যশোরে ৩৭ প্রার্থীর ৩১ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত
একাদশ সংসদ নির্বাচনে যশোরের ৬টি সংসদীয় আসনে অংশগ্রহণকারী ৩৭ প্রার্থীর মধ্যে বিজয়ী ৬ প্রার্থী ছাড়া অন্য ৩১ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আইন ১৯৭২ অনুযায়ী কোনও প্রার্থী নির্বাচনে প্রদত্ত (কাস্টিং ভোট) ভোটের ৮ ভাগের ১ ভাগের কম, অর্থাৎ ১২ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট না পেলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। যশোরে শতকরা ৮৩ দশমিক ২০ ভাগ ভোট কাস্ট হলেও ৩১ প্রার্থী ১২ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পাননি। ফলে নির্বাচন কমিশনে জামানত দেওয়া ২০ হাজার টাকা তারা ফেরত পাবেন না।
নির্বাচন অফিস মতে, যশোরের ৬টি সংসদীয় আসনে মোট ভোটার ছিল ২০ লাখ ৯২ হাজার ৪৭২ জন। এরমধ্যে ভোট প্রদান করেন ১৭ লাখ ২৫ হাজার ৫৩৪ জন ভোটার। এ হিসেবে শতকরা ৮৩ দশমিক ২০ ভাগ ভোটার ভোটাধিকার প্রদান করেছেন।
যশোরের রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আওয়াল স্বাক্ষরিত প্রাথমিক বেসরকারি ফলাফল 'বার্তা প্রেরণ শিট' বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সংসদীয় যশোর-১ (শার্শা) আসনে মোট ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬৩ হাজার ৬০০ জন। এরমধ্যে ভোট প্রদান করেছেন ২ লাখ ২০ হাজার ৪৫ জন ভোটার। শতকরা হিসেবে ৮৩ দশমিক ৪৮ ভাগ। জামানত বাঁচাতে প্রতি প্রার্থীর ভোটের প্রয়োজন ছিল ২৭ হাজার ৫০৬ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন ৪জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ আফিল উদ্দিন বিজয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ২ লাখ ১১ হাজার ৪৪৩ ভোট। এ আসনে জামানত বাঁচাতে প্রয়োজনীয় ভোট না পাওয়ায় বিএনপির প্রার্থী মফিকুল হাসান তৃপ্তি (প্রাপ্ত ভোট ৪৯৮১), ইসলামী আন্দোলনের মো. বক্তিয়ার রহমান (প্রাপ্ত ভোট ১৩৩০) ও জাকের পার্টির সাজেদুর রহমান ডব্লিউর (প্রাপ্ত ভোট ১১৭৭) জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে মোট ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ৫ হাজার ৮৮২ জন। এরমধ্যে ভোট প্রদান করেছেন ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬২২ জন ভোটার। শতকরা হিসেবে ৮৫ দশমিক ৭৩ ভাগ। জামানত বাঁচাতে প্রতি প্রার্থীর ভোটের প্রয়োজন ছিল ৪৩ হাজার ৪৯৫ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন ৭জন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের মেজর জেনারেল (অব.) মো. নাসির উদ্দিন তিনি নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৩ লাখ ২৫ হাজার ৭৯৩ ভোট। এ আসনে জামানত বাঁচাতে প্রয়োজনীয় ভোট না পাওয়ায় ধানের শীষের প্রার্থী আবু সাঈদ মোহাম্মদ শাহাদাৎ হুসাইন ( প্রাপ্ত ভোট ১৩ হাজার ৯৪০), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির বিএম সেলিম রেজা (প্রাপ্ত ভোট ১ হাজার ২৫), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের মো. আলাউদ্দিন (প্রাপ্ত ভোট ৫৯১), ইসলামী আন্দোলনের মো. আসাদুজ্জামান (প্রাপ্ত ভোট ৩ হাজার ৩), গণফোরামের এম আছাদুজ্জামান (প্রাপ্ত ভোট ৭) ও জাতীয় পার্টির ফিরোজ শাহর (প্রাপ্ত ভোট ১হাজার ১৮২) জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
যশোর-৩ (সদর) আসনে মোট ভোটার ছিলেন ৫ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৫ জন। এরমধ্যে ভোট প্রদান করেছেন ৪ লাখ ১ হাজার ১৩৬ জন ভোটার। শতকরা হিসেবে ৭৬ দশমিক ৬৫ ভাগ। জামানত বাঁচাতে প্রতি প্রার্থীর ভোটের প্রয়োজন ছিল ৫০ হাজার ১৪২ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। এরমধ্যে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের কাজী নাবিল আহমেদ। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩ লাখ ৬১ হাজার ৩৩৩ ভোট। এ আসনে জামানত বাঁচাতে প্রয়োজনীয় ভোট না পাওয়ায় বিএনপির প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত (প্রাপ্ত ভোট ৩১ হাজার ৭১০), জাতীয় পার্টির মো. জাহাঙ্গীর আলম (প্রাপ্ত ভোট ১০ হাজার ৬৯), জাকের পার্টির মনিরুজ্জামান মনির (প্রাপ্ত ভোট ১ হাজার ৬৬৭), বিকল্পধারার মারুফ হাসান কাজল (প্রাপ্ত ভোট ৯১৪) ও জেএসডির সৈয়দ বিপ্লব আজাদ’র (প্রাপ্ত ভোট ২৫ ভোট) জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
যশোর-৪ (অভয়নগর-বাঘারপাড়া) আসনে মোট ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৯৯১ জন। এরমধ্যে ভোট প্রদান করেছেন ৩ লাখ ১৬ হাজার ৩৩৮ জন ভোটার। শতকরা হিসেবে ৮১ দশমিক ৭৪ ভাগ। জামানত বাঁচাতে প্রতি প্রার্থীর ভোটের প্রয়োজন ছিল ৩৯ হাজার ৫৪৩ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন ৮জন। এরমধ্যে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের রণজিৎ কুমার রায়। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২ লাখ ৭৩ হাজার ২৩৪ ভোট। এ আসনে জামানত বাঁচাতে প্রয়োজনীয় ভোট না পাওয়ায় বিএনপির প্রার্থী টিএস আইয়ুব (প্রাপ্ত ভোট ৩০ হাজার ৮৭৪), জাতীয় পার্টির মো. জহুরুল হক (প্রাপ্ত ভোট ১হাজার ৯৬৬), ইসলামী আন্দোলন নাজমুল হুদা (প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৬৯৮), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির লে. ক. (অব.) এম শাব্বির আহমেদ (প্রাপ্ত ভোট ৭৪২), বিকল্পধারা বাংলাদেশের নাজিম উদ্দিন আল আজাদ (প্রাপ্ত ভোট ৯৯), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ (প্রাপ্ত ভোট ১৮০ ও জাকের পার্টির লিটন মোল্লার (প্রাপ্ত ভোট ৯২) জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে মোট ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১৯ হাজার ৮৪ জন। এরমধ্যে ভোট প্রদান করেছেন ২ লাখ ৭৫ হাজার ৭৪ জন ভোটার। শতকরা হিসেবে ৮৬ দশমিক ২১ ভাগ। জামানত বাঁচাতে প্রতি প্রার্থীর ভোটের প্রয়োজন ছিল ৩৪ হাজার ৩৮৫ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন ৭জন। এরমধ্যে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগের স্বপন ভট্টাচার্য। তিনি নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ৪২ হাজার ৮৫৬ ভোট। এ আসনে জামানত বাঁচাতে প্রয়োজনীয় ভোট না পাওয়ায় ধানের শীষের প্রার্থী মুহাম্মদ ওয়াক্কাস (প্রাপ্ত ভোট ২৪ হাজার ৬২১), জাতীয় পার্টির এমএ হালিম (প্রাপ্ত ভোট ৮৮৪), ইসলামী আন্দোলনের ইবাদুল হক খালাসি (প্রাপ্ত ভোট ২ হাজার ৭৭৪), স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলাম বারী (প্রাপ্ত ভোট ৮৫৭), জাপার নিজাম উদ্দিন অমিত (প্রাপ্ত ভোট ১২৪) ও জাকের পার্টির রবিউল ইসলামের (প্রাপ্ত ভোট ৩৮৪) জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে মোট ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৩ হাজার ৫৭০ জন। এরমধ্যে ভোট প্রদান করেছেন ১ লাখ ৬৪ হাজার ৯৮৫ জন ভোটার। শতকরা হিসেবে ৮৫ দশমিক ২৩ ভাগ। জামানত বাঁচাতে প্রতি প্রার্থীর ভোটের প্রয়োজন ছিল ২০ হাজার ৬২৩ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন ৫জন। এরমধ্যে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের ইসমাত আরা সাদেক। তিনি নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১ লাখ ৫ হাজার ৫০৬। এ আসনে জামানত বাঁচাতে প্রয়োজনীয় ভোট না পাওয়ায় বিএনপির প্রার্থী আবুল হোসেন আজাদ (প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৬৫৩), ইসলামী আন্দোলনের আবু ইউসুফ বিশ্বাস (প্রাপ্ত ভোট ১হাজার ১৩০), জাতীয় পার্টির মো. মাহবুব আলম (প্রাপ্ত ভোট ৩৪১) ও জাকের পার্টির মো. সাইদুজ্জামানের (প্রাপ্ত ভোট ৩৮০) জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।