উত্তরবঙ্গগামী লোকাল পরিবহনে চাঁদা
ঈদে যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া উত্তরবঙ্গগামী লোকাল বাসগুলোর কাছ থেকে হাইওয়ের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ম করে চাঁদা তোলার অভিযোগ করেছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার (৩ জুন) গাবতলী টার্মিনালের পাশে মিরপুর মাজার রোডে অবস্থিত উত্তরাঞ্চলগামী মিডিয়াম ও লোকাল পরিবহনগুলোর কাউন্টার মাস্টার, ড্রাইভার, লাইনম্যানসহ কাউন্টারসহকারীরা এমন অভিযোগ করেন।
আনিতা পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজর রোকন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'ঢাকা থেকে যাত্রা শুরুর সাথে সাথে চাঁদা দেওয়া শুরু করতে হয় আমাদের। আমদের একটা গাড়ি ঢাকা থেকে দেবীগঞ্জ পর্যন্ত পৌঁছাতে অন্তত বিশ জায়গায় বিভিন্ন অংকের চাঁদা দিতে হয়। প্রতিবারে অন্তত আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা শুধু চাঁদার জন্য রেখে দিতে হয় আমাদের। এসব টাকা আসবে কীভাবে?'
কোথায় কোথায় চাঁদা দিতে হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমি পুরো হিসেব দিচ্ছি। গাবতলী পার্কিং ১৫০ টাকা, সাভার-বাইপাইল ৫০ , চান্দুরা ১৮০, চানদাইকনা ১৭০, শেরপুর ১০০, বগুড়া ২৩০, গোবিন্দগঞ্জ ১০০, মোকামতলা ১০০, রংপুর ১৫০, পলাশবাড়ি ৬০, মাগুরা ১০০, রবিউলের বাজার ৩০, জলঢাকা ২০০, ডোমার ১৫০, ভাউলাগঞ্জ ১০০, দেবীগঞ্জ ১০০। এর মধ্যে দু এক জায়গায় বাদও পড়তে পারে।'
মিথিলা এন্টারপ্রাইজের লাইনম্যান সিরাজ বলেন, 'গাড়িগুলো থেকে চাঁদা না দিয়ে আমাদের কোনো উপায় থাকে না। পুলিশকে চাঁদা দিতে হয়, না দিলে রেকার এর ধমকতো আছেই। আমরাও সব চিন্তা ছেড়ে দিয়ে ২০০ টাকা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যেতে বলি। তাছাড়া ঝামেলা করেলেতো সব দিকে ক্ষতি। আমাদের নিজের বেতন বোনাস নিজেদের তুলতে হয়। আবার গাড়ি মালিকেরটাও বুঝিয়ে দিতে হয়।'
লোকাল পরিবহনের এক চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'রাস্তায় আমার গাড়িটা আগে ভাঙবে। আবার চাঁদা না দিলে গাড়ি আটকাবে, ঝামেলা করবে এটাও সত্য। আমি গাড়ির চালক মাত্র। আমাদের মালিক পক্ষ থেকে বলা হয়, রাস্তায় কোন ঝামেলা করা যাবে না। তাই যেখানে যা নির্ধারণ করা থাকে, সবাই যা দেয়, নিয়ম মেনে চলি।'
পরিবহন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাস্তায় এসব চাঁদা আদায় করা হয় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নামে। এর মধ্যে রয়েছে, মালিক সমিতির চাঁদা, পরিবহন সমিতির চাঁদা, রোড কমিটির চাঁদা । ঢাকা থেকে আরিচা, ঢাকা থেকে নাটোর, ঢাকা থেকে রংপুর, ঢাকা থেকে বগুড়া এগুলো এক একটি রোড কমিটি বলে থাকে তারা।
টার্মিনালে পার্কিংয়ের নামে চাঁদার বিষয় নিয়ে গাবতলী আন্ত:জেলা বাস টার্মিনালের সহকারী ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
পরে টার্মিনালে চাঁদার বিষয়ে ইলেক্ট্রিশিয়ান জাহাঙ্গির আলম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'টার্মিনাল ইজারা দেওয়া থাকে। পার্কিং চার্জ নেওয়া হয় ৪০ টাকা। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকার বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।'
চাঁদার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ফেডারেশনের সহ সম্পাদক আব্বাস উদ্দীন মুঠোফোনে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।'