‘রোহিঙ্গা সমস্যার উৎপত্তি মিয়ানমারে, সমাধানও সেখানেই’
‘সুরক্ষার দায়-দায়িত্ব (আরটুপি)’ বিষয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ আয়োজিত প্লেনারি আলোচনায় জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে মিয়ানমারে, সমাধানও নিহিত রয়েছে সেখানেই।’
গুয়েতেমালার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গার্ট রোজেনথাল প্রণীত ‘মিয়নামারে ২০১০ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত জাতিসংঘের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে স্বাধীন তদন্ত’ শীর্ষক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের উদ্বৃতি দিয়ে এ সময় রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের পদ্ধতিগত ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেন তিনি।
‘সুরক্ষার দায়-দায়িত্ব (আরটুপি) এবং গণহত্যা প্রতিরোধ, যুদ্ধাপরাধ, জাতিগত নির্মূল ও মানবতার বিরূদ্ধে অপরাধ: মহাসচিবের প্রতিবেদন’ বিষয়ক এ প্লেনারি আলোচনায় রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ওপর যে বিভৎস সহিংসতা হয়েছে, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তথ্য-প্রযুক্তিগত সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও পূর্ব-সতর্কতা নিরূপণের মতো বিষয়ে কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়। কিন্তু মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের প্রতিনিধি ও প্রতিষ্ঠান পূর্ব সর্তকতা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যাটি ছিল ব্যাপক ও গভীর, এটি হঠাৎ করেই সৃষ্টি হয়নি। এখানে পূর্ব-সতর্কতা চিহ্ন পাওয়ায় কোনো ঘাটতি থাকার কথা নয়, কিন্তু সময়োপযোগী পদক্ষেপের ঘাটতি ছিল। রোহিঙ্গা ইস্যুতে কেন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে জাতিসংঘ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে তা রোজেনথালের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি অবশ্যই বলা যেতে পারে যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘ সদর দফতরের যখন বিশেষ সমর্থন ও ধারাবাহিক সহযোগিতা প্রয়োজন ছিল, তখন নিরাপত্তা পরিষদ ও জাতিসংঘের সমন্বিত ব্যবস্থা যথেষ্ট সমর্থন যোগাতে ব্যর্থ হয়েছে। আর তাই এ দায়ের অংশ বিশেষ এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর অনেকাংশ বর্তায়।’
রোহিঙ্গাদের মানবিক আশ্রয় ও সহযোগিতা দিতে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের উদারতার কথা উল্লেখ করে স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, ‘ভয়াবহ নির্যাতন ও সহিংসতা থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার দৃশ্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যখন অসহায়ের মতো চেয়ে চেয়ে দেখেছে, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এগিয়ে এসেছেন। রোহিঙ্গাদের প্রতি এ উদারতা দেখানোয় মাদার অব হিউম্যানিটি নামে খ্যাত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সাহসী নেতৃত্বের মাধ্যমে যদি ভাগ্য বিড়ম্বিত অসহায় এ জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় না দিতেন, তাহলে তাদের যাওয়ার আর কোনো যায়গা ছিল না।’
এ জাতীয় বর্বরোচিত ঘটনার দায়-দায়িত্ব নিরূপণ বিষয়ক আরটুপির’র স্তম্ভ-২ ও স্তম্ভ-৩ এর প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান স্থায়ী প্রতিনিধি।
তিনি বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা বিষয়ে ব্যর্থ হতে পারি না। এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে মিয়ানমারে এবং এর সমাধান মিয়ানমারেই নিহিত। মর্যাদা ও নিরাপত্তার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নিজভূমিতে প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে মিয়ানমারকেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।’
‘সুরক্ষার দায়-দায়িত্ব (আরটুপি) এবং গণহত্যা প্রতিরোধ, যুদ্ধাপরাধ, জাতিগত নির্মূল ও মানবতার বিরূদ্ধে অপরাধ’ ৭৩তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আনুষ্ঠানিক এজেন্ডা। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি মিজ মারিয়া ফার্নান্দে এস্পিনোসা গার্সেজ ও জাতিসংঘ মহাসচিবের শেফ দ্য কেবিনেট (জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষে) এ সভার শুরুতে বক্তব্য দেন। এছাড়া ৭০টিরও বেশি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা এ প্লেনারি আলোচনায় বক্তব্য দেন।