৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তা পরিত্যক্ত



গনেশ দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা ২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বাকি ২০০ মিটার রাস্তা করতে না পারায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা ৬০০ মিটার রাস্তা পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ফলে পরিত্যক্ত এ রাস্তাটি ব্যবহার করা হচ্ছে ধান ও খড় শুকানোর কাজে। এদিকে দীর্ঘ ১৪ বছরেও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির কাজ শেষ করতে না পারায় ব্যয় বেড়েছে আরও ১৩ গুণ।

বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল থেকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) ও হাসপাতাল পর্যন্ত সংযোগ সড়কটির কাজ ২০০৪ সালে শুরু করা হয়েছিল। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল উদ্বোধনের পর মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল থেকে জরুরি রোগী দ্রুত স্থানান্তর করার সুবিধার্থে ২০০৪ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ দুই হাসপাতালের মধ্যে সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়।

প্রকল্পের শুরুতে ৬০ ফুট প্রশস্ত ও সাড়ে ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ এবং জমি অধিগ্রহণ বাবদ ১৪ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যায় নির্ধারণ করা হয়। সে সময় জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে রাস্তাটির প্রশস্ত কমিয়ে ৪৫ ফুট নির্ধারণ করা হয়। মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালের উত্তর পাশ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের দক্ষিণ পাশ ধরে নার্সিং ইন্সটিটিউট এবং এসেনসিয়াল ড্রাগসের উত্তরপাশ দিয়ে গোহাইল রোড হয়ে মালগ্রামের মধ্য দিয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের গেটে মহাসড়কের পূর্বপাশে সড়কটি শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্প গ্রহণের পরপরই শজিমেকের দিক থেকে পুর্বদিকে প্রায় ৫০ ফুট প্রশস্ত ধরে ৮০০ মিটারের বেশি দীর্ঘ জমি অধিগ্রহণ করা হয়। সে সময় বরাদ্দকৃত অর্থে অধিগ্রহণকৃত জায়গায় মাটি ফেলে ভরাট করার পর অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় থেমে যায় সকল কার্যক্রম। পরবর্তী বছরগুলোতে এ প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ না থাকায় কাজ বন্ধ হয়ে থাকে।

প্রকল্পটি প্রথম পর্যায়ে না করায় পরের বছর এর ব্যয় বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়ে। কাজ না হওয়ায় প্রকল্প ব্যয় বাড়তেই থাকে। এক সময় প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৮০ কোটি টাকায়। কিন্তু প্রকল্পটি বাতিল না হওয়ায় ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়। বরাদ্দকৃত অর্থে সড়ক বিভাগ অধিগ্রহণকৃত জায়গায় ৮১০ মিটার রাস্তা কার্পেটিংয়ের কাজ করে।

৮১০ মিটার রাস্তার কাজ হওয়ার পর আবার অনিশ্চয়তায় পড়ে প্রকল্পটি। ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বগুড়ার আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে জনসভায় বগুড়ার বেশ কয়েকটি উন্নয়ন কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করার ঘোষণা দেন। এর মধ্যে এই সড়কটি ছিল অন্যতম।

পরে ২০১৮ সালের শেষের দিকে প্রকল্পের জন্য নতুন করে ২০ কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে প্রকল্পের ব্যয় ১৩ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৫ কোটি টাকায়। এর মধ্যে ৮০ কোটির বেশি টাকা ধরা হয়েছে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ।

বগুড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান বার্তা২৪কে বলেন, ‘এ প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে ২০ কোটি টাকা বরাদ্ধ পাওয়া গেছে। চলতি অর্থবছরের মধ্যেই জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে। জমির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত জটিলতায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। তবে আশা করা যাচ্ছে আগামী অর্থ বছরে কাজ শুরু করা যাবে।’

   

মা দিবস

ছেলে রাখে না সাথে, তবু মায়ের দোয়া ছেলের জন্যই



মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,ফেনী
শাহেনা আক্তার, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ছবি: বার্তা২৪.কম

শাহেনা আক্তার, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ফেনী পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মী শাহেনা আক্তার। বয়স প্রায় ৫৫ বছর। অভাবের তাড়নায় গত ৩০ বছর ধরে তিনি সংসারে জন্য কাজ করছেন। এই বয়সেও প্রতিরাতে কাজ করে যান তিনি। স্বামী মারা যাওয়ার পরে একমাত্র সন্তানই অবলম্বন হওয়ার কথা থাকলেও ছেলে স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা থাকেন। পাশাপাশি দুই ঘরে বসবাস করলেও আলাদা রান্না করে খান মা-ছেলে। তবু ছেলের জন্য সব করছেন, এমনকি জায়গাও কিনে রেখেছেন। তার আশা একটাই, সন্তান যেন ভালো থাকে। বলছেন, আমি তাকে (ছেলেকে) বিরক্ত করি না। নিজের অদম্য ইচ্ছায় এখনও কাজ করে যাচ্ছেন এ সংগ্রামী 'মা'।

রোববার (১২ মে) আন্তর্জাতিক মা দিবস। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের উদযাপিত হচ্ছে দিবসটি। মা দিবসে বার্তা২৪.কমের সাথে আলাপকালে নিজের জীবনের আক্ষেপসহ একাকী জীবনের পথচলার নানা কথা জানান শাহেনা আক্তার।

প্রতিদিন রাত ১১টা বাজলেই কাজ শুরু হয়ে যায় শাহেনা আক্তারের। শহরের ট্রাংক রোড দোয়েল চত্বর থেকে জেল রোড অবধি রাস্তার দুই পাশ পরিষ্কারের কাজ করেন তিনি। তার একমাত্র ছেলে পৌরসভায় চাকরি করে। তবে বিয়ের পর থেকে মায়ের সাথে থাকে না। মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্বও নেয়নি ছেলে। স্বামীহারা এ নারীর আশা এখনো মারা যাওয়ার পর এক ছেলেই তার কবরে মাটি দেবে।

মা দিবসে কথা হয় শাহেনা আক্তারের সাথে। তুলে ধরেন তিনি জীবন-সংগ্রামের নানা গল্প।

নিজের জীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে এ মা বলেন, আমার পরিবারে আমার ছেলে আর ছেলের বউ আছে এবং তাদের ৩ সন্তান রয়েছে। আমার স্বামী ৭ বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ছেলের ভবিষ্যতের জন্য আমরা স্বামী-স্ত্রী দুইজন পৌরসভায় চাকুরি নিয়েছিলাম, আমি এখনও করছি। ছেলে বড় হওয়ার পর সেও কাজ করে। তবে এখন ছেলে আমাকে সাথে রাখে না। বিয়ের পর তার বউ রাখতে দেয় না। ছেলের বউয়ের ব্যবহার খারাপ, আমাকে সহ্য করে না। তাই আমি আলাদা থাকি। নিজে উপার্জন করে খাই।

নিজের জীবনে নানা প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, পৌরসভা থেকে আমি প্রতিমাসে ৪ হাজার টাকা পাই। দুইটা রোড এ আমি ময়লা পরিষ্কার করি। কাজ শেষ করতে কোনদিন বেশি সময় লাগে, কোনদিন কম লাগে। জেল রোড থেকে ট্রাংক রোড দোয়েল চত্বরের দুইপাশ আমি পরিষ্কার করি। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে। এরমধ্যে মেয়র সাহেব, দোকানদাররা আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করে। তা দিয়ে চলে যায়।


বৃদ্ধ বয়সে ছেলে পাশে না থাকার আক্ষেপ করে এ মা বলেন, আমার বাসা সহদেবপুর। আমার ঘরের পাশেই তার ঘর। মাঝেমধ্যে কথা হয়। নাতি-নাতনিরা কাছে আসে, আদর করি; ভালো লাগে। মনে আক্ষেপ থাকলেও তাদের জন্য দোয়া করি, তারা যাতে ভালো থাকে। আমার জন্য বিরক্ত যাতে না হয় সেটা আমি খেয়াল রাখি।

তিনি বলেন, খেয়ে সে বাঁচুক, আমি মারা গেলে মাটি দেবে, সে আশায় বসে আছি। বউ-ছেলে নিয়ে সে সুখে থাকুক এটাই আমার চাওয়া। আমি তার জন্য ৯ ডেসিমেল জায়গা নিয়ে রাখছি। আমি মারা গেলে সে এগুলো পাবে।

শাহেনা আক্তার বলেন, ছেলের বউয়ের কার্যকলাপে ছেলে অতিষ্ঠ হয়ে আমাকে আলাদা রাখছে। বউ আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতো। তার ৩ ছেলে আছে। তারা আসে আমার কাছে। তাদের নিয়ে সময় কেটে যায়। ছেলের খারাপ লাগে কিনা জানি না, তবে আমার খারাপ লাগলেও সেটা প্রকাশ করি না। গরিব ঘরের সন্তান হলেও আমার এখন সবকিছু আছে। কর্ম করে সব জোগাড় করেছি। শুধু ছেলে আমার পাশে নেই।

বৃদ্ধ বয়সে ছেলে পাশে নেই এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছেলে আমাকে দেখে না এটা খারাপ লাগে না যে তা না। সব মাই তো আশা করে সন্তান তার খেয়াল রাখবে। ভালোভাবে রাখবে। এখন আমার স্বামী নেই, একা মানুষ, আলাদা ঘরে থাকি। ছেলের সাথে থাকলে জীবনটা আরও সুন্দরভাবে যেতে পারত। এখন কী করব। কাজ করতে হয়। কাজ না করলে খাব কীভাবে। বুড়া বয়সে আমাকে খাওয়াবে কে?

তিনি বলেন, আমি কারও বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। আমি মারা গেলেও যাতে আমার ছেলে ভালো থাকে আমার দোয়া এটাই। আমাকে এখন ছেলে ফিরিয়ে নেবে, এ আশা আমি করি না। আমি নিজে কর্ম করে চলতে পারছি, এটাই আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া। আমি এখন কর্ম করতে পারছি, যখন আরও বয়স হয়ে যাবে তখন তো পারব না। এখন কিছু আয় উপার্জন করে রাখলে ভবিষ্যতে কাউকে বললেও অন্তত ভাত দুইটা আমাকে রান্না করে দেবে। তবে টাকা না থাকলে তো ভিক্ষা করে খেতে হবে। সেটা আমি চাই না।

সব ছেলের উদ্দেশে এই মা বলেন, আমার মতো এমন জীবন কারও না হোক। সকল মায়ের কাছে তার সন্তান থাকুক, এ দোয়া করি। সন্তানরা মায়ের খেয়াল রাখলে মায়ের আয় রোজগার করতেও শান্তি লাগে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়'র সভাপতি মঞ্জিলা আক্তার মিমি বলেন, অনেক মায়ের সন্ধান আমরা পাই যাদেরকে সন্তানরা দেখভাল করে না। বৃদ্ধবয়সে একজন মায়ের চাওয়া একটাই থাকে তার সন্তানরা তাকে ভালো রাখবে। হাসিখুশি ভাবে শেষ জীবনটা কাটাতে চায়। কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বহু মা সংগ্রামের জীবন পার করছেন, কেউ অভাবে কেউবা বাধ্য হয়ে। এসব মানুষগুলোর বিষয়ে সকল স্তরের মানুষদের চিন্তা করা উচিত, বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে কিংবা সমাজ ব্যবস্থায় মাকে রাখার বাধ্যতামূলক করে দেওয়া গেলে মায়েরা ভালো থাকবে।

শাহেনা আক্তারের মতো এমন জীবন সমাজে অনেক মায়ের রয়েছে। আন্তর্জাতিক মা দিবসে পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। সন্তানরা মায়ের যত্ন নিক, আদরে গড়ে তোলা সন্তান বিপথে না গিয়ে মায়ের সেবা যত্ন করুক, মাকে ভালোবেসে সম্মানে নিজের পাশেই রাখুক, এমনটাই প্রত্যাশা সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের।

;

বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস ২০২৪

পরিযায়ী পাখি সুরক্ষায় কীটনাশকের ব্যবহার পরীক্ষা জরুরি



সাদিকুর রহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
পরিযায়ী পাখি সুরক্ষায় অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার পরীক্ষা জরুরি

পরিযায়ী পাখি সুরক্ষায় অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার পরীক্ষা জরুরি

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে পাওয়া পাখিদের আবাসিক এবং অনাবাসী হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। বেশিরভাগ পরিযায়ী পাখিদেরই অনাবাসী হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়।

বাংলাদেশে প্রায় ৭১২ প্রজাতির পাখি রয়েছে। তাদের মধ্যে ৩২০ প্রজাতি পরিযায়ী। তাদের কিছু শীতকালে উড়ে আসে; আবার কিছু প্রজাতি সারা বছরই থাকে।

সরকারিভাবে মে মাসের দ্বিতীয় শনিবার বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস হিসেবে পালিত হয়। সে ধারাবাহিকতায় বৈশ্বিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকারীরা আজকের দিনটিকে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালন করছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়, ‘পোকামাকড় রক্ষা করো, পাখি রক্ষা করো’।

তাই, পাখির স্থানান্তরের বর্তমান প্রবণতা, পোকামাকড়ের ওপর তাদের নির্ভরতা এবং ব্যাপকভাবে কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব, বিশেষ করে বাণিজ্যিক কৃষিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করা সময়োপযোগী বলে ধারণা করা হয়।

এ-বছর ফেব্রুয়ারিতে, কনভেনশন অন দ্য কনজারভেশন অব মাইগ্রেটরি স্পিসিস অফ ইল্ড অ্যানিমেলস (সিএমএস) একটি যুগান্তকারী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে জাতিসংঘের জীববৈচিত্র্য চুক্তি নিয়ে একটি সতর্কতামূলক পর্বও ছিল।

প্রতিবেদনে পরিযায়ী পাখির মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে বলে নির্দেশ করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, বন উজাড়, পাখি শিকারকে এর পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে পরিযায়ী পাখিদের জন্য একটি স্বাগতিক দেশ হওয়ার কারণে প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কতা বলে মনে হয়েছে।

গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকায় কৌশলগত অবস্থান এবং এর গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ পরিযায়ী পাখিদের জন্য বেশ উপযুক্ত। বাংলাদেশ একটি আবাসযোগ্য স্থান হিসেবে বিবেচিত। বিশেষ করে জলপাখি এবং তীরে বসবাসকারী পাখিদের জন্য বাংলাদেশের প্রকৃতি ভীষণ অনুকূল পরিবেশ এবং আবাসযোগ্য স্থান হিসেবে বিবেচিত।

এই পাখিরা বিশ্রাম এবং প্রজননের জন্য শীতকালীন স্থানগুলোর মধ্যে নির্দিষ্ট রুট মেনে চলে, যা ফ্লাইওয়ে নামে পরিচিত। বাংলাদেশ দুটি প্রধান পরিযায়ী পাখির ফ্লাইওয়ের মধ্যে অবস্থিত; পূর্ব-এশীয় অস্ট্রেলিয়ান ফ্লাইওয়ে এবং মধ্য এশিয়ান ফ্লাইওয়ে।

গত বছর প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, টাঙ্গুয়ার হাওর পরিযায়ী পাখিদের আবাসনের জন্য অন্যতম প্রধান জলাভূমি। কিন্তু এখান থেকেও ধীরে ধীরে অনেক জলপাখি হারিয়ে যাচ্ছে।

শিকার এবং চোরাচালানকে বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখিদের জন্য একটি বিরাট হুমকি বলে সমর্থন করে অসংখ্য সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে পরিযায়ী প্রজাতির পাখিদের খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। তাই এ কারণটিও আরেকটি বড় হুমকি হিসেবে স্বীকৃত হওয়া উচিত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একজন অনুষদ এবং ওয়াইল্ডটিম বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী প্রফেসর মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, পাখিদের খাদ্য শৃঙ্খলকে ভারসাম্যহীন করার জন্য বিষাক্ত কীটনাশক এবং কীটনাশকের চিন্তাহীন প্রয়োগ দায়ী।

পাখিরা বিভিন্ন ধরনের খাবার খায়। খাদ্যাভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। পাখিদেরকে ফ্রুগিভোরাস, ফলিভোরাস, হারবিভোরাস, নেক্টারিভোরাস এবং কীটপতঙ্গ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। তাদের খাদ্যাভ্যাস যাই হোক না কেন, প্রতিটি পাখি অবশ্যই পোকামাকড়ের ওপর নির্ভরশীল। পোকামাকড় হল প্রোটিনের সর্বোত্তম উৎস। অন্তত বাচ্চাদের লালন-পালন করার জন্য একটি মা পাখির পোকামাকড় খাওয়ানোর প্রয়োজন হয়। মাছি, মৌমাছি, শামুক, মাকড়সা, সেন্টিপিডস, মিলিপিডস, কাঁকড়া এবং পতঙ্গের মতো অমেরুদণ্ডী বা অ্যার্থ্রোপোডা পর্বের বিভিন্ন প্রাণি পাখিদের পছন্দের খাবারের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু প্রতি বছর ০.৯২ শতাংশ এবং প্রতি ১০ বছরে ৮ দশমিক ৮১ শতাংশ হারে পোকামাকড় হ্রাস পাচ্ছে, যার ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে পরিযায়ী পাখি ও প্রকৃতি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সাজেদা বেগম উল্লেখ করেন, পোকার প্রাচুর্য কমে যাওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষিক্ষেত্রে কীটনাশক, কীটনাশক ও বিষাক্ত সারের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার।

একজন প্রাযুক্তিক পর্যালোচক হিসেবে তিনি বাংলাদেশে আইইউসিএন রেড লিস্ট অফ বার্ডস তৈরিতে অবদান রেখেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন, কীটনাশকের সংস্পর্শে থেকেও বেঁচে থাকা পোকামাকড় খাওয়ার ফলে পাখির প্রজনন চক্র ব্যাহত হতে পারে। পাখির ছানারাও তীব্র বিষাক্ততায় ভুগতে পারে।

শীতকালে বাংলাদেশে আগত পরিযায়ী পাখিদের কীটনাশক কীভাবে প্রভাবিত করে?
পরিযায়ী পাখিরা সাধারণত উত্তর মেরু, সাইবেরিয়া, ইউরোপ, এশিয়ার কিছু অংশ এবং হিমালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে উড়ে আসে। বাংলাদেশকে তাদের প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার না করা সত্ত্বেও কীটপতঙ্গের প্রাচুর্য তাদের সুস্বাস্থ্য ও প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সাজেদা বেগম ব্যাখ্যা করে বলেন, পরিযায়ী পাখিরা প্রোটিন হিসেবে পোকামাকড় খায়। তাদের প্রকৃত বাসস্থান ফিরে পাওয়ার পর তারা প্রজননের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে। সেসময় পোকামাকড় খেয়ে তারা শক্তি সঞ্চয় করে। অনেক পরিযায়ী পাখি বিশেষ করে জলজ প্রজাতি পোকামাকড়ের ওপর খুব বেশি নির্ভর করে। জলাভূমিতে আশ্রয় এবং উপকূলে চারণের পাশাপাশি পোকামাকড়ই তাদের শক্তি, গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

সাজেদা বেগম আরও বলেন, জলাশয়ের বিষাক্ত দূষণ জলজ পোকামাকড়দের ধ্বংস করে যা দিনশেষে পরিযায়ী পাখিদেরও প্রভাবিত করে। কৃষিক্ষেত্র এবং শিল্প অঞ্চল থেকে বিষাক্ত উপাদান শেষ পর্যন্ত যেন জলাভূমিতে না মিশে, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

এক সমীক্ষায় দেখা যায়, কীটনাশক ব্যবহারকারীদের মধ্যে সঠিক জ্ঞানের অভাব ব্যাপক এবং অত্যধিক কীটনাশক প্রয়োগের প্রবণতা রয়েছে। সমীক্ষাটির ১৭ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, কীটনাশক উপকারী পোকামাকড় এবং প্রাণিদের হত্যা করে। অন্যদিকে, ৬ শতাংশ উত্তরদাতা বিশ্বাস করেন কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) কীটনাশক সম্পর্কে বলে, কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে পানি দূষিত হয়; যার ফলে উপকারী পোকামাকড়ের ক্ষতি হতে পারে। কীটনাশক মাটিকে দূষিত করে জীববৈচিত্র্য এবং বাস্তুতন্ত্রকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।

আশার সংবাদ হলো, সম্প্রতি খাদ্য ও কৃষি সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে কীটনাশক ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে সুপারিশমালা প্রদান করেছে। এই বছরের মার্চ মাসে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কাছে সে সুপারিশমালা হস্তান্তর করা হয়।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে সুপারিশগুলো কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবেন বলে এখন আশা করা যায়।

;

ঠেলা-জাল দিয়ে ছোট যমুনায় মাছ ধরার শৈশব!



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রচণ্ড রোদে নদীর বুক চিরে আঁকাবাঁকা রেখা প্রমাণ করে এই নদীর বুকে লুকানো আছে এক গভীর কান্না! একসময় এ নদীতে বড় বড় নৌকা চলতো। সে এখন কেবল পানি শূন্যতায় ভুগছে! এ নদীটির নাম- ছোট যমুনা।

‘ছোট যমুনা’ নামটা যেমন মধুর, তেমনি একসময় জনপদের পর জনপদ গড়ে তুলেছে এই ছোট নদী যমুনাই। ভরা বর্ষায় যমুনা যেমনি যৌবন ফিরে পায়, তেমনি খরায় পানি শুকিয়ে করুণ অবস্থায় পরিণত হয়। এসময় ছোট মাছের দেখা মেলে না বললেই চলে।

সরেজমিন শনিবার (১১ মে) দুপুরে নওগাঁ সদর উপজেলার শিবপুর এলাকায় দেখা মেলে কয়েকটি শিশুর, যারা ঠেলা-জাল দিয়ে মাছ ধরতে এসেছে ছোট নদী যমুনাতে। কেউ কেউ হাড়ি এনেছে মাছ ধরে রাখার জন্য। আবার কেউ বালতি এনেছে। কেউ আবার নদীতে নেমে সাঁতারও কাটতে শুরু করেছে!

ছোট যমুনায় মাছ ধরার শৈশব এখন, ছবি- বার্তা২৪.কম

এদের মধ্যে সবার বড় শাহিন (১২)। এবার ৭ম শ্রেণিতে উঠেছে সে। এতদিন পানি ছিল না বলে নদীতে আসেনি সে।

ক্ষুদে শিক্ষার্থী শাহিন জানায়, আমার আব্বু আমাকে এই ঠেলা-জাল বানিয়ে দিয়েছে। এতদিন নদীতে পানি ছিল না। তাই, মাছ ধরতে আসিনি। নতুন পানিতে মাছগুলো কাছে চলে এসে কচুরিপানায় লুকিয়ে থাকে তখন এগুলোর নিচে ঠেলা-জাল দিলে ছোট ছোট মাছ পাওয়া যায়।

শাহিন বলে চলে, চিংড়ি, পুঁটি, গুচি, বেলেমাছ, চাঁন্দা মাছ, বাইন মাছসহ অনেক মাছ জালে ওঠে আর এগুলো বাড়ি নিয়ে গেলে আম্মু রান্না করে দেয়। আমি মজা করে খাই।

আরেক ক্ষুদে শিক্ষার্থী হানজালা (১১) বলে, শাহিন আমাদেরই বন্ধু। ওর বাড়ির পাশেই আমার বাড়ি। ও মাছ ধরতে এসেছে জেনে আমিও গোসল করতে আসলাম। আমিও ওকে মাছ ধরতে সাহায্য করছি। কচুরিপানার নিচে ও যখন ঠেলা-জাল দিচ্ছে, তখন কচুরিপানাগুলো সরিয়ে ফেলছি।

ক্ষুদে শিক্ষার্থী রাসেল, আদমসহ আরো অনেকেই জানালো, দুপুর বেলা রোজ এই নদীতেই গোসল করতে আসে সব বন্ধুরা মিলে। তাদেরও ঠেলা-জাল আছে কিন্তু আজকে নিয়ে আসেনি। শাহিন নিয়ে আসবে বলে তারা আনেনি। তাকেই সবাই মিলে মাছ ধরে দিচ্ছে।

কথা হয়, ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে। তারা বার্তা২৪.কমকে জানান, এদের এখন শৈশব চলছে। এখনই এদের দুরন্তপনার সময়। সে কারণে আটকে রাখা যায় না। নদীতে যেহেতু পানি সামান্য বেড়েছে, সে জন্য এদের সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি। আমরা একদিকে বসে থাকি আর ওদের দিকে নজর রাখি, যাতে কোনো দুর্ঘটনাটা না ঘটে।

ছোট থাকতে আমরাও ঠিক এভাবেই মাছ ধরতাম! সে সব কথা মনে পড়লে অনেক মধুর স্মৃতি ভেসে ওঠে। মনে হয়, সেই শৈশবে যদি ফের ফিরে যেতে পারতাম!

;

কাবাবের দামে ভর্তুকি!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কাবাব বর্তমান সময়ে খুব জনপ্রিয় একটি খাবার। বিশেষ করে তরুণদের কাছে এর চাহিদা ব্যাপক। বার্গারের সাথে কাবাবের যে জম্পেস মেলবন্ধন, এর জন্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কাবাব ও বার্গার রেস্টুরেন্ট চালু রয়েছে। এসব রেস্টুরেন্টে প্রতি বছর কয়েক মিলিয়ন ডলার কাবাব বিক্রি হয়। ঠিক একইভাবে জার্মানিতেও কাবাবের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে সম্প্রতি মূল্যস্ফীতির কারণে জার্মানিতে কাবাবের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। গত দুই বছরের মধ্যেই সেখানে কাবাবের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। তাই কাবাবের দামে স্থিরতা আনতে ভর্তুকির দাবি জানিয়েছে দেশটির একটি রাজনৈতিক দল। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ। 

জার্মানির রাজনৈতিক দল লেফট পার্টি সরকারের কাছে এ ভর্তুকির দাবি জানায়। এটি বর্তমানে জার্মান রাজনীতিতে একটি চলমান রসিকতা হয়ে উঠেছে, চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ বলেছেন,‘আমি যেখানে যাই, তরুণেরা আমাকে কাবাবের দাম কমবে কি না, সে বিষয়ে প্রশ্ন করেন।’

তবে দেশের সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনায় লেফট পার্টির এমন উদ্যোগকে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন। মূল্যস্ফীতির কারণে দেশটিতে দ্রব্যমূল্যের ওপর যে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে তার প্রেক্ষিতে একটি রাজনৈতিক দলের এমন প্রস্তাব খুবই ইতিবাচক বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল।

এ বিষয়ে লেফট পার্টির ইয়ুথ পলিসি বিষয়ক মুখপাত্র কাথি জেবেল বলেন, দেশজুড়ে কাবাবের দাম কম করে হলেও ৭ দশমিক ৫৫ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। সরকারের পক্ষ থেকে এটি জন সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের মধ্যে রাখার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে দাবি জানান তিনি।

এর প্রেক্ষিতে দলটির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে কাবাবের দাম ৫ ডলার ৩০ সেন্ট বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। দেশের তরুণদের কথা মাথায় রেখে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানায় লেফট পার্টি।

এর জন্য, সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি দেওয়ার কথা বলা হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে এ নিয়ে জার্মান সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, মজুরি ও জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় ডোনার কাবাবের দাম বেড়েছে। কাবাব বিক্রির দোকানগুলোর বেশি ভাড়া, জ্বালানি খরচ ও কাবাবের উপাদানের জন্য খরচ বেশি হচ্ছে। এগুলোর খরচ কমানো গেলে কাবাবের দামও কমে যাবে বলে মনে করেন জেবেল।

জেবেল আরও বলেন, ‘সরকার যদি কোনো ব্যবস্থা না নেয়, তবে কাবাবের দাম বেশি থেকে যাবে। আর তাহলে এটি আমাদের জন্য একটি বিলাসবহুল খাবারে পরিণত হবে।’

 

 

;