খুব একটা বাড়েনি। এছাড়াও অফিসের বসের দ্বারাও তাকে বিভিন্ন সময়ে অপমানিত হতে হয়েছে।

তাই তার কাজের শেষ দিনে বন্ধুরা অফিসের বাইরে ঢোল নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন এবং নেচেছিলেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, এ ঘটনায় তার বস অনেক উত্তেজিত হয়েছেন। পাশাপাশি তার বস লোকজনকে ধাক্কা দিয়েছেন এবং চিৎকারও করেছেন।

ভিডিওটির ক্যাপশনে ভগত লিখেছেন, আমি মনে করি আপনারা অনেকেই এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারবেন। আজকাল বিষাক্ত কাজের সংস্কৃতি খুব বেশি দেখা যায়। সম্মান এবং অধিকারের অভাব খুবই সাধারণ। অনিকেত তার পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। আমি আশা করি এই গল্প মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।

পোস্ট করা ভিডিওটি এক মিলিয়নেরও (১০ লাখের বেশি) বেশি ভিউ পেয়েছে। পোস্টটিতে অসংখ্য লাইক ও কমেন্টও রয়েছে।

একজন ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি জানি না কেন এটি আমাকে এত সন্তুষ্ট করেছে।'

আরেকজন লিখেছেন, 'নাচটি আমাকে অন্য মাত্রার তৃপ্তি দিয়েছে।'

'আপনি সত্যিই আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ইতিবাচক এবং উত্সাহী ব্যক্তি'- তৃতীয় একজন ঠিক এভাবেই নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন।

তথ্যসূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস 

;

অভয়ারণ্যে মানুষ যখন বন্দিখাঁচায়



প্রমা কোয়েল, ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চিড়িয়াখানা, নানানরকম পশুপাখি ও প্রাণীর বন্দিশালা। কেবল রং-বেরঙের চিড়িয়াই নয়; বাঘ, সিংহ, ভালুক, বানর, গণ্ডারসহ কত বন্যপ্রাণীই না খাঁচায় বন্দি থাকে!

চিড়িয়াখানায় রাখতে বন্য প্রাণীদের প্রকৃতির স্বাধীন জীবন থেকে ছিনিয়ে আনা হয়। তাদের খাঁচায় বন্দি করা হয় যেন, মানুষ তাদের দেখে আনন্দ পায়। অনেক প্রাণীর জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি খাঁচাতেই কেটে যায়।

ছোট থেকে বড় সব বয়সের মানুষই চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন। শিশুরা না হয় অবুঝ! তবে যারা প্রাপ্তবয়স্ক তারাও চিড়িয়াখানায় এই বন্দি প্রাণীদের জীবনকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারেন না।

এশিয়ার বড় দেশ চীনে রয়েছে, এক অদ্ভুত চিড়িয়াখানা। চংকিংয়ে অবস্থিত সেই চিড়িয়াখানার নাম ‘লেহে লেদু বন্যপ্রাণী চিড়িয়াখানা’। একে ‘রিভার্স জু’ (বিপরীত চিড়িয়াখানা) বলেও ডাকা হয়।

এখানেও মানুষ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে পশু দেখতে আসেন। তবে একেবারেই ভিন্ন উপায়ে। মূলত, একটি খাঁচা রয়েছে, যেখানে মানুষদের সেই খাঁচায় পুরা হয়। তারপর সেই খাঁচাবন্দি মানুষদের নিয়ে রাখা হয়, অভয়ারণ্যে। সেখানে বন্য প্রাণীরা মানুষের খাঁচার চারপাশে অবাধে ঘুরতে থাকে। চিড়িয়াখানায় বন্দি প্রাণীদের বন্দিজীবনের এক প্রতীকী দৃশ্য!

অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের জন্য এটি এক নতুন অভিজ্ঞতা!

অভয়ারণ্যে খাঁচায় বন্দি মানুষ, ছবি-সংগৃহীত

খুব কাছে থেকে হিংস্র বন্যপ্রাণীদের মুক্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যেমন লোমহর্ষক, ঠিক তেমনই আতঙ্কজনকও হতে পারে। বিপরীতধর্মী এই চিড়িয়াখানাটি সবার জন্য প্রথম উন্মুক্ত করা হয়, ২০১৫ সালে। তখন বিশ্বের সংবদমাধ্যমের শিরোনাম কেড়েছিল এ চিড়িয়াখানাটি।

একটি শক্ত লোহার খাঁচাবেষ্টিত দর্শনার্থীদের একটি ট্রাকে তুলে অভয়ারণ্যে রেখে দেওয়া হয়। সেখানে তাদের ঘিরে ধরে ঘুরতে থাকে বাঘ, ভালুক, সিংহ ইত্যাদি হিংস্র প্রাণী।

এ বিষয়ে চিড়িয়াখানার প্রধান চ্যান লিয়াং বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা রক্ষার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। খাঁচার ফাঁকা অংশ দিয়ে হাতের আঙুলও বের না করার নির্দেশনা দেওয়া থাকে।

তবে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই চিড়িয়াখানাটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে অনেক। এর নৈতিকতা নিয়ে অনেকে প্রশ্নও তুলেছেন।

অনেকে মনে করেন, এরকম ব্যবস্থাপনায় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কারণ, শিকারী প্রাণীগুলো প্রচণ্ড হিংস্র। তাই, সে কারণে যে কোনো সময় বিপজ্জনক ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

আবার এরকম চিন্তাভাবনার প্রশংসাও করেছেন অপর একটি পক্ষ। তাদের বক্তব্য, পৃথিবীটা কেবল মানুষদের নয়। প্রকৃতিতে সব প্রাণীদের একটা ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। তাদের বন্দি করে রাখা মানুষের উচিত নয়। কারণ, মুক্ত প্রকৃতিতে বিরাজ করার অধিকার সব প্রাণীরই রয়েছে।

তাদের মন্তব্য, আমরা প্রাণীদের আবাসস্থল বনজঙ্গল সব উজাড় করেছি। সে কারণে তাপমাত্রাও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। আবার প্রাণীদের বন্দি রেখে তাদের জীবন চরম দুর্বিষহ করে তুলি।

চাইলে এবং সুযোগ পেলে এই ধরনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে চিড়িয়াখানাটি ঘুরে আসতে পারেন বৈকি!

তথ্যসূত্র: এনিমেল অ্যারাউন্ড দ্য গ্লোব

;

৫ বছরের শিশুর বিস্ময়কর প্রতিভা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বয়স সবে ৫ কিংবা ৬। এই বয়সেই তার প্রতিভা দেখে অবাক হবে যে-কেউ!

গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভিডিওটি ১ মিলিয়নের (১০ লাখের বেশি) বেশি মানুষ দেখেছেন। খবর এনডিটিভি। 

ভিডিওতে রিলি নামের ওই শিশুটিকে প্রথমে শ্বাস নিতে দেখা যায়। তারপর সে একটি শক্তিশালী গর্জন দিয়ে শ্বাস ছাড়ে। ওই গর্জনটি হুবুহ সিংহের গর্জনের অনুরূপ।

রিলির মা অ্যামি ভিডিওটি এক্সে শেয়ারের পরই তা ভাইরাল হয়ে যায়। শিশুটির এমন নিখুত দক্ষতা দেখে মুগ্ধ দর্শকরা। ভিডিওটিতে অনেকেই নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, এত অল্প বয়সে এমন বাস্তবসম্মত গর্জন তৈরি করার রিলির ক্ষমতার বিস্ময় প্রকাশ করে।

আরেকজন লিখেছেন, শিশুরা খুব দ্রুত শিখে। তার এমন প্রতিভা সত্যিই অবাক করার মতো।

;

বান্টি গ্রাম: উড়ছে রং-বেরঙের কাপড়



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বান্টি গ্রামের মাঠে শুকাতে দিচ্ছেন বাটিকের রং করা কাপড়/ছবি: নূর এ আলম

বান্টি গ্রামের মাঠে শুকাতে দিচ্ছেন বাটিকের রং করা কাপড়/ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশেই বান্টি গ্রাম। বাটিকের গ্রাম বলেই এর পরিচিতি। এখানে ঘরে ঘরে বাটিক-ব্লকের কাজ চলে। গ্রামজুড়ে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০০ কারখানা। এই গ্রামে দিনরাত কাজ করেন হাজারো শ্রমিক। এই কাজে তাদের সংসার চলে। বান্টি গ্রামের কর্মময় জীবন চিত্র তুলে এনেছেন বার্তা২৪.কম এর ফটো এডিটর নূর এ আলম। 

বান্টি গ্রামে থ্রিপিস, ওড়না, সালোয়ার, কামিজ, বিছানার চাদর ও বালিশের কাভারে বাটিকের কাজ করা হয়/ছবি: নূর এ আলম


 

দূরদূরান্ত থেকে পাইকাররা এসব কিনতে আসেন। তাদের হাত ধরেই এসব কাপড় চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে


কাপড় রং করার আগে প্রতিটি কারখানায় গরম পানিতে রং প্রস্তুত করা হয়/ছবি: নূর এ আলম

 

কাপড়ের রং পাকা করতে সেদ্ধ করা হচ্ছে।/ছবি: নূর এ আলম


কয়েক ধাপে চলে কাপড়ে বাটিকের করার কাজ/ছবি: নূর এ আলম


রং মেশানোর প্রক্রিয়াটা ঠিক আছে কিনা হাত দিয়ে দেখছেন একজন/ছবি: নূর এ আলম


গ্রামে কাপড়ে রঙ মেশানোর কাজ ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে/ছবি: নূর এ আলম


বাটিকের গ্রামের অনেক বাড়িতে বসানো হয়েছে লুম মেশিন। এই মেশিন দিয়ে নানান ধরনের নকশা করা হয়/ছবি: নূর এ আলম


লুম মেশিনে চলছে কাপড় বুননের কাপড়/ছবি: নূর এ আলম


কাপড়ে রঙ করা শেষে শুকাতে দেওয়ার আগে পানি ঝরিয়ে ফেলা হয়/ছবি: নূর এ আলম


রং করা কাপড় শুকাতে দিচ্ছেন এক নারী শ্রমিক/ছবি: নূর এ আলম


বান্টি গ্রামের নারী পুরুষ সবাই ব্লক বাটিক ও প্রিন্টের সঙ্গে জড়িত/ছবি: নূর এ আলম

রং করা কাপড় ছাদে ও মাঠে শুকাতে দেওয়া হয়/ছবি: নূর এ আলম


কড়া রোদে শুকানোর পর তা কারখানায় নিয়ে আসেন শ্রমিকরা।/ছবি: নূর এ আলম


প্রচন্ড তাপদাহে বাটিকের চাহিদা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। /ছবি: নূর এ আলম


;