কেউ বলে এই তো বেশ, অন্যজন শব্দদূষণে শেষ
নির্বাচনী স্লোগান ও গানের নগরীতে পরিণত হয়েছে রাজশাহী। প্রতিদিন দুপুর ২টা বাজলেই চারিদিকে মাইকের শব্দ। নির্বাচনী প্রচার চালাতে গিয়ে প্রার্থীরা ভাড়া করা মাইকে নগরজুড়ে বাজাচ্ছে নির্বাচনী গান ও স্লোগান। এই বিষয়টিতে কেউ মজা পাচ্ছে, আবার কেউ এটাকে দেখছে শব্দদূষণ হিসেবে।
শনিবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজশাহী নগরীর দড়িখরবোনা মোড়ে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাওয়া হয় গানের তালে তালে। ‘ধানের শীষের হবে জয়, ও ভাইজান গো’। এই গানে মুখরিত হয় দড়িখরবোনা মোড়। পাশেই মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে চলে স্লোগান। চিরচেনা স্লোগান। ‘ভোট চাই ভোটারের, দোয়া চাই সকলের।’, ‘নৌকা মানে উন্নতি, নৌকা মানেই প্রগতি।’, ‘বাদশা ভাইয়ের সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন।’
এর মাত্র ৫০ গজ দূরে মাইকে বেজেছে নৌকা মার্কার থিম সং। ‘জয় বাংলা, জিতবে আবার নৌকা।’ জয় বাংলা, শেখ হাসিনার সালাম নিন।’ জয় বাংলা, নৌকা মার্কায় ভোট দিন।’
এর অল্প কিছু দূরে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বর। সেখানে উপস্থিত হতেই কানে ভেসে আসে ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’, ‘শোন রাজশাহীর জনগণ, বাদশা ভাই মানুষ খাঁটি, নৌকা মার্কায় ভোট মোরা চাই।’
এর অল্প দূরেই চলে ধানের শীষের প্রচারণা। সেখানে বাজেছে ‘চল চল চল, ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’।
এভাবেই একের পর এক মাইকের গান ও স্লোগানে ভাসছে রাজশাহী। প্রতিদিন এভাবে নগরজুড়ে বাজছে নৌকা ও ধানের শীষের প্রচারণা মাইক। এর বাইরে নগরীতে সব মিলিয়ে অন্তত দেড়শটি মাইক বাজছে ভোট চেয়ে।
মাইকের এসব শব্দ অনেকেই উপভোগ করছে। আবার অনেকের কাছেই শব্দ দূষণ মনে হচ্ছে।
নগরীর দড়িখরবোনা মোড়ের পান দোকানি মোজাফ্ফর বলেন, ‘ভোট মানে উৎসব। তাই নির্বাচনে মাইক ছাড়া কী চলে? এই তো কটা দিন। এমন উৎসব তো আর সারা বছর থাকে না।’
মহানগরীর শেখপাড়া এলাকার শাহীন শেখ বলেন, ‘নানা গানে প্রার্থীদের প্রচারণা শুনতে বেশ ভালোই লাগে।’
তবে অনেকেই বিষয়টিকে শব্দদূষণ হিসেবেই দেখছে। বিশেষ করে রাস্তার পাশে যাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা বাড়ি তারা বেশ বিড়ম্বনায় পড়েছে।
নগরীর সাহেব বাজার এলাকার জমসেদ আলী জানান, একই স্থানে একই সঙ্গে চার-পাঁচটি করে মাইক বাজানো হচ্ছে। শব্দের সঙ্গে শব্দ মিশে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন গানের সঙ্গে প্রতীক উল্লেখ করে ভোট চাওয়া এসব মাইকের যন্ত্রণায় পথচারীরা ঠিকমতো কথাও বলতে পারছে না। বিশেষ করে রাস্তায় বের হলে কোনো পথচারী মোবাইল ফোনে ঠিকমতো কথা বলতে বা শুনতে পারে না।
নগরীর ভদ্রা জামালপুর এলাকার শিক্ষক সিজার জানান, এ ধরনের প্রচারের নিয়ম পাল্টানো প্রয়োজন। এভাবে তীব্র শব্দে মাইক বাজিয়ে শব্দদূষণ করে কী ভোট পাওয়া যাবে। মানুষ এতে বিরক্ত হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে।
রাজশাহী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এসএম আব্দুল কাদের বলেন, ‘প্রার্থীরা এক সঙ্গে দুটি হর্ন রাখতে পারবে না। এই ধরনের নির্দেশনা আছে। এই ধরনের অভিযোগ পেলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’