রাষ্ট্র এখন ধনীদের: ড. মিজানুর রহমান



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম ,ঢাকা
জাতীয় প্রেসক্লাবে গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা/ ছবি: বার্তা২৪.কম

জাতীয় প্রেসক্লাবে গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা/ ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, 'বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি হয়ে গেছে ধনীদের। গরিব মানুষের ভাগ্যের কথা এই রাষ্ট্র কখনও চিন্তা করে না।’

শনিবার (২৯ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে 'সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ: নিরাপত্তা বীমার প্রয়োজনীয়তা, আলাদা তহবিল গঠন ও পরিচালনা' বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান।

অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, 'ধনীদের তেলে মাথায় কত তেল দেওয়া যায়, তা আমরা সড়ক পরিবহনের ক্ষেত্রে যে আইনগুলো রয়েছে তার ভেতর স্পষ্টভাবে দেখতে পাই। সংসদে ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য যেভাবে বাড়ছে, সেখানে আইনের প্রয়োগ কিভাবে হবে?’

দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের আলাদা তহবিল গঠন সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করে তিনি বলেন, 'এই ফান্ড দুর্নীতির আরও একটি নতুন সংযোজন হবে। যারা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বা নিহত হন তাদের কল্যাণ ফান্ড গঠন করার দায়িত্ব কার, সেটা ভাবতে হবে। ক্ষতিপূরণটা আসলে কে দেবে? মালিক, সরকার, না বীমা কোম্পানি?’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/29/1561797257067.jpg

ঋণখেলাপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'একজন মন্ত্রী যখন বলেন ঋণখেলাপি সবাই খারাপ নন, এই কথা তিনি কিভাবে বলেন? সাধারণ মানুষের উপরে করের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে মানুষের টাকা মেরে এই সব বড় বড় লোক ঋণখেলাপি হচ্ছেন। আবার তারাই নাকি ভালো লোক, এটা হাস্যকর।’

গোলটেবিল বৈঠকে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড: সৈয়দ নাইমুল ওয়াদুদ, অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন প্রমুখ।

   

'আমাদের রাত গিয়ে আজ সকাল হয়েছে'



সীরাত মঞ্জুর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

'আজকে আমরা ঈদের চেয়েও বেশি আনন্দিত। আমাদের সন্তানেরা আমাদের কাছে ফিরে এসেছে। এর থেকে বড় আনন্দের আর কি হতে পারে! স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। আমাদের রাত গিয়ে আজ সকাল হয়েছে।'

মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেলে ৫টার দিক চট্টগ্রাম বন্দর জেটির নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে বসে বার্তা২৪.কমের এ প্রতিবেদককে ছেলে ফিরে পাওয়ার অনুভূতি এভাবে তুলে ধরলেন এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের অয়েলার আইনুল হকের মা লুৎফে আরা বেগম।

এসময় আইনুলের মা ছেলে জিম্মিদশা অবস্থায় থাকা দিনগুলো কথা জানান। বলেন, 'ওরা যখন জিম্মি ছিল ওই সময়টা আমি এত বেশি অসুস্থ হয়ে যায়, একদিন রাতে তিনটায় ডাক্তার আনতে হয়েছিল। ডাক্তার সব চেকআপ করে দেখে আমার কোন সমস্যা নেই। বলেছেন, দুশ্চিন্তা করার কারণে আমার এমন হয়েছে। তখন আমাকে ঘুমের ওষুধ দেন, পুরো রোজার মাস ঘুমের ওষুধ খেয়ে থাকতে হয়েছে।'

'ঈদের সময় তো আমরা ঈদ পালন করিনি। ওই সময়টা আমাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা এবং উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে গিয়েছিল। আমরা চেয়েছি ঈদের দিনটা খুব তাড়াতাড়ি চলে যাক। তখন আমাদের ছেলেরা জিম্মি ছিল।'

ছেলে ফিরে আসায় আনন্দের যেন সীমা নাই ৫০ বছর বয়সী লুৎফে আরা বেগমের। তিনি বলেন, 'ছেলেরা মায়ের বুকে ফিরে এসেছে এর থেকে বড় আনন্দের কি আছে। সেই জিম্মি মায়ের ছেলে মায়ের বুকে ফিরে এসেছে। এর থেকে বড় আনন্দে আর কিছু হতে পারে না। প্রথমে জাহাজ থেকে নামা মাত্র ছেলেকে আমি জড়িয়ে ধরেছি। এখান থেকে গিয়ে ওর পছন্দ অনুযায়ী রান্না করব। ওর বন্ধুরা আসবে তাদের জন্য আয়োজন করব।'

ছেলেকে আবার জাহাজে যেতে দেবেন কি-না জানতে চাইলে আইনুলের মা বলেন, 'আমার ছেলে প্রাপ্তবয়স্ক। সেটি তার ইচ্ছা ও উপর নির্ভর করছে। সে যদি যেতে চায় তাহলে অবশ্যই যাবে। আর তাছাড়া দুর্ঘটনা তো পৃথিবীর যেকোনো কিছুতেই হয়, শুধু জাহাজে জলদস্যু আক্রমণ করে এমন তো না। মানুষের জীবন-মৃত্যু হচ্ছে আল্লাহর হাতে। দুর্ঘটনা তো যে কোন জায়গায় হতে পারে।

আইনুলরা দুই ভাই। তাদের কোনো বোন নেই। করোনার সময় বাবা মারা যান। বাবার কিছু ব্যবসার টাকা ও আইনুলের আয় দিয়ে চলছে সংসার। চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে পড়ছেন ছোট ভাই মাইনুল হক। তাদের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে৷ তবে ছোট ছেলেকে নিয়ে নগরীর কাজির দেউরিতে বসবাস করেন করছেন মা লুৎফে আরা।


ছেলে জাহাজ থেকে আসলে ঘরে নতুন বউ তোলার আশা বেঁধে রেখেছিলেন আইনুলের মা। আজ ছেলেকে কাছে পাওয়ার পর সেই কথা জানালেন লুৎফে আরা বেগম। বললেন, 'আমার কোন মেয়ে নেই দুইটি মাত্র ছেলে। এর মধ্যে আইনুল বড়। এখনো বিয়ে করেনি। এবার যেহেতু দেশে ফিরেছে ইনশাল্লাহ বিয়ে করানোর ইচ্ছা আছে। মেয়েও দেখতেছি। সবাই দোয়া করবেন ছেলের জন্য যাতে একটি ধার্মিক ও ভদ্র মেয়ে আমি পাই।'

এদিন বিকেল চারটায় ২৩ নাবিককে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-১ জেটিতে ভিড়ে লাইটার জাহার এমভি জাহান মনি। এর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই নাবিকদের এক নজর দেখতে বন্দর জেটিতে ভিড় করেছেন নাবিকের স্বজনরাসহ শতশত মানুষ।

মঙ্গলবার সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে কুতুবদিয়া থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে ২৩ নাবিক নিয়ে রওনা দেয় এমভি জাহান মনি-৩। বিকেল চারটায় অবসান হয় দীর্ঘ দুমাসের অপেক্ষার। এর মধ্যেই শুরু হয় নাবিকদের বরণের উৎসব। লাল রঙের জাহাজটি বন্দরে ভিড়ার কয়েক মিনিট আগে থেকেই নাবিকরা দূর থেকে হাত নেড়ে জানান দেন, আমরা এসেছি! এদিকে জেটিতে থাকা স্বজনরাসহ সকলে তাদেরকে হাত উঁচিয়ে স্বাগত জানায়। এরপর ৪টা ১৮ মিনিটের দিকে জাহাজ থেকে একে একে নেমে আসেন ২৩ নাবিক। নাবিকদের বরণ করে নেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করেছিলেন নাবিকদের পরিবারের সদস্যরা। নাবিকদের কাছে পেয়ে আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয় জেটি এলাকায়।

এর আগে সোমবার (১৩ মে) বিকেল ৬টায় বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলে ২৩ নাবিকসহ নোঙর করে এমভি আব্দুল্লাহ।

এমভি আব্দুল্লাহতে ছিলেন যে ২৩ নাবিক:

জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার মো. আতিক উল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট মো. সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এএসএম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ, এবি পদের মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসাইন, জয় মাহমুদ, ওএস পদের মো. নাজমুল হক, অয়েলার পদের আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, ফায়ারম্যান মোশাররফ হোসেন শাকিল, চিফ কুক মো. শফিকুল ইসলাম, জিএস পদের মোহাম্মদ নুর উদ্দিন ও ফিটার মোহাম্মদ সালেহ আহমদ।

গত ১২ মার্চ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসার পথে ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুর কবলে পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন জাহাজটি ৩২ দিন জলদস্যুর কাছে জিম্মি থাকে। এরপর ১৪ এপ্রিল মুক্তিপণ দেওয়ায় জাহাজ থেকে নেমে যায় জলদস্যুরা।

;

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনে আগ্রহী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনে আগ্রহী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে সফরত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে এ কথা বলেছেন।

বাংলাদেশে সফররত সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের দেওয়া এক নৈশভোজে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

মঙ্গলবার (১৪ মে) সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সালমান এফ রহমান বলেন, র‍্যাবের স্যাংশন নিয়ে আমরা কথা বলেছি। লু জানিয়েছেন এটা আমাদের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের ব্যাপার।

ঢাকা সফরের প্রথম দিন মঙ্গলবার রাতে গুলশানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের দেওয়া এক নৈশভোজে যোগ দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর চিফ অফ স্টাফ ন্যাথানিয়াল হাফটসহ আরও তিন কর্মকর্তা।

সালমান এফ রহমান ছাড়াও নৈশভোজে আরও উপস্থিত ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, তথ্যমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী আলী আরাফাত, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাবেক রাষ্ট্রদূত ফারুক সোবাহান, ঢাকা স্কুল অব বিজনেসের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমেদ।

বিএনপি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী আলী আরাফাত বলেন, রাজনীতি, হিউমান রাইটস নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। মূলত বাংলাদেশের সঙ্গে তারা কাজ করতে চায় সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে নৈশভোজ শেষে সালমান এফ রহমানের বাসা ত্যাগ করেন মার্কিন প্রতিনিধি দল। পরে সাংবাদিকদের মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতায় দুই দেশ সম্মত হয়েছে।

;

গাংনী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন তিন প্রার্থী



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মেহেরপুর
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন একে একে সরে দাঁড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। তিন দিনে তিনজন চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এরা হচ্ছেন- মেহেরপুর- ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাহিদুজ্জামান খোকনের স্ত্রী লায়লা আরজুমান বানু, গাংনী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন এবং সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম শফিকুল আলম।

ব্যক্তিগত ও ভোট সিন্ডিকেটের কারণ দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না বলে জানান তারা।

গেল রবিবার (১২ মে) নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় শেষে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন লায়লা আরজুমান বানু। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। দিন না পেরোতেই সোমবার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন মোশাররফ হোসেন। নির্বাচনে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে লড়ছিলেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৪ মে) আবারও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন কাপ পিরিচ প্রতীকে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম শফিকুল আলম। সংবাদ সম্মেলনে ব্যক্তিগত কারণ দেখালেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উঠে আসে ভিন্ন কথা।

ঘোষণা দানকালে লায়লা আরজুমান বানুর পক্ষে কথা বলতে গিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য শাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, পরবর্তীতে রাজনীতি করার স্বার্থেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এসময় লাইলা আরজুমান বানুর চোখে ছিল জল। তিনি দাবী করেছেন- রাজনৈতিক কোন চাপে নয়, ব্যাক্তিগত কারনেই নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানো।

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন একেএম শফিকুল আলম। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান ভোটযুদ্ধ ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে টিকতে না পেরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ালেন তিনি। তবে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধ অব্যহত থাকবে বলেরও ঘোষণা দেন তিনি। তবে সিন্ডিকেট সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুন্তাজ আলী, আওয়ামী লীগ নেতা ইছার উদ্দীন, সাংস্কৃতিক সংগঠক মোরাদ হোসেনসহ একেএম শফিকুল আলমের ঘনিষ্টজনেরা।

প্রসঙ্গত, গাংনী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির এক প্রার্থীসহ আট প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। বর্তমানে গাংনী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মাঠে থাকলেন

পাঁচজন প্রার্থী। পুরুষ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের তিনজন করে প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

;

জিম্মিদশার দিনগুলো আর মনে করতে চান না আতিক



সীরাত মঞ্জুর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

'আমাদের জিম্মিদশার দিনগুলা ভাল ছিল না, এসব দিনের কথা আমরা আর মনে করতে চাই না। সবাই আজকের এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। সবাইকে একসঙ্গে দেখে আরও বেশি ভালো লাগছে। সারা বাংলাদেশের মানুষজন আমাদের জন্য দোয়া করেছেন। সবার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা, বলার মত আর কিছু নেই। আমাদের এই মুক্তির বিষয়ে যারা কাজ করেছেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। বিশেষ কৃতজ্ঞতা আমাদের কোম্পানি কেএসআরএম, সরকারপক্ষ ও মিডিয়া কর্তৃপক্ষসহ পুরো বাংলাদেশ এর যারা আমাদের জন্য দোয়া করেছেন।'

মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম বন্দরে আসে কেএসআরএমের মালিকানাধীন লাইটার জাহাজ এমভি জাহান মনিতে দাঁড়িয়ে বার্তা২৪.কমকে এভাবে কথাগুলো বলছিলেন সোমালিয়ান জলদস্যু কর্তৃক জিম্মি হওয়া জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর প্রধান কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ খান।
এরপর জাহাজ থেকে মাটিতে পা রাখতেই প্রথমে নিজের দুই মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নেন তিনি। অনুভূতির কথা জানতে চাইলে আতিক উল্লাহ খান বলেন, 'অনেক ভালো লাগছে, যা বলে প্রকাশ করার মতো না। দ্বিতীয়বার জীবন পেলে মানুষের যে অনুভূতি জন্মায়, সেই অনুভূতিই এখন কাজ করছে। বড় একটি গর্বের বিষয় ছিল, যখন জলদস্যুদের থেকে লুকিয়ে জাহাজে ফেসবুক চালাতাম। তখন দেখতাম, সারা বাংলাদেশের মানুষ আমাদের জন্য দোয়া করছে। যেটি আমাদের মনোবল অনেক অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল। আমরা এটাই ভেবে তখন মনকে সান্ত্বনা দিয়েছিলাম যে, আমাদের পরিবারের সঙ্গে সারা বাংলাদেশের মানুষ আছে।'


জিম্মি অবস্থায় জীবনের নিশ্চয়তা নিয়ে কতটুক শঙ্কিত ছিলেন?- এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, 'ওরকম তেমন বেশি অনিশ্চয়তা ছিল না। আমরা আগে থেকে জানতাম, আমাদের কোম্পানিতে আগেও একবার এরকম জাহাজে জলদস্যুর আক্রমণের ঘটনা ঘটছে। সে সময় ওই নাবিকদের কোপাম্পানি ছাড়িয়ে এনেছে। সেটির অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের একটি আশা ছিল, কোম্পানিও আমাদেরকে ছাড়িয়ে নিবে। আমাদের মধ্যে এই আস্থাটা ছিল। কিন্তু কবে দেশে ফিরব সেটি নিয়ে একটি অনিশ্চয়তা ছিল। তারপরও সবার প্রচেষ্টা এবং দোয়াতে আল্লাহর রহমতে মাত্র এক মাসের মধ্যে আমরা মুক্ত হয়েছি। তবে এত তাড়াতাড়ি যে ফিরতে পারব সেটি আশা করিনি।'

জিম্মি অবস্থার পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খান বলেন, 'আমরা একে-৪৭ এর নাম শুনেছি, অথবা টিভিতে দেখেছি। কিন্তু সরাসরি কখনো দেখিনি। জিম্মি অবস্থায় দেখলাম, জাহাজে সেই একে-৪৭ আমার দিকে তাক করে আছে। পরিস্থিতিটা অবশ্যই অনেক বেশি ভয়ঙ্কর ছিল। সে সময়ে আমরা মনে মনে দোয়া করেছি, ধৈর্য ধরেছি এবং আল্লাহর প্রতি আস্থা রেখেছি। এভাবেই জাহাজের দিনগুলো কেটেছে। অনেক ভয়ঙ্কর ছিল। এসব দেখতে দেখতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। জলদস্যুরা অনেক বড় বড় মেশিনগানও এনেছিল। তবে মাঝেমধ্যে তারা যখন ফায়ার করতো, আমরা অনেকে ঘুম থেকে সজাগ হয়ে যেতাম। ওই সময়টিতে অনেক ভয় লাগতো।

ছোট্ট দুইমেয়ে কোলে নিয়ে আতিক উল্লাহ বলেন, 'আমার দুই মেয়ে প্রথমে আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরেছে। ওরা দুইজনেই খুবই আনন্দিত। এর আগেও আমি যদি জাহাজে যেতাম, তখন থেকে তারা- বলে বাবা কখন আসবে। এখানে সবাই আসতে পারেনি, বাসায় পরিবারের অনেকজন অপেক্ষা করছে। আমরাও তাদের দিকে মুখিয়ে আছি।'


এদিকে দীর্য়দিন পর বাবাকে কাছে পেয়ে খুশি আতিক উল্লাহর দুই মেয়ে। বড় মেয়ে ইয়াশরা ফাতেমা বলে, 'বাবাকে পেয়ে অনেক ভালো লাগছে। সামনে ২৩ তারিখ থেকে আমাদের পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ হলে বাবাকে নিয়ে ঘুরতে যাব। ঈদের সময় তেমন বেড়াতে পারিনি। এবার বাবাকে নিয়ে বেড়াবো।'

এদিন বিকেল চারটায় ২৩ নাবিককে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-১ জেটিতে ভিড়ে লাইটার জাহার এমভি জাহান মনি। এর কয়েক ঘন্টা আগে থেকেই নাবিকদের এক নজর দেখতে বন্দর জেটিতে ভিড় করেছেন নাবিকের স্বজনরাসহ শতশত মানুষ।

মঙ্গলবার সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে কুতুবদিয়া থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে ২৩ নাবিক নিয়ে রওনা দেয় এমভি জাহান মনি-৩। বিকেল চারটায় অবসান হয় অপেক্ষার দীর্ঘ দুমাসের অপেক্ষার। এর মধ্যেই শুরু হয় নাবিকদের বরণের উৎসব। লাল রঙের জাহাজটি বন্দরে ভিড়ার কয়েক মিনিট আগে থেকেই নাবিকরা দূর থেকে হাত নেড়ে জানান দেন, আমরা এসেছি! এদিকে জেটিতে থাকা স্বজনরাসহ সকলে তাদেরকে হাত উঁচিয়ে স্বাগত জানায়। এরপর ৪টা ১৮ মিনিটের দিকে জাহাজ থেকে একে একে নেমে আসেন ২৩ নাবিক। নাবিকদের বরণ করে নেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করেছিলেন নাবিকদের পরিবারের সদস্যরা। নাবিকদের কাছে পেয়ে আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয় জেটি এলাকায়।

এর আগে সোমবার (১৩ মে) বিকেল ৬টায় বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলে ২৩ নাবিকসহ নোঙর করে এমভি আব্দুল্লাহ।

এমভি আব্দুল্লাহতে ছিলেন যে ২৩ নাবিক:

জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার মো. আতিক উল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট মো. সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এএসএম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ, এবি পদের মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসাইন, জয় মাহমুদ, ওএস পদের মো. নাজমুল হক, অয়েলার পদের আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, ফায়ারম্যান মোশাররফ হোসেন শাকিল, চিফ কুক মো. শফিকুল ইসলাম, জিএস পদের মোহাম্মদ নুর উদ্দিন ও ফিটার মোহাম্মদ সালেহ আহমদ।

আগে ১২ মার্চ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসার পথে ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুর কবলে পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন জাহাজটি ৩২ দিন জলদস্যুর কাছে জিম্মি থাকে। এরপর ১৪ এপ্রিল মুক্তিপণ দেওয়ায় জাহাজ থেকে নেমে যায় জলদস্যুরা।

;