গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আসন্ন বাজেটে বরাদ্দ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠক করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আলোচনা সভায় দেশের গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারীদের মৌলিক অধিকার, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।
শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজমা আক্তার বলেন, আমাদের দেশে সবচেয়ে সস্তায় শ্রম বিক্রি হয়। আর এই শ্রম বিক্রি করে দেশের রেমিট্যান্স ভারি করে যারা সেই গার্মেন্টস শ্রমিকদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হচ্ছে না। সরকার কমিটমেন্ট দিয়েছিল রেশনিং সিস্টেম চালু হবে কিন্তু এখনো তা হয়নি। গার্মেন্টস মালিকদের প্রণোদনা না দিয়ে শ্রমিকদের জীবন জীবিকার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারসহ ট্রেড ইউনিয়ন সকলকে নজর দেওয়া উচিত। শ্রমিকদের জীবন জীবিকার মান উন্নয়ন না হলে গার্মেন্টস শিল্প ভেঙে পড়বে। খাদ্য পুষ্টির জোগান না থাকলে শ্রমিকরা কাজ করতে পারবে না। নারী শ্রমিকদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে নারী শ্রমিক রক্ষা করলে তবেই অগ্রগতি হবে।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেতা আবুল হোসাইন। তিনি বলেন, শ্রমিকরা না উৎপাদন করলে দেশের মানুষ খেতে পারবে না। ৪২ ডিগ্রি তাপের মাঝে শ্রমিকরা কাজ করছে। ৪০ বছর ধরে গার্মেন্টস শিল্প যে লাভ করেছে সেই লাভ অনুযায়ী বিনিয়োগ হয়নি। বিনিয়োগ হলে গার্মেন্ট শিল্প আরও উন্নত হতো আরো শ্রমিক কাজ করতে পারত। দেড় বছর আগে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন রেশনিং ব্যবস্থা চালু হবে কিন্তু হয়নি। অনতিবিলম্বে গার্মেন্টস শ্রমিকদের রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবি জানাচ্ছি আমরা।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, উৎপাদন বৃদ্ধির স্বার্থে হলেও শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ভালো রাখা জরুরি। শ্রমিকের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে কর্মক্ষম হবে উৎপাদন বাড়বে। আসন্ন বাজেটে এটার জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। ২৭ লাখ মানুষকে রেশনিং ব্যবস্থার আওতায় আনা সরকারের পক্ষে খুব কঠিন হবে না। শ্রমিক স্বার্থের আলোকেই রেশনিং নিশ্চিত করতে হবে।
ডা. ফৌজিয়া মোসলেম বলেন, শ্রমিকরা দেশের অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি। মুক্তিযুদ্ধ স্বৈরাচার, যে কোনো আন্দোলনে শ্রমিকদের ভূমিকা, গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। মেয়েরা গার্মেন্টসে যোগ দেওয়ার পরে গার্মেন্টস সেক্টরে এতো উন্নতি। কিন্তু বর্তমানে নানা প্রতিকূলতার কারণে মেয়েদের এই সেক্টরে অংশগ্রহণের হার কমছে। শ্রমিকদের রেশনিং ব্যবস্থা চালু সহ সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা জাতীয় কর্তব্য।
সভাপতি ইদ্রিস আলীর আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ডক্টর বিনায়ক সেন। তিনি বলেন, আয় বৈষম্য বাড়ছে। শহরের নিম্নবিত্ত এলাকায় ও শিল্প ভিত্তিক গার্মেন্টস এলাকাগুলোতে টিসিবির পণ্যগুলো বেশি পৌঁছে দেওয়া উচিত। রেশনিং ব্যবস্থা চালু করলে ৪৮০০- ৫০০০ কোটি টাকা লাগবে। রেশনিং ব্যবস্থা চালু করলে সরকারের জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।