পাবনায় ৫ আসনে অন্যরা পিছিয়ে থাকলেও এগিয়ে আ.লীগ
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে পাবনার ৫ টি আসনে প্রচারপ্রচারণা, গণসংযোগ, উঠোন বৈঠক, সভা-সমাবেশ, যান্ত্রিক প্রচারণা, পোস্টার টাঙানোতে এগিয়ে আছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে হামলা-মামলা, গ্রেপ্তার, আতঙ্ক, ভয়ভীতি প্রদর্শণসহ নানা কারণেই প্রচারপ্রচারণা এবং সভা-সমাবেশে পিছিয়ে রয়েছেন বিএনপি, ঐক্যফ্রন্টসহ অন্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা।
পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়ার আংশিক) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সদ্য গণফোরামে যোগ দেওয়া আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। স্থানীয়ভাবে এই দুজনেরই নিজস্ব সমর্থকগোষ্ঠী থাকলেও আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে প্রচার প্রচারণায় এগিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু ।
এ আসনে অধ্যাপক আবু সাইয়িদের অভিযোগ, প্রচারের শুরু থেকেই তিনি বাধার মুখে পড়ছেন। তাঁর গাড়িতে হামলা হয়েছে। কোথাও কর্মসূচি দিলেই পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে প্রতিপক্ষের প্রার্থী। একের পর এক মামলা দিয়ে তাঁর সমর্থকদের হয়রানি করা হচ্ছে। এ কারণে তিনি ঠিকঠাক প্রচার চালাতে পারছেন না।
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নৌকার প্রার্থী শামসুল হক টুকু। তিনি বলেন, জামায়াতকে টপকিয়ে গণফোরামে যোগদিয়ে ধানের শীষের প্রার্থী হওয়ায় খোদ জামায়াত-বিএনপি তার দিকে বাঁকা চোখে দেখছে। তারা ক্ষুব্ধও হয়েছে। আর ক্ষুব্ধরাই তার উপর বারবার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
এই আসনে হেভিওয়েট দুই প্রার্থী ছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আবদুল মতিন, জাতীয় পার্টির সরদার শাহজাহান, ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির শাখাওয়াত হোসেন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জুলহাস নাইন ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর পুত্র ব্যারিস্টার মুহাম্মদ নাজিবুর রহমান ওরফে নাজিব মোমেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
পাবনা-২ (সুজানগর-বেড়ার আংশিক) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের নতুন প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ ফিরোজ কবির। তিনি এ আসনের সাবেক সাংসদ ও আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় প্রবীণ নেতা প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে মাঠে আছেন। ফলে প্রচারের শুরু থেকেই মাঠ গরম করে রেখেছেন তিনি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের নতুন মুখ আহমেদ ফিরোজ কবিরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা ও এই আসনের সাবেক সাংসদ অ্যাডভোকেট একেএম সেলিম রেজা হাবিব। প্রচার-প্রচারণায় তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে পিছিয়ে। ধানের শীষের প্রার্থী একেএম সেলিম রেজার অভিযোগ, শুরু থেকেই প্রচারণায় বাধা আসছে। পোস্টার ঝুলালেই ছিঁড়ে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। নেতা-কর্মীদের মারপিট করা হচ্ছে। মামলা দিয়ে ধরপাকড় চালানো হচ্ছে। ফলে প্রচার চালানো দূরের কথা, তিনি বেরই হতে পারছেন না এমন দাবী তার। এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই বলে দাবি করেছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আহমেদ ফিরোজ কবির। তিনি বলেন, সেলিম রেজা দীর্ঘদিন মাঠে ছিলেন না। ফলে দলীয় বিশৃঙ্খলাতেই তিনি পিছিয়ে পড়েছেন। এ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ইউনুস আলী ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের শামসুর রহমান নিরুত্তাপ প্রচারপ্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
পাবনা-৩ (চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ মকবুল হোসেন। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী বিএনপির সাবেক সাংসদ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম। এই দুজনের প্রচার প্রচারণাও চলছে সমানতালে। তবে গত বুধবার রাতে ও শুক্রবার রাতে দু’দফায় চাটমোহরের পৃথক স্থানে যুবলীগের মিছিলে ককটেল বিস্ফোরণ, তিনটি বিএনপির প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর এবং নৌকার সমর্থনে বের করা মিছিল থেকে ধানের শীষের তিনজনকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। এ নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলামের অভিযোগ, তাঁরা নৌকার পক্ষে মিছিল করছিলেন। মিছিলটি বিএনপির প্রার্থীর বাড়ি পার হওয়ার সময় তাঁদের লক্ষ্য করে পরপর চারটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তবে পাল্টা অভিযোগ তুলে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুজ্জামান বলেন, তাঁরা (যুবলীগ) নিজেরা ককটেল ফাটিয়ে বিএনপির ঘাড়ে দোষ দিচ্ছেন। ককটেল বিস্ফোরণের অজুহাতে বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। এদিকে শুক্রবার রাতেও উপজেলার দুটি স্থানে বিএনপির নির্বাচনী অফিসে ভাঙচুর করা হয়েছে। এ আসনে বিএনপির মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়া সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসানুল ইসলাম রাজা। তিনি দলের কিছু নেতা-কর্মীকে নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। অন্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের আবদুল মোত্তালিব ও গণতন্ত্রী পার্টির খায়রুল আলম।
পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ। বিএনপির প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব। শুরু থেকেই প্রচার প্রচারণা জমিয়ে রেখেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। বিপরীতে ঝিমিয়ে প্রচারণা চলছে বিএনপির। বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ, প্রচারে বাধা আসছে। রাতে পোস্টার ঝুলানো হলে দিনে তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের।
তারা বলেন, বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। ফলে তাঁরা ঝিমিয়ে পড়েছেন। এ আসনে অন্য প্রার্থীরা হলেন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবদুর রশিদ শেখ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আবদুল জলিল।
পাবনা-৫ (সদর) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোন্দকার প্রিন্স। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা ইকবাল হোসাইন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু থেকেই এ আসনে প্রচার প্রচারণায় এগিয়ে আছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী প্রিন্স। দৃশ্যমানে পুরো মাঠ আওয়ামী লীগের দখলে। সবদিক থেকেই এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। প্রচারের পাশাপাশি প্রতিদিন উঠান বৈঠক, সভা-সমাবেশে ব্যস্ত সময় কাটছে গোলাম ফারুক খোন্দকার প্রিন্সের।
অন্যদিকে দলীয় প্রার্থী না পেয়ে ঝিমিয়ে আছে বিএনপি। ফলে মাঠ জমাতে পারেননি জামায়াতে ইসলামীর নেতা ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষের প্রার্থী ইকবাল হোসাইন। দু’এক স্থানে যান্ত্রিক প্রচার আর সীমিত পোস্টার চোখে পড়ছে। জামায়াতে এই নেতা ধানের শীষের প্রতীকে ভোট চাওয়ায় দলীয় ভোটারদের মনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন আর সংশয়।
জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস হবেন ধানের শীষের দলীয় প্রার্থী। সেই আশায় দেখা দিয়েছে রক্তক্ষরণ। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের কারণে বুঁকে কষ্ট চাপা রেখেই ধানের শীষের প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন নেতাকর্মীরা।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএনপি’র সিংহভাগ নেতাকর্মী বা সমর্থক জামায়াতে ইসলামীর নেতা ইকবাল হোসাইনের সাথে নেই বা নির্বাচন নিয়ে কাজ থেকে বিরত রয়েছে।