স্পিকারের সঙ্গে ফরেন সার্ভিস প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ



সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা২৪.কম
স্পিকারের সঙ্গে ফরেন সার্ভিস প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ। ছবি: বার্তা২৪.কম

স্পিকারের সঙ্গে ফরেন সার্ভিস প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ। ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে ভারত ও ভুটানের ফরেন সার্ভিসের নবীন কর্মকর্তাদের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সংসদ ভবনে স্পিকারের কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন তারা।

সাক্ষাৎকালে স্পিকার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সংসদীয় কার্যক্রম, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ভারত ও ভুটানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন।

স্পিকার বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বীকৃতি প্রদানকারী প্রথম দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও ভুটান অন্যতম।’

তিনি বলেন, ‘সংসদীয় কার্যক্রমে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের পার্লামেন্টের সামঞ্জস্য রয়েছে। পারস্পরিক সফর ও অভিজ্ঞতার বিনিময়, দেশগুলোর সঙ্গে বিদ্যমান সংসদীয় কূটনীতির মাধ্যমে এ সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও সুদৃঢ় হবে।’

একাদশ জাতীয় সংসদে টানা তৃতীয়বার স্পিকার নির্বাচিত হওয়ায় ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে অভিনন্দন জানায় প্রতিনিধিদলটি। এ সময় প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আতিথেয়তার প্রশংশা করেছে।

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হতে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, ধারাবাহিকভাবে ৭ শতাংশের উপর প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্রের হার ৪০ শতাংশ থেকে ২২ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। যা আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রমাণ বহন করে।’

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বে প্রশংসা কুড়িয়েছে উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিকের সূচনা করে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন। তৃণমূলে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ফলে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনতে পেরেছে বাংলাদেশ। যা আমাদের এসডিজি অর্জনে সহায়তা করবে। শিক্ষার হার বাড়ছে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার প্রসার দৃশ্যমান। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে ঝরে পড়ার হারও কমেছে।’

এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত আদর্শ সোয়াইকা ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

   

হাতি দেখতে গিয়ে প্রাণটাই দিল বাবাহারা সিবাগতুল্লাহ



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মধ্য রাতে হঠাৎ এলাকায় হাজির হাতির দল। সেটি বুঝতে পেরে আশপাশের মানুষ নিজেদের ক্ষেত রক্ষায় চেচামেচি করে হাতিকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য বের হন। এই সময় উৎসুক হয়ে হাতি দেখতে যায় সিবাগতুল্লাহ রিজবী নামের ১৬ বছরের এক কিশোরও। কিন্তু বের হয়েই সে পড়ে যায় হাতির সামনে। মুহূর্তেই হাতির আক্রমণে গুরুতর আহত হয় সে। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আনা হলেও বাঁচানো যায়নি এই কিশোরকে।

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বৈলছড়ী ইউনিয়নের পূর্ব বৈলছড়ীর গোদার পাড় সংলগ্ন লিচু বাগানে এই ঘটনা ঘটে। নিহত সিবাগতুল্লাহ রিজবী বৈলছড়ীর কুলিন পাড়া এলাকার মৃত তৈয়ব উল্লার পুত্র।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত সিবাগতুল্লাহ কয়েক মাস ধরে পূর্ব বৈলছড়ীর নুন্না পুকুর পাড় এলাকায় মো. ছগিরের মুদির দোকানে চাকরি করে আসছে করে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে লিচু বাগানে হাতি আসার খবর পেয়ে উৎসুক মানুষের সঙ্গে দেখতে গেলে হাতির আক্রমণে গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করায়। পরে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

সিবাগতুল্লাহর প্রতিবেশী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার তারিক মঈন বলেন, ছেলেটা পরিবারকে সাপোর্ট করার জন্য মুদির দোকানে চাকরি করত। যতটুকু জানি হাতির আক্রমণে মৃত্যু হলে পরিবার ক্ষতিপূরণ পায়। ছেলেটিকে তো ফিরে পাওয়া যাবে না। তার পরিবারকে যেন অর্থনৈতিক সাপোর্ট দেওয়া হয়।

বৈলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন বলেন, ছেলেটা উৎসুক হয়ে হাতি দেখতে গিয়েছিল। কিন্তু রাতের অন্ধকারে হাতির সহজ শিকার হয়ে মারা গেল। রেঞ্জ অফিসকে বিষয়টি জানিয়েছি।

এমন মৃত্যু শুধু অপ্রত্যাশিত নয় পীড়াদায়কও বটে বলে মন্তব্য করেছেন কালীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, নিয়মিত প্রচার প্রচারণা চালানোর পরেও হাতির কাছে গিয়ে মৃত্যুর শিকার হচ্ছে মানুষ! কিশোরটির পরিবারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণের আবেদন করলে আমাদের নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

;

গরু ছাগলের মতো বিক্রি হয়ে মাঠে পুইরা কাজ করি, শ্রমদিবস কি বুঝিনা!



ছাইদুর রহমান নাঈম , উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

তপ্ত দুপুরে মাঠের পাশে ধানের খলায় কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক৷ তারা সবাই একদিনের জন্য বিক্রি হয়েছেন শ্রমের জন্য। মাথার ঘাম টপটপ করে গড়িয়ে পড়ছে। গামছা দিয়ে বার বার ঘাম পরিষ্কার করছেন।

শ্রমদিবস বিষয়ে জানতে তাইলে তাদের মধ্যে আকাশ (৫৬), মরম আলী (৩৬), সবুজ (৩০) বলেন, 'শ্রম দিবস কি বুঝিনা আমরা। কাম করি খাই, আমাদের আবার কিসের অধিকার? রোজ সহালে কামের জন্য আইসা বইসা তাহি৷ লোকজন আইসা পছন্দ হইলে দরদাম কইরা রোজ চুক্তিতে নিয়া যায়। অনেকটা গরু ছাগলের হাটের মতো। সারাদিন কাম করি। সহালে আবার ফজরের পর উইঠা পরতে হয়৷ এই হইলো আমাদের জীবন ভাই।' কথাগুলো বলছিলেন তারা।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলাসহ হাওর অঞ্চলে এখন পুরোপুরি ধান কাটার মৌসুম চলছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে কাজের লোক স্থানীয় ভাষায় (দাওয়াইল্লা)'রা কাজের জন্য আসেন। এর মধ্যে অনেকেই অস্থায়ী শ্রমিক আবার অনেকেই সবসময়ই কাজ করেন। অনেকেই বিভিন্ন স্টেশন, স্কুলের বারান্দায় শুয়ে রাত কাটান।

শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কটিয়াদী বাস স্ট্যান্ডে প্রতিদিন ভোর সকালে তারা দলবেঁধে অপেক্ষা করতে থাকেন৷ যাদের শ্রমিক প্রয়োজন তারাও সকালে এসে দরদাম করে নিয়ে যায়। এটি এখানকার অনেক পুরনো হাট। দেখলে মনে হবে মানুষ বিক্রির হাট। তবে এখানে মানুষ নয় শ্রম বিক্রি হয়৷

শ্রমিকরা বলেন, রোজ কাজ করে যা ইনকাম হয় তা জমানো সম্ভব হয়না। পরিবার নিয়ে চলতে তাদের কষ্ট হয়। অসুস্থ হলে তো রোজগার বন্ধ। চিকিৎসার অভাবে বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে থাকতে হয়। বর্তমানে জিনিসপত্রের দাম বেশি৷ সেইভাবে তাদের শ্রমের দাম তো বৃদ্ধি হয়নি। কোনরকম বেঁচে থেকে জীবনটা পার করাই লক্ষ্য।

সরকারের কাছে তাদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, জিনিসপত্রের দাম কমানো ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির।

;

রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২১



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২১

রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২১

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে ২১ জনকে আটক করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অপরাধ ও গোয়েন্দা বিভাগ। মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগে তাদের আটক করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সকাল ছয়টা থেকে বুধবার (১ মে) সকাল ছয়টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্য উদ্ধারসহ তাদেরকে আটক করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩৪০ পিস ইয়াবা, ১৫৫ গ্রাম হেরোইন, ৩৩ কেজি ৭০০ গ্রাম গাঁজা ও ১০০ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়েছে বলে জা‌নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অপরাধ ও গোয়েন্দা বিভাগ।

ডিএমপির নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে এ অ‌ভিযান প‌রিচালনা করা হয়েছে বলে জানানো হয়। সেই সঙ্গে আটককৃতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ১৩ টি মামলা রুজু হয়েছে বলেও জানানো হয়।

;

পাথর শ্রমিকদের বোবা কান্না



মশাহিদ আলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
পাথর শ্রমিকদের বোবা কান্না, ছবি: নূর এ আলম

পাথর শ্রমিকদের বোবা কান্না, ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলা জাফলং। যেখানে ভ্রমণে এসে প্রতিদিন আনন্দ পায় হাজার হাজার পর্যটক। সেই পর্যটন এলাকার মানুষের বোবাকান্না শুনে না কেউই। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের অন্য কোনো কর্মসংস্থান না থাকায় স্থানীয় লোকজন পিয়াইন নদী থেকে বালু এবং পাথর উত্তোলন ও পাথর ভাঙার কাজ করে সংসার চালান। কিন্তু তাদের সংসারে বর্তমানে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। আন্দোলন সংগ্রাম করেও পাচ্ছেন না ফল।

এমন অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করে ৭৫ বছর বয়সী পাথর শ্রমিক সুনামগঞ্জের আলতু মিয়া বলেন, টাকার অভাবে চিকিৎসাও করতে পারি না, অনেক সময় না খেয়েও আমাদের দিন কাটাতে হয়। পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয়। আর শ্রমিক দিবস যে আসলে কি তা আমরাও বুঝি না। আমরা কিভাবে খেয়ে বাঁচবো সে চিন্তায় থাকি।যে সময় মানুষ আন্দোলন করে আমরা তখন যাই।কিন্তু আন্দোলন করে কোনো লাভ হয় না।

তিনি বলেন, ৩০ বছর ধরে জাফলংয়ে বসবাস। পেশায় তিনি পাথর শ্রমিক। পাঁচ সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্যনকারী। ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।

পিয়াইন নদী থেকে তোলা পাথর, সেই পাথর ভাঙার কাজ করে সংসার চালান অনেক শ্রমিক/ছবি: নূর এ আলম


সকাল পেরিয়ে দুপুরের খরতাপে মাথা থেকে কপাল চুইয়ে মুখ গড়িয়ে পড়ছিল ৬৯ বছরের নিজাম উদ্দিনের ঘাম। ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তিনি। কাজের ফাঁকে কথা হয় তাঁর সাথে প্রতিবেদকের।

তিনি জানালেন, বর্তমানে তাদের পরিস্থিতি খুব খারাপ যাচ্ছে। এক ট্রাক এলসি পাথর ভাঙতে পারলে ১২০০ টাকা পান। এখন একদিন হোক বা ৩দিন হোক যে কয়দিন সময় যাক ওই টাকার উপরে একটা টাকাও কেউ দেবে না।

তিনি বলেন, মে দিবস বা শ্রমিক দিবসে আন্দোলন করে ছার আনা আমাদের লাভ বা কোনো কিছু আমরা পাইনি। আমদের মজুরিও বাড়ছে না। এক টাকা বাড়েনি। বরং আমাদের লস(ক্ষতি) হচ্ছে। আগে এলসি পাথর ভাঙতে পারলে ১৬০০ টাকা নিয়ে ঘরে ফিরতে পারতাম। এখন সেই পাথর ভেঙ্গে ১২০০ টাকা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে। যদি পাথর কোয়ারি খুলে দেয়া হতো তাহলে এমন অভাব অটনটনে দিন কাটাতে হতো না। শুধু আলতু মিয়া ও নিজাম উদ্দিন নয়, এমন আরও অনেক শ্রমিকের দিন পাত যাচ্ছে কষ্টে।

পাথরের স্তুপ, ছবি: নূর এ আলম


সরেজমিনে সিলেটের জাফলংয়ে গিয়ে দেখা যায়, তীব্র গরমে নারী-পুরুষ সমান তালে কাজ করে যাচ্ছেন ক্রাশার মিলে। অনেকেই নতুন কাজের সন্ধানে ছুটে যাচ্ছেন দিকবিদিক। জাফলং বিজিবি ক্যাম্পের পাশে কয়েকটি ক্রাশার মিল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে মেশিন ও যন্ত্রপাতিতে মরিচিকা ধরেছে। আর পিয়াইন নদী থেকে ছোট ছোট নৌকা দিয়ে বালু সংগ্রহ করে সেখানেও পাথর খুঁজে বেড়ান কিছু সংখ্যক শ্রমিকেরা।

জানা যায়, ২০১২ সালে জাফলংয়ের পিয়াইন নদীসহ ১৫ কিলোমিটার এলাকাকে ‘পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়। ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এ সংক্রান্ত গেজেটে বলা হয়, ‘অপরিকল্পিতভাবে যেখানে-সেখানে পাথর উত্তোলন ও নানাবিধ কার্যকলাপের ফলে সিলেটের জাফলং-ডাউকি নদীর প্রতিবেশ ব্যবস্থা সংকটাপন্ন, যা ভবিষ্যতে আরও সংকটাপন্ন হবে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ইসিএভুক্ত এলাকায় যান্ত্রিক বা ম্যানুয়াল কিংবা অন্য কোনো পদ্ধতিতে পাথরসহ অন্য যেকোনো খনিজ সম্পদ উত্তোলন নিষিদ্ধ।’ কেবল জাফলং আর শাহ আরেফিন টিলা নয়, এমন চিত্র সিলেটের প্রায় সবগুলো পাথর কোয়ারি এলাকার। পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর সিলেটের জাফলং, ভোলাগঞ্জ, শাহ আরেফিন টিলা, বিছনাকান্দি ও লোভছড়া–এই পাঁচ কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।

 

পাথর শ্রমিক হিসেবে কাজ করে দিন ১০০ থেকে ৪০০ টাকা করে পান শ্রমিকরা, ছবি: নূর এ আলম


এর আগে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়ের করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলোতে যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে উচ্চ আদালত।

জাফলং ক্রাশার মিলে কাজ করেন ষাটোর্ধ্ব রহিমা বেগম। তিনি বলেন, সারাদিন কাম-কাজ করে দুই থেকে আড়াইশ টাকা পাই।কিন্তু বর্তমানে যেভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যে দাম এই টাকা দিয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তবুও কাজ করতে হয়।কাজ না করলে ঘরে না খেয়ে মরতে হবে।

রেখা গোয়ালা বলেন, কোনো দিন ১০০ টাকা আর কোনো দিন ৪০০ টাকা পাই। এসব টাকায় পর্তায় পড়ে না। এতো কষ্ট করেও বাচ্চা-কাচ্চাদেএ মুখে হাসি ফুটানো যায় না। তার চেয়ে কোয়ারি খুলে দিলে খেয়ে বাঁচতে পারতাম।


এছাড়াও আরও কয়েকজন শ্রমিক জানান,নদী থেকে পাথর তোলা বন্ধ হওয়ার পর থেকে অভাব অনটনে চলছে তাদের জীবনযাত্রা। কাজ না পেয়ে অনেকেই অপরাধের সাথে জড়িত হচ্ছে। সিলেট ছাড়াও অন্যান্য জেলার যারা শ্রমিক ছিলেন তারাও এলাকায় গিয়ে কাজের সন্ধান করছেন। আমরা না খেয়ে মরলেও কারো কোনো কিছু আসে যায় না।

এ বিষয়ে পিয়াইন পাথর উত্তোলন ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি সহসভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান লিলু বলেন, কোয়ারী সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। না আমরা চলতে পারছি, না আমাদের বাচ্চা-কাচ্চা চলতে পারতেছে। কোয়ারিগুলো বন্ধ থাকায় এখানকার শ্রমিকদের অভাব অনটন ও অনাহারে দিনপার করতে হচ্ছে। কিছু শ্রমিক কাজের জন্য ঢাকায় গার্মেন্টসে ছুটতেছে। যারা ক্ষুদ্র সম্বল নিয়ে ব্যবসায় শুরু করেছিল তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। এখন তারা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরতেছে।

প্রধানমন্ত্রীসহ খনিজ মন্ত্রণালয়সহ সবার কাছে একটাই আবদেন আমাদের কথা ও ছেলে-মেয়েদের কথা চিন্তা করে পাথর কোয়ারি খুলে দিলে আমরা দু-বেলা দুমুঠো ভাত খেয়ে বাঁচতে পারবো।

এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে বেশ কয়েকটি রিট রয়েছে। তাছাড়া এ বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখভাল করছেন।

;